সময়ের পরিক্রমায় নেত্রকোণা জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্য-পর্যটনসমৃদ্ধ দুর্গাপুর উপজেলার দুর্গাপুর সাংবাদিক সমিতি আজ চতুর্থ বর্ষ পূর্ণ করলো। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার প্রত্যয়ে একঝাঁক নিবেদিত সংবাদকর্মী নিয়ে চার বছর আগে যাত্রা শুরু করা দুর্গাপুর সাংবাদিক সমিতি নিয়মিত রিপোর্টিং কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কর্মসূচিও বাস্তবায়ন করেছে।
সাংবাদিকদের এই সংগঠনের সদস্যবৃন্দ শুধুমাত্র সংবাদ পরিবেশনে সীমাবদ্ধ থাকেনি। তারা প্রতিনিয়ত সংবাদ পরিবেশন, বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার চর্চা এবং সাংবাদিকতায় উৎকর্ষ সাধনে নানা কার্যক্রম করে চলেছে। তারা সাংবাদিকতায় দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে এবং প্রতিনিয়ত নিজেদের ছাড়িয়ে গিয়েছে।
একটি চমৎকার গঠনতন্ত্র প্রণয়নের মাধ্যমে সমিতির সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় গত চার বছরে দুর্গাপুর সাংবাদিক সমিতি বেশ অগ্রসর হয়েছে।
দুর্গাপুর সাংবাদিক সমিতি ভালো মন্দ মিলিয়েই চারটি বছর পার করেছে। সেখানে যেমন অনেক নান্দনিকতা ছিলো তেমনি নিজেদের ছাড়িয়ে যাবার অনেক চ্যালেঞ্জও ছিলো।
সময়ের বাস্তবিকতায় অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি। আমাদের কলম কথা বলে সময়ের, কথা বলে সত্যের,কথা বলে বস্তুনিষ্ঠতার। আমাদের কাছে সাংবাদিকতা শুধুমাত্র নিউজ কাভারেজ নয়। সাংবাদিকতা আমাদের কাছে একটি মহান দায়িত্ব, সমাজের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা, পারস্পরিক আত্মনিবেদন এবং সমাজ ও সভ্যতার প্রকৃত চিত্র উপস্থাপন।
আমরা জানি,গণমাধ্যম সমাজের আয়না। আয়নায় যেমন নিজের চেহারা প্রতিবিম্বিত হয়, তেমনি দেশ, জাতি, সমাজ এমনকি সমকালীন বিশ্বের চলমান ঘটনা, জীবনযাত্রা, চিন্তাচেতনা, জাতীয় স্বার্থ ও দিকনির্দেশনা গণমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার হয়। সেই গণমাধ্যম ও সাংবাদিকরা জাতির জাগ্রত বিবেক। সামাজিক উন্নয়ন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, সত্য-সুন্দর এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে গণমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের গুরুত্ব অপরিসীম।
সাংবাদিকতার মূল দায়িত্ব হলো সত্য উদঘাটন, বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ করে জনগণের কাছে উপস্থাপন করা। যা সমাজকে সঠিক পথে চালিত করতে সাহায্য করে; এর দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে 'চতুর্থ স্তম্ভ' হিসেবে কাজ করা, প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠস্বর তুলে ধরা, ভুল তথ্য প্রতিরোধ করা এবং নৈতিক মানদণ্ড বজায় রেখে নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে কাজ করা। আমরা সেই বিষয়গুলো ধারণ করেই কাজ করে যাচ্ছি।
দুর্গাপুর সাংবাদিক সমিতির যাত্রা শুরু হয়েছিলো শূন্য থেকে। সেই শূন্য থেকে কিভাবে পূর্ণতা দেয়া যায় সে চেষ্টাই প্রতিনিয়ত অব্যাহত ছিল। যেখানে ছিল সংবাদ,সাংবাদিকতা, সামাজিক দায় এবং বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রম। যেখানে আলোর পথযাত্রী হিসেবে কাজ করেছে সমিতির সদস্যবৃন্দ। এই ধারা আগামীর দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে।
চার বছরে দুর্গাপুর সাংবাদিক সমিতির কার্যক্রম -
১. জাতীয় দিবসগুলো উদযাপনে সক্রিয় অংশগ্রহণ।
২. অসহায় মানুষদের জন্য ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প পরিচালন।
৩. নয়নযোগী অনাথালয় ও ডাকুমারা এতিমখানায় চাল বিতরণের মাধ্যমে অনাথদের পাশে দাঁড়ানো ।
৪. পবিত্র রমজানে দরিদ্র মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে পবিত্র কোরআন শরীফ এবং ইসলামী বিভিন্ন সামগ্রী প্রদান ।
৫. মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল আয়োজন ।
৬. সহযোগী সংগঠন হিসেবে দুর্গাপুর উপজেলার কৃতি ব্যক্তিদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশগ্রহণ ।
৭. সমিতির উদ্যোগে শীতার্ত মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ ।
৮. সমিতির নিজস্ব পাঠাগার স্থাপনের মাধ্যমে নিয়মিত চর্চার পরিধি আরো সমৃদ্ধকরণ।
৯. সাংবাদিকদের দক্ষতা আরো বেশি শাণিত করতে তৃণমূল সাংবাদিকতা শীর্ষক মৌলিক প্রশিক্ষণ আয়োজন ।
১০. সময়ের সাথে নিজেদের আপডেট রেখে সাংবাদিকতা চর্চায় মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন।
১১. সমাজের জন্য যা কিছু ইতিবাচক তা নিয়ে নানা পরিসরে কার্যক্রম পরিচালন এবং দুর্গাপুরের পর্যটনকে সারাদেশে ব্র্যান্ডিং করতে চ্যানেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালন।
১২. গাজায় গণহত্যা বন্ধের আহ্বানে গণমানুষকে নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি।
১৩. আর্তপীড়িত মানুষের কল্যাণে সমাজে ভয়েস রেইজ করা।
১৪. সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন।
১৫. সাংবাদিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন।
লেখক : সহ সভাপতি, দুর্গাপুর সাংবাদিক সমিতি।