London ০৪:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফরিদপুরে আ.লীগ, বিএনপির ১৭০ নেতাকর্মীর নামে মামলা

মোঃতারিকুল ইসলাম (ফরিদপুর)প্রতিনিধি:

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার, সাংবাদিক ও শিক্ষক,প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী সহ আওয়ামী লীগের ১৭০ নেতাকর্মীর নামে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় আরো আড়াই থেকে তিন হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত মামলার একজন আসামীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

রবিবার (১৯জানুয়ারি) সকালে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আলফাডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ হারুন-অর রশীদ। এর আগে গত বৃস্পতিবার রাতে পৌরসদরের বুড়াইচ এলাকার ইদ্রিস সর্দারের ছেলে বিএনপির সমর্থক দিনমজুর লাভলু সর্দার বাদি হয়ে আলফাডাঙ্গা থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষক,ব্যবসায়ী, স্কুল ছাত্র, বিদেশ ফেরত যুবক ও বেশ কয়েকজন বয়ঃবৃদ্ধের নাম রয়েছে। আসামীর নামের তালিকায় যুবদল নেতার নামও পাওয়া গেছে। তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃত মো. ইকবাল জিহাদী (৪০) আলফাডাঙ্গা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সহ-সভাপতি ও পৌরসদরের ইছাপাশা গ্রামের তফসীর উদ্দিনের ছেলে। পৌর যুবদলের কমিটিতে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আলফাডাঙ্গা পৌর যুবদলের আহ্বায়ক সৈয়দ মিজানুর রহমান।

জানা যায়, মামলাটিতে প্রধান আসামি করা হয়েছে আলফাডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র মো. সাইফুর রহমান সাইফারকে। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আকরাম হোসেনের ভাতিজা। ৩ নম্বর আসামির তালিকায় পাশ্ববর্তী বোয়ালমারী উপজেলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এম এম মোশাররফ হোসেন মুসা মিয়া, ৪ নম্বর তালিকায় বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মীরদাহ পিকুল, আলফাডাঙ্গা সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিদ্দিকুর রহমান (২৩ নম্বর আসামী)।

মামলায় সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন, আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি এনায়েত হোসেন (২ নম্বর আসামী), দপ্তর সম্পাদক, ঢাকা টাইমস প্রতিনিধি রিয়াজুল ইসলাম (রিয়াজ মুস্তাফিজ) (১০৫ নম্বর আসামী), প্রেসক্লাবের কার্যকরী সদস্য কামরুল ইসলাম (৮ নম্বর আসামী), কালবেলা প্রতিনিধি তারিকুল ইসলাম (৬৬ নম্বর আসামী) প্রমুখ। তবে এসব আসামীদের মধ্যে অনেকেই আওয়ামী রাজনীতির পদপদবীতে রয়েছেন বলে সূত্র জানায়।

এই মামলায় আলফাডাঙ্গা পৌর সদর বাজারের প্রতিষ্ঠিত অরাজনৈতিক হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে আসামী রয়েছে, স্বপন কুন্ডু,তার ভাই রাজীব কুন্ডু, সমর কুন্ডু ভজন,বিদ্যুৎ কুন্ডু সহ আরো অনেক ব্যবসায়ী।

মামলায় জনপ্রতিনিধির মধ্যে রয়েছেন আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নের ৭,৮,৯ সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনিতারা মন্ডল (১২২ নম্বর আসামী), বানা ইউনিয়নের শিরগ্রাম এলাকার ইউপি সদস্য রাজ ইসলাম খোকন, আড়পাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য উকিল মোল্যা, বুড়াইচ ইউনিয়নের হেলেঞ্চা গ্রামের ইউপি সদস্য আবুল বাশার, খোলাবাড়িয়া গ্রামের ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম, টগরবন্দ ইউনিয়নের কেষ্টপুর গ্রামের ইউপি সদস্য শামীম মল্লিক।

এ মামলায় অন্যান্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম সুজা, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষক লীগের আহবায়ক শেখ দেলোয়ার হোসেন, গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইনামুল
হাসান,পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ আলী বাশার, উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক হাসমত হোসেন তালুকদার তপন, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী কাওছার হোসেন টিটো,পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি রায়হান আজিজ, সহ আওয়ামী লীগ, কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ১৭০ নেতাকর্মী।

মামলার বিবরণ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশে ফিরছেন এমন খবরে ওইদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আসামীরা আগ্নেয়াস্ত্র ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আলফাডাঙ্গা সদর বাজারের চৌরাস্তায় যানবাহন ভাংচুর করে দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে ককটেল ও হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এছাড়া আসামিরা বিএনপির নেতাকর্মীদের খুন জখমের হুমকি প্রদান করেন বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার বাদি লাভলু সর্দার একজন দিনমুজুর বিএনপির সমর্থক। শোনা যাচ্ছে মামলার বিষয়ে সবকিছু আপনি জানেন না এ প্রসঙ্গে বাদি লাভলু সর্দার বলেন, বিষয়টা সেই রকমই। মামলার অনেক ঘটনাই আমার জানা নেই। পড়ালেখা জানলে হইতো অনেক কিছুই বুঝতে পারতাম! মামলার বিষয়ে আরো কিছু জানতে চাইলে লাভলু সর্দার বলেন, আমি সরাসরি সাক্ষাতে কথা বলবো।

আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে যুবদল নেতা আসামী (গ্রেপ্তারকৃত) থাকার বিষয়টির নিশ্চিত করে আলফাডাঙ্গা পৌর যুবদলের আহ্বায়ক সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামী আমার কমিটির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সহ-সভাপতি। এ মামলায় আরো জাতীয়তাবাদী দলের কর্মী সমর্থক রয়েছে। তিনি বলেন, শান্ত আলফাডাঙ্গাকে বিএনপির কিছু নেতা পুলিশ প্রশাসনের সাথে মিলিত হয়ে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। সংক্ষিপ্ত সময়ে আমরা পুর্লিশের বিরুদ্ধে হাজার হাজার লোকজন নিয়ে মানবন্ধন করবো।

আলফাডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ হারুন-অর রশীদ জানান, মামলার দিন রাতেই অভিযান চালিয়ে মো. ইকবাল জিহাদ নামে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামী একজন ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই এবং গ্রেপ্তার করার সময়ও তিনি কোন দলীয় কাগজপত্র দেখাননি।

মামলার বাদি অনেক কিছুই মামলার বিষয়ে জানেন না জানতে চাইলে ওসি বলেন, তিনি স্বাক্ষর করার সময় আমার সামনেই দেখে শুনে স্বাক্ষর করেছেন। হইতো কোন চাপে বা পেশারে এখন এ কথা বলছেন। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে যারাই মূলত এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মামলায় ১৩ নম্বর আসামী মো. আজাদুল ইসলাম আলফাডাঙ্গা সরকারি এ জেড পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি বলেন, আমার কোন দলের পদপদবী বা রাজনীতির সাথে জড়িত নাই। স্কুল সরকারি হওয়ার আগে আওয়ামী লীগের পদে ছিলাম। সরকারি (সরকারিকরণ-২০১৮) হওয়ার পরে দল থেকে আমাকে বহিস্কার করা হয়। শত্রুতামুলক ভাবে হয়রানি করার জন্য হইতো আমাকে আসামী করতে পারে বিএনপির লোকজন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মামলার ১৮ নং আসামী রাসেল মিয়া দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে গত ডিসেম্বর মাসে বাড়ি আসেন। তাকেও এ মামলায় আসামী করা হয়েছে।

আড়পাড়া গ্রামের মিটুল মিয়া কালবেলা কে জানান, আমার বাপ চাচা ভাই ও সন্তান সহ ৭ জনকে আসামী করা হয়েছে। আমার ছোট ভাই রাসেল (১৫৮) গত বছর ১৭ ডিসেম্বর সৌদি আরব থেকে বাড়ি আসছে। আমার ছেলে নিরব (১৫৯)এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী, নাবালক ছেলেটাকেও তারা আসামী করেছে। আমার বাপ চাচাদের বয়স এখন ৭০ -৭৫ বছর, তাদেরকেও মামলায় জড়ানো হয়েছে। আমরা বিএনপি সমর্থক হওয়ার পরেও গনহারে আমাদের আসামী করা হয়েছে। স্থানীয় শক্রুতার জেরে তাদের আসামী করা হয়েছে বলে মনে করেন মিটুল মিয়া।

 

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১২:৪৯:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫
১২
Translate »

ফরিদপুরে আ.লীগ, বিএনপির ১৭০ নেতাকর্মীর নামে মামলা

আপডেট : ১২:৪৯:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার, সাংবাদিক ও শিক্ষক,প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী সহ আওয়ামী লীগের ১৭০ নেতাকর্মীর নামে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় আরো আড়াই থেকে তিন হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত মামলার একজন আসামীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

রবিবার (১৯জানুয়ারি) সকালে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আলফাডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ হারুন-অর রশীদ। এর আগে গত বৃস্পতিবার রাতে পৌরসদরের বুড়াইচ এলাকার ইদ্রিস সর্দারের ছেলে বিএনপির সমর্থক দিনমজুর লাভলু সর্দার বাদি হয়ে আলফাডাঙ্গা থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষক,ব্যবসায়ী, স্কুল ছাত্র, বিদেশ ফেরত যুবক ও বেশ কয়েকজন বয়ঃবৃদ্ধের নাম রয়েছে। আসামীর নামের তালিকায় যুবদল নেতার নামও পাওয়া গেছে। তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃত মো. ইকবাল জিহাদী (৪০) আলফাডাঙ্গা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সহ-সভাপতি ও পৌরসদরের ইছাপাশা গ্রামের তফসীর উদ্দিনের ছেলে। পৌর যুবদলের কমিটিতে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আলফাডাঙ্গা পৌর যুবদলের আহ্বায়ক সৈয়দ মিজানুর রহমান।

জানা যায়, মামলাটিতে প্রধান আসামি করা হয়েছে আলফাডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র মো. সাইফুর রহমান সাইফারকে। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আকরাম হোসেনের ভাতিজা। ৩ নম্বর আসামির তালিকায় পাশ্ববর্তী বোয়ালমারী উপজেলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এম এম মোশাররফ হোসেন মুসা মিয়া, ৪ নম্বর তালিকায় বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মীরদাহ পিকুল, আলফাডাঙ্গা সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিদ্দিকুর রহমান (২৩ নম্বর আসামী)।

মামলায় সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন, আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি এনায়েত হোসেন (২ নম্বর আসামী), দপ্তর সম্পাদক, ঢাকা টাইমস প্রতিনিধি রিয়াজুল ইসলাম (রিয়াজ মুস্তাফিজ) (১০৫ নম্বর আসামী), প্রেসক্লাবের কার্যকরী সদস্য কামরুল ইসলাম (৮ নম্বর আসামী), কালবেলা প্রতিনিধি তারিকুল ইসলাম (৬৬ নম্বর আসামী) প্রমুখ। তবে এসব আসামীদের মধ্যে অনেকেই আওয়ামী রাজনীতির পদপদবীতে রয়েছেন বলে সূত্র জানায়।

এই মামলায় আলফাডাঙ্গা পৌর সদর বাজারের প্রতিষ্ঠিত অরাজনৈতিক হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে আসামী রয়েছে, স্বপন কুন্ডু,তার ভাই রাজীব কুন্ডু, সমর কুন্ডু ভজন,বিদ্যুৎ কুন্ডু সহ আরো অনেক ব্যবসায়ী।

মামলায় জনপ্রতিনিধির মধ্যে রয়েছেন আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নের ৭,৮,৯ সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনিতারা মন্ডল (১২২ নম্বর আসামী), বানা ইউনিয়নের শিরগ্রাম এলাকার ইউপি সদস্য রাজ ইসলাম খোকন, আড়পাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য উকিল মোল্যা, বুড়াইচ ইউনিয়নের হেলেঞ্চা গ্রামের ইউপি সদস্য আবুল বাশার, খোলাবাড়িয়া গ্রামের ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম, টগরবন্দ ইউনিয়নের কেষ্টপুর গ্রামের ইউপি সদস্য শামীম মল্লিক।

এ মামলায় অন্যান্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম সুজা, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষক লীগের আহবায়ক শেখ দেলোয়ার হোসেন, গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইনামুল
হাসান,পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ আলী বাশার, উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক হাসমত হোসেন তালুকদার তপন, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী কাওছার হোসেন টিটো,পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি রায়হান আজিজ, সহ আওয়ামী লীগ, কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ১৭০ নেতাকর্মী।

মামলার বিবরণ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশে ফিরছেন এমন খবরে ওইদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আসামীরা আগ্নেয়াস্ত্র ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আলফাডাঙ্গা সদর বাজারের চৌরাস্তায় যানবাহন ভাংচুর করে দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে ককটেল ও হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এছাড়া আসামিরা বিএনপির নেতাকর্মীদের খুন জখমের হুমকি প্রদান করেন বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার বাদি লাভলু সর্দার একজন দিনমুজুর বিএনপির সমর্থক। শোনা যাচ্ছে মামলার বিষয়ে সবকিছু আপনি জানেন না এ প্রসঙ্গে বাদি লাভলু সর্দার বলেন, বিষয়টা সেই রকমই। মামলার অনেক ঘটনাই আমার জানা নেই। পড়ালেখা জানলে হইতো অনেক কিছুই বুঝতে পারতাম! মামলার বিষয়ে আরো কিছু জানতে চাইলে লাভলু সর্দার বলেন, আমি সরাসরি সাক্ষাতে কথা বলবো।

আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে যুবদল নেতা আসামী (গ্রেপ্তারকৃত) থাকার বিষয়টির নিশ্চিত করে আলফাডাঙ্গা পৌর যুবদলের আহ্বায়ক সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামী আমার কমিটির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সহ-সভাপতি। এ মামলায় আরো জাতীয়তাবাদী দলের কর্মী সমর্থক রয়েছে। তিনি বলেন, শান্ত আলফাডাঙ্গাকে বিএনপির কিছু নেতা পুলিশ প্রশাসনের সাথে মিলিত হয়ে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। সংক্ষিপ্ত সময়ে আমরা পুর্লিশের বিরুদ্ধে হাজার হাজার লোকজন নিয়ে মানবন্ধন করবো।

আলফাডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ হারুন-অর রশীদ জানান, মামলার দিন রাতেই অভিযান চালিয়ে মো. ইকবাল জিহাদ নামে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামী একজন ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই এবং গ্রেপ্তার করার সময়ও তিনি কোন দলীয় কাগজপত্র দেখাননি।

মামলার বাদি অনেক কিছুই মামলার বিষয়ে জানেন না জানতে চাইলে ওসি বলেন, তিনি স্বাক্ষর করার সময় আমার সামনেই দেখে শুনে স্বাক্ষর করেছেন। হইতো কোন চাপে বা পেশারে এখন এ কথা বলছেন। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে যারাই মূলত এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মামলায় ১৩ নম্বর আসামী মো. আজাদুল ইসলাম আলফাডাঙ্গা সরকারি এ জেড পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি বলেন, আমার কোন দলের পদপদবী বা রাজনীতির সাথে জড়িত নাই। স্কুল সরকারি হওয়ার আগে আওয়ামী লীগের পদে ছিলাম। সরকারি (সরকারিকরণ-২০১৮) হওয়ার পরে দল থেকে আমাকে বহিস্কার করা হয়। শত্রুতামুলক ভাবে হয়রানি করার জন্য হইতো আমাকে আসামী করতে পারে বিএনপির লোকজন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মামলার ১৮ নং আসামী রাসেল মিয়া দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে গত ডিসেম্বর মাসে বাড়ি আসেন। তাকেও এ মামলায় আসামী করা হয়েছে।

আড়পাড়া গ্রামের মিটুল মিয়া কালবেলা কে জানান, আমার বাপ চাচা ভাই ও সন্তান সহ ৭ জনকে আসামী করা হয়েছে। আমার ছোট ভাই রাসেল (১৫৮) গত বছর ১৭ ডিসেম্বর সৌদি আরব থেকে বাড়ি আসছে। আমার ছেলে নিরব (১৫৯)এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী, নাবালক ছেলেটাকেও তারা আসামী করেছে। আমার বাপ চাচাদের বয়স এখন ৭০ -৭৫ বছর, তাদেরকেও মামলায় জড়ানো হয়েছে। আমরা বিএনপি সমর্থক হওয়ার পরেও গনহারে আমাদের আসামী করা হয়েছে। স্থানীয় শক্রুতার জেরে তাদের আসামী করা হয়েছে বলে মনে করেন মিটুল মিয়া।