প্রতিদিন (শুক্রবার ও শনিবার ব্যতীত) পটুয়াখালী চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে জেলার আটটি উপজেলার হাজারো মানুষের ভিড় জমে। কেউই খুশিমনে এখানে আসে না—সবাই কোনো না কোনো সমস্যায় জর্জরিত হয়ে, আশার শেষ ঠিকানা হিসেবে আদালতের দ্বারস্থ হয়।
এই মানুষগুলো আদালতের বিচার প্রক্রিয়ার ওপর ভরসা করে, কিন্তু বাস্তবতা হলো—যাদের আর্থিক সামর্থ্য নেই, তাদের পক্ষে ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন। অর্থাভাবে বহু মানুষ মামলা চালাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে, কেউ কেউ বাধ্য হয়ে পটুয়াখালী ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমায়। আবার অনেক নির্দোষ মানুষ মিথ্যা মামলায় জেল খাটছে, এমন নজিরও কম নয়।
এই দুঃসহ অবস্থায় পটুয়াখালী জেলা লিগ্যাল এইড অফিস এক আলোর দিশা হয়ে উঠেছে। সহকারী জজ ও জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার নওরিন করিমের নেতৃত্বে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিদিন বহু অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। মামলা ছাড়াই দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা ও মীমাংসার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করছেন তিনি। এতে বাদী-বিবাদী উভয়ই সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন।
সাধারণ মানুষ বলছেন, “জজ স্যার ভালো মানুষ, আমাদের মামলা না করে মিশাইয়া দিছে।” এই মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া আদালতের বাইরে হলে অনেক টাকা ব্যয় হতো, যা এখান থেকে তারা বিনামূল্যে পাচ্ছেন। যারা মীমাংসায় রাজি হন না বা গুরুতর অপরাধে জড়িত, তাদের জন্যও লিগ্যাল এইড অফিস থেকে বিনামূল্যে মামলা পরিচালনা ও বিচারিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
তবে কিছু অসাধু আইনজীবীর বিরুদ্ধে বাদীর কাছ থেকে গোপনে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জজ নওরিন করিম বলেন, “লিগ্যাল এইডের কোনো আইনজীবী যদি টাকা চান, লিখিত অভিযোগ দিলে আমি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব।” তিনি সকলকে সচেতন থেকে নিয়মবহির্ভূত লেনদেন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
বিশিষ্টজনেরা মনে করেন, দেশের প্রতিটি জেলায় যদি পটুয়াখালী জেলার মতো নিবেদিতপ্রাণ ও মানবিক লিগ্যাল এইড অফিসার থাকেন, তবে দেশে সহিংসতা, বিরোধ, এমনকি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।
সহকারী জজ নওরিন করিমের মতো কর্মকর্তা বাংলাদেশের আইন ও মানবাধিকারের অঙ্গনে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন।