London ১০:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিভিন্ন রকম ফ্যাসিবাদের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে: অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ

রাজধানীর কাঁটাবনের পাঠক সমাবেশে ‘সংকটে গণতন্ত্র: সামরিক শাসনোত্তর বেসামরিক শাসনের সমস্যা’ শীর্ষক বইয়ের ওপর আলোচনায় কথা বলছেন আনু মুহাম্মদ

ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও এখন আবার বিভিন্ন ধরনের ফ্যাসিবাদের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, ‘আমরা এক ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হয়ে যদি আরেক ফ্যাসিবাদের মুখে পড়ি, তাহলে তো হবে না।’

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর কাঁটাবনের পাঠক সমাবেশে ‘সংকটে গণতন্ত্র: সামরিক শাসনোত্তর বেসামরিক শাসনের সমস্যা’ শীর্ষক বইয়ের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন।

বইটির লেখক সাংবাদিক আমীর খসরু। এর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অনন্যা প্রকাশনী আলোচনাটির আয়োজন করে।

এতে আলোচক হিসেবে অংশ নিয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, দেশে অনেক জায়গায় নারীদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। তাঁদের পোশাক নিয়ে আক্রমণাত্মক বক্তব্য আসছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। তিনি বলেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে শ্রেণি, জাতি, লিঙ্গ ও ধর্মীয় বৈষম্য দূর করা দরকার। এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের আলোচনা এবং জাতীয় সংলাপের মধ্যে যেতে হবে। একটি পরিষ্কার রূপকল্প প্রণয়ন করতে হবে।

আনু মুহাম্মদ বলেন, এগুলো নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা, সমালোচনা-পর্যালোচনা হওয়া উচিত, বিদ্বেষ নয়।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমরা স্বৈরশাসনোত্তর গণতন্ত্র সংহত করার সমস্যার মধ্যে আছি। আমাদের অনেক অভিযোগ রয়েছে, অভিযোগগুলোও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অভিযোগগুলো প্রতিটিই সত্য, তবে নতুন সুযোগ এসেছে।’

মনস্তাত্ত্বিক উত্তরণকে বাংলাদেশের অন্যতম প্রয়োজনীয় বিষয় উল্লেখ করে হোসেন জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ‘আমরা বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নতুন সরকার গঠন করেছি। কিন্তু সরকার গতানুগতিক আমলাতন্ত্রের ওপর নিজেদের নির্ভরশীলতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।’

হোসেন জিল্লুর বলেন, ‘আমরাই তো দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আমরা নতুন সমাজ গড়ার জন্য প্রস্তুত। আমাদের এই শক্তিকে, আমাদের এই ইমোশনকে (আবেগ) কীভাবে কাজে লাগাবে, কোন উপায়ে আমাদের এনগেজ (সম্পৃক্ত) করবে, সেই দিকনির্দেশনাগুলো কোথায়?’

আলোচকদের আরেকজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আমিনুল করিমের বক্তব্যে সামরিক বাহিনী ও রাজনীতির বিষয়গুলো উঠে আসে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিজের হাত থেকে ছাড়েননি। শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া কিংবা এরশাদ—প্রত্যেকেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিজেদের হাতে রেখেছিলেন। এখনকার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিজের কাছে রেখেছেন।

আমিনুল করিম বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো, রাজনৈতিক নেতারা হয়তো সেনাবাহিনীকে একটু সন্দেহ করছেন। কোনো রাজনৈতিক রেজিম (শাসনামল) যদি শক্তিশালী হয়, তাহলে সামরিক বাহিনী কখনোই ক্ষমতা নিতে আসবে না। এখনকার সামরিক বাহিনী ক্ষমতা নিতে চায় না।’

অন্তর্বর্তী সরকারের নানা দিক নিয়ে কথা বলেন সাংবাদিক আমীর খসরু। নির্বাচনের সময় নিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘খুবই দুঃখের সঙ্গে আমাকে বলতে হচ্ছে, যে বিষয়টা ড. ইউনূস বা বেসামরিক প্রশাসনের কাছ থেকে আমরা শুনতে চেয়েছিলাম, তা শুনতে হচ্ছে সেনাপ্রধানের কাছ থেকে।’ তবে অনন্যা প্রকাশনীর প্রকাশক মনিরুল হক কোনো বক্তব্য দেননি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৫:৩১:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৫০
Translate »

বিভিন্ন রকম ফ্যাসিবাদের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে: অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ

আপডেট : ০৫:৩১:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রাজধানীর কাঁটাবনের পাঠক সমাবেশে ‘সংকটে গণতন্ত্র: সামরিক শাসনোত্তর বেসামরিক শাসনের সমস্যা’ শীর্ষক বইয়ের ওপর আলোচনায় কথা বলছেন আনু মুহাম্মদ

ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও এখন আবার বিভিন্ন ধরনের ফ্যাসিবাদের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, ‘আমরা এক ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হয়ে যদি আরেক ফ্যাসিবাদের মুখে পড়ি, তাহলে তো হবে না।’

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর কাঁটাবনের পাঠক সমাবেশে ‘সংকটে গণতন্ত্র: সামরিক শাসনোত্তর বেসামরিক শাসনের সমস্যা’ শীর্ষক বইয়ের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন।

বইটির লেখক সাংবাদিক আমীর খসরু। এর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অনন্যা প্রকাশনী আলোচনাটির আয়োজন করে।

এতে আলোচক হিসেবে অংশ নিয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, দেশে অনেক জায়গায় নারীদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। তাঁদের পোশাক নিয়ে আক্রমণাত্মক বক্তব্য আসছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। তিনি বলেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে শ্রেণি, জাতি, লিঙ্গ ও ধর্মীয় বৈষম্য দূর করা দরকার। এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের আলোচনা এবং জাতীয় সংলাপের মধ্যে যেতে হবে। একটি পরিষ্কার রূপকল্প প্রণয়ন করতে হবে।

আনু মুহাম্মদ বলেন, এগুলো নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা, সমালোচনা-পর্যালোচনা হওয়া উচিত, বিদ্বেষ নয়।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমরা স্বৈরশাসনোত্তর গণতন্ত্র সংহত করার সমস্যার মধ্যে আছি। আমাদের অনেক অভিযোগ রয়েছে, অভিযোগগুলোও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অভিযোগগুলো প্রতিটিই সত্য, তবে নতুন সুযোগ এসেছে।’

মনস্তাত্ত্বিক উত্তরণকে বাংলাদেশের অন্যতম প্রয়োজনীয় বিষয় উল্লেখ করে হোসেন জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ‘আমরা বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নতুন সরকার গঠন করেছি। কিন্তু সরকার গতানুগতিক আমলাতন্ত্রের ওপর নিজেদের নির্ভরশীলতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।’

হোসেন জিল্লুর বলেন, ‘আমরাই তো দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আমরা নতুন সমাজ গড়ার জন্য প্রস্তুত। আমাদের এই শক্তিকে, আমাদের এই ইমোশনকে (আবেগ) কীভাবে কাজে লাগাবে, কোন উপায়ে আমাদের এনগেজ (সম্পৃক্ত) করবে, সেই দিকনির্দেশনাগুলো কোথায়?’

আলোচকদের আরেকজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আমিনুল করিমের বক্তব্যে সামরিক বাহিনী ও রাজনীতির বিষয়গুলো উঠে আসে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিজের হাত থেকে ছাড়েননি। শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া কিংবা এরশাদ—প্রত্যেকেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিজেদের হাতে রেখেছিলেন। এখনকার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিজের কাছে রেখেছেন।

আমিনুল করিম বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো, রাজনৈতিক নেতারা হয়তো সেনাবাহিনীকে একটু সন্দেহ করছেন। কোনো রাজনৈতিক রেজিম (শাসনামল) যদি শক্তিশালী হয়, তাহলে সামরিক বাহিনী কখনোই ক্ষমতা নিতে আসবে না। এখনকার সামরিক বাহিনী ক্ষমতা নিতে চায় না।’

অন্তর্বর্তী সরকারের নানা দিক নিয়ে কথা বলেন সাংবাদিক আমীর খসরু। নির্বাচনের সময় নিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘খুবই দুঃখের সঙ্গে আমাকে বলতে হচ্ছে, যে বিষয়টা ড. ইউনূস বা বেসামরিক প্রশাসনের কাছ থেকে আমরা শুনতে চেয়েছিলাম, তা শুনতে হচ্ছে সেনাপ্রধানের কাছ থেকে।’ তবে অনন্যা প্রকাশনীর প্রকাশক মনিরুল হক কোনো বক্তব্য দেননি।