নড়াইলে তাসকির আহমেদ নামে এক যুবক প্রেমের বলি হয়েছেন। এ ঘটনায় ওই যুবকের প্রেমিকাসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক-মেসেঞ্জারের মাধ্যমে কৌশলে তাকে ঢাকা থেকে খুলনায় ডেকে নেন প্রেমিকার সাবেক স্বামী। পরে সুযোগ বুঝে খুন করে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ বুঝে নেন নিহতের বাবা।
এর আগে, বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে তাসকিরের মরদেহ খানজাহান আলী থানাধীন গফফার ফুড বালির ঘাটে ভেসে উঠলে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত নিহতের বাবার দায়ের করা অপহরণ মামলায় প্রেমিকাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—নিহত তাসকিরের প্রেমিকা সুরাইয়া আক্তার সীমা, ঘাতক অভির মা লাবনী বেগম এবং শহিদুল ইসলাম শহীদ।
খালিশপুর থানা পুলিশের এসআই সিরাজুল ইসলাম বলেন, নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার ঝউডাঙ্গ এলাকার নওখোলা গ্রামের জনৈক মুরাদ হোসেনের ছেলে তাসকির আহমেদ। খুলনা ম্যানগ্রোভ ইনস্টিটিউটে পড়াশুনা শেষ করে ঢাকা প্রাইম ইউনিভার্সিটিতে টেক্সটাইল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি ঢাকার কলাবাগান এলাকার একটি বাড়ির কেয়ারটেকারের দায়িত্বে ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, খুলনায় লেখাপড়াকালীন তাসকিরের বাবার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে এখলাছুর রহমান রনির সঙ্গে সীমার বড় বোনের বিয়ে হয়। এভাবে সীমার সঙ্গে তাসকিরের পারিবারিক পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাসকির সীমার প্রতি দুর্বল হতে থাকেন। এক সময়ে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে সীমা গ্রহণ করেন। কিন্তু ওই প্রেমিকার আগে একটি বিয়ে ছিল সেটি তিনি জানতেন না।
এটাও জানতেন না সীমার সাবেক স্বামী খালিশপুর এলাকার একজন বখাটে। পারিবারিক চাপে পড়ে সীমা এবং অভি একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে যান। এর পর অভি দেশের বাইরে চলে যান। কিন্তু ভাই রনি শালিকাকে সুপাত্রস্থ করার জন্য সীমাকে তাসকিরের পেছনে লেলিয়ে দেন। তাদের উভয়ের প্রেমের সম্পর্কের স্থায়িত্বকাল ছিল দেড় বছরের মতো।
গত কয়েকদিন আগে তাসকিরের বাবা বিষয়টি বুঝতে পেরে ছেলেকে এ সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসতে বলেন। এর মধ্যে সীমার সাবেক স্বামী অভি দেশে ফিরে আসেন। সীমার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। সীমাও একইসঙ্গে দুটি ফোন ব্যবহার করে তাদের দুইজনের সঙ্গে কথা চালিয়ে যেতে থাকেন।
পরে সীমার সাবেক স্বামী ঘটনাটি টের পেলে তাদের উভয়ের মধ্যে ঝগড়া হয়। হত্যাকাণ্ডের কায়েকদিন আগেও তাসকিরকে ফোন করে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়া হয়।
এসআই সিরাজুল ইসলাম বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টার দিকে নিহত তাসকির তার মামাতো ভাই আসিফের স্ত্রী শারমিনকে জানান তিনি খুলনায় আসছেন এবং তিনি তখন বাগেরহাটে গাড়িতে আছেন। বিকেল ৪টার দিকে তিনি মামাতো ভাইয়ের বাড়িতে যান।
পরবর্তীতে ভাবিকে জানান সীমা খুব জরুরি দেখা করার জন্য খুলনায় ডেকেছেন এবং খালিশপুর থানাধীন বিআইডিসি রোডস্থ নিউজপ্রিন্ট মিল গেটের বিপরীতে এতিমখানার সামনে যাচ্ছেন।
কিন্তু তখনও তাসকির জানেন না অভি সাবেক স্ত্রীর মেসেঞ্জার ব্যবহার করে তাকে হত্যার জন্য এভাবে ডেকে নিচ্ছেন। ওই মাদ্রাসার সামনে থেকে ডেকে নিয়ে অভি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাতে তাসকিরকে হত্যা করেন।
পরবর্তীতে সুযোগ পেয়ে তাকে বস্তাবন্দি করে রাতে নদীতে ফেলে দেন। এর আগে নিহতের মামাতো ভাই তাকে না পেয়ে পরেরদিন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরবর্তীতে অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়।
তিনি আরও বলেন, খানজাহান আলী থানায় উদ্ধার হওয়া মরদেহের খবর পেয়ে পুলিশ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তাসকিরকে শনাক্ত করে।
তবে এ ঘটনার মূল নায়ক অভি পলাতক রয়েছেন। তাকে পেলে জানা যাবে হত্যার রহস্য। অপহরণ মামলাটি পরবর্তীতে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে।