London ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
হামজার ছোঁয়ায় ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশের দারুণ জয় এই রাতে আলো ছিল, জয় ছিল, আর ছিল একজন হামজা চৌধুরী ইতালিতে সাংগঠনিক কাজে‌ বিশেষ অবদান রাখায় ইকবাল বেপারী‌কে সংবর্ধনা দিলো‌ প্রগতি ব্যবসায়ী সমিতি পটুয়াখালীতে কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষনে বিনামূল্যে ৪৭ মেট্রিক টন লবন বিতরণ পটুয়াখালীতে রাত ৯ টা পর্যন্ত চলছে বিভিন্ন পশুর হাট রাজশাহীতে প্রতারণা করে ফ্ল্যাট কেনার অভিযোগ ব্যারিস্টার কায়সার কামালের ঈদ উপহার পেলো দুর্গাপুরের চার শহীদের পরিবার সিরাজগঞ্জে স্বামী কর্তৃক স্ত্রী‌কে খুনের অ‌ভি‌যোগ-আটক ১ জিয়াউর রহমানের ৪৪ তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত ইতালির পিসাকানে স্কুলে টেস্ট দ্যা ওয়ার্ল্ড নামে অনুষ্ঠিত বহুজাতিক সংস্কৃতির মিলনমেলা

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বর্ণনায় নির্যাতনের ভয়াবহতা

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রায় ১৪ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেনছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘাতের কারণে নির্যাতনের মুখে আবারও বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন রোহিঙ্গারা৷ তাদের লক্ষ্য করে কীভাবে হামলা চালানো হচ্ছে, তা জানিয়েছেন পালিয়ে আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা৷

তাদের একজন সাঈদ৷ তিনি গত মাসে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছেছেন৷ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ করতে তাকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷ নিরাপত্তার স্বার্থে ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন তিনি৷

সেনাবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ করতে যাওয়ায় বিদ্রোহীরা তাদের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা চালাচ্ছে৷ ফলে আবারও হাজার হাজার রোহিঙ্গা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছেন৷

শুধু সাঈদ একা নন৷ হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে জোর করে মিয়ানমারের সেনাদের পক্ষে যুদ্ধে  যুদ্ধে যোগদান করানো হয়েছে৷ এর ফল ভোগ করছে মিয়ানমারে অবস্থানরত পুরো রোহিঙ্গা গোষ্ঠী৷ কারণ, সেনাবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ করতে যাওয়ায় বিদ্রোহীরা তাদের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা চালাচ্ছে৷ ফলে আবারও হাজার হাজার রোহিঙ্গা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছেন৷

বাংলাদেশে পালিয়ে এসে বার্তা সংস্থা এএফপিকে সাঈদ জানান, সেখানকার মানুষদের (রোহিঙ্গা) ওপর নির্যাতন চলছে৷ ‘আমি নিজের চোখে তা দেখে এসেছি৷ অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন অনেকে৷ সবাই নিজের জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত’ বলেন তিনি।

গত জুন মাসে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে সক্রিয় একটি সশস্ত্রগোষ্ঠী সাঈদকে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ধরে নিয়ে যায়৷ স্বাধীনতার দাবিতে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছে আরাকান আর্মি৷

আমরা দুঃখিত, কিন্তু আর কাউকে জায়গা দেওয়া আমাদের সামর্থ্যের বাইরে৷

তৌহিদ হোসেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সাইদসহ যুদ্ধে যোগ দেওয়া অন্য রোহিঙ্গার কাজ ছিল জিনিসপত্র আনা-নেওয়া করা, বাংকার খনন, সেনাবাহিনীর জন্য পানি সরবরাহ করা ইত্যাদি৷ তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের কোনো প্রশিক্ষণ দেয়নি৷ সেনারা পুলিশ স্টেশনের ভেতরে অবস্থান করে৷ বাইরে বের হয় না৷’

বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির থেকে দুই হাজার রোহিঙ্গাকে জোরপূর্বক যুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ বলা হয়েছে, জান্তার পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিলে তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে৷

একপর্যায়ে সেখানকার একটি মুসলিমপ্রধান গ্রামের পাহারার দায়িত্ব দেওয়া হয় সাঈদকে৷ সেখান থেকে পালিয়ে আসেন তিনি৷

বাংলাদেশ সরকারের ও জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্য মতে, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তীব্র সংঘাত শুরু হলে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রায় ১৪ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন৷

‘চারদিকে মরদেহ’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির থেকে অন্তত দুই হাজার রোহিঙ্গাকে জোরপূর্বক যুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ তারা বলছেন, সশস্ত্রগোষ্ঠীরা তাদের জোর করে নিয়ে গেছে৷ বলা হয়েছে, জান্তার পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিলে তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে৷

তবে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে সক্রিয় দুটি সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) বলছে, তারা কাউকে জোর করে যুদ্ধে নিয়ে যায়নি৷

আরএসওর সিনিয়র নেতা কো কো লিন বলেন, ‘আমরা কখনোই কাউকে আমাদের জন্য বা অন্যদের জন্য জোর করে নিয়ে যাইনি৷’

মৃতদেহ দেখে আমরা ভয় পেয়ে যাই যে, আমাদের ওপরও হামলা আসছে৷ এখন আর আমি কোনো গুলির আওয়াজ শুনতে পাই না। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী

এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মি—উভয়ই সংঘাতের সময়ে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে৷

অন্য অধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ করতে নিয়ে যাওয়ার কারণে তাদের ওপর আরাকান আর্মি প্রতিশোধমূলক হামলা চালাচ্ছে৷

তবে মানবাধিকার সংগঠন ফর্টিফাইড রাইটস জানিয়েছে, বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি ড্রোন ও মর্টার হামলা চালিয়ে সীমান্তে ১০০ রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষকে হত্যা করেছে৷ শুধু তাই নয়, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা রোহিঙ্গারাও আরাকান আর্মিকে হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করছে৷

তবে আরাকান আর্মি সাধারণ রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে এমন হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷

চলতি মাসের শুরু দিকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন ২২ বছরের মোহাম্মদ জোহর৷ তার বোনের স্বামীকে নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছিলেন তিনি৷ এ সময় হামলায় নিতহ হন তাঁর বোনের স্বামী৷ জোহরের দাবি, আরাকান আর্মির ড্রোন হামলায় এই ঘটনা ঘটেছে৷ ‘সবখানে মৃতদেহ পড়ে আছে৷ নদীর পাড়েও মৃতদেহ পড়েছিল’ জানান তিনি৷

জোহার আরো বলেন, ‘সেখানে আরাকান আর্মি খুব শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে৷ মিয়ানমারের সেনারা তাদের সঙ্গে পেরে উঠছে না৷ তারা একে অপরের ওপর বোমা হামলা করছে৷ কিন্তু মুসলিমরা মারা যাচ্ছেন৷’

‘আমাদের সামর্থ্যের বাইরে’

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়৷ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে এরমধ্যেই অর্থনীতি ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ সরকার৷ এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে রোহিঙ্গা আসাকে নেতিবাচকভাবেই দেখছে দেশটি৷

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা দুঃখিত, কিন্তু আর কাউকে জায়গা দেওয়া আমাদের সামর্থ্যের বাইরে৷’

কিন্তু মিয়ানমারে থাকা প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গার ওপর চলা আক্রমণে অসহায় গোষ্ঠীটি৷ নতুন করে যারা আসছেন তারা বলছেন, সীমান্ত পাড়ি দেওয়া ছাড়া তাদের জন্য আর কোনো পথ নেই৷

নিজের মেয়েকে নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা বিবি ফাইজা জানালেন, ‘মৃতদেহ দেখে আমরা ভয় পেয়েছি আমাদের ওপর হামলা আসছে৷ এখন আর আমি কোনো গুলির আওয়াজ শুনতে পাই না৷ এখানে শান্তি আছে৷’

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১২:৪৯:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৮৪
Translate »

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বর্ণনায় নির্যাতনের ভয়াবহতা

আপডেট : ১২:৪৯:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রায় ১৪ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেনছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘাতের কারণে নির্যাতনের মুখে আবারও বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন রোহিঙ্গারা৷ তাদের লক্ষ্য করে কীভাবে হামলা চালানো হচ্ছে, তা জানিয়েছেন পালিয়ে আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা৷

তাদের একজন সাঈদ৷ তিনি গত মাসে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছেছেন৷ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ করতে তাকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷ নিরাপত্তার স্বার্থে ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন তিনি৷

সেনাবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ করতে যাওয়ায় বিদ্রোহীরা তাদের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা চালাচ্ছে৷ ফলে আবারও হাজার হাজার রোহিঙ্গা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছেন৷

শুধু সাঈদ একা নন৷ হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে জোর করে মিয়ানমারের সেনাদের পক্ষে যুদ্ধে  যুদ্ধে যোগদান করানো হয়েছে৷ এর ফল ভোগ করছে মিয়ানমারে অবস্থানরত পুরো রোহিঙ্গা গোষ্ঠী৷ কারণ, সেনাবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ করতে যাওয়ায় বিদ্রোহীরা তাদের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা চালাচ্ছে৷ ফলে আবারও হাজার হাজার রোহিঙ্গা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছেন৷

বাংলাদেশে পালিয়ে এসে বার্তা সংস্থা এএফপিকে সাঈদ জানান, সেখানকার মানুষদের (রোহিঙ্গা) ওপর নির্যাতন চলছে৷ ‘আমি নিজের চোখে তা দেখে এসেছি৷ অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন অনেকে৷ সবাই নিজের জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত’ বলেন তিনি।

গত জুন মাসে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে সক্রিয় একটি সশস্ত্রগোষ্ঠী সাঈদকে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ধরে নিয়ে যায়৷ স্বাধীনতার দাবিতে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছে আরাকান আর্মি৷

আমরা দুঃখিত, কিন্তু আর কাউকে জায়গা দেওয়া আমাদের সামর্থ্যের বাইরে৷

তৌহিদ হোসেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সাইদসহ যুদ্ধে যোগ দেওয়া অন্য রোহিঙ্গার কাজ ছিল জিনিসপত্র আনা-নেওয়া করা, বাংকার খনন, সেনাবাহিনীর জন্য পানি সরবরাহ করা ইত্যাদি৷ তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের কোনো প্রশিক্ষণ দেয়নি৷ সেনারা পুলিশ স্টেশনের ভেতরে অবস্থান করে৷ বাইরে বের হয় না৷’

বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির থেকে দুই হাজার রোহিঙ্গাকে জোরপূর্বক যুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ বলা হয়েছে, জান্তার পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিলে তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে৷

একপর্যায়ে সেখানকার একটি মুসলিমপ্রধান গ্রামের পাহারার দায়িত্ব দেওয়া হয় সাঈদকে৷ সেখান থেকে পালিয়ে আসেন তিনি৷

বাংলাদেশ সরকারের ও জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্য মতে, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তীব্র সংঘাত শুরু হলে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রায় ১৪ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন৷

‘চারদিকে মরদেহ’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির থেকে অন্তত দুই হাজার রোহিঙ্গাকে জোরপূর্বক যুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ তারা বলছেন, সশস্ত্রগোষ্ঠীরা তাদের জোর করে নিয়ে গেছে৷ বলা হয়েছে, জান্তার পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিলে তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে৷

তবে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে সক্রিয় দুটি সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) বলছে, তারা কাউকে জোর করে যুদ্ধে নিয়ে যায়নি৷

আরএসওর সিনিয়র নেতা কো কো লিন বলেন, ‘আমরা কখনোই কাউকে আমাদের জন্য বা অন্যদের জন্য জোর করে নিয়ে যাইনি৷’

মৃতদেহ দেখে আমরা ভয় পেয়ে যাই যে, আমাদের ওপরও হামলা আসছে৷ এখন আর আমি কোনো গুলির আওয়াজ শুনতে পাই না। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী

এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মি—উভয়ই সংঘাতের সময়ে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে৷

অন্য অধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ করতে নিয়ে যাওয়ার কারণে তাদের ওপর আরাকান আর্মি প্রতিশোধমূলক হামলা চালাচ্ছে৷

তবে মানবাধিকার সংগঠন ফর্টিফাইড রাইটস জানিয়েছে, বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি ড্রোন ও মর্টার হামলা চালিয়ে সীমান্তে ১০০ রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষকে হত্যা করেছে৷ শুধু তাই নয়, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা রোহিঙ্গারাও আরাকান আর্মিকে হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করছে৷

তবে আরাকান আর্মি সাধারণ রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে এমন হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷

চলতি মাসের শুরু দিকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন ২২ বছরের মোহাম্মদ জোহর৷ তার বোনের স্বামীকে নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছিলেন তিনি৷ এ সময় হামলায় নিতহ হন তাঁর বোনের স্বামী৷ জোহরের দাবি, আরাকান আর্মির ড্রোন হামলায় এই ঘটনা ঘটেছে৷ ‘সবখানে মৃতদেহ পড়ে আছে৷ নদীর পাড়েও মৃতদেহ পড়েছিল’ জানান তিনি৷

জোহার আরো বলেন, ‘সেখানে আরাকান আর্মি খুব শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে৷ মিয়ানমারের সেনারা তাদের সঙ্গে পেরে উঠছে না৷ তারা একে অপরের ওপর বোমা হামলা করছে৷ কিন্তু মুসলিমরা মারা যাচ্ছেন৷’

‘আমাদের সামর্থ্যের বাইরে’

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়৷ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে এরমধ্যেই অর্থনীতি ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ সরকার৷ এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে রোহিঙ্গা আসাকে নেতিবাচকভাবেই দেখছে দেশটি৷

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা দুঃখিত, কিন্তু আর কাউকে জায়গা দেওয়া আমাদের সামর্থ্যের বাইরে৷’

কিন্তু মিয়ানমারে থাকা প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গার ওপর চলা আক্রমণে অসহায় গোষ্ঠীটি৷ নতুন করে যারা আসছেন তারা বলছেন, সীমান্ত পাড়ি দেওয়া ছাড়া তাদের জন্য আর কোনো পথ নেই৷

নিজের মেয়েকে নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা বিবি ফাইজা জানালেন, ‘মৃতদেহ দেখে আমরা ভয় পেয়েছি আমাদের ওপর হামলা আসছে৷ এখন আর আমি কোনো গুলির আওয়াজ শুনতে পাই না৷ এখানে শান্তি আছে৷’