London ০৮:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ কোন পথে’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত নেত্রকোনা সীমান্তে টংক আন্দোলনের নেত্রী রাশি মণি’র হাজংয়ের ৭৯তম প্রয়াণ দিবস পালিত ফরিদপুরে রিকশা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চালককে হত্যা বিয়ে করলেন সারজিস আলম টিকটকে আসক্ত মেয়েকে গুলি করে হত্যা উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ প্লে-অফেই রিয়াল-সিটি লড়াই, বাকি ম্যাচে কে কার প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগ কোনো প্রোগ্রাম করার চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ ট্রাম্পের মঞ্চে কোমর ধরে তরুণীকে কাছে টেনে ফ্লার্টিং শাহরুখের! ভিডিও ভাইরাল ১৪ সেকেন্ডের দুষ্টু ভঙ্গির ভিডিওতে ঝড় তুললেন পরীমণি!

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ধারা ও অধিনায়কদের কথা যেন এক সূত্রে গাঁথা

গতকাল ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুলের এই হাসি উইকেট নেওয়ার। পরে এই হাসিটা আর থাকেনিএএফপি

একই ধরনের কথা কি বারবার শুনতে হচ্ছে? ঠিক যেভাবে প্রায় একই ধাঁচের ব্যাটিংও দেখতে হচ্ছে বারবার।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের কথা শুনে মনে এই প্রশ্নটি জাগতে পারে। দিল্লিতে গতকাল রাতে ভারতের কাছে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৮৬ রানে হারের পর সম্প্রচারক চ্যানেলের সঙ্গে কথা বলেন নাজমুল। হারের কারণ হিসেবে সেখানে তিনি বলেছেন, আমরা একই ভুল করছি (প্রথম ম্যাচের মতো)। আমাদের উন্নতি করতে হবে।

নাজমুলের কথাগুলো কি নতুন লাগছে? সম্ভবত না। যেকোনো সিরিজ বা টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলের ম্যাচ হারের পর অধিনায়কের মুখ থেকে এমন কথাই শোনা যায়। ভুল হয়েছে, উন্নতি করতে হবে কিংবা উন্নতির জায়গা আছে—এমন সব কথা। কিন্তু তারপর উন্নতি হয় কতটুকু কিংবা ভুলগুলো শুধরে নেওয়া হয় কতটা? ম্যাচের পর ম্যাচ পারফরম্যান্স দেখেই এই প্রশ্ন তোলা যায়।

টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচেই ভারতের সামনে বাংলাদেশ স্রেফ উড়ে গেছে। দুই দলের খেলার ধাঁচেই ব্যবধান স্পষ্ট। ভারত খেলছে আধুনিক কিংবা উত্তর-আধুনিক ক্রিকেটের টি-টোয়েন্টি। প্রথম ম্যাচে ১২৭ রান তাড়া করে জিতেছে ৪৯ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটে। ওভারপ্রতি রান তুলেছে গড়ে ১১.১৫ করে। আবার দ্বিতীয় ম্যাচে আগে ব্যাটিং করেও রান তোলার হার প্রায় একই। ৯ উইকেটে ২২১ রান করার পথে ওভারপ্রতি ভারতের গড়ে রান তোলার হার ১১.০৫। অর্থাৎ, আগে কিংবা পরে যখনই ব্যাটিংয়ে নামুক—টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা তাঁরা টি-টোয়েন্টির মতোই খেলছে। তাতে লক্ষ্য স্বল্প হোক কিংবা বেশি।

বড় রানের পিছু ছুটতে গিয়ে আবারও ভেঙে পড়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিং

বড় রানের পিছু ছুটতে গিয়ে আবারও ভেঙে পড়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিংএএফপি

চোখের সামনে এমন উদাহরণ দেখেও বাংলাদেশ কি শিখতে পারছে? তবে ধারা কিন্তু পাল্টায়নি। আগে কিংবা পরে—যখনই ব্যাটিংয়ে নামুক, একটি বিপর্যয় এবং তারপর ছোট কিংবা মাঝারি মানের ভদ্রস্থ সংগ্রহ, এই তো! প্রথম ম্যাচে ১০ ওভারের মধ্যে ৫৭ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর রান উঠেছে মোট ১২৭। গতকাল দ্বিতীয় ম্যাচে ২২১ এর পিছু ছুটে থামতে হয়েছে ৯ উইকেটে ১৩৫ রানে। এবারও ব্যাটিংয়ের ধরনে খুব বেশি পার্থক্য নেই। ১১তম ওভারে ৮০ রানে পড়েছে পঞ্চম উইকেট। তারপর যথারীতি স্কোরটি ভদ্রস্থ করতে ম্যাচ ছেড়ে দিয়ে পুরো ২০ ওভার খেলার চেষ্টা এবং তাতে বাংলাদেশ কিন্তু সফল।

কিন্তু দুটো আলাদা ম্যাচে, সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ দলের উন্নতির চেষ্টার গ্রাফে ব্যবধান মাত্র ৮ রানের—১২৭ থেকে ১৩৫। প্রথম ম্যাচে ওভারপ্রতি গড়ে রান উঠেছে ৬.৪০ করে, আর দ্বিতীয় ম্যাচে সেটাই ৬.৭৫। ব্যাপার অনেকটাই এমন যে উইকেট, কন্ডিশন, ম্যাচের পরিস্থিতি কিংবা দল যেমনই হোক, টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ের চিরাচরিত একটি ধারা আছে। কম রানে তাকিয়ে সেই ধারাকে যদি ‘জাল’ মনে হয়, তবে সেটা ছিঁড়ে এখনো বের হয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশ।  

সেই ধারার আরেকটি উদাহরণও দেওয়া যায়। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এ পর্যন্ত ১৭৮ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৮৫ ইনিংসে আগে ব্যাট করে ওভারপ্রতি গড়ে রান তুলেছে ৭.৩৯ করে। অর্থাৎ, আগে ব্যাট করে গড় স্কোর ১৪৭.৮। ৯২ ইনিংসে (৯৩ ম্যাচ) পরে ব্যাট করে ওভারপ্রতি গড়ে রান তোলার হার ৭.৪৬—গড় স্কোর ১৪৯.২।

হিসাবটা যদি গত এক দশকে নামিয়ে আনা হয় তাহলে কী দেখা যায়? এই এক দশকে ৬৭ ইনিংসে আগে ব্যাট করে গড় স্কোর ১৪৯.২। একই সময়ে ৬৭ ইনিংসে পরে ব্যাট করে গড় স্কোর ১৫০.২। হিসাবটা নামিয়ে আনা যাক গত ৫ বছরে। এ সময়ে ৪৬ ইনিংসে আগে ব্যাট করে গড় স্কোর ১৪৩.৮। আর ৪২ ইনিংসে পরে ব্যাট করে গড় স্কোর ১৪৮.৪। যদি এই হিসাবই আরও ছোট করা হয়, তাহলে কী দেখা যায়? শুধু নাজমুলের অধিনায়কত্বের সময়টাই না হয় দেখে নেওয়া যাক।

অধিনায়ক নাজমুল নিজেও ব্যাটে রান পাচ্ছেন না

অধিনায়ক নাজমুল নিজেও ব্যাটে রান পাচ্ছেন নাএএফপি

নাজমুল আনুষ্ঠানিকভাবে তিন সংস্করণেই বাংলাদেশের অধিনায়ক হয়েছেন এ বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি। তাঁর এ সময়কে বিবেচনায় রেখেই ব্যাটিংয়ে সর্বশেষ ১২ মাসের ধারাটা দেখে নেওয়া যায়। এ সময় ৯ ইনিংসে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশের গড় স্কোর ১৪১। পরে ব্যাট করে ১৩ ইনিংসে গড় স্কোর ১৫০.২।

লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ১৯ বছর পেরিয়ে এসেছে, এ সময়ে সব দলই সময়ের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। টি১০ চলে এসেছে এরই মধ্যে, ব্যাটিং হয়ে উঠেছে আরও আক্রমণাত্মক। ২০ ওভারের ক্রিকেটে এখন আর হাল ধরার কিছু নেই, পুরোটাই যেন ওয়ানডে ইনিংসের হাইলাইটস। অন্তত অন্য দলগুলোর খেলা দেখলে তেমনই মনে হয়। প্রথম দুই ম্যাচে ভারতের ব্যাটিংটা একবার কল্পনা করুন। সেটাও প্রয়োজন নেই। মাঝারি মানের শক্তিধর দলগুলোর ব্যাটিংয়ের দিকে তাকান, অন্তত উন্নতির চেষ্টার ছাপটা চোখে পড়বেই।

শুধু বাংলাদেশই সম্ভবত ব্যতিক্রম। দুই দশক পেরিয়ে টি-টোয়েন্টির ব্যাটিং যে স্তরে পৌঁছেছে, বাংলাদেশের কি তা নিয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ আছে? অধিনায়ক যান, অধিনায়ক আসেন, খেলোয়াড়ও বেশ পাল্টানো হয়, পাল্টায় না শুধু ব্যাটিংয়ের ধাঁচ। আগে কিংবা পরে যখনই ব্যাটিংয়ে নামুক, ১৫০–এর এপাশে বিশেষ করে ১৩০-১৪০ এর ভেতরে থাকাটাই যেন নিয়তি। আর সেই নিয়তিতে তাকিয়েই প্রশ্নটি ওঠে—অধিনায়কেরা এই যে এত উন্নতির চেষ্টার কথা বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলেন, সেগুলো কি স্রেফ ভক্তদের শান্ত রাখার বুলি?

ব্যাটিংয়ের এই চিত্র থেকে মুক্তির পথ কি

ব্যাটিংয়ের এই চিত্র থেকে মুক্তির পথ কিএএফপি

গতকাল হারের পর সম্প্রচার চ্যানেলে অধিনায়ক নাজমুলের কথাগুলো শুনুন, ‘আমার মনে হয়, আমরা একই ভুল করেছি (প্রথম ম্যাচের মতো), দল হিসেবে যা মোটেও ভালো ব্যাপার নয়। আমাদের উন্নতি করতে হবে…আমরা পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পারিনি। ব্যাটসম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিতে হবে। নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে।’

ভক্তদের এমন কথা শুনতে শুনতে কান পচে যাওয়ার দশা। অধিনায়ক নাজমুলেরও সম্ভবত একই প্রতিশ্রুতি বারবার দিতে কিংবা বারবার ভুল স্বীকার করতে ভালো লাগার কথা নয়। কিন্তু ব্যাটিংয়ের যে ধারা, সেটাও তো পাল্টাচ্ছে না। দিল্লিতে ৮৬ রানে হেরে সিরিজও হারের পর শনিবার হায়দরাবাদে তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ। প্রশ্ন হলো, এই ম্যাচে কি কেউ ব্যতিক্রমী কিছু আশা করছেন?

সম্ভবত না, তা ক্রিকেট যতই গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা হোক। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ধারা এবং অধিনায়কদের কথা যে সেই অনিশ্চয়তার মাঝেও নিশ্চয়তার ধারক ও বাহক।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৭:৫০:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪
৪২
Translate »

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ধারা ও অধিনায়কদের কথা যেন এক সূত্রে গাঁথা

আপডেট : ০৭:৫০:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪

গতকাল ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুলের এই হাসি উইকেট নেওয়ার। পরে এই হাসিটা আর থাকেনিএএফপি

একই ধরনের কথা কি বারবার শুনতে হচ্ছে? ঠিক যেভাবে প্রায় একই ধাঁচের ব্যাটিংও দেখতে হচ্ছে বারবার।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের কথা শুনে মনে এই প্রশ্নটি জাগতে পারে। দিল্লিতে গতকাল রাতে ভারতের কাছে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৮৬ রানে হারের পর সম্প্রচারক চ্যানেলের সঙ্গে কথা বলেন নাজমুল। হারের কারণ হিসেবে সেখানে তিনি বলেছেন, আমরা একই ভুল করছি (প্রথম ম্যাচের মতো)। আমাদের উন্নতি করতে হবে।

নাজমুলের কথাগুলো কি নতুন লাগছে? সম্ভবত না। যেকোনো সিরিজ বা টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলের ম্যাচ হারের পর অধিনায়কের মুখ থেকে এমন কথাই শোনা যায়। ভুল হয়েছে, উন্নতি করতে হবে কিংবা উন্নতির জায়গা আছে—এমন সব কথা। কিন্তু তারপর উন্নতি হয় কতটুকু কিংবা ভুলগুলো শুধরে নেওয়া হয় কতটা? ম্যাচের পর ম্যাচ পারফরম্যান্স দেখেই এই প্রশ্ন তোলা যায়।

টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচেই ভারতের সামনে বাংলাদেশ স্রেফ উড়ে গেছে। দুই দলের খেলার ধাঁচেই ব্যবধান স্পষ্ট। ভারত খেলছে আধুনিক কিংবা উত্তর-আধুনিক ক্রিকেটের টি-টোয়েন্টি। প্রথম ম্যাচে ১২৭ রান তাড়া করে জিতেছে ৪৯ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটে। ওভারপ্রতি রান তুলেছে গড়ে ১১.১৫ করে। আবার দ্বিতীয় ম্যাচে আগে ব্যাটিং করেও রান তোলার হার প্রায় একই। ৯ উইকেটে ২২১ রান করার পথে ওভারপ্রতি ভারতের গড়ে রান তোলার হার ১১.০৫। অর্থাৎ, আগে কিংবা পরে যখনই ব্যাটিংয়ে নামুক—টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা তাঁরা টি-টোয়েন্টির মতোই খেলছে। তাতে লক্ষ্য স্বল্প হোক কিংবা বেশি।

বড় রানের পিছু ছুটতে গিয়ে আবারও ভেঙে পড়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিং

বড় রানের পিছু ছুটতে গিয়ে আবারও ভেঙে পড়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিংএএফপি

চোখের সামনে এমন উদাহরণ দেখেও বাংলাদেশ কি শিখতে পারছে? তবে ধারা কিন্তু পাল্টায়নি। আগে কিংবা পরে—যখনই ব্যাটিংয়ে নামুক, একটি বিপর্যয় এবং তারপর ছোট কিংবা মাঝারি মানের ভদ্রস্থ সংগ্রহ, এই তো! প্রথম ম্যাচে ১০ ওভারের মধ্যে ৫৭ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর রান উঠেছে মোট ১২৭। গতকাল দ্বিতীয় ম্যাচে ২২১ এর পিছু ছুটে থামতে হয়েছে ৯ উইকেটে ১৩৫ রানে। এবারও ব্যাটিংয়ের ধরনে খুব বেশি পার্থক্য নেই। ১১তম ওভারে ৮০ রানে পড়েছে পঞ্চম উইকেট। তারপর যথারীতি স্কোরটি ভদ্রস্থ করতে ম্যাচ ছেড়ে দিয়ে পুরো ২০ ওভার খেলার চেষ্টা এবং তাতে বাংলাদেশ কিন্তু সফল।

কিন্তু দুটো আলাদা ম্যাচে, সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ দলের উন্নতির চেষ্টার গ্রাফে ব্যবধান মাত্র ৮ রানের—১২৭ থেকে ১৩৫। প্রথম ম্যাচে ওভারপ্রতি গড়ে রান উঠেছে ৬.৪০ করে, আর দ্বিতীয় ম্যাচে সেটাই ৬.৭৫। ব্যাপার অনেকটাই এমন যে উইকেট, কন্ডিশন, ম্যাচের পরিস্থিতি কিংবা দল যেমনই হোক, টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ের চিরাচরিত একটি ধারা আছে। কম রানে তাকিয়ে সেই ধারাকে যদি ‘জাল’ মনে হয়, তবে সেটা ছিঁড়ে এখনো বের হয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশ।  

সেই ধারার আরেকটি উদাহরণও দেওয়া যায়। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এ পর্যন্ত ১৭৮ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৮৫ ইনিংসে আগে ব্যাট করে ওভারপ্রতি গড়ে রান তুলেছে ৭.৩৯ করে। অর্থাৎ, আগে ব্যাট করে গড় স্কোর ১৪৭.৮। ৯২ ইনিংসে (৯৩ ম্যাচ) পরে ব্যাট করে ওভারপ্রতি গড়ে রান তোলার হার ৭.৪৬—গড় স্কোর ১৪৯.২।

হিসাবটা যদি গত এক দশকে নামিয়ে আনা হয় তাহলে কী দেখা যায়? এই এক দশকে ৬৭ ইনিংসে আগে ব্যাট করে গড় স্কোর ১৪৯.২। একই সময়ে ৬৭ ইনিংসে পরে ব্যাট করে গড় স্কোর ১৫০.২। হিসাবটা নামিয়ে আনা যাক গত ৫ বছরে। এ সময়ে ৪৬ ইনিংসে আগে ব্যাট করে গড় স্কোর ১৪৩.৮। আর ৪২ ইনিংসে পরে ব্যাট করে গড় স্কোর ১৪৮.৪। যদি এই হিসাবই আরও ছোট করা হয়, তাহলে কী দেখা যায়? শুধু নাজমুলের অধিনায়কত্বের সময়টাই না হয় দেখে নেওয়া যাক।

অধিনায়ক নাজমুল নিজেও ব্যাটে রান পাচ্ছেন না

অধিনায়ক নাজমুল নিজেও ব্যাটে রান পাচ্ছেন নাএএফপি

নাজমুল আনুষ্ঠানিকভাবে তিন সংস্করণেই বাংলাদেশের অধিনায়ক হয়েছেন এ বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি। তাঁর এ সময়কে বিবেচনায় রেখেই ব্যাটিংয়ে সর্বশেষ ১২ মাসের ধারাটা দেখে নেওয়া যায়। এ সময় ৯ ইনিংসে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশের গড় স্কোর ১৪১। পরে ব্যাট করে ১৩ ইনিংসে গড় স্কোর ১৫০.২।

লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ১৯ বছর পেরিয়ে এসেছে, এ সময়ে সব দলই সময়ের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। টি১০ চলে এসেছে এরই মধ্যে, ব্যাটিং হয়ে উঠেছে আরও আক্রমণাত্মক। ২০ ওভারের ক্রিকেটে এখন আর হাল ধরার কিছু নেই, পুরোটাই যেন ওয়ানডে ইনিংসের হাইলাইটস। অন্তত অন্য দলগুলোর খেলা দেখলে তেমনই মনে হয়। প্রথম দুই ম্যাচে ভারতের ব্যাটিংটা একবার কল্পনা করুন। সেটাও প্রয়োজন নেই। মাঝারি মানের শক্তিধর দলগুলোর ব্যাটিংয়ের দিকে তাকান, অন্তত উন্নতির চেষ্টার ছাপটা চোখে পড়বেই।

শুধু বাংলাদেশই সম্ভবত ব্যতিক্রম। দুই দশক পেরিয়ে টি-টোয়েন্টির ব্যাটিং যে স্তরে পৌঁছেছে, বাংলাদেশের কি তা নিয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ আছে? অধিনায়ক যান, অধিনায়ক আসেন, খেলোয়াড়ও বেশ পাল্টানো হয়, পাল্টায় না শুধু ব্যাটিংয়ের ধাঁচ। আগে কিংবা পরে যখনই ব্যাটিংয়ে নামুক, ১৫০–এর এপাশে বিশেষ করে ১৩০-১৪০ এর ভেতরে থাকাটাই যেন নিয়তি। আর সেই নিয়তিতে তাকিয়েই প্রশ্নটি ওঠে—অধিনায়কেরা এই যে এত উন্নতির চেষ্টার কথা বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলেন, সেগুলো কি স্রেফ ভক্তদের শান্ত রাখার বুলি?

ব্যাটিংয়ের এই চিত্র থেকে মুক্তির পথ কি

ব্যাটিংয়ের এই চিত্র থেকে মুক্তির পথ কিএএফপি

গতকাল হারের পর সম্প্রচার চ্যানেলে অধিনায়ক নাজমুলের কথাগুলো শুনুন, ‘আমার মনে হয়, আমরা একই ভুল করেছি (প্রথম ম্যাচের মতো), দল হিসেবে যা মোটেও ভালো ব্যাপার নয়। আমাদের উন্নতি করতে হবে…আমরা পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পারিনি। ব্যাটসম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিতে হবে। নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে।’

ভক্তদের এমন কথা শুনতে শুনতে কান পচে যাওয়ার দশা। অধিনায়ক নাজমুলেরও সম্ভবত একই প্রতিশ্রুতি বারবার দিতে কিংবা বারবার ভুল স্বীকার করতে ভালো লাগার কথা নয়। কিন্তু ব্যাটিংয়ের যে ধারা, সেটাও তো পাল্টাচ্ছে না। দিল্লিতে ৮৬ রানে হেরে সিরিজও হারের পর শনিবার হায়দরাবাদে তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ। প্রশ্ন হলো, এই ম্যাচে কি কেউ ব্যতিক্রমী কিছু আশা করছেন?

সম্ভবত না, তা ক্রিকেট যতই গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা হোক। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ধারা এবং অধিনায়কদের কথা যে সেই অনিশ্চয়তার মাঝেও নিশ্চয়তার ধারক ও বাহক।