London ০৩:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
মহাসড়ক বন্ধ করে কৃষকদল নেতা খন্দকার নাসিরের সমাবেশ- যান চলাচল বন্ধ; ভোগান্তি চরমে। পাবিপ্রবিতে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালন ও পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত রাজশাহীতে গাছে গাছে মুকুলের সমারোহ, স্বপ্ন দেখছেন আমচাষীরা সিরিয়া থেকে সব সেনা সরিয়ে নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র ভাঙা হলো বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, বুলডোজার ছাড়াই গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে : হাসনাত আব্দুল্লাহ রূপগঞ্জে কিশোর গ্যাংয়ের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ২ ১২২ বস্তা সার পাচারের অভিযোগে বিএনপি-যুবদলের ৫ নেতাকে বহিষ্কার শেখ হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনতেই হবে,তারেক রহমান নেত্রকোণার দুর্গাপুরে সুসং সরকারি মহাবিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের নতুন কমিটি গঠিত

বীরগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী মেলা: যে মেলায় খোঁজ মেলে পছন্দের জীবনসঙ্গীর

সম্ভাব্য জীবনসঙ্গীর নজর কাড়তে তরুণীরা সেজেছেন বর্ণিল পোশাকে। খোঁপায় বাহারি ফুলের সাজ। তরুণেরাও এসেছেন হাতে রুমাল বেঁধে। রুমালই জানিয়ে দিচ্ছে, এসব তরুণও খুঁজছেন স্বপ্নময় যৌথ জীবনের পথচলার সঙ্গী। পরস্পরকে পছন্দ করলেই গাঁটছড়া বাঁধার পালা। গত মঙ্গলবার দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত হলো ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের ঐতিহ্যবাহী মিলনমেলা। মেলায় ভিড় জমিয়েছিলেন অনেকেই। এই মেলা স্থানীয় লোকজনের কাছে বাসিয়াহাটি নামেও পরিচিত। প্রতিবছর শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রতিমা বিসর্জনের পরের দিন মেলাটি অনুষ্ঠিত হয় বলেই এই নাম। বাসি থেকে বাসিয়া। তবে এ বছর মেলা অনুষ্ঠিত হলো আরও এক দিন পরে। মেলায় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার, বিশেষ করে সাঁওতাল তরুণ-তরুণীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা বয়সের মানুষ জড়ো হয়েছিলেন।

দিনাজপুর ছাড়াও ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও নীলফামারীর মানুষের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি। মেলা উপলক্ষে দু-এক দিন আগে থেকেই স্থানীয় নৃগোষ্ঠী আত্মীয়স্বজনের বাসায় হাজির হয়েছিলেন অনেকেই। কালের বিবর্তনে জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার রীতিনীতিতে পরিবর্তন এলেও মেলায় আসা বেশির ভাগ তরুণীর সাজগোজ অতীত ঐতিহ্যই মনে করিয়ে দিয়েছে। কপালে টিপ, ঠোঁটে লিপস্টিক, চুলের বেণিতে ফুলমালার শোভা কোনো তরুণের জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়ার পথ সহজ করে দেয়নি তা বলা যায় না।

এ বিষয়ে আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির সদস্য দুলাল হাঁসদা বলেন, ‘গতবারের মেলায় আমাদের বীরগঞ্জ উপজেলার চকবানারশি গ্রামে রামনাথ মার্ডির ছেলে শান্ত মার্ডির সঙ্গে দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার রামপুর গ্রামের বাবুরাম বেসরার মেয়ে শান্তি বেসরার দেখাদেখি হয়। সেদিনের সেই পছন্দ থেকে তিন মাস পর পারিবারিক আলোচনার মাধ্যমে তাঁদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।’

স্থানীয় লোকজন জানান, মেলার বিশেষ আকর্ষণই হলো ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ছেলেমেয়েরা এখান থেকে পছন্দের পাত্র-পাত্রী খুঁজে নিতে পারেন। এখানে কোনো পাত্র বা পাত্রী পছন্দ হলে পরিবারের আলোচনার মাধ্যমে ধুমধামে বিয়ে দেওয়া হয়। এই মেলায় অংশ নেওয়া বেশির ভাগের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। বিবাহযোগ্য পাত্রীরা পাত্রদের নজর কাড়তে নিজেকে সাজান বাহারি পোশাক ও নানা সাজসজ্জায়।

মেলায় ছিল সব বয়সী নারী-পুরুষের ভিড়। বাহারি সব কাচের চুড়ি, রঙিন ফিতা, লিপস্টিক, কানের দুল, ঝিনুক ও মাটির তৈরি তৈজসপত্র, খেলনা, গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও খাবারের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন দোকানিরা। মেলার এক পাশে চলছে ঐতিহ্যবাহী নাচ ও গানের আসর।

কাহারোল উপজেলা থেকে আসা লিটন মার্ডি জানান, একসময় এই মেলায় প্রেমের গল্পের ফুল ফোটার জন্য বিশেষ পরিচিতি ছিল। অনেকেই এখানে এসে তাঁদের জীবনসঙ্গী খুঁজে পেতেন। সেই সময়ের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাগুলো এখনো অনেকের মনে গেঁথে আছে। তবে মেলার মধ্যেও এখনো কিছু যুবক-যুবতী নিজেদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেন, যদিও তা আগের মতো ব্যাপক নয়। এই পরিবর্তনগুলো নতুনত্বের সঙ্গেই সম্পৃক্ত, যা প্রজন্মের মধ্যে একটি সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করছে।

মেলার আয়োজক কমিটির পক্ষে বীরগঞ্জ থানা আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি শীতল মার্ডি বলেন, ‘গোপালগঞ্জ আদিবাসী মিলনমেলাটি ২০০ বছর আগে থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই মেলা বিজয়া দশমীর পরের দিনে অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নানা বয়সের মানুষজন আসে। বিশেষ করে যাঁরা তরুণ-তরুণী, তাঁদের জন্য একটা প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে, মেলায় তারা আপন সঙ্গীকে চিহ্নিত করে এবং পরবর্তী সময়ে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে তাঁদের বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। আমাদের পূর্বপুরুষের আমল থেকে এই মেলা চলমান। আমরা শুধু এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করে যাচ্ছি।’

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৫:৩৯:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪
৩৬
Translate »

বীরগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী মেলা: যে মেলায় খোঁজ মেলে পছন্দের জীবনসঙ্গীর

আপডেট : ০৫:৩৯:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

সম্ভাব্য জীবনসঙ্গীর নজর কাড়তে তরুণীরা সেজেছেন বর্ণিল পোশাকে। খোঁপায় বাহারি ফুলের সাজ। তরুণেরাও এসেছেন হাতে রুমাল বেঁধে। রুমালই জানিয়ে দিচ্ছে, এসব তরুণও খুঁজছেন স্বপ্নময় যৌথ জীবনের পথচলার সঙ্গী। পরস্পরকে পছন্দ করলেই গাঁটছড়া বাঁধার পালা। গত মঙ্গলবার দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত হলো ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের ঐতিহ্যবাহী মিলনমেলা। মেলায় ভিড় জমিয়েছিলেন অনেকেই। এই মেলা স্থানীয় লোকজনের কাছে বাসিয়াহাটি নামেও পরিচিত। প্রতিবছর শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রতিমা বিসর্জনের পরের দিন মেলাটি অনুষ্ঠিত হয় বলেই এই নাম। বাসি থেকে বাসিয়া। তবে এ বছর মেলা অনুষ্ঠিত হলো আরও এক দিন পরে। মেলায় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার, বিশেষ করে সাঁওতাল তরুণ-তরুণীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা বয়সের মানুষ জড়ো হয়েছিলেন।

দিনাজপুর ছাড়াও ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও নীলফামারীর মানুষের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি। মেলা উপলক্ষে দু-এক দিন আগে থেকেই স্থানীয় নৃগোষ্ঠী আত্মীয়স্বজনের বাসায় হাজির হয়েছিলেন অনেকেই। কালের বিবর্তনে জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার রীতিনীতিতে পরিবর্তন এলেও মেলায় আসা বেশির ভাগ তরুণীর সাজগোজ অতীত ঐতিহ্যই মনে করিয়ে দিয়েছে। কপালে টিপ, ঠোঁটে লিপস্টিক, চুলের বেণিতে ফুলমালার শোভা কোনো তরুণের জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়ার পথ সহজ করে দেয়নি তা বলা যায় না।

এ বিষয়ে আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির সদস্য দুলাল হাঁসদা বলেন, ‘গতবারের মেলায় আমাদের বীরগঞ্জ উপজেলার চকবানারশি গ্রামে রামনাথ মার্ডির ছেলে শান্ত মার্ডির সঙ্গে দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার রামপুর গ্রামের বাবুরাম বেসরার মেয়ে শান্তি বেসরার দেখাদেখি হয়। সেদিনের সেই পছন্দ থেকে তিন মাস পর পারিবারিক আলোচনার মাধ্যমে তাঁদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।’

স্থানীয় লোকজন জানান, মেলার বিশেষ আকর্ষণই হলো ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ছেলেমেয়েরা এখান থেকে পছন্দের পাত্র-পাত্রী খুঁজে নিতে পারেন। এখানে কোনো পাত্র বা পাত্রী পছন্দ হলে পরিবারের আলোচনার মাধ্যমে ধুমধামে বিয়ে দেওয়া হয়। এই মেলায় অংশ নেওয়া বেশির ভাগের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। বিবাহযোগ্য পাত্রীরা পাত্রদের নজর কাড়তে নিজেকে সাজান বাহারি পোশাক ও নানা সাজসজ্জায়।

মেলায় ছিল সব বয়সী নারী-পুরুষের ভিড়। বাহারি সব কাচের চুড়ি, রঙিন ফিতা, লিপস্টিক, কানের দুল, ঝিনুক ও মাটির তৈরি তৈজসপত্র, খেলনা, গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও খাবারের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন দোকানিরা। মেলার এক পাশে চলছে ঐতিহ্যবাহী নাচ ও গানের আসর।

কাহারোল উপজেলা থেকে আসা লিটন মার্ডি জানান, একসময় এই মেলায় প্রেমের গল্পের ফুল ফোটার জন্য বিশেষ পরিচিতি ছিল। অনেকেই এখানে এসে তাঁদের জীবনসঙ্গী খুঁজে পেতেন। সেই সময়ের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাগুলো এখনো অনেকের মনে গেঁথে আছে। তবে মেলার মধ্যেও এখনো কিছু যুবক-যুবতী নিজেদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেন, যদিও তা আগের মতো ব্যাপক নয়। এই পরিবর্তনগুলো নতুনত্বের সঙ্গেই সম্পৃক্ত, যা প্রজন্মের মধ্যে একটি সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করছে।

মেলার আয়োজক কমিটির পক্ষে বীরগঞ্জ থানা আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি শীতল মার্ডি বলেন, ‘গোপালগঞ্জ আদিবাসী মিলনমেলাটি ২০০ বছর আগে থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই মেলা বিজয়া দশমীর পরের দিনে অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নানা বয়সের মানুষজন আসে। বিশেষ করে যাঁরা তরুণ-তরুণী, তাঁদের জন্য একটা প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে, মেলায় তারা আপন সঙ্গীকে চিহ্নিত করে এবং পরবর্তী সময়ে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে তাঁদের বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। আমাদের পূর্বপুরুষের আমল থেকে এই মেলা চলমান। আমরা শুধু এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করে যাচ্ছি।’