বিমর্ষ তাইজুল নেটের ‘বিউটি’
মধ্যাহ্ন বিরতির ঠিক আগে ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে পড়েন তাইজুল ইসলাম। গন্তব্য আউটার নেট। তাঁর সঙ্গী অফস্পিনার নাঈম হাসান ও উইকেটরক্ষক ব্যাটার জাকের আলী। চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট চলাকালে নিয়মিত দৃশ্য ছিল তাইজুলের এই নেটে যাওয়া। বাঁহাতি এ স্পিনারকে আগে খুব একটা এ রকম পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যেতে হয়নি। সেই ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশ দেশে-বিদেশে যেখানেই টেস্ট ম্যাচ খেলেছে, ফিট তাইজুল একাদশে থাকতেন। দেশসেরা বাঁহাতি স্পিনারের ঠিকানা এখন রিজার্ভ বেঞ্চ!
পাকিস্তানে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। ভারতের বিপক্ষেও খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সাকিব আল হাসান থাকলে যে একাদশে তাইজুলের জায়গা নেই। বাঁহাতি অলরাউন্ডার সাকিব যতদিন খেলবেন, তাইজুলকে ম্যাচ চলাকালে এভাবে ড্রেসিংরুম ও নেটে দৌড়ঝাঁপ করতে হতে পারে। কারণ অলরাউন্ডার কোটায় এখনও অটোচয়েস মনে করা হয় সাকিবকে। যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সেরা ছন্দে থাকা তাইজুলের টেস্ট ম্যাচ খেলতে না পারার কারণ সাকিব নয়, পেস বোলারদের উত্থান। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের মতে, তাইজুল কিছুটা দুর্ভাগা। বাংলাদেশ তিন পেসার নিয়ে খেলায় টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁকে জায়গা দিতে পারছে না।
২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অভিষেক টেস্টেই পাঁচ উইকেট ছিল তাইজুলের। এ পর্যন্ত ৪৬ টেস্ট খেলে ১৯৫ উইকেট শিকার তাঁর। ইনিংসে ১২ বার পাঁচ উইকেট পাওয়ার রেকর্ড আছে। ৩৯ রান দিয়ে ইনিংসে ৮ উইকেট নিয়েছেন একবার। ১১ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড ম্যাচে। ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে থাকা ৩২ বছর বয়সী এ বাঁহাতি স্পিনারকে কেন সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না বা পরের ম্যাচে খেলবেন কিনা– জানতে চাওয়া হলে গতকাল চেন্নাইয়ের টিম হোটেলে নির্বাচক হান্নান সরকার বলেন, ‘এটা আসলে পুরোটাই টিম কম্বিনেশনের ব্যাপার। সাকিব থাকলে ৮ জন ব্যাটার পাই। সাকিব না খেলে তাইজুল খেললে ব্যাটার সাতজন। ব্যাটিংয়ে একটু দুর্বলতা থাকে। তাইজুল টেস্টে আমাদের সেরা বোলার, কিন্তু টিম কম্বিনেশন সাজাতে গেলে সে থাকছে না। সে প্রস্তুত আছে, যে কোনো সময় খেলতে হতে পারে। পরের ম্যাচে চাহিদা থাকলে তাইজুল বা নাঈম যে কোনো একজন খেলতে পারে।’
তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা, শরিফুল ইসলাম নিয়মিত টেস্ট দলের সদস্য হওয়ায় খালেদ আহমেদ ম্যাচ খেলার সুযোগ পান না। এবাদত হোসেন পুরোপুরি ফিট হয়ে পেস ইউনিটে যুক্ত হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও বাড়বে। পাইপলাইনে অপেক্ষায় আছেন মুশফিক হাসান ও তানজিম সাকিব। তারা দু’জন যোগ হলে ভারতের মতো বাংলাদেশও দেশে ও বিদেশে তিন পেসার নিয়মিত খেলাবে। স্পিনার কোটায় অলরাউন্ডার অগ্রাধিকার পাবে ব্যাটিং লাইনআপ বড় রাখতে। স্বাভাবিকভাবেই সাকিব ও মেহেদী অলরাউন্ডার কোটায় খেলবেন।
সাবেক নির্বাচক বাশারের মতে, ‘এখন তিনজন সিম বোলার নিয়ে খেলে। তিনজন স্পিনার খেলানোর সুযোগ নেই। এটা ট্যাকটিক্যাল কারণ। তাই তাইজুল কিছুটা দুর্ভাগা। আমরা যখন দুই সিমার নিয়ে খেলতাম, তখন তিনজন স্পিনার খেলত। তাইজুল ছিল অটোমেটিক চয়েস। মিরাজ অলরাউন্ডার, তাকে বাদ দেওয়া যাবে না। সাকিব সম্প্রতি হয়তো ভালো করছে না, কিন্তু সাকিব সাকিবই। আমরা তার পারফরম্যান্স সম্পর্কে জানি বল হাতে কী করতে পারে। যদিও এখন তার পারফরম্যান্স নিয়ে কথা হচ্ছে। অথচ দুই টেস্ট ম্যাচ আগেও সাকিবের বোলিং পারফরম্যান্স পাকিস্তানে ম্যাচ জিততে সাহায্য করেছে।’
জাতীয় দলের সাবেক এ অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথ ও আকিব জাভেদের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘মুরালিধরন যখন খেলত, তখন রঙ্গনা হেরাত নিয়মিত সুযোগ পেত না। মুরালি শেষ করার পর হেরাথ নিয়মিত খেলে সাড়ে চারশ (৪৩৩) টেস্ট উইকেট পেয়েছে। আকিব জাভেদের ক্যারিয়ারই লম্বা হতে পারেনি ওয়াকার ইউনুস ও ওয়াসিম আকরামের কারণে। অথচ আকিব অসাধারণ বোলার ছিল। তাইজুলকেও ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করতে হবে, সুযোগ পেলে তা কাজে লাগাতে হবে।’ রিজার্ভের তাইজুল পেসার রুবেল হোসেনের মতো পথ হারাবেন না তো?