London ০৫:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নেত্রকোনায় ফল চাষ করে স্বাবলম্বী শিক্ষিত যুবক শাহজাদা

বিজয় চন্দ্র দাস,নেত্রকোনা

 

নেত্রকোনা জেলা সদরের জাহাঙ্গীরপুর কংস নদীর পাড়ে অবস্থিত একটি গ্ৰাম।এ গ্ৰামে শিক্ষিত যুবক শাহজাদা বিভিন্ন ধরনের ফল চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি এলাকায় মডেল ফল চাষী হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন।

এবার তিনি ইউটিউব দেখে বার মাসী বারী-১১ জাতের আম চাষ শুরু করেছেন। এ আমের চারা তিনি ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগ্রহ করেছেন।এর আগে তিনি বিদেশি মাল্টা ও চায়না কমলা লেবুর চাষ করে কয়েক লাখ টাকা উপার্জন করেন। চার বছর আগে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর বারী১১ জাতের আমের চারা রোপণ করেন।গাছ বড় হয়ে আম ধরেছে প্রচুর,ফল বড় হচ্ছে। তিনি আশাবাদী,আমের ফলন ভালো হবে।

শাহজাদা জানান, বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি চাষ করে বেকারত্ব দূর করেন। তবে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি চাষ করে আর্থিকভাবে খুব একটা লাভবান হতে পারেননি। তারপর শুরু হলো নতুন কিছু করার ইচ্ছে। তিনি ইউটিউব ভিডিও দেখে জৈবিক পদ্ধতিতে শুরু করেন প্রথমে চায়না কমলা চাষ। এজন্য তিনি ভারতে এক ইউটিউব ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যান। দেশে ফিরে এসে ঝিনাইদহ থেকে চারা নিয়ে আসেন। চায়না কমলা চাষ করে প্রথম বছর ২ লাখ,পরের বছর ৩ লাখ ও চতুর্থ বছরে ৪ লাখ টাকার বেশি ফল বিক্রি করে উপার্জন করেন তিনি।


তারপর বিদেশি মাল্টা ফলের চাষ। তিনি তার বাগানে কখনো রাসায়নিক সার প্রয়োগ করেননি।তার পরিবর্তে ব্যবহার করেছেন গোবর ও প্রাকৃতিক সার।তার বাগানে উৎপাদিত ফল আকারে যেমন বড় ও সুস্বাদু হয়েছে, তেমনি বাজারজাত করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন তিনি। তার বাগানে চাষ করা মাল্টা অন্যদের তুলনায় অনেক বড় ও দেখতে আকর্ষণীয় হয়েছে।

ফল চাষী শাহজাদা জানান,দেশি বিদেশি ফল চাষে এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা এগিয়ে এলে একদিকে যেমন মানুষের ফলের চাহিদা পূরণ হবে, অপরদিকে আর্থিকভাবে লাভবান হবে তারা। তিনি ফল চাষের জন্য এলাকার কৃষকদেরকে ও পরামর্শ দেন।

বাগানের শ্রমিক ওয়াহাব মিয়া জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে অগণিত মানুষ বাগান দেখতে ভিড় করছেন। বাগানের কোন ফলের চারা কোথা থেকে আনা হচ্ছে জানতে চান তারা। কিভাবে জৈবিক পদ্ধতিতে ফল চাষ করা যায় তাতেও অনেকের প্রশ্ন। কেউ কেউ আবার নিজের জমিতে এ ফল চাষ করবেন বলে আগ্ৰহ প্রকাশ করছেন। কেউ কেউ মোবাইল দিয়ে ছবি ও ভিডিও করে নিয়ে যাচ্ছেন।

জাহাঙ্গীর পুরের কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, আমাদের এলাকায় শাহজাদা তিনি বিভিন্ন বিচিত্র ফল চাষে মডেল চাষী। তাকে এলাকার মানুষ এক্ষেত্রে পরামর্শ দাতা হিসেবে গ্ৰহণ করে। তিনি প্রথমে পৈতৃক জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি চাষ করতেন। তিনি শাক-সবজি চাষ করে ও এলাকায় পরিচিত হয়ে উঠেছেন। তবে মাল্টা, চায়না বিশেষ করে বারো মাসী আম বারী-১১ চাষ শুরু করে সাড়া জাগিয়েছেন এলাকায়।

জেলার সীমান্তবর্তী কলমাকান্দা থেকে আমের বাগান দেখতে আসা ফজলুর রহমান জানান, অনেক ধরনের ফল চাষ করা হয় জানি।বারমাসী আম আছে তাও শুনেছি। কিন্তু এ আম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা যায়, জানতাম না। শাহজাদা ভাইয়ের বাগান দেখে নতুন এ ধারণা হলো। আমি ও ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বারী১১ জাতের আমের চারা এনে চাষ করবো।

শাহজাদা জানান, আমি দীর্ঘদিন ধরে পৈতৃক জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি চাষ করেছি। তারপর চায়না কমলা চাষ করতে শুরু করি।

শাহজাদার জৈবিক পদ্ধতিতে ফল চাষে সফলতা দেখে এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা আগ্ৰহী হয়ে উঠছেন দিন দিন। দূর দূরান্ত থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এসে বাগানের ফল দেখতে ভিড় করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান জানান, জেলা সদরের জাহাঙ্গীরপুর গ্ৰামের বাসিন্দা শাহজাদা দীর্ঘদিন শাক-সবজি চাষ করেছেন। তাতে ও তিনি তৃপ্ত নন। ইউটিউব ভিডিও দেখে শুরু হয় তার ফল চাষে অনুসন্ধান। প্রথমে চায়না কমলা চাষ করেই সাড়া জাগিয়েছেন, অর্থনৈতিকভাবে লাভবান ও হয়েছেন তিনি। এবার এই প্রথম জেলায় তিনি শুরু করলেন বারী ১১ জাতির আম।এ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল চাষ করে ও তিনি সফল হবেন।চারা বড় হয়ে,আম ধরেছে,বড় ও হচ্ছে। উনার জন্য যে কোন ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেয়া হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৭:৫৪:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫
Translate »

নেত্রকোনায় ফল চাষ করে স্বাবলম্বী শিক্ষিত যুবক শাহজাদা

আপডেট : ০৭:৫৪:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫

 

নেত্রকোনা জেলা সদরের জাহাঙ্গীরপুর কংস নদীর পাড়ে অবস্থিত একটি গ্ৰাম।এ গ্ৰামে শিক্ষিত যুবক শাহজাদা বিভিন্ন ধরনের ফল চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি এলাকায় মডেল ফল চাষী হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন।

এবার তিনি ইউটিউব দেখে বার মাসী বারী-১১ জাতের আম চাষ শুরু করেছেন। এ আমের চারা তিনি ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগ্রহ করেছেন।এর আগে তিনি বিদেশি মাল্টা ও চায়না কমলা লেবুর চাষ করে কয়েক লাখ টাকা উপার্জন করেন। চার বছর আগে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর বারী১১ জাতের আমের চারা রোপণ করেন।গাছ বড় হয়ে আম ধরেছে প্রচুর,ফল বড় হচ্ছে। তিনি আশাবাদী,আমের ফলন ভালো হবে।

শাহজাদা জানান, বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি চাষ করে বেকারত্ব দূর করেন। তবে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি চাষ করে আর্থিকভাবে খুব একটা লাভবান হতে পারেননি। তারপর শুরু হলো নতুন কিছু করার ইচ্ছে। তিনি ইউটিউব ভিডিও দেখে জৈবিক পদ্ধতিতে শুরু করেন প্রথমে চায়না কমলা চাষ। এজন্য তিনি ভারতে এক ইউটিউব ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যান। দেশে ফিরে এসে ঝিনাইদহ থেকে চারা নিয়ে আসেন। চায়না কমলা চাষ করে প্রথম বছর ২ লাখ,পরের বছর ৩ লাখ ও চতুর্থ বছরে ৪ লাখ টাকার বেশি ফল বিক্রি করে উপার্জন করেন তিনি।


তারপর বিদেশি মাল্টা ফলের চাষ। তিনি তার বাগানে কখনো রাসায়নিক সার প্রয়োগ করেননি।তার পরিবর্তে ব্যবহার করেছেন গোবর ও প্রাকৃতিক সার।তার বাগানে উৎপাদিত ফল আকারে যেমন বড় ও সুস্বাদু হয়েছে, তেমনি বাজারজাত করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন তিনি। তার বাগানে চাষ করা মাল্টা অন্যদের তুলনায় অনেক বড় ও দেখতে আকর্ষণীয় হয়েছে।

ফল চাষী শাহজাদা জানান,দেশি বিদেশি ফল চাষে এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা এগিয়ে এলে একদিকে যেমন মানুষের ফলের চাহিদা পূরণ হবে, অপরদিকে আর্থিকভাবে লাভবান হবে তারা। তিনি ফল চাষের জন্য এলাকার কৃষকদেরকে ও পরামর্শ দেন।

বাগানের শ্রমিক ওয়াহাব মিয়া জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে অগণিত মানুষ বাগান দেখতে ভিড় করছেন। বাগানের কোন ফলের চারা কোথা থেকে আনা হচ্ছে জানতে চান তারা। কিভাবে জৈবিক পদ্ধতিতে ফল চাষ করা যায় তাতেও অনেকের প্রশ্ন। কেউ কেউ আবার নিজের জমিতে এ ফল চাষ করবেন বলে আগ্ৰহ প্রকাশ করছেন। কেউ কেউ মোবাইল দিয়ে ছবি ও ভিডিও করে নিয়ে যাচ্ছেন।

জাহাঙ্গীর পুরের কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, আমাদের এলাকায় শাহজাদা তিনি বিভিন্ন বিচিত্র ফল চাষে মডেল চাষী। তাকে এলাকার মানুষ এক্ষেত্রে পরামর্শ দাতা হিসেবে গ্ৰহণ করে। তিনি প্রথমে পৈতৃক জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি চাষ করতেন। তিনি শাক-সবজি চাষ করে ও এলাকায় পরিচিত হয়ে উঠেছেন। তবে মাল্টা, চায়না বিশেষ করে বারো মাসী আম বারী-১১ চাষ শুরু করে সাড়া জাগিয়েছেন এলাকায়।

জেলার সীমান্তবর্তী কলমাকান্দা থেকে আমের বাগান দেখতে আসা ফজলুর রহমান জানান, অনেক ধরনের ফল চাষ করা হয় জানি।বারমাসী আম আছে তাও শুনেছি। কিন্তু এ আম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা যায়, জানতাম না। শাহজাদা ভাইয়ের বাগান দেখে নতুন এ ধারণা হলো। আমি ও ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বারী১১ জাতের আমের চারা এনে চাষ করবো।

শাহজাদা জানান, আমি দীর্ঘদিন ধরে পৈতৃক জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি চাষ করেছি। তারপর চায়না কমলা চাষ করতে শুরু করি।

শাহজাদার জৈবিক পদ্ধতিতে ফল চাষে সফলতা দেখে এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা আগ্ৰহী হয়ে উঠছেন দিন দিন। দূর দূরান্ত থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এসে বাগানের ফল দেখতে ভিড় করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান জানান, জেলা সদরের জাহাঙ্গীরপুর গ্ৰামের বাসিন্দা শাহজাদা দীর্ঘদিন শাক-সবজি চাষ করেছেন। তাতে ও তিনি তৃপ্ত নন। ইউটিউব ভিডিও দেখে শুরু হয় তার ফল চাষে অনুসন্ধান। প্রথমে চায়না কমলা চাষ করেই সাড়া জাগিয়েছেন, অর্থনৈতিকভাবে লাভবান ও হয়েছেন তিনি। এবার এই প্রথম জেলায় তিনি শুরু করলেন বারী ১১ জাতির আম।এ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল চাষ করে ও তিনি সফল হবেন।চারা বড় হয়ে,আম ধরেছে,বড় ও হচ্ছে। উনার জন্য যে কোন ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেয়া হবে।