London ১০:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
রাজশাহীতে ২ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার বাল্যবিয়ে ঠেকানোর নামে সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, দুইজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ কথিত যুবদল নেতার চাঁদাবাজিতে বাধা ’ দেওয়ায় — সাত যুবক কারাগারে কসবাউপজেলার কুটি বাজারে ভয়াবহ আগুন: ক্ষতিগ্রস্ত দোকান পরিদর্শনে আতাউর রহমান সরকার কসবায় বিএনপির ঈদ পুনর্মিলনীতে মানুষের ঢল — গ্যাস সংযোগ দেয়া ও শিল্পনগরী গড়ার ঘোষণা দিলেন সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী কবির আহম্মদ ভূঁইয়া সিরাজগঞ্জে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীকে গলাকাটা হত্যার অভিযোগ স্বামী উপর দুর্গাপুরে তিন ইউনিয়নে বিএনপির সম্মেলন,দলীয় রাজনীতি আরো গতিশীল করার আহ্বান ঈদের মিলনমেলা থেকে তুলে নিয়ে বিস্ফোরক মামলায় সাত দিনমজুরকে চালান সিরাজগঞ্জ জেলা ট্রাক এবং কাভার্ডভ্যান পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন ত্রি-বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত ভারতীয় পণ্য পাচারকালে পিকআপ ভ্যানসহ আটক ১

বাল্যবিয়ে ঠেকানোর নামে সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, দুইজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় এক কিশোরীকে বাল্যবিবাহ দেওয়ার আয়োজনের সময় সাংবাদিক পরিচয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে আলমগীর কবির ও কবির হোসেন নামের দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

বুধবার (১১ জুন) বিকেলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের এক স্টাফ গোপনে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। পরে তাৎক্ষণিক দক্ষিণ শিরগ্রামের প্রবাসী লাভলু খানের বাড়িতে গিয়ে কয়েকজন স্থানীয় সাংবাদিক ঘটনাটি যাচাই করতে গিয়ে জানতে পারেন, বেলা আড়াইটায় প্রশাসন ম্যানেজের নামে ৪ হাজার টাকা চাঁদা আদায়ের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রবাসী লাভলু খানের কিশোরী মেয়ে এশা (১৬) চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তার বাবা একজন প্রবাসী। এশার সঙ্গে মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার চরঝামা গ্রামের এক ছেলের বিয়ের আয়োজন চলছিল। মঙ্গলবার রাতে গায়েহলুদের অনুষ্ঠান শেষে বুধবার দুপুরে শতাধিক বরযাত্রী নিয়ে বরপক্ষ বিয়ে সম্পন্ন করতে কনের বাড়িতে হাজির হয়।

অনুষ্ঠান চলাকালে সাংবাদিক পরিচয়ে বাড়িতে হাজির হন আলমগীর কবির (৪৭) ও কবির হোসেন (৪৬)। তারা বাল্যবিয়ের আইন দেখিয়ে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন পাঠানোর ভয় দেখান এবং ‘সমাধান’ দেওয়ার কথা বলে পরিবারের কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ করেন কিশোরীর খালা বিপাশা শিকদার।

আলমগীর কবির উপজেলার বানা ইউনিয়নের দীঘলবানার মৃত আইন উদ্দিনের ছেলে। তিনি বানা ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। এছাড়া তিনি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন ফরম ধানমন্ডির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করে জমা দেন। চলতি বছরের এক-দুই মাস আগে উপজেলার লাল্টু নামের এক ব্যক্তি তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির লিখিত অভিযোগ দেন।

কবির হোসেন, পৌরসদরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আব্দুল জলিল মিয়ার ছেলে। তিনি আলফাডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক এবং বর্তমান উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্থানীয় রাজনীতিতে এখনও সক্রিয় বলে জানা গেছে।

খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অনুপস্থিতিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঘটনাস্থলে গিয়ে বিয়ের আয়োজন বন্ধ করেন। দুইজন অভিভাবককে তাঁর কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে পরিস্থিতি বিবেচনায় ছেলে পক্ষকে ২ হাজার টাকা জরিমানা এবং কিশোরী পক্ষের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়ার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

এর আগেও এই দুজনের বিরুদ্ধে একাধিক চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। ২০২২ সালে উপজেলার কঠুরাকান্দি গ্রামের এক ভ্যানচালকের কাছ থেকেও ৪০০ টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে। ২০২১ সালে এই দু’জনের বিরুদ্ধেই থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা হয়, তবে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বারবার এসব অভিযোগ থেকে পার পেয়ে যান বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

উপজেলার সদর বাজারের স্থানীয় কসাইখানা ‘মায়ের দোয়া গোস্ত ভান্ডার’ থেকে ভয় দেখিয়ে মাংস নিয়ে টাকা না দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সংবাদ ২০২৩ সালের অক্টোবরে জাতীয় গণমাধ্যম জনবানী ও কালবেলাতে প্রকাশিত হয়। এ ঘটনার পর কালবেলার তৎকালীন উপজেলা প্রতিনিধি‌কে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন আলমগীর কবির। এরপর থানায় তার বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এ বিষয়েও কালবেলায় আরেকটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এছাড়াও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমানের নাম ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরীর চাকরি দেওয়ার প্রলোভনে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয়দের অভিযোগ, “সাংবাদিকতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়মে লিপ্ত তারা। নামসর্বস্ব পত্রিকা ও ফেসবুকে ‘মিথ্যা সংবাদ’ ছড়ানোর হুমকি দেয়। ফলে থানা-পুলিশও অভিযোগ নিতে গড়িমসি করে। রাজনৈতিক প্রভাবতো সাথে আছেই, তাই সাধারণ মানুষ তাদের হয়রানি সহ্য করেই নীরব থাকে।”

কিশোরীর দাদি মোছা: রাহেনা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ছেলের কষ্টের টাকা, অনেক কষ্ট করে কামাই করা সেই টাকা দুই সাংবাদিক নিয়ে গেছে। আবার বিয়েটাও ভেঙে দিল। কি সর্বনাশ করল আমার, আমি ওদের বিচার চাই।”

কিশোরীর খালা বিপাশা শিকদার বলেন, “আলমগীর ও কবির নামে দুই সাংবাদিক বিয়ের অনুষ্ঠানে এসে বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে হবে। পরে প্রশাসন ম্যানেজের দায়িত্ব নিয়ে ৪ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়। এরপরেই প্রশাসন এসে বিয়ে বন্ধ করে দেয়।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আলমগীর কবির বলেন, “বানা ইউনিয়ন আমার এলাকা। আমার এলাকায় বাল্যবিয়ের খবর পেয়ে আমি সেখানে যাই এবং ইউএনওকে অবহিত করি। কোনো টাকা নিইনি।”

অপর অভিযুক্ত কবির হোসেনের বক্তব্য জানতে একাধিকবার তার মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া সম্ভব হয়নি।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম রায়হানুর রহমান বলেন, “বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলমান। কিশোরীর খালা বিপাশা আমাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন, দুজন ব্যক্তি সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনকে ম্যানেজের কথা বলে টাকা নিয়েছেন। তিনি আলমগীর কবিরের ছবি দেখিয়ে শনাক্তও করেছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

প্রেসক্লাব আলফাডাঙ্গার সভাপতি আরিফুজ্জামান চাকলাদার বলেন, “আলমগীর ও কবিরের নেতৃত্বে একটি চক্র সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে চাঁদাবাজি করছে। তারা নিজেরা ছাড়াও আরও কিছু অপরাধী চরিত্রের লোকদের ভুয়া সাংবাদিক পরিচয়পত্র ও অনিবন্ধিত পোর্টালের নাম ব্যবহার করে ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করছে। প্রশাসনের উচিত এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।”

রুরাল জার্নালিস্ট ফাউন্ডেশনের মহাসচিব সেকেন্দার আলম বলেন, “এই ঘটনায় আমরা সবাই নিউজ করব। প্রশাসনের জরুরি কঠোর পদক্ষেপ দরকার।”

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৪:৩০:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫
Translate »

বাল্যবিয়ে ঠেকানোর নামে সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, দুইজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

আপডেট : ০৪:৩০:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় এক কিশোরীকে বাল্যবিবাহ দেওয়ার আয়োজনের সময় সাংবাদিক পরিচয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে আলমগীর কবির ও কবির হোসেন নামের দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

বুধবার (১১ জুন) বিকেলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের এক স্টাফ গোপনে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। পরে তাৎক্ষণিক দক্ষিণ শিরগ্রামের প্রবাসী লাভলু খানের বাড়িতে গিয়ে কয়েকজন স্থানীয় সাংবাদিক ঘটনাটি যাচাই করতে গিয়ে জানতে পারেন, বেলা আড়াইটায় প্রশাসন ম্যানেজের নামে ৪ হাজার টাকা চাঁদা আদায়ের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রবাসী লাভলু খানের কিশোরী মেয়ে এশা (১৬) চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তার বাবা একজন প্রবাসী। এশার সঙ্গে মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার চরঝামা গ্রামের এক ছেলের বিয়ের আয়োজন চলছিল। মঙ্গলবার রাতে গায়েহলুদের অনুষ্ঠান শেষে বুধবার দুপুরে শতাধিক বরযাত্রী নিয়ে বরপক্ষ বিয়ে সম্পন্ন করতে কনের বাড়িতে হাজির হয়।

অনুষ্ঠান চলাকালে সাংবাদিক পরিচয়ে বাড়িতে হাজির হন আলমগীর কবির (৪৭) ও কবির হোসেন (৪৬)। তারা বাল্যবিয়ের আইন দেখিয়ে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন পাঠানোর ভয় দেখান এবং ‘সমাধান’ দেওয়ার কথা বলে পরিবারের কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ করেন কিশোরীর খালা বিপাশা শিকদার।

আলমগীর কবির উপজেলার বানা ইউনিয়নের দীঘলবানার মৃত আইন উদ্দিনের ছেলে। তিনি বানা ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। এছাড়া তিনি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন ফরম ধানমন্ডির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করে জমা দেন। চলতি বছরের এক-দুই মাস আগে উপজেলার লাল্টু নামের এক ব্যক্তি তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির লিখিত অভিযোগ দেন।

কবির হোসেন, পৌরসদরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আব্দুল জলিল মিয়ার ছেলে। তিনি আলফাডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক এবং বর্তমান উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্থানীয় রাজনীতিতে এখনও সক্রিয় বলে জানা গেছে।

খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অনুপস্থিতিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঘটনাস্থলে গিয়ে বিয়ের আয়োজন বন্ধ করেন। দুইজন অভিভাবককে তাঁর কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে পরিস্থিতি বিবেচনায় ছেলে পক্ষকে ২ হাজার টাকা জরিমানা এবং কিশোরী পক্ষের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়ার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

এর আগেও এই দুজনের বিরুদ্ধে একাধিক চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। ২০২২ সালে উপজেলার কঠুরাকান্দি গ্রামের এক ভ্যানচালকের কাছ থেকেও ৪০০ টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে। ২০২১ সালে এই দু’জনের বিরুদ্ধেই থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা হয়, তবে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বারবার এসব অভিযোগ থেকে পার পেয়ে যান বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

উপজেলার সদর বাজারের স্থানীয় কসাইখানা ‘মায়ের দোয়া গোস্ত ভান্ডার’ থেকে ভয় দেখিয়ে মাংস নিয়ে টাকা না দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সংবাদ ২০২৩ সালের অক্টোবরে জাতীয় গণমাধ্যম জনবানী ও কালবেলাতে প্রকাশিত হয়। এ ঘটনার পর কালবেলার তৎকালীন উপজেলা প্রতিনিধি‌কে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন আলমগীর কবির। এরপর থানায় তার বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এ বিষয়েও কালবেলায় আরেকটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এছাড়াও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমানের নাম ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরীর চাকরি দেওয়ার প্রলোভনে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয়দের অভিযোগ, “সাংবাদিকতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়মে লিপ্ত তারা। নামসর্বস্ব পত্রিকা ও ফেসবুকে ‘মিথ্যা সংবাদ’ ছড়ানোর হুমকি দেয়। ফলে থানা-পুলিশও অভিযোগ নিতে গড়িমসি করে। রাজনৈতিক প্রভাবতো সাথে আছেই, তাই সাধারণ মানুষ তাদের হয়রানি সহ্য করেই নীরব থাকে।”

কিশোরীর দাদি মোছা: রাহেনা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ছেলের কষ্টের টাকা, অনেক কষ্ট করে কামাই করা সেই টাকা দুই সাংবাদিক নিয়ে গেছে। আবার বিয়েটাও ভেঙে দিল। কি সর্বনাশ করল আমার, আমি ওদের বিচার চাই।”

কিশোরীর খালা বিপাশা শিকদার বলেন, “আলমগীর ও কবির নামে দুই সাংবাদিক বিয়ের অনুষ্ঠানে এসে বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে হবে। পরে প্রশাসন ম্যানেজের দায়িত্ব নিয়ে ৪ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়। এরপরেই প্রশাসন এসে বিয়ে বন্ধ করে দেয়।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আলমগীর কবির বলেন, “বানা ইউনিয়ন আমার এলাকা। আমার এলাকায় বাল্যবিয়ের খবর পেয়ে আমি সেখানে যাই এবং ইউএনওকে অবহিত করি। কোনো টাকা নিইনি।”

অপর অভিযুক্ত কবির হোসেনের বক্তব্য জানতে একাধিকবার তার মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া সম্ভব হয়নি।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম রায়হানুর রহমান বলেন, “বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলমান। কিশোরীর খালা বিপাশা আমাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন, দুজন ব্যক্তি সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনকে ম্যানেজের কথা বলে টাকা নিয়েছেন। তিনি আলমগীর কবিরের ছবি দেখিয়ে শনাক্তও করেছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

প্রেসক্লাব আলফাডাঙ্গার সভাপতি আরিফুজ্জামান চাকলাদার বলেন, “আলমগীর ও কবিরের নেতৃত্বে একটি চক্র সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে চাঁদাবাজি করছে। তারা নিজেরা ছাড়াও আরও কিছু অপরাধী চরিত্রের লোকদের ভুয়া সাংবাদিক পরিচয়পত্র ও অনিবন্ধিত পোর্টালের নাম ব্যবহার করে ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করছে। প্রশাসনের উচিত এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।”

রুরাল জার্নালিস্ট ফাউন্ডেশনের মহাসচিব সেকেন্দার আলম বলেন, “এই ঘটনায় আমরা সবাই নিউজ করব। প্রশাসনের জরুরি কঠোর পদক্ষেপ দরকার।”