London ০৪:২২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাদাম চাষি থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট, পেয়েছেন শান্তিতে নোবেল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের শতবর্ষী সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের মৃত্যুতে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আমেরিকার জনগণের কাছে কখনও মিথ্যা না বলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন তিনি। জর্জিয়ার একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে এসে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দিয়েছেন জিমি কার্টার। তিনি ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দেশটির ৩৯তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

জিমি কার্টার একজন চিনাবাদাম চাষি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া প্রথম মার্কিন নেতা ছিলেন। তিনি মিশর ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তির মধ্যস্ততায় সহায়তা করেছেন। তবে তার সময়ে ইরানে মার্কিন দূতাবাসে ৫২ জন মার্কিন কূটনীতিক ও নাগরিককে জিম্মি করা হয়। এছাড়া আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের মোকাবিলা করতেও তাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।

প্রথম মেয়াদের পর তিনি দ্বিতীয় বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তবে দ্বিতীয় বার তিনি মাত্র ছয়টি অঙ্গরাজ্যে জয়লাভ করেন। সে সময় রোনাল্ড রিগ্যান তাকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করে।

হোয়াইট হাউজ ছাড়ার পর তিনি নিজের হারানো জনপ্রিয়তা ফিরে পেতে কাজ শুরু করেন। তিনি কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন মানবিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। মানবাধিকার রক্ষা, দারিদ্র্য কমিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশে কর্মসূচি, আন্তর্জাতিক সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রচেষ্টা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতিসাধন এবং পরিবেশ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন তিনি। এসব কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০২ সালে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

চলতি বছরের অক্টোবরে তিনি তার শততম জন্মদিন পালন করেছেন। গত ১৯ মাস ধরে তিনি ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করেছেন। এই দীর্ঘ সময় তার চিকিৎসা চলেছে কিন্তু স্বাস্থ্যের কোনো উন্নতি ঘটেনি। ১৯২৪ সালের ১ অক্টোবর তিনি জর্জিয়ার প্লেইন্সের একটি ছোট্ট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

তার বাবার চীনা বাদামের ব্যবসা ছিল এবং তার মা ছিলেন একজন নার্স। হাইস্কুলে পড়ার সময়ে বাস্কেটবল তারকা হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। জিমি কার্টার মার্কিন নৌবাহিনীতে সাত বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। সে সময়ে তিনি তার বোনের বন্ধু রোজালিনকে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে তিনি একজন সাবমেরিন অফিসার হয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৫৩ সালে তার বাবার মৃত্যুতে তিনি তার পারিবারিক খামার পরিচালনার জন্য বাড়ি ফিরে আসেন এবং চীনা বাদামের চাষাবাদ শুরু করেন।

প্রথম বছর খরার কারণে তিনি ফসলের দেখা পাননি। কিন্তু জিমি কার্টার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হন এবং তিনি এ থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। একপর্যায়ে তিনি এই ব্যবসা থেকেই কোটিপতি হয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। জর্জিয়া থেকে তিনি কংগ্রেস সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি জর্জিয়ার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৬ সালে ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান জিমি কার্টার। সে সময় ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৪:৩২:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
১১
Translate »

বাদাম চাষি থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট, পেয়েছেন শান্তিতে নোবেল

আপডেট : ০৪:৩২:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের শতবর্ষী সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের মৃত্যুতে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আমেরিকার জনগণের কাছে কখনও মিথ্যা না বলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন তিনি। জর্জিয়ার একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে এসে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দিয়েছেন জিমি কার্টার। তিনি ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দেশটির ৩৯তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

জিমি কার্টার একজন চিনাবাদাম চাষি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া প্রথম মার্কিন নেতা ছিলেন। তিনি মিশর ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তির মধ্যস্ততায় সহায়তা করেছেন। তবে তার সময়ে ইরানে মার্কিন দূতাবাসে ৫২ জন মার্কিন কূটনীতিক ও নাগরিককে জিম্মি করা হয়। এছাড়া আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের মোকাবিলা করতেও তাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।

প্রথম মেয়াদের পর তিনি দ্বিতীয় বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তবে দ্বিতীয় বার তিনি মাত্র ছয়টি অঙ্গরাজ্যে জয়লাভ করেন। সে সময় রোনাল্ড রিগ্যান তাকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করে।

হোয়াইট হাউজ ছাড়ার পর তিনি নিজের হারানো জনপ্রিয়তা ফিরে পেতে কাজ শুরু করেন। তিনি কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন মানবিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। মানবাধিকার রক্ষা, দারিদ্র্য কমিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশে কর্মসূচি, আন্তর্জাতিক সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রচেষ্টা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতিসাধন এবং পরিবেশ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন তিনি। এসব কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০২ সালে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

চলতি বছরের অক্টোবরে তিনি তার শততম জন্মদিন পালন করেছেন। গত ১৯ মাস ধরে তিনি ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করেছেন। এই দীর্ঘ সময় তার চিকিৎসা চলেছে কিন্তু স্বাস্থ্যের কোনো উন্নতি ঘটেনি। ১৯২৪ সালের ১ অক্টোবর তিনি জর্জিয়ার প্লেইন্সের একটি ছোট্ট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

তার বাবার চীনা বাদামের ব্যবসা ছিল এবং তার মা ছিলেন একজন নার্স। হাইস্কুলে পড়ার সময়ে বাস্কেটবল তারকা হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। জিমি কার্টার মার্কিন নৌবাহিনীতে সাত বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। সে সময়ে তিনি তার বোনের বন্ধু রোজালিনকে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে তিনি একজন সাবমেরিন অফিসার হয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৫৩ সালে তার বাবার মৃত্যুতে তিনি তার পারিবারিক খামার পরিচালনার জন্য বাড়ি ফিরে আসেন এবং চীনা বাদামের চাষাবাদ শুরু করেন।

প্রথম বছর খরার কারণে তিনি ফসলের দেখা পাননি। কিন্তু জিমি কার্টার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হন এবং তিনি এ থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। একপর্যায়ে তিনি এই ব্যবসা থেকেই কোটিপতি হয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। জর্জিয়া থেকে তিনি কংগ্রেস সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি জর্জিয়ার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৬ সালে ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান জিমি কার্টার। সে সময় ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।