London ০২:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি 

বিনা মূল্যের পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি ফাইল ছবি

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়েও পরিবর্তন হচ্ছে। বিনা মূল্যের এসব পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি বা দেয়ালে আঁকা ছবি। আর এত দিন ধরে চলা পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে থাকা ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও তাঁর উদ্ধৃতি বাদ যাচ্ছে। একই সঙ্গে ইতিহাসনির্ভর বিষয়েও অনেক পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। তবে বছরের মাত্র দুই মাস বাকি থাকলেও এখনো পাঠ্যবই পরিমার্জনের কাজ শেষ করে ছাপার জন্য প্রস্তুত করতে পারেনি এনসিটিবি। ফলে বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব নতুন বই তুলে দেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মুদ্রণকারী বলেন, এবার বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই দেওয়ার বিষয়ে তিনি আশা দেখছেন না। কারণ, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুদ্রণকারীদের হাতে পাণ্ডুলিপি দেওয়া হয়নি। ‘ক্রাইসিস পরিস্থিতিতে’ যে ধরনের কর্মপরিকল্পনা থাকা দরকার, সেটারও ঘাটতি দেখা যাচ্ছে এনসিটিবিতে। আবার মুদ্রণকারীরা ব্যাংক থেকে ঋণ পেতেও কিছুটা অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন। সময়ও কম। এসব কারণে বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই দেওয়া যাবে কি না, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না।

এত দিন ধরে চলা পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে থাকা ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও তাঁর উদ্ধৃতি বাদ যাচ্ছে। একই সঙ্গে ইতিহাসনির্ভর বিষয়েও অনেক পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

অবশ্য এনসিটিবির কর্মকর্তারা আশা করছেন, পরিমার্জনের কাজ পুরোপুরি শেষ করে এ মাসের মধ্যেই মুদ্রণকারীদের হাতে পাণ্ডুলিপির সিডি দিতে পারবেন।

বর্তমানে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছর চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর মধ্য দিয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই তা চালুর কথা ছিল। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হলে নতুন শিক্ষাক্রম কার্যত বাতিল হয়ে গেছে।

এনসিটিবি সূত্র বলছে, সক্রিয় শিখনপ্রক্রিয়া থাকায় আগামী বছর প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই দেওয়া হলেও সেখানেও কিছু পরিমার্জন হচ্ছে। কিন্তু চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণির পাঠ্যবই নতুন শিক্ষাক্রমের পরিবর্তে পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবই দেওয়া হবে ২০১১ সালের শিক্ষাক্রমের আলোকে। আর ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ২০১২ সালে প্রণীত শিক্ষাক্রমের আলোকে তৈরি পাঠ্যবই পাবে শিক্ষার্থীরা।

বর্তমানে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছর চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর মধ্য দিয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই তা চালুর কথা ছিল।

পুরোনো শিক্ষাক্রমের বই হলেও বিষয়বস্তুতে কিছু পরিবর্তন হবে। পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে ইতিমধ্যে পাঠ্যবই আছে। প্রসঙ্গত, শিক্ষাক্রম ২০১২ সালের হলেও সর্বশেষ ২০২২ সাল পর্যন্ত এই শিক্ষাক্রমের আলোকে বই দেওয়া হয়েছে। সেগুলোই এখন পরিমার্জন করে ছাপার উপযোগী করা হচ্ছে। এই কাজে ৪১ ব্যক্তি জড়িত।

নতুন শিক্ষাক্রমে বইয়ের সংখ্যা কম ছিল, কিন্তু পুরোনো শিক্ষাক্রমে বই বেশি। নতুন শিক্ষাক্রমে মাধ্যমিকে একেকটি শ্রেণির জন্য ১০টি বিষয় ছিল। পুরোনো শিক্ষাক্রমে বিষয় আরও বেশি। তাই বইয়ের সংখ্যা বেশি। যেমন পুরোনো শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিকে বইয়ের সংখ্যা ২৩ (সব কটি সবার জন্য নয়)।

এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, পরিমার্জনের মাধ্যমে বেশ কিছু পাঠ্যপুস্তকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চেতনার প্রতিফলন থাকছে। তবে যেহেতু এই অভ্যুত্থানের বিষয়টি অতি নিকট ইতিহাস এবং এবার সময়ও কম, তাই লেখা হিসেবে না রেখে কিছু পাঠ্যবইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি বা দেয়ালে আঁকা ছবি ইত্যাদি বিষয় রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

পরিমার্জনের কাজটি শেষ হয়েছে। তাঁরা আশা করছেন, এ মাসের মধ্যেই সব পাণ্ডুলিপির সিডি মুদ্রণকারীদের হাতে দিতে পারবেন। 

লেখক রাখাল রাহা

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানিয়েছে বাংলা, ইতিহাস, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের মতো কিছু বইয়ের প্রচ্ছদে বা বইয়ের কোনো কোনো অংশে এসব গ্রাফিতি বা দেয়ালে আঁকা ছবি যুক্ত করা হবে। অন্যদিকে এখন পাঠ্যবইয়ের পেছনের পৃষ্ঠায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যেসব ছবি ও উদ্ধৃতি রয়েছে, সেগুলো বাদ দেওয়া হবে। পরিবর্তে চিরন্তন কিছু বাণী যুক্ত হবে। এ ছাড়া ইতিহাসনির্ভর বিষয়েও কিছু বিষয় কাটছাঁট করা হচ্ছে।

এবার পাঠ্যবই পরিমার্জনের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত আছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম লেখক রাখাল রাহা। তিনি বলেন, পরিমার্জনের কাজটি শেষ হয়েছে। তাঁরা আশা করছেন, এ মাসের মধ্যেই সব পাণ্ডুলিপির সিডি মুদ্রণকারীদের হাতে দিতে পারবেন। 

এবার মোট বইয়ের সংখ্যা ৪০ কোটির মতো। বই ছাপার জন্য পাণ্ডুলিপির সিডি শনিবার থেকে দেওয়া শুরু হয়েছে। তাঁর আশা, পরিকল্পনামতো কাজ হলে বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে পারবেন।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম রিয়াজুল হাসান

পুরোনো শিক্ষাক্রমে নবম ও দশম শ্রেণি মিলিয়ে এসএসসি পরীক্ষা হয়। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে কেবল দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। এ জন্য দুই শ্রেণির জন্য আলাদা বই দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। বর্তমানে যারা নবম শ্রেণিতে পড়ছে, তারা ২০২৬ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। এই শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে বই পড়ে চলতি শিক্ষাবর্ষ প্রায় শেষ করে ফেলেছে। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে, এসব শিক্ষার্থী আগামী বছর দশম শ্রেণিতে উঠে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা বেছে নেবে। তাদের জন্য ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের আলোকে পরিমার্জন করে নতুন পাঠ্যবই দেওয়া হবে।

এ কারণে এবার পাঠ্যবইয়ের সংখ্যাও বাড়ছে বলে জানায় এনসিটিবি। 

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, এবার মোট বইয়ের সংখ্যা ৪০ কোটির মতো। বই ছাপার জন্য পাণ্ডুলিপির সিডি শনিবার থেকে দেওয়া শুরু হয়েছে। তাঁর আশা, পরিকল্পনামতো কাজ হলে বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে পারবেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৩:৫১:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪
৬৯
Translate »

পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি 

আপডেট : ০৩:৫১:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪

বিনা মূল্যের পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি ফাইল ছবি

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়েও পরিবর্তন হচ্ছে। বিনা মূল্যের এসব পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি বা দেয়ালে আঁকা ছবি। আর এত দিন ধরে চলা পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে থাকা ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও তাঁর উদ্ধৃতি বাদ যাচ্ছে। একই সঙ্গে ইতিহাসনির্ভর বিষয়েও অনেক পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। তবে বছরের মাত্র দুই মাস বাকি থাকলেও এখনো পাঠ্যবই পরিমার্জনের কাজ শেষ করে ছাপার জন্য প্রস্তুত করতে পারেনি এনসিটিবি। ফলে বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব নতুন বই তুলে দেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মুদ্রণকারী বলেন, এবার বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই দেওয়ার বিষয়ে তিনি আশা দেখছেন না। কারণ, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুদ্রণকারীদের হাতে পাণ্ডুলিপি দেওয়া হয়নি। ‘ক্রাইসিস পরিস্থিতিতে’ যে ধরনের কর্মপরিকল্পনা থাকা দরকার, সেটারও ঘাটতি দেখা যাচ্ছে এনসিটিবিতে। আবার মুদ্রণকারীরা ব্যাংক থেকে ঋণ পেতেও কিছুটা অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন। সময়ও কম। এসব কারণে বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই দেওয়া যাবে কি না, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না।

এত দিন ধরে চলা পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে থাকা ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও তাঁর উদ্ধৃতি বাদ যাচ্ছে। একই সঙ্গে ইতিহাসনির্ভর বিষয়েও অনেক পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

অবশ্য এনসিটিবির কর্মকর্তারা আশা করছেন, পরিমার্জনের কাজ পুরোপুরি শেষ করে এ মাসের মধ্যেই মুদ্রণকারীদের হাতে পাণ্ডুলিপির সিডি দিতে পারবেন।

বর্তমানে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছর চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর মধ্য দিয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই তা চালুর কথা ছিল। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হলে নতুন শিক্ষাক্রম কার্যত বাতিল হয়ে গেছে।

এনসিটিবি সূত্র বলছে, সক্রিয় শিখনপ্রক্রিয়া থাকায় আগামী বছর প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই দেওয়া হলেও সেখানেও কিছু পরিমার্জন হচ্ছে। কিন্তু চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণির পাঠ্যবই নতুন শিক্ষাক্রমের পরিবর্তে পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবই দেওয়া হবে ২০১১ সালের শিক্ষাক্রমের আলোকে। আর ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ২০১২ সালে প্রণীত শিক্ষাক্রমের আলোকে তৈরি পাঠ্যবই পাবে শিক্ষার্থীরা।

বর্তমানে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছর চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর মধ্য দিয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই তা চালুর কথা ছিল।

পুরোনো শিক্ষাক্রমের বই হলেও বিষয়বস্তুতে কিছু পরিবর্তন হবে। পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে ইতিমধ্যে পাঠ্যবই আছে। প্রসঙ্গত, শিক্ষাক্রম ২০১২ সালের হলেও সর্বশেষ ২০২২ সাল পর্যন্ত এই শিক্ষাক্রমের আলোকে বই দেওয়া হয়েছে। সেগুলোই এখন পরিমার্জন করে ছাপার উপযোগী করা হচ্ছে। এই কাজে ৪১ ব্যক্তি জড়িত।

নতুন শিক্ষাক্রমে বইয়ের সংখ্যা কম ছিল, কিন্তু পুরোনো শিক্ষাক্রমে বই বেশি। নতুন শিক্ষাক্রমে মাধ্যমিকে একেকটি শ্রেণির জন্য ১০টি বিষয় ছিল। পুরোনো শিক্ষাক্রমে বিষয় আরও বেশি। তাই বইয়ের সংখ্যা বেশি। যেমন পুরোনো শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিকে বইয়ের সংখ্যা ২৩ (সব কটি সবার জন্য নয়)।

এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, পরিমার্জনের মাধ্যমে বেশ কিছু পাঠ্যপুস্তকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চেতনার প্রতিফলন থাকছে। তবে যেহেতু এই অভ্যুত্থানের বিষয়টি অতি নিকট ইতিহাস এবং এবার সময়ও কম, তাই লেখা হিসেবে না রেখে কিছু পাঠ্যবইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি বা দেয়ালে আঁকা ছবি ইত্যাদি বিষয় রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

পরিমার্জনের কাজটি শেষ হয়েছে। তাঁরা আশা করছেন, এ মাসের মধ্যেই সব পাণ্ডুলিপির সিডি মুদ্রণকারীদের হাতে দিতে পারবেন। 

লেখক রাখাল রাহা

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানিয়েছে বাংলা, ইতিহাস, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের মতো কিছু বইয়ের প্রচ্ছদে বা বইয়ের কোনো কোনো অংশে এসব গ্রাফিতি বা দেয়ালে আঁকা ছবি যুক্ত করা হবে। অন্যদিকে এখন পাঠ্যবইয়ের পেছনের পৃষ্ঠায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যেসব ছবি ও উদ্ধৃতি রয়েছে, সেগুলো বাদ দেওয়া হবে। পরিবর্তে চিরন্তন কিছু বাণী যুক্ত হবে। এ ছাড়া ইতিহাসনির্ভর বিষয়েও কিছু বিষয় কাটছাঁট করা হচ্ছে।

এবার পাঠ্যবই পরিমার্জনের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত আছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম লেখক রাখাল রাহা। তিনি বলেন, পরিমার্জনের কাজটি শেষ হয়েছে। তাঁরা আশা করছেন, এ মাসের মধ্যেই সব পাণ্ডুলিপির সিডি মুদ্রণকারীদের হাতে দিতে পারবেন। 

এবার মোট বইয়ের সংখ্যা ৪০ কোটির মতো। বই ছাপার জন্য পাণ্ডুলিপির সিডি শনিবার থেকে দেওয়া শুরু হয়েছে। তাঁর আশা, পরিকল্পনামতো কাজ হলে বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে পারবেন।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম রিয়াজুল হাসান

পুরোনো শিক্ষাক্রমে নবম ও দশম শ্রেণি মিলিয়ে এসএসসি পরীক্ষা হয়। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে কেবল দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। এ জন্য দুই শ্রেণির জন্য আলাদা বই দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। বর্তমানে যারা নবম শ্রেণিতে পড়ছে, তারা ২০২৬ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। এই শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে বই পড়ে চলতি শিক্ষাবর্ষ প্রায় শেষ করে ফেলেছে। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে, এসব শিক্ষার্থী আগামী বছর দশম শ্রেণিতে উঠে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা বেছে নেবে। তাদের জন্য ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের আলোকে পরিমার্জন করে নতুন পাঠ্যবই দেওয়া হবে।

এ কারণে এবার পাঠ্যবইয়ের সংখ্যাও বাড়ছে বলে জানায় এনসিটিবি। 

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, এবার মোট বইয়ের সংখ্যা ৪০ কোটির মতো। বই ছাপার জন্য পাণ্ডুলিপির সিডি শনিবার থেকে দেওয়া শুরু হয়েছে। তাঁর আশা, পরিকল্পনামতো কাজ হলে বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে পারবেন।