London ০৯:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পাশের বাসায় অবস্থান নেয় মোমিন ও সুবা কালিয়াকৈরে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা কালিয়াকৈর দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ জাতীয় স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা ক্রীড়া সমিতির উদ্যোগে ৫৩ তম শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ঝাউদিয়া থানা উদ্বোধনের দাবীতে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ চুয়াডাঙ্গার সীমান্ত থেকে বাংলাদেশী নাগরিককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ ফরিদপুরের খাজা আগে যুবলীগ এখন যুবদল পরিচয়ে ত্রাসের রাজত্ব জানুয়ারিতে সড়কে নিহত ৬০৮ যেভাবে খোঁজ মিললো নিখোঁজ কিশোরী সুবার ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পাচ্ছেন ফুটবলার সুমাইয়া

ফরিদপুরের খাজা আগে যুবলীগ এখন যুবদল পরিচয়ে ত্রাসের রাজত্ব

অনলাইন ডেস্ক

ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের ভাটী লক্ষ্মীপুর গ্রামের হানিফ মাতুব্বরের ছেলে খায়রুজ্জামান খাজা (৩৮)। এলাকায় তিনি ‘খাজা বাহিনী’র প্রধান হিসেবে পরিচিত। নিজ নামেই গড়ে তুলেছেন খাজা বাহিনী। দীর্ঘদিন এলাকায় চলছে এই বাহিনীর ত্রাসের রাজত্ব। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকার মানুষ। যারাই তার কথা অমান্য করে তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়্গ। গত ৫ আগস্টের পরও এই খাজা বাহিনী বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আগে যুবলীগ এখন ভোল পাল্টে যুবদল পরিচয়ে ত্রাসের রাজত্ব বহাল রেখেছেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাজার আপন বড় ভাই বর্তমানে ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মুহাম্মদ আলতাফ হুসাইন। তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় চাঁদাবাজি, ডাকাতি, দস্যুতাসহ অন্তত ১৮টি মামলা আছে। পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা পুলিশের হাতে একাধিকবার আগ্নেয়াস্ত্র, ইয়াবা, দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেফতারও হয়েছেন। কিন্তু রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে জামিনে বের হয়ে পুনরায় শুরু করে তার ত্রাসের রাজত্ব।

অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমানের হস্তক্ষেপে একটি সাজাপ্রাপ্ত মামলা থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে তিনি নিজেকে যুবলীগ নেতা ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহমানের আত্মীয় পরিচয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতেন। নিজের পরিচয় জানান দিতে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ব্যানার ও ফেস্টুন টাঙাতেন।

পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, দস্যুতাসহ অন্তত ১৮টি মামলার আসামি এই খায়রুজ্জামান খাজা। তিনি ২০১৬ সালের ১৬ এপ্রিল রাতে হাইওয়ে সড়কে বাসে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে একটি বিদেশি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলিসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন। কানাইপুর ইউপিসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, দস্যুতা, ভূমি দখলসহ নানান বিষয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০২১ সালের ১৫ মে দুই সহযোগীসহ কোতোয়ালি থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন তিনি। ২০২২ সালের ১৬ এপ্রিল ইয়াবাসহ গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। এছাড়া একই বছর এলাকায় সহযোগীদের নিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ২৮ আগস্ট দেশীয় অস্ত্রসহ খাজা ও তার চার সহযোগী পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বার বার গ্রেফতার ও জেলে যাওয়ার পরও তার দাপট কমেনি। ক্ষমতার দাপটে জামিনে বের হয়ে আসেন। স্থানীয় যুবলীগ নেতা পরিচয়ে আধিপত্য বিস্তার করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ব্যানার ও ফেস্টুন টানিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে নিজেকে জাহির করতেন। এরপর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতার সমর্থক পরিচয় দিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। গত ১৮ ডিসেম্বর যুবদল নেতার ব্যানারে মিছিল নিয়ে নিজেকে যুবদল নেতা হিসেবে জাহির করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হন। তার বাহিনীতে না ভিড়লে জরিমানা, নির্যাতনের পাশাপাশি করা হয় এলাকা ছাড়া।

এদিকে, ওবায়দুর খান হত্যার পর এলাকাবাসী মুখ খুলতে শুরু করলেও অনেকেই নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তবে অনেকে অভিযোগ করে বলেন, গত ৫ আগস্টের পরও তার নির্যাতনে অতিষ্ঠ মানুষ। খাজাকে টাকা দিয়ে এলাকায় থাকতে হয়েছে অনেককেই। টাকা না দিলে তাকে ভয়ভীতি ও মারধর করা হতো।

সর্বশেষ গত ১০ জানুয়ারি কানাইপুর মমতাজ ফিলিং স্টেশনে মোটরসাইকেলের তেল কিনতে গিয়েছিলেন ওই ইউনিয়নের ঝাউখোলা গ্রামের বিল্লাল খানের ছেলে ওবায়দুর খান। পূর্বপরিকল্পিত ভাবে সেখান থেকে খায়রুজ্জামান খাজার নেতৃত্বে তার বাহিনীর সদস্যরা ওবায়দুরকে তুলে নিয়ে যান। এরপর ফরিদপুর জুট ফাইবার্সের পেছনে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন চালান তার ওপর। ওবায়দুরের দুই চোখে লোহার পেরেক দিয়ে খোঁচানো হয় এবং বাম পায়ের রগ কেটে পা ভেঙে ফেলা হয়। এরপর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান ওবায়দুর। এ ঘটনায় পরদিন রাতে খাজাকে প্রধান আসামি করে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের মা রেখা বেগম। এখন খাজা ও খাজা বাহিনীর সদস্যরা পলাতক।

তবে ওবায়দুর খান হত্যা মামলায় কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মুহাম্মদ আলতাফ হুসাইনসহ (৫৪) দুজনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। গ্রেফতার অন্য আসামি একই ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা জাহিদ শেখ (৪০)। দুজনই হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামি।

নিহত ওবায়দুরের বাবা বিল্লাল খান বলেন, আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। আমি এই হত্যার বিচার চাই। খাজার ফাঁসি চাই। তা না হলে আরও মানুষ মরবে।

নিহতের বড় ভাই রাজিব খান বলেন, খাজা বাহিনীর অপকর্মের বিরুদ্ধে আমার ভাই প্রতিবাদ করতো। এ কারণে আমার ভাইয়ের ওপর ওরা আগে থেকে ক্ষিপ্ত ছিল।

এদিকে, ওবায়দুর খান হত্যার পর এলাকাবাসী মুখ খুলতে শুরু করলেও অনেকেই নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তবে অনেকে অভিযোগ করে বলেন, গত ৫ আগস্টের পরও তার নির্যাতনে অতিষ্ঠ মানুষ। খাজাকে টাকা দিয়ে এলাকায় থাকতে হয়েছে অনেককেই। টাকা না দিলে তাকে ভয়ভীতি ও মারধর করা হতো।

কানাইপুরের কোশাগোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. লাবলু শেখ জানান, তার দলে যোগ না দেওয়ায় আমাকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করে খাজা। টাকা না দিলে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়। এই খাজার কারণে এলাকার মানুষ অশান্তিতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার বাসিন্দারা বলেন, খাজা বাহিনীর নানান ধরনের নির্যাতনে মানুষ অতিষ্ঠ। ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না। এত দিনে সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমান ও খাজার বড় ভাই ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মুহাম্মদ আলতাফ হুসাইনের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। হঠাৎ ভোল পাল্টে এখন বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চলছে। একাধিকবার জেলে যাওয়ার পরেও জামিনে ছাড়া পেয়ে এলাকায় এসে আবারো খারাপ কাজ শুরু করে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে খাজা বাহিনীর প্রধান খায়রুজ্জামান খাজা আত্মগোপনে থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি। তার মোবাইল নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়।

বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হন খাজা-সংগৃহীত ছবিবেশ কয়েকবার গ্রেফতার হন খাজা-সংগৃহীত ছবি

এ বিষয়ে সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমানের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তার মোবাইল নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান জাগো নিউজকে জানান, খাজাকে গ্রেফতারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। অল্প সময়ের মধ্যে তাকে গ্রেফতার করা হবে।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শৈলেন চাকমা জাগো নিউজকে বলেন, হত্যা মামলার অন্যতম আসামি খায়রুজ্জামান খাজাকে গ্রেফতার করতে পুলিশ কাজ করছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০১:০২:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
Translate »

ফরিদপুরের খাজা আগে যুবলীগ এখন যুবদল পরিচয়ে ত্রাসের রাজত্ব

আপডেট : ০১:০২:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের ভাটী লক্ষ্মীপুর গ্রামের হানিফ মাতুব্বরের ছেলে খায়রুজ্জামান খাজা (৩৮)। এলাকায় তিনি ‘খাজা বাহিনী’র প্রধান হিসেবে পরিচিত। নিজ নামেই গড়ে তুলেছেন খাজা বাহিনী। দীর্ঘদিন এলাকায় চলছে এই বাহিনীর ত্রাসের রাজত্ব। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকার মানুষ। যারাই তার কথা অমান্য করে তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়্গ। গত ৫ আগস্টের পরও এই খাজা বাহিনী বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আগে যুবলীগ এখন ভোল পাল্টে যুবদল পরিচয়ে ত্রাসের রাজত্ব বহাল রেখেছেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাজার আপন বড় ভাই বর্তমানে ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মুহাম্মদ আলতাফ হুসাইন। তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় চাঁদাবাজি, ডাকাতি, দস্যুতাসহ অন্তত ১৮টি মামলা আছে। পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা পুলিশের হাতে একাধিকবার আগ্নেয়াস্ত্র, ইয়াবা, দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেফতারও হয়েছেন। কিন্তু রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে জামিনে বের হয়ে পুনরায় শুরু করে তার ত্রাসের রাজত্ব।

অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমানের হস্তক্ষেপে একটি সাজাপ্রাপ্ত মামলা থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে তিনি নিজেকে যুবলীগ নেতা ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহমানের আত্মীয় পরিচয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতেন। নিজের পরিচয় জানান দিতে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ব্যানার ও ফেস্টুন টাঙাতেন।

পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, দস্যুতাসহ অন্তত ১৮টি মামলার আসামি এই খায়রুজ্জামান খাজা। তিনি ২০১৬ সালের ১৬ এপ্রিল রাতে হাইওয়ে সড়কে বাসে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে একটি বিদেশি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলিসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন। কানাইপুর ইউপিসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, দস্যুতা, ভূমি দখলসহ নানান বিষয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০২১ সালের ১৫ মে দুই সহযোগীসহ কোতোয়ালি থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন তিনি। ২০২২ সালের ১৬ এপ্রিল ইয়াবাসহ গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। এছাড়া একই বছর এলাকায় সহযোগীদের নিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ২৮ আগস্ট দেশীয় অস্ত্রসহ খাজা ও তার চার সহযোগী পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বার বার গ্রেফতার ও জেলে যাওয়ার পরও তার দাপট কমেনি। ক্ষমতার দাপটে জামিনে বের হয়ে আসেন। স্থানীয় যুবলীগ নেতা পরিচয়ে আধিপত্য বিস্তার করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ব্যানার ও ফেস্টুন টানিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে নিজেকে জাহির করতেন। এরপর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতার সমর্থক পরিচয় দিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। গত ১৮ ডিসেম্বর যুবদল নেতার ব্যানারে মিছিল নিয়ে নিজেকে যুবদল নেতা হিসেবে জাহির করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হন। তার বাহিনীতে না ভিড়লে জরিমানা, নির্যাতনের পাশাপাশি করা হয় এলাকা ছাড়া।

এদিকে, ওবায়দুর খান হত্যার পর এলাকাবাসী মুখ খুলতে শুরু করলেও অনেকেই নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তবে অনেকে অভিযোগ করে বলেন, গত ৫ আগস্টের পরও তার নির্যাতনে অতিষ্ঠ মানুষ। খাজাকে টাকা দিয়ে এলাকায় থাকতে হয়েছে অনেককেই। টাকা না দিলে তাকে ভয়ভীতি ও মারধর করা হতো।

সর্বশেষ গত ১০ জানুয়ারি কানাইপুর মমতাজ ফিলিং স্টেশনে মোটরসাইকেলের তেল কিনতে গিয়েছিলেন ওই ইউনিয়নের ঝাউখোলা গ্রামের বিল্লাল খানের ছেলে ওবায়দুর খান। পূর্বপরিকল্পিত ভাবে সেখান থেকে খায়রুজ্জামান খাজার নেতৃত্বে তার বাহিনীর সদস্যরা ওবায়দুরকে তুলে নিয়ে যান। এরপর ফরিদপুর জুট ফাইবার্সের পেছনে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন চালান তার ওপর। ওবায়দুরের দুই চোখে লোহার পেরেক দিয়ে খোঁচানো হয় এবং বাম পায়ের রগ কেটে পা ভেঙে ফেলা হয়। এরপর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান ওবায়দুর। এ ঘটনায় পরদিন রাতে খাজাকে প্রধান আসামি করে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের মা রেখা বেগম। এখন খাজা ও খাজা বাহিনীর সদস্যরা পলাতক।

তবে ওবায়দুর খান হত্যা মামলায় কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মুহাম্মদ আলতাফ হুসাইনসহ (৫৪) দুজনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। গ্রেফতার অন্য আসামি একই ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা জাহিদ শেখ (৪০)। দুজনই হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামি।

নিহত ওবায়দুরের বাবা বিল্লাল খান বলেন, আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। আমি এই হত্যার বিচার চাই। খাজার ফাঁসি চাই। তা না হলে আরও মানুষ মরবে।

নিহতের বড় ভাই রাজিব খান বলেন, খাজা বাহিনীর অপকর্মের বিরুদ্ধে আমার ভাই প্রতিবাদ করতো। এ কারণে আমার ভাইয়ের ওপর ওরা আগে থেকে ক্ষিপ্ত ছিল।

এদিকে, ওবায়দুর খান হত্যার পর এলাকাবাসী মুখ খুলতে শুরু করলেও অনেকেই নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তবে অনেকে অভিযোগ করে বলেন, গত ৫ আগস্টের পরও তার নির্যাতনে অতিষ্ঠ মানুষ। খাজাকে টাকা দিয়ে এলাকায় থাকতে হয়েছে অনেককেই। টাকা না দিলে তাকে ভয়ভীতি ও মারধর করা হতো।

কানাইপুরের কোশাগোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. লাবলু শেখ জানান, তার দলে যোগ না দেওয়ায় আমাকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করে খাজা। টাকা না দিলে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়। এই খাজার কারণে এলাকার মানুষ অশান্তিতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার বাসিন্দারা বলেন, খাজা বাহিনীর নানান ধরনের নির্যাতনে মানুষ অতিষ্ঠ। ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না। এত দিনে সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমান ও খাজার বড় ভাই ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মুহাম্মদ আলতাফ হুসাইনের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। হঠাৎ ভোল পাল্টে এখন বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চলছে। একাধিকবার জেলে যাওয়ার পরেও জামিনে ছাড়া পেয়ে এলাকায় এসে আবারো খারাপ কাজ শুরু করে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে খাজা বাহিনীর প্রধান খায়রুজ্জামান খাজা আত্মগোপনে থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি। তার মোবাইল নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়।

বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হন খাজা-সংগৃহীত ছবিবেশ কয়েকবার গ্রেফতার হন খাজা-সংগৃহীত ছবি

এ বিষয়ে সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমানের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তার মোবাইল নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান জাগো নিউজকে জানান, খাজাকে গ্রেফতারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। অল্প সময়ের মধ্যে তাকে গ্রেফতার করা হবে।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শৈলেন চাকমা জাগো নিউজকে বলেন, হত্যা মামলার অন্যতম আসামি খায়রুজ্জামান খাজাকে গ্রেফতার করতে পুলিশ কাজ করছে।