London ০৪:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো, পুলিশকে প্রাণঘাতী অস্ত্র না দেওয়ার প্রস্তাব

অনলাইন ডেস্ক

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত ছয় কমিশনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে চার কমিশন। এগুলো হলো-নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ এবং সংবিধান সংস্কারে গঠিত কমিশন।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে কমিশন প্রধানরা এসব প্রতিবেদন জমা দেন। এতে সংবিধান সংস্কার কমিশন পুলিশ নিয়ে দুই প্রস্তাব দিয়েছে।

বাকিগুলোর মধ্যে জনপ্রশাসন আরও সময় নেবে। আর বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ ৩১ জানুয়ারি রিপোর্ট জমা দেবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সংবিধান:
একনায়কতন্ত্র ঠেকাতে বা এক ব্যক্তির হাতে যাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত না হয়, সেজন্য ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কারে গঠিত কমিশন। এক্ষেত্রে জাতীয় সংসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করার সুপারিশ এসেছে। সংসদের নিম্নকক্ষে আসন থাকবে ৪০০। এর মধ্যে ১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তারা নির্বাচিত হবেন সরাসরি ভোটে। আর উচ্চকক্ষে আসন থাকবে ১০৫টি। নির্বাচন হবে আনুপাতিক পদ্ধতিতে। সংসদের দুই কক্ষ মিলিয়ে মোট আসন হবে ৫০৫টি। নির্বাচন হবে বর্তমান পদ্ধতিতে।

পুলিশ:
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বাহিনী পুলিশকে প্রাণঘাতী অস্ত্র না দেওয়া, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করাসহ বেশ কিছু সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরের শাসনামলে পুলিশকে ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেছিল। দলের অনুগত কর্মীদের মতো কাজ করেন কিছু পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের জন্য লোভনীয় পোস্টিং, যোগ্যদের পাশ কাটিয়ে পদোন্নতি ও দুর্নীতির সুযোগ করে দেওয়া হয়। জুলাই-আগস্টের বিক্ষোভের সময় নির্বিচারে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে পুলিশ, যার ফলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। এজন্য প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারে এ সুপারিশ করা হয়। এছাড়া পুলিশের নিয়োগ, পদোন্নতি এবং নজরদারি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন:
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার আইন পরিবর্তনের সুপারিশ রয়েছে। আইনের পাশাপাশি নির্বাচনি আচরণবিধিতেও স্পষ্ট পরিবর্তন এনে কঠোর তদারকির সুপারিশ রয়েছে। আদালতের রায়ে গণভোট ও তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা ফেরার পথ খুলছে। বিদ্যমান নির্বাচন পদ্ধতির পাশাপাশি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি সুপারিশ করেছে কমিশন। ‘সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ, অনুসারে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নেওয়ার যে বিধান রয়েছে, তা বাদ দিতে বলা হয়েছে।

দুদক:
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারে কয়েকটি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। প্রথমত নিয়োগ প্রক্রিয়া। দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগ হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। এ কারণে তারা বিরোধীপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। এই নিয়োগ সংস্কারে সুপারিশ করেছে। দ্বিতীয়ত আইনি ক্ষমতা। বর্তমান আইনে দুদকের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। ফলে আইন সংশোধন জরুরি। দুদকের আরেকটি অন্যতম দায়িত্ব হলো-উচ্চপর্যায়ে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু উচ্চপর্যায়ে যারা অর্থ পাচারের মতো অপরাধ করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের মধ্যে সমন্বয়ের ব্যাপক ঘাটতি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১০:৪৫:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫
Translate »

প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো, পুলিশকে প্রাণঘাতী অস্ত্র না দেওয়ার প্রস্তাব

আপডেট : ১০:৪৫:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত ছয় কমিশনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে চার কমিশন। এগুলো হলো-নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ এবং সংবিধান সংস্কারে গঠিত কমিশন।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে কমিশন প্রধানরা এসব প্রতিবেদন জমা দেন। এতে সংবিধান সংস্কার কমিশন পুলিশ নিয়ে দুই প্রস্তাব দিয়েছে।

বাকিগুলোর মধ্যে জনপ্রশাসন আরও সময় নেবে। আর বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ ৩১ জানুয়ারি রিপোর্ট জমা দেবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সংবিধান:
একনায়কতন্ত্র ঠেকাতে বা এক ব্যক্তির হাতে যাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত না হয়, সেজন্য ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কারে গঠিত কমিশন। এক্ষেত্রে জাতীয় সংসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করার সুপারিশ এসেছে। সংসদের নিম্নকক্ষে আসন থাকবে ৪০০। এর মধ্যে ১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তারা নির্বাচিত হবেন সরাসরি ভোটে। আর উচ্চকক্ষে আসন থাকবে ১০৫টি। নির্বাচন হবে আনুপাতিক পদ্ধতিতে। সংসদের দুই কক্ষ মিলিয়ে মোট আসন হবে ৫০৫টি। নির্বাচন হবে বর্তমান পদ্ধতিতে।

পুলিশ:
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বাহিনী পুলিশকে প্রাণঘাতী অস্ত্র না দেওয়া, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করাসহ বেশ কিছু সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরের শাসনামলে পুলিশকে ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেছিল। দলের অনুগত কর্মীদের মতো কাজ করেন কিছু পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের জন্য লোভনীয় পোস্টিং, যোগ্যদের পাশ কাটিয়ে পদোন্নতি ও দুর্নীতির সুযোগ করে দেওয়া হয়। জুলাই-আগস্টের বিক্ষোভের সময় নির্বিচারে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে পুলিশ, যার ফলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। এজন্য প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারে এ সুপারিশ করা হয়। এছাড়া পুলিশের নিয়োগ, পদোন্নতি এবং নজরদারি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন:
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার আইন পরিবর্তনের সুপারিশ রয়েছে। আইনের পাশাপাশি নির্বাচনি আচরণবিধিতেও স্পষ্ট পরিবর্তন এনে কঠোর তদারকির সুপারিশ রয়েছে। আদালতের রায়ে গণভোট ও তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা ফেরার পথ খুলছে। বিদ্যমান নির্বাচন পদ্ধতির পাশাপাশি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি সুপারিশ করেছে কমিশন। ‘সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ, অনুসারে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নেওয়ার যে বিধান রয়েছে, তা বাদ দিতে বলা হয়েছে।

দুদক:
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারে কয়েকটি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। প্রথমত নিয়োগ প্রক্রিয়া। দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগ হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। এ কারণে তারা বিরোধীপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। এই নিয়োগ সংস্কারে সুপারিশ করেছে। দ্বিতীয়ত আইনি ক্ষমতা। বর্তমান আইনে দুদকের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। ফলে আইন সংশোধন জরুরি। দুদকের আরেকটি অন্যতম দায়িত্ব হলো-উচ্চপর্যায়ে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু উচ্চপর্যায়ে যারা অর্থ পাচারের মতো অপরাধ করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের মধ্যে সমন্বয়ের ব্যাপক ঘাটতি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।