London ০৫:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
সাউন্ড গ্রেনেড-জলকামানে পণ্ড আউটসোর্সিং কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচি বাসে ডাকাতি-শ্লীলতাহানি: তিন ডাকাত গ্রেপ্তার, এএসআই বরখাস্ত টেকসই ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির জন্য ইবিএফসিআই ও বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডনের অংশীদারিত্ব জোরদারের আহ্বান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি বিরোধ, বিক্ষোভে উত্তাল চট্টগ্রাম তহিরুন নেছা চৌধুরী একাডেমির গুণীজন সম্মাননায় ভূষিত হলেন সমাজসেবক ও মানবিক ব্যক্তিত্ব মোঃ শহিদুল ইসলাম ঝিনাইদহে চরমপন্থি ৩ নেতা খুন, ১৬ ঘণ্টায়ও হয়নি মামলা হাসিনার পতন একদিনে ঘটেনি, অনেক বছরের ত্যাগ-সংগ্রাম আছে মির্জা ফখরুল রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি যে কারণে বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার ভাঙল শিক্ষার্থীরা চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে আউটসোর্সিং কর্মীদের সড়ক অবরোধ

বাজারে মিলছে না সয়াবিন তেল, কোম্পানিগুলোর দাবি অঢেল

অনলাইন ডেস্ক

দেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলের বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ সংকট তৈরির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এতে বাধ্য হয়ে বেশি দামে ভোক্তাকে এই তেল কিনতে হচ্ছে। আবার কোনো কোনো এলাকায় অন্য পণ্য ক্রয়ের শর্তে ভোজ্যতেল দেওয়া হচ্ছে। এদিকে দেশের ভোজ্যতেল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো বলছে, আগের বছরগুলোর তুলনায় তারা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়িয়েছে।

রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক বৈঠকে এমন দাবি করে কোম্পানিগুলো। আসন্ন পবিত্র রমজানে ভোজ্যতেলের বাজারে সার্বিক সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে ওই বৈঠকে কমিশনের চেয়ারম্যান (সচিব) ড. মইনুল খান সভাপতিত্ব করেন। সেখানে দেশের শীর্ষ ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা ছিলেন।

এসময় সভায় বাজারে সয়াবিন তেলের ঘাটতি রয়েছি কি না তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তখন কোম্পানিগুলো জানান, তেলের কোনো সংকট নেই। বরং আগের চেয়ে এখন সরবরাহ বেশি দেওয়া হচ্ছে। যদিও ভোক্তারা বাজারে পুরোপুরি ভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। তেল পাওয়া যাচ্ছে না অধিকাংশ দোকানে।

বৈঠকে সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাব চক্রবর্তী বলেন, সিটি গ্রুপ গত জানুয়ারি মাসে প্রায় ৫০ হাজার ৭০০ টন তেল সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে ২২ হাজার ২৪২ টন বোতলজাত। ঠিক গত বছরের একই সময় (জানুয়ারি ২০২৪) তারা ১৪ হাজার ২৬২ টন বোতলজাত তেল সরবরাহ করেছিল।

ভোজ্যতেলের বাজারের আরেক শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) উপ-মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার বলেন, মেঘনা জানুয়ারিতে ৪৭ হাজার ৬৬৮ হাজার টন তেল সরবরাহ করে। এর মধ্যে ১৫ হাজার টন বোতলজাত তেল। পূর্ববর্তী বছরে সরবরাহ ছিল ২৫ হাজার টন, যার মধ্যে ১২ হাজার টন বোতলজাত ছিল।

একইভাবে তেলের সরবরাহ বাড়ানোর তথ্য দেন টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতাহার তসলিম। টিকের সরবরাহ আগের বছর ছিল সাড়ে নয় হাজার টন, যা এখন ১১ হাজার ৮১০ টন হয়েছে।

এরপর অন্যান্য তেল সরবরাহকারীদের তথ্যও নেওয়া হয়। সবার তথ্য নিয়ে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি।

পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা জানান, রমজান উপলক্ষে পাইপলাইনে বেশ কিছু ভোজ্যতেলভর্তি জাহাজ চট্টগ্রামের বন্দরে নোঙর করার অপেক্ষায় আছে। এগুলো অল্প সময়ের মধ্যে স্থানীয় সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত হবে। পাইপলাইনে থাকা ভোজ্যতেলের পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ টন।

এরপর সভায় দেশে ভোজ্যতেলের সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়। তারপরও বাজারে কেন সংকট এমন প্রশ্নে ওইসব ব্যবসায়ীরা জানান, মাঠ পর্যায়ে কেউ কেউ অতিরিক্ত মজুত করে থাকতে পারে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে কেউ কেউ অধিক লাভের আশায় বোতল কেটে খোলা তেল হিসেবে বেশি দামে বিক্রি করছে। অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী দেশে মূল্য অধিক হওয়ায় অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য হওয়ারও আশঙ্কার কথাও বলেন সরবরাহকারী কোম্পানির প্রতিনিধিরা।

ব্যবসায়ীদের এসব কথা শুনে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্যারিফ কমিশন

১. স্থানীয় বাজারে ভোজ্যতেলের কোনো ঘাটতি নেই। যেটি হয়েছে তা কৃত্রিম এবং প্রকৃত তথ্যের ঘাটতি থেকে সৃষ্ট। তাই ভোক্তাসাধারণের স্বার্থ রক্ষায় উৎপাদন ও বিপণনের সব পর্যায়ে বাজার মনিটরিং করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

২. কেউ কেউ অন্যান্য পণ্য ক্রয়ের শর্তে ভোজ্যতেল বাজারজাত করে থাকে। উৎপাদক বা অন্যান্য কোনো পর্যায়ে এ ধরনের শর্তযুক্ত বিক্রয় বা বাজারজাত করা প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ধরনের কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

৩. ভোজ্যতেলের অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য হচ্ছে কি না তা সীমান্ত সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ও সংস্থাগুলো খতিয়ে দেখবে এবং তা প্রতিরোধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

৪. ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের স্ব-স্ব নিয়োগ করা পরিবেশকদের কাছে সরবরাহ করা ভোজ্যতেল ভোক্তাদের কাছে নির্ধারিত মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় তদারকি করবেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৩:৩৩:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
১০
Translate »

বাজারে মিলছে না সয়াবিন তেল, কোম্পানিগুলোর দাবি অঢেল

আপডেট : ০৩:৩৩:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

দেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলের বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ সংকট তৈরির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এতে বাধ্য হয়ে বেশি দামে ভোক্তাকে এই তেল কিনতে হচ্ছে। আবার কোনো কোনো এলাকায় অন্য পণ্য ক্রয়ের শর্তে ভোজ্যতেল দেওয়া হচ্ছে। এদিকে দেশের ভোজ্যতেল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো বলছে, আগের বছরগুলোর তুলনায় তারা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়িয়েছে।

রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক বৈঠকে এমন দাবি করে কোম্পানিগুলো। আসন্ন পবিত্র রমজানে ভোজ্যতেলের বাজারে সার্বিক সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে ওই বৈঠকে কমিশনের চেয়ারম্যান (সচিব) ড. মইনুল খান সভাপতিত্ব করেন। সেখানে দেশের শীর্ষ ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা ছিলেন।

এসময় সভায় বাজারে সয়াবিন তেলের ঘাটতি রয়েছি কি না তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তখন কোম্পানিগুলো জানান, তেলের কোনো সংকট নেই। বরং আগের চেয়ে এখন সরবরাহ বেশি দেওয়া হচ্ছে। যদিও ভোক্তারা বাজারে পুরোপুরি ভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। তেল পাওয়া যাচ্ছে না অধিকাংশ দোকানে।

বৈঠকে সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাব চক্রবর্তী বলেন, সিটি গ্রুপ গত জানুয়ারি মাসে প্রায় ৫০ হাজার ৭০০ টন তেল সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে ২২ হাজার ২৪২ টন বোতলজাত। ঠিক গত বছরের একই সময় (জানুয়ারি ২০২৪) তারা ১৪ হাজার ২৬২ টন বোতলজাত তেল সরবরাহ করেছিল।

ভোজ্যতেলের বাজারের আরেক শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) উপ-মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার বলেন, মেঘনা জানুয়ারিতে ৪৭ হাজার ৬৬৮ হাজার টন তেল সরবরাহ করে। এর মধ্যে ১৫ হাজার টন বোতলজাত তেল। পূর্ববর্তী বছরে সরবরাহ ছিল ২৫ হাজার টন, যার মধ্যে ১২ হাজার টন বোতলজাত ছিল।

একইভাবে তেলের সরবরাহ বাড়ানোর তথ্য দেন টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতাহার তসলিম। টিকের সরবরাহ আগের বছর ছিল সাড়ে নয় হাজার টন, যা এখন ১১ হাজার ৮১০ টন হয়েছে।

এরপর অন্যান্য তেল সরবরাহকারীদের তথ্যও নেওয়া হয়। সবার তথ্য নিয়ে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি।

পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা জানান, রমজান উপলক্ষে পাইপলাইনে বেশ কিছু ভোজ্যতেলভর্তি জাহাজ চট্টগ্রামের বন্দরে নোঙর করার অপেক্ষায় আছে। এগুলো অল্প সময়ের মধ্যে স্থানীয় সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত হবে। পাইপলাইনে থাকা ভোজ্যতেলের পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ টন।

এরপর সভায় দেশে ভোজ্যতেলের সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়। তারপরও বাজারে কেন সংকট এমন প্রশ্নে ওইসব ব্যবসায়ীরা জানান, মাঠ পর্যায়ে কেউ কেউ অতিরিক্ত মজুত করে থাকতে পারে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে কেউ কেউ অধিক লাভের আশায় বোতল কেটে খোলা তেল হিসেবে বেশি দামে বিক্রি করছে। অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী দেশে মূল্য অধিক হওয়ায় অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য হওয়ারও আশঙ্কার কথাও বলেন সরবরাহকারী কোম্পানির প্রতিনিধিরা।

ব্যবসায়ীদের এসব কথা শুনে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্যারিফ কমিশন

১. স্থানীয় বাজারে ভোজ্যতেলের কোনো ঘাটতি নেই। যেটি হয়েছে তা কৃত্রিম এবং প্রকৃত তথ্যের ঘাটতি থেকে সৃষ্ট। তাই ভোক্তাসাধারণের স্বার্থ রক্ষায় উৎপাদন ও বিপণনের সব পর্যায়ে বাজার মনিটরিং করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

২. কেউ কেউ অন্যান্য পণ্য ক্রয়ের শর্তে ভোজ্যতেল বাজারজাত করে থাকে। উৎপাদক বা অন্যান্য কোনো পর্যায়ে এ ধরনের শর্তযুক্ত বিক্রয় বা বাজারজাত করা প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ধরনের কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

৩. ভোজ্যতেলের অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য হচ্ছে কি না তা সীমান্ত সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ও সংস্থাগুলো খতিয়ে দেখবে এবং তা প্রতিরোধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

৪. ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের স্ব-স্ব নিয়োগ করা পরিবেশকদের কাছে সরবরাহ করা ভোজ্যতেল ভোক্তাদের কাছে নির্ধারিত মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় তদারকি করবেন।