সাতক্ষীরার আশাশুনিতে দুধ কিনতে না পেরে মাত্র ২০ হাজার টাকায় নিজের সন্তানকে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে এক নারীর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হয়।
জানা গেছে, আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি গ্রামের শামীম হোসেনের চতুর্থ স্ত্রী আশামনি খাতুন (২৫) সন্তানের সুচিকিৎসা ও দুধ কিনতে না পেরে ১৪ দিনের নবজাতককে বিশ হাজার টাকায় এক চা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করে দেন।
যোগাযোগ করা হলে আশামনি জানান, জানুয়ারি মাসের ১৬ তারিখে স্থানীয় কুল্যার মোড়ের একটা ক্লিনিকে দ্বিতীয় সন্তান প্রসব করেন তিনি। ক্লিনিকের খরচ, বাচ্চার ওষুধ ও দুধ কিনতে গিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েন। পরে নিজের নবজাতককে ১৪ দিন বয়সে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে আশাশুনির তেঁতুলিয়া গ্রামের চা বিক্রেতা নিঃসন্তান রবিউল-কাজল দম্পতির কাছে নগদ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। সন্তানের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য এই কাজ করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
ওই নবজাতকের ক্রেতা চা বিক্রেতা রবিউলের ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার স্ত্রী কাজল বলেন, দরদাম করে কয়েকজন সাক্ষীর সামনে শর্ত দিয়ে বাচ্চাকে কিনে নিয়েছি। বাচ্চার টিকা কার্ডে পিতামাতার নামের স্থানে আমার স্বামী ও আমার নাম দিয়েছি। জন্ম নিবন্ধন সনদে তার নাম রাখা হয়েছে ফারিয়া জান্নাতুল। সে আমাদের পরিচয়ে পরিচিত হবে।
এদিকে এলাকাবাসী জানান, শুক্রবার রাতে সদর উপজেলার ভালুকা চাঁদপুর কর্মকারপাড়ার আফসার আলীর বাড়িতে পঞ্চম স্ত্রী হোসনে আরা খাতুনের সঙ্গে ছিলেন কাদাকাটি গ্রামের সৈয়দ আলী সরদারের ছেলে শামীম হোসেন (২৮)। শামীম পেশায় একজন ডিপ টিউবওয়েল মিস্ত্রি। মাঝেমধ্যে তিনি ইটভাটায়ও কাজ করেন। স্বামীর পঞ্চম বিয়ের খবর শুনে শুক্রবার ভোরে খোঁজ নিতে ভালুকা চাঁদপুর গ্রামে আসেন আশামনি খাতুন। সেখানে স্বামী ও হোসনে আরার দেখা পান তিনি। এসময় শামীম ও আশামনি বাগবিতণ্ডায় জড়ালে কৌশলে পালিয়ে যান হোসনে আরা খাতুন। এর পরই শিশুটিকে বিক্রির বিষয়টি জানাজানি হয়।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেখানে যান সেখানেই বিয়ে করেন শামীম। ২০১৬ সালে তালা উপজেলার লাউতাড়া গ্রামে সামাজিকভাবে বিয়ে করলেও সেই বিয়ে টেকেনি। এরপর উপজেলার বদরতলায় টিউবওয়েল স্থাপনের কাজ করতে গিয়ে বাড়ির মালিকের স্ত্রীকে ভাগিয়ে বিয়ে করেন তিনি। সেটিও টেকেনি। পরবর্তী নিজের চাচাতো বোন বিলকিস খাতুনকে বিয়ে করেন শামীম। বিলকিসকে নিজ বাড়িতে রেখে ইটভাটায় কাজ করতে গিয়ে শামীম আশামনিকে বিয়ে করেন। পরে শামীমকে ডিভোর্স দিয়ে অন্যত্র চলে যান বিলকিস।
আশামনি জানান, তার গর্ভে সন্তান থাকাকালীন বদরতলায় আবারো টিউবওয়েল স্থাপনের কাজ করতে গিয়ে ছয়মাস আগে হোসনে আরাকে বিয়ে করেছেন শামীম। এরপর থেকে সন্তানদের নিয়ে অতিকষ্টে জীবনযাপন করছিলেন তিনি।
এ বিষয়ে কাঁদাকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দীপংকর কুমার সরকার জাগো নিউজকে জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে তিনি বিষয়টি শুনেছেন। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে পরে বিস্তারিত বলতে পারবেন।