বাংলাদেশ নারী দলের সঙ্গে কোচ পিটার বাটলারের দূরত্ব বাড়ার খবরটা বেশ পুরাতন। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ চলাকালেই দলের ফুটবলারদের সঙ্গে শীতল হতে শুরু করে কোচ বাটলারের সম্পর্ক। বাংলাদেশ নারী দল আঞ্চলিক শিরোপা ঘরে নিয়ে এলেও সেই শীতলতা কাটেনি। বরং একইসঙ্গে ১৭ থেকে ১৮ ফুটবলারের অবসরের হুমকিও চলে এসেছে।
অন্যদিকে পিটার বাটলারও অনড় নিজের অবস্থানে। সিনিয়র সেসব ফুটবলারকে ছাড়াই অনুশীলন করাচ্ছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ। প্রথমদিন তার অনুশীলনে ছিলেন ১৩ জন নারী ফুটবলার। পরদিন বেড়ে সংখ্যাটা হয়েছে ১৫। এমন অবস্থায় বাফুফে ঠিক কোন পক্ষে সবুজ সঙ্কেত দেবে তাইই বড় প্রশ্ন।
তবে কোচ এবং খেলোয়াড়দের দ্বন্দ্বের পুরাতন ইতিহাসটা কথা বলবে পিটার বাটলারের পক্ষে। ডেভিড বেকহাম, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, ইব্রাহিমোভিচ কিংবা গ্যারেথ বেল বা থিবো কর্তোয়াদের মতো ফুটবল বিশ্বের নামী তারকারাও এমন দ্বন্দ্বের জেরে ছেড়েছেন ক্লাব। আবার একাধিক কোচের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে হারিয়ে গিয়েছেন মারিও বালোতেল্লির মতো প্রজন্মের অন্যতম সেরা প্রতিভারাও।
দুজনেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কিংবদন্তি। শুধু ক্লাবই নয়, রয় কিন এবং ডেভিড বেকহ্যাম দুজনেই ফুটবলের ইতিহাস আর গতিপ্রকৃতিই দিয়েছিলেন বদলে। একজন সেট পিস এবং ক্রস দিয়ে ফুটবল দুনিয়াকে করেছিলেন মোহিত আর অন্যজন মাঠে বুঝিয়েছিলেন আগ্রাসী অধিনায়কের সংজ্ঞা। এদের মাঝে বেকহ্যামের কাছে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন আজও পিতৃতুল্য।
কিন্তু এই দুজনেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে দিতে বাধ্য হন কোচ ফার্গুসনের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে। ২০০৫ সালের নভেম্বর মাসে মিডলসব্রোর বিপক্ষে ম্যাচের পর এক সাক্ষাৎকারে সরাসরি কোচের ট্যাকটিক্সের সমালোচনা করেছিলেন রয় কিন। সেই সময়ে ইউনাইটেডের অধিনায়ক ছিলেন কিন। যদিও সেই সাক্ষাৎকারের কারণে তাৎক্ষণিকভাবেই তার চুক্তি বাতিল করা হয়।
২০০৩ সালে এফএ কাপের ম্যাচে আর্সেনালের কাছে ২-০ গোলে হারের পর কোচের সমালোচনা করায় ডেভিড বেকহ্যামের দিকে বুট ছুঁড়ে মেরেছিলেন এই স্কটিশ কোচ। যদিও এর আগে থেকেই বেকহ্যামের বিজ্ঞাপন প্রবণতার কারণে দুজনের সম্পর্ক শীতল হয়েছিল। তবে, এই দুই ঘটনার পরে খেলোয়াড়দেরই ক্লাব ছাড়তে হয়েছিল। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন ইউনাইটেডের কোচ হিসেবে ছিলেন ২০১৩ সাল পর্যন্ত।
রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হিসেবে জিনেদিন জিদানের অবিশ্বাস্য ‘থ্রি পিট’ বা টানা তিন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের অবিশ্বাস্য সাফল্যের অন্যতম কারিগর ছিলেন গ্যারেথ বেল। ২০১৮ সালে লিভারপুলের বিপক্ষে ফাইনালে বেলই বদলি নেমে দুই গোল করে বদলেছিলেন ফাইনালের ভাগ্য। প্রথম ব্রিটিশ ফুটবলার হিসেবে যিনি দলবদল সেরেছিলেন ১০০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে।
কিন্তু ফিটনেস ইস্যুতে গ্যারেথ বেলকেই একসময় জিদানের রিয়াল স্কোয়াডে হারাতে হয়েছিল জায়গা। ইনজুরিপ্রবণ বেলের পরিবর্তে মার্কো অ্যাসেন্সিও এবং ইস্কোকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন তিনি। অতীত সাফল্য বেলের পক্ষে থাকলেও রিয়াল মাদ্রিদের ম্যানেজমেন্ট থেকে পূর্ণ সমর্থন পেয়েছিলেন জিনেদিন জিদান। গ্যারেথ বেলও ফুটবলের পরিবর্তে মনোযোগী হয়ে পড়েন গলফে। একপর্যায়ে রিয়ালের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয় বেলের। এমনকি ছেড়ে দেন ফুটবলও।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এবং এরিক টেন হ্যাগের বিতর্কটা সম্ভবত সাম্প্রতিক সময়ে ফুটবলের কোচ-খেলোয়াড় বিতর্কের সবচেয়ে বড় উদাহরণ। যেখানে কোচের সঙ্গে বিতর্কের জেরে ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়কেই বিদায় করেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ২০০৯ সালে দল ছাড়ার পর ২০২১ সালে ফের ইউনাইটেডে এসেছিলেন রোনালদো। ততদিনে তিনি ফুটবল ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা তারকা।
কোচ এবং খেলোয়াড়দের দ্বন্দ্বের পুরাতন ইতিহাসটা কথা বলবে পিটার বাটলারের পক্ষে। ডেভিড বেকহাম, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, ইব্রাহিমোভিচ কিংবা গ্যারেথ বেল বা থিবো কর্তোয়াদের মতো ফুটবল বিশ্বের নামী তারকারাও এমন দ্বন্দ্বের জেরে ছেড়েছেন ক্লাব। আবার একাধিক কোচের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে হারিয়ে গিয়েছেন মারিও বালোতেল্লির মতো প্রজন্মের অন্যতম সেরা প্রতিভারাও।
কিন্তু নতুন করে নিজের সাবেক ক্লাব ম্যান ইউনাইটেডে এসে ভুগতে শুরু করেন রোনালদো। কোচের ট্যাকটিক্স থেকে শুরু করে পুরো ম্যানেজমেন্টের ওপরেই ক্ষুব্ধ হন এই পর্তুগিজ তারকা। জায়গা হারান শুরুর একাদশ থেকে। বিশ্বকাপের মাঝপথে সাংবাদিক পিয়ার্স মরগ্যানের কাছে দিয়েছিলেন বিতর্কিত এক সাক্ষাৎকার। ইউনাইটেড নিজেদের সেরা তারকার বদলে এবারেও বেছে নেয় কোচের পক্ষ।
রোনালদোর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ইউনাইটেড। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অধিকারী রোনালদোর এরপর আর ইউরোপিয়ান ফুটবলে থাকা হয়নি। চলে যান সৌদি ক্লাব আল নাসরে।
দ্য স্পেশাল ওয়ান নামে পরিচিত মরিনিও’র সঙ্গে বহু ফুটবলারেরই বিতর্ক হয়েছে। রিয়াল মাদ্রিদে থাকাকালে ইকার ক্যাসিয়াসের মতো কিংবদন্তি গোলরক্ষককেও বেঞ্চে বসাতে দ্বিধা করেননি তিনি। তবে ইন্টার মিলানে থাকাকালে সুইডিশ তারকা ইব্রাহিমোভিচের সঙ্গে তার বিরোধ ছিল একেবারেই চোখ পড়ার মতো।
ম্যাচে নিজের ক্লান্তির কথা বলে একাধিকবার মাঠ ছাড়তে চাইলেও ইব্রাহিমোভিচকে সেদিন মাঠে থাকতে বাধ্য করেন কোচ হোসে মরিনিও। দুজনের মাঝে এনিয়ে সমস্যা চরমে উঠলে দল ছাড়েন ইব্রাহিমোভিচ। স্যামুয়েল ইতোর সঙ্গে সোয়াপ ডিলে বার্সায় চলে যান ইব্রা।
পরের মৌসুমে বার্সেলোনা কোচ পেপ গার্দিওলার সঙ্গেও ঝামেলায় জড়ান ইব্রা। সেদফায় প্রথম ধারে, পরে পূর্ণচুক্তিতে এসি মিলানে চলে যান সুইডিশ এই স্ট্রাইকার।