নতুন বন্দোবস্ত, নাকি ভণ্ডোবস্ত?

রাজনীতিতে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার প্রশ্ন উঠেছে– সবার সচেতনতা আবশ্যিক।
রাজনীতি মানে জনসেবার অঙ্গীকার, নৈতিকতা ও আদর্শের চর্চা। কিন্তু যখন কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিজস্ব ঘোষণাকেই অস্বীকার করে, তখন তা জনআস্থা বিনষ্ট করে এবং প্রশ্ন তোলে সেই নেতৃত্বের সততা ও উদ্দেশ্য নিয়ে।
গত ৭ মার্চ ২০২৫, ন্যাশনাল পিপলস অ্যালায়েন্স (নাপা)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এক গঠনমূলক ও দৃঢ় ভাষণে জানান—“আজ থেকে আর কোনো সমন্বয়ক কিংবা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অস্তিত্ব থাকবে না।” এটি ছিল একটি যুগান্তকারী ঘোষণা। অনেকেই এটিকে স্বাগত জানায়, কারণ তা ছিল পুরনো বিভাজন ও বিশৃঙ্খলার ইতি টানার ইঙ্গিত। আহ্বায়ক আশ্বাস দিয়েছিলেন, সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটি স্বচ্ছ ও ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলা হবে।
কিন্তু আজ আমরা যা দেখছি, তা এই ঘোষণার সম্পূর্ণ বিপরীত। সদ্য প্রকাশিত একটি পোস্টারে আবারও “সমন্বয়ক” পরিচয়ে এবং “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন”-এর ব্যানারে সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছে। এর অর্থ কী? জনগণের চোখে ধুলো দিয়ে আবারও কি পুরনো গোষ্ঠী-রাজনীতিকেই পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে? তাহলে কি ৭ মার্চের ঘোষণা ছিল কেবল জনসন্তুষ্টি ও রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের একটি উপায়?
এ ধরনের দ্বিচারিতা রাজনীতিতে কোনো ইতিবাচক বার্তা দেয় না। বরং জনগণের মধ্যে হতাশা, সন্দেহ ও ক্ষোভ বাড়ায়। রাজনীতি করতে হলে স্বচ্ছতা, সাহস ও নৈতিকতা প্রয়োজন। একদিন কিছু বলা আর পরদিন উল্টো পথে হাঁটা নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করে।
যদি সত্যিই একটি “নতুন বন্দোবস্ত” গড়ে তোলার প্রয়াস থাকে, তবে তা হতে হবে বিশ্বাসযোগ্য, জনঅংশগ্রহণমূলক এবং পুরনো ভুলগুলোর আত্মসমালোচনাভিত্তিক। কেবল ব্যানার বদলিয়ে, পুরনো চরিত্র ও আচরণ বহাল রেখে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। জনগণ এখন অনেক বেশি সচেতন ও বিচক্ষণ। তারা সময় মতো প্রতিক্রিয়া জানাতে জানে, আর অযোগ্য নেতৃত্বকে ছুঁড়ে ফেলতেও সময় নেয় না।
রাজনীতি করতে হলে মুখে আদর্শ নয়, কাজে প্রমাণ দিতে হয়। যেকোনো নতুন উদ্যোগ গ্রহণের আগে অতীতের প্রতিশ্রুতি, ভাষণ এবং বাস্তব কার্যক্রমের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে হয়। তা না হলে “নতুন বন্দোবস্ত” আর “ভণ্ডোবস্ত”–এই দুইয়ের
পার্থক্য ঘুচে যাবে।
রাজনীতিতে নৈতিকতার পুনর্জাগরণ হোক—এই প্রত্যাশা করি