পটুয়াখালী জেলায় দখলদারদের রাজত্ব প্রতিবছর বসতভিটা ছাড়া হয় শত পরিবার

পটুয়াখালী জেলা আটটি উপজেলা পটুয়াখালী সদর, বাউফল, দুমকি, মির্জাগঞ্জ, গলাচিপা, দশমিনা, কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী নিয়ে গঠিত। এ জেলার জনসংখ্যা ১৭,২৭,২৫৪ জন। যার মধ্যে শতকরা ৬০.০৬ জন লোক দারিদ্র। শতকরা ২৮ জন লোক নিরক্ষর। এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে একদল প্রভাবশালী দুঃস্কৃতিকারীরা মাদক ব্যবসায়ীদের দের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে মারধর, গুম, খুন, রাহাজানি এমনকি বসতবাড়ি থেকে উৎখাত পর্যন্ত করতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে না। বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতি বছর শতাধিক পরিবারকে বসতভিটা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করতেছেন তারা। তাদের অত্যাচারে ঘরবাড়ি ছেড়ে কেউ বা রাস্তায়, কেউ বা হাসপাতালের পরিত্যক্ত জায়গায় যে যেখানে পারছে দিন কাটাচ্ছে এরকম ভুক্তভোগীর সংখ্যা পটুয়াখালী শহরে অনেক দেখা যায়। দুষ্কৃতকারী দের হাত এতটাই লম্বা যে ভুক্তভোগীরা আদালত পর্যন্ত যেতে পারছে না, কেউ বা আদালতে ১ম বার গেলেও পরের তারিখে অজানা কারণে আদালতে আসছে না দুষ্কৃতকারীদের নির্যাতনের ভয়ে। কেউ আদালতে আসলেও উল্টো হুমকি ধামকি দিয়ে বের করে দিচ্ছে। জেলা প্রশাসনের নজরে আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন ঠিকই কিন্তু পরে ভয়ভীতিতে বাদী আর সামনে এগোতে চায় না। এরকমই একজন ভুক্তভোগী কলাপাড়া উপজেলার মেয়ে মরিয়ম বেগম লন্ডন বিডি টিভি কে বলেন, বিগত ০৭ বছর যাবত আমার স্বামী হাজীখালীর বাসিন্দা বারেক ঘরামীর ছেলে লিটন ঘরামি তিন সন্তানসহ আমার খোজখবর নেয় না। আমাকে ভুয়া তালাক দিলে তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট আশিকুর রহমান তালাক প্রত্যাহার করেন। পরে তিনি বদলি হয়ে গেলে আমি আবার মামলা করতে গেলে বিভিন্ন লোক দ্বারা বাধাগ্রস্ত হই পরে উপায় না পেয়ে আমি ম্যাজিস্ট্রেট স্যারের সামনে যাই স্যারকে আমার সমস্যার কথা বললে লিগ্যাল এইডের একজন কর্মকর্তাকে ডেকে আমার মামলা নিতে ও একজন উকিলের ব্যবস্থা করতে বলেন পরে মামলা নিলেও তারিখের দিন কোর্টে যেতে পারি নাই মহুরি, উকিল, পুলিশের বাধার কারণে পেশকার ও আমাকে ধমক দেয়। আমার এই দুরবস্থা দেখে ম্যাজিস্ট্রেট আশিকুর রহমান জেলা পরিষদে ফোন দিয়ে আমাকে একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন আমার বাবার বাড়ি কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নে পরে সেখানে আমি আমার সন্তানেদের নিয়ে থাকতে গেলে স্থানীয় মাসুদ মেম্বার আমার কাছে ৫০,০০০ টাকা দাবি করে আমি টাকা দিতে না পারায় আমাকে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নিয়ে মারধর করে এলাকা ছাড়া করে। পরে আমি কলাপাড়া ইউএনও এর কাছে যাই সে আমাকে আশ্বস্থ করলেও পরে মাসুদ মেম্বার তালাবদ্ধ ঘর দেখিয়ে আমি ঘরে থাকি না বলে ইউএনও কে অবহিত করেন। ঘর ও জায়গার কাগজপত্র আমার নামে থাকলেও আমাকে এখন পর্যন্ত দেয়নি। আমার সবশেষ আমার মরে যাওয়াই ভালো। পটুয়াখালী সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের উচ্ছিষ্ট ময়লা থেকে পরিত্যক্ত সুই, সিরিঞ্জ, স্যালাইন সংগ্রহ কারী লালবানু বেগম জানান, বিগত ১০ বছর আগে আমাকে আমার বাড়ি থেকে মারধর করে বের করে দিছে আমি এখন এগুলো করে সংসার চালাই ফেরিঘাটে পরিত্যাক্ত জায়গায় আমার ৬ ছেলে মেয়ে নিয়ে বসবাস করি। আমার এ কাজ করে সপ্তাহে ১০০০-১৫০০ টাকা আয় হয় যা দিয়ে ঠিকমতো খেতে পারি না। আমি আমার জমি ফেরত চাই। মির্জাগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের ভুক্তভোগী এক বাসিন্দা জানান, স্থানীয় সন্ত্রাসী জব্বার, হাসান, মোশারেফ, ফোরকান আমাদের মারধর করে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিছে পরে মির্জাগঞ্জ থানায় গিয়েও বিচার পাইনি এখন আমি আমার ছেলেকে নিয়ে বনানী ভাড়া থাকছি। মামলা করেছি কোন উপায় হচ্ছে না। এভাবেই প্রতিবছর নিজেদের বসতবাড়ি ছেড়ে ভাসমান হয়ে পটুয়াখালী থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মানবেতর জীবনযাপন করছে শত শত পরিবার। এ চিত্র পটুয়াখালীর প্রত্যেকটা উপজেলার। প্রশ্ন এখন জেলা ও উপজেলার অভিবাবকদের কাছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন শক্তিশালী নাকি বিভিন্ন স্তরে ঘাপটি মেরে থাকা দুঃস্কৃতিকারী, অবৈধ দখলদার, সন্ত্রসী, মাদক ব্যবসায়ীরা শক্তিশালী নিশ্চয়ই জেলা প্রশাসন শক্তিশালী তাই যদি হয় পটুয়াখালীতে আর কখনও কাউকে তার নিজ বসতবাড়ি ছেড়ে যেতে হবে না এই প্রত্যাশা সকলের।