London ০১:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
দুর্গাপুরে অনাথ শিশুদের পাশে দাঁড়ালো সেবা সংগঠন নাটোরে দেয়া বক্তব্যের সঠিক তথ্য জানালেন আবুল কাশেম সিরাজগঞ্জে জাতীয় ফল মেলার উদ্বোধন সিরাজগঞ্জে কবরস্থানের পাশে মানসিক ভারসাম্যহীন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার ব্যারিস্টার কায়সার কামালের উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসা শুরু হলো কিডনি রোগাক্রান্ত কৃষ্ণ হাজংয়ের অসাবধনাতায় চলে গেল শিশুর জীবন রাণীনগরে মৌসুমী সমৃদ্ধির দিনভর নানা উন্নয়নমূলক কর্মসূচি কসবায় হেফাজতের নেতৃবৃন্দের সাথে কসবা-আখাউড়া এমপি পদপ্রার্থী প্রভাষক কাজী মঈনুদ্দিনের সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মত বিনিময় সিরাজগঞ্জে পলিথিনে মোড়ানো বস্তুয় অর্ধগলিত নবজাতক শিশুর মরা দেহ উদ্ধার কালিয়াকৈরে দোকানে মালামাল ও নগদ টাকা চুরি

‘দেশ একজন শুদ্ধসংগীতের মানুষকে হারাল’

সুজেয় শ্যাম। ছবি: আনিস মাহমুদ

৬০ বছরের বন্ধুত্ব ছিল সুজেয় শ্যাম ও শেখ সাদী খানের। একসঙ্গে চট্টগ্রাম বেতারে চাকরিও করেছিলেন তাঁরা। হাসপাতালে ভর্তির আগেও কথা হয় দুজনের। হঠাৎ মৃত্যুসংবাদে মুষড়ে পড়েছেন তিনি। গতকাল সন্ধ্যায় শেখ সাদী খান বলছিলেন, ‘শুদ্ধতার প্রতি তাঁর ছিল দারুণ আকর্ষণ। মানুষকে প্রভাবিত করার বিরাট শক্তি ছিল তাঁর। তাঁর মৃত্যুতে একজন ভালো মানুষকে হারালাম। দেশ একজন শুদ্ধসংগীতের মানুষকে হারাল।’

শেখ সাদী খান

শেখ সাদী খানছবি : সংগৃহীত

দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন সুজেয় শ্যাম। সম্প্রতি তাঁর হৃদ্‌যন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়। পরে শিল্পীর শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ে, যা রক্তেও ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া ডায়াবেটিসও ছিল অনিয়ন্ত্রিত। কিডনির সমস্যাও ছিল। হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল; কিন্তু গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টা ৫০ মিনিটে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যান তিনি। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় শিল্পীর। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।

হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকতা শেষে সুজেয় শ্যামের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদর্শন করা হয়। এ সময় পরিবারের মানুষজন ছাড়াও সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সবুজবাগের বরদেশ্বরী কালীমন্দিরে তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।

সুজেয় শ্যাম

সুজেয় শ্যামছবি : সংগৃহীত

সুজেয় শ্যামের সুর করা গানগুলোর মধ্যে আছে ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আহা ধন্য আমার জন্মভূমি’, ‘আয় রে চাষি মজুর কুলি’, ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’, ‘শোন রে তোরা শোন’। একাত্তরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শেষ গান এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর প্রথম গানটির সুর করেছিলেন সুজেয় শ্যাম। গীতিকার শহীদুল আমিনের লেখা ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গানটির সুর ও সংগীত পরিচালনা করেন তিনি, গানটির প্রধান কণ্ঠশিল্পী ছিলেন অজিত রায়। সংগীতে অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে একুশে পদক, ২০১৫ সালে পান শিল্পকলা পদক।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী হিসেবে দেশ স্বাধীনের ৪৫ বছর পর মুক্তিযোদ্ধার সনদ পান সুজেয় শ্যাম।

২০০৯ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ৫০টি গান এই প্রজন্মের শিল্পীদের দিয়ে নতুন সংগীতায়োজনে গাইয়েছেন সুজেয় শ্যাম, তাঁকে সহযোগিতা করেন পার্থ বড়ুয়া। ১৯৪৬ সালের ১৪ মার্চ সিলেট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন সুজেয় শ্যাম। তাঁর বাবা অমরেন্দ্র চন্দ্র শাহ ছিলেন একটি চা-বাগানের মালিক। শৈশব কেটেছে সিলেটের চা-বাগানে। ১০ ভাই-বোনের মধ্যে সুজেয় ছিলেন ষষ্ঠ।
গুণী এই শিল্পীর প্রয়াণে অনেকেই শোক প্রকাশ করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। একুশে পদকপ্রাপ্ত নির্মাতা কাওসার চৌধুরী লিখেছেন, ‘১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধকালে এই শব্দসৈনিক স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সুর সৃষ্টি করেছেন অসাধারণ সব দেশাত্মবোধক আর বিপ্লবী গানের। আমাদের প্রজন্মের কাছে সুজেয় শ্যাম এক প্রবাদপ্রতিম সুরস্রষ্টা। বাংলাদেশের মানুষ তাঁকে হৃদয়ের গভীরে লালন করবে আজীবন।’

লেখক, নির্মাতা শাকুর মজিদ লিখেছেন, ‘আমি যে সময় টেলিভিশনের জন্য নাটক-টেলিফিল্ম বানিয়েছিলাম, আমার সবচেয়ে নির্ভরতায় জায়গায় ছিলেন সুরকার-সংগীতকার সুজেয় শ্যাম। লন্ডনী কইন্যা, নাইওরী, বৈরাতী, করিমুন্নেছার মিউজিক তাঁর করে দেওয়া। তিনি আর নেই। আমার বড় নির্ভরতার জায়গাটি শূন্য হয়ে গেল।’
সংগীতশিল্পী কনকচাঁপা লিখেছেন, ‘বাংলাদেশকে আপনি অকৃত্রিম হাতে ঢেলে দিয়েছেন। আমরা কখনো আপনাকে ভুলব না।’

তরুণ গায়ক মুহিন লিখেছেন, তাঁর কৃতিত্ব বাংলার ঘরে ঘরে ছড়িয়ে আছে এবং থাকবে। আরেক তরুণ শিল্পী ইউসুফ আহমেদ খান লিখেছেন, ‘একটা নির্ভরতার হাত খুব বেশি মিস করব। বিদায় কিংবদন্তি সুরকার সংগীত পরিচালক সুরসৈনিক স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন অন্যতম যোদ্ধা স্যার সুজেয় শ্যাম।’

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৪:৩৭:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪
৫৩
Translate »

‘দেশ একজন শুদ্ধসংগীতের মানুষকে হারাল’

আপডেট : ০৪:৩৭:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

সুজেয় শ্যাম। ছবি: আনিস মাহমুদ

৬০ বছরের বন্ধুত্ব ছিল সুজেয় শ্যাম ও শেখ সাদী খানের। একসঙ্গে চট্টগ্রাম বেতারে চাকরিও করেছিলেন তাঁরা। হাসপাতালে ভর্তির আগেও কথা হয় দুজনের। হঠাৎ মৃত্যুসংবাদে মুষড়ে পড়েছেন তিনি। গতকাল সন্ধ্যায় শেখ সাদী খান বলছিলেন, ‘শুদ্ধতার প্রতি তাঁর ছিল দারুণ আকর্ষণ। মানুষকে প্রভাবিত করার বিরাট শক্তি ছিল তাঁর। তাঁর মৃত্যুতে একজন ভালো মানুষকে হারালাম। দেশ একজন শুদ্ধসংগীতের মানুষকে হারাল।’

শেখ সাদী খান

শেখ সাদী খানছবি : সংগৃহীত

দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন সুজেয় শ্যাম। সম্প্রতি তাঁর হৃদ্‌যন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়। পরে শিল্পীর শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ে, যা রক্তেও ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া ডায়াবেটিসও ছিল অনিয়ন্ত্রিত। কিডনির সমস্যাও ছিল। হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল; কিন্তু গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টা ৫০ মিনিটে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যান তিনি। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় শিল্পীর। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।

হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকতা শেষে সুজেয় শ্যামের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদর্শন করা হয়। এ সময় পরিবারের মানুষজন ছাড়াও সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সবুজবাগের বরদেশ্বরী কালীমন্দিরে তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।

সুজেয় শ্যাম

সুজেয় শ্যামছবি : সংগৃহীত

সুজেয় শ্যামের সুর করা গানগুলোর মধ্যে আছে ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আহা ধন্য আমার জন্মভূমি’, ‘আয় রে চাষি মজুর কুলি’, ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’, ‘শোন রে তোরা শোন’। একাত্তরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শেষ গান এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর প্রথম গানটির সুর করেছিলেন সুজেয় শ্যাম। গীতিকার শহীদুল আমিনের লেখা ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গানটির সুর ও সংগীত পরিচালনা করেন তিনি, গানটির প্রধান কণ্ঠশিল্পী ছিলেন অজিত রায়। সংগীতে অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে একুশে পদক, ২০১৫ সালে পান শিল্পকলা পদক।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী হিসেবে দেশ স্বাধীনের ৪৫ বছর পর মুক্তিযোদ্ধার সনদ পান সুজেয় শ্যাম।

২০০৯ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ৫০টি গান এই প্রজন্মের শিল্পীদের দিয়ে নতুন সংগীতায়োজনে গাইয়েছেন সুজেয় শ্যাম, তাঁকে সহযোগিতা করেন পার্থ বড়ুয়া। ১৯৪৬ সালের ১৪ মার্চ সিলেট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন সুজেয় শ্যাম। তাঁর বাবা অমরেন্দ্র চন্দ্র শাহ ছিলেন একটি চা-বাগানের মালিক। শৈশব কেটেছে সিলেটের চা-বাগানে। ১০ ভাই-বোনের মধ্যে সুজেয় ছিলেন ষষ্ঠ।
গুণী এই শিল্পীর প্রয়াণে অনেকেই শোক প্রকাশ করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। একুশে পদকপ্রাপ্ত নির্মাতা কাওসার চৌধুরী লিখেছেন, ‘১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধকালে এই শব্দসৈনিক স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সুর সৃষ্টি করেছেন অসাধারণ সব দেশাত্মবোধক আর বিপ্লবী গানের। আমাদের প্রজন্মের কাছে সুজেয় শ্যাম এক প্রবাদপ্রতিম সুরস্রষ্টা। বাংলাদেশের মানুষ তাঁকে হৃদয়ের গভীরে লালন করবে আজীবন।’

লেখক, নির্মাতা শাকুর মজিদ লিখেছেন, ‘আমি যে সময় টেলিভিশনের জন্য নাটক-টেলিফিল্ম বানিয়েছিলাম, আমার সবচেয়ে নির্ভরতায় জায়গায় ছিলেন সুরকার-সংগীতকার সুজেয় শ্যাম। লন্ডনী কইন্যা, নাইওরী, বৈরাতী, করিমুন্নেছার মিউজিক তাঁর করে দেওয়া। তিনি আর নেই। আমার বড় নির্ভরতার জায়গাটি শূন্য হয়ে গেল।’
সংগীতশিল্পী কনকচাঁপা লিখেছেন, ‘বাংলাদেশকে আপনি অকৃত্রিম হাতে ঢেলে দিয়েছেন। আমরা কখনো আপনাকে ভুলব না।’

তরুণ গায়ক মুহিন লিখেছেন, তাঁর কৃতিত্ব বাংলার ঘরে ঘরে ছড়িয়ে আছে এবং থাকবে। আরেক তরুণ শিল্পী ইউসুফ আহমেদ খান লিখেছেন, ‘একটা নির্ভরতার হাত খুব বেশি মিস করব। বিদায় কিংবদন্তি সুরকার সংগীত পরিচালক সুরসৈনিক স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন অন্যতম যোদ্ধা স্যার সুজেয় শ্যাম।’