ফরিদপুর জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি কামরুজ্জামান সিদ্দিকী কামরুলের উপরে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জেলার মডেল মসজিদ থেকে মাগরিব নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্রে নিয়ে সন্ত্রাসীরা এই হামলা চালায়।
পরে উপস্থিত মুসল্লীরা এগিয়ে এসে কামরুলকে রক্ষা করতে গেলে সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে একজন মুসল্লি আহত হন। পরে তাদের প্রতিরোধে অন্যান্য সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলেও ঘটনাস্থল থেকে একটি ধারালো চাপাতিসহ রিপন শেখ (৪৩) নামে এক সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
গ্রেপ্তার রিপন শেখ (৪৩) শহরের রঘুনন্দনপুর এলাকার মৃত সাত্তার শেখের ছেলে। তার নামে বিভিন্ন অভিযোগে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এ ঘটনার পরে সোহাগ হাওলাদার নামে আরো এক যুবককে উপস্থিত জনতা আটক করে পুলিশের সোর্পদ করে।
স্থানীয়রা জানান, আটক রিপন ফরিদপুর জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি গোলাম নাসিরের সহযোগী। এ ঘটনার পর উপস্থিত জনতা হামলার সাথে জড়িত সোহাগ হাওলাদার নামে আর এক যুবককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে।
উপস্থিত জনতার জিজ্ঞাসাবাদে রিপন জানায়, ফরিদপুর জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি গোলাম নাসিরের নির্দেশে তারা কামরুজ্জামান সিদ্দিকী কামরুল কে হত্যার উদ্দেশ্যে এ হামলা চালিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সজল নামে এক মুসুল্লী জানান, পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের মডেল মসজিদ থেকে মাগরিবের নামাজ আদায় করে বের হওয়ার সময় তিনি দেখতে পান তিন-চারজন যুবক এক ব্যক্তিকে গলায় ফাঁস দিয়ে ধস্তাধস্তি করছে। এ সময় তারা মরিচের গূড়া ছিটিয়ে দেয়। সজল বলেন, মরিচের গোঁড়া ছিটিয়ে দেয়ার বিষয়টি দেখতে পেয়ে তার সন্দেহ হয়। এ সময় তিনি এগিয়ে একজনকে জাপটে ধরার চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তার হাতে ধারালো চাপাতি দিয়ে কোপ দেয়। এতে সজলের দুই হাতের পাঞ্জা কেটে যায়। উদ্ধার হওয়া চাপাতিটি খুবই ধারালো। উপস্থিত মুসুল্লিরা সেখানে জড়ো না হলে একটি মারাত্মক অঘটন ঘটে যেতে পারতো বলে তিনি আশঙ্কা করেন।
কামরুজ্জামান সিদ্দিকী কামরুল বলেন, তিনি মাগরিবের নামাজ আদায়ের পরে মসজিদ থেকে বের হচ্ছিলেন। এ সময় পেছন থেকে একজন মাফলার দিয়ে তার গলায় ফাঁস দেয়ার চেষ্টা করে। তিনি হাত দিয়ে মাফলার সরানোর চেষ্টা করলে সামনে থেকে দু’তিনজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কোপাতে আসে। এ সময় তার সাথে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে উপস্থিত মুসল্লিরা তাকে রক্ষা করে।
কামরুল জানান এর আগেও একবার মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হওয়ার সময় তার উপরে গুলি চালানো হয়। এছাড়া আরো একবার তাকে হত্যার চেষ্টা চালায় সন্ত্রাসীরা।
এছাড়া কামরুজ্জামান কামরুলের ভাই ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকীর উপরেও এই সন্ত্রাসীরা এর আগে চালায়।
কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর এই সন্ত্রাসীরা তার অফিসে যেয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর আহত করে। তিনি অভিযোগ করেন, শ্রমিক লীগ নেতা গোলাম নাসিরের সাথে ফরিদপুরের মানি লন্ডারি মামলার আসামি বাবরের দোসর মাহাবুবুল ইসলাম পিকুল এই সকল হত্যাচেষ্টা ও হামলার নির্দেশদাতা। তিন দিন আগে মাহাবুল ইসলাম পিকুল ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সদস্য এসএম রুবেলকে তার প্যানেলে নির্বাচন করায় গালিগালাজ করে এবং ফরিদপুরে কবির ও কামরুল কে মাটির সাথে মিশিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়।
কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী আরো বলেন, ২০১৫ সালে খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নির্দেশে মাহাবুবুল ইসলাম পিকুল তার বিরুদ্ধে পাঁচ হাজার টাকার একটি চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে ফরিদুর প্রেসক্লাব দখল করে। এরপর আওয়ামী লীগের দাপট দেখিয়ে প্রেসক্লাবকে তারা তাদের অপরাজনীতি ও ব্যক্তিস্বার্থ আদায়ের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। এবারে নির্বাচনে হেরে গিয়ে তারা আমাদের বিরুদ্ধে মরণ কামড় দেয়ার চেষ্টা করে।
জানতে চাইলে ফরিদপুরের কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুলের উপরে হামলার ঘটনায় জড়িত একজনকে হাতেনাতে আটক করে জনতা পুলিশের উপর করেছে। বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে