London ০২:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
টাওয়ার হ্যামলেটসে ইউকিপ এর বিক্ষোভ নিষিদ্ধ: শনিবার হবে শান্তি মিছিল শান্তি সমাবেশে অংশ নিতে মেয়র লুৎফর রহমান ও ড. গ্লিন রবিনসের আহবান পটুয়াখালীতে শহীদ কন্যা লামিয়া ধর্ষণ মামলায় তিন কিশোরের কারাদণ্ড নানিয়ারচর জোনের তত্ত্বাবধানে বাকছড়ি ও জাহানাতলীতে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষধ বিতরণ অনু‌ষ্ঠিত আনোয়ারা সাব রেজিস্ট্রার এর দুর্নীতির বিরুদ্ধে দলিল লিখক সমিতির লাগাতার কলম বিরতি পুঠিয়ায় সাংবাদিকে হত্যার হুমকি পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফ ঢাকায় গ্রেফতার কালিয়াকৈর তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে ছুটে চলেছেন ৫নং ওয়ার্ডের অঙ্গসংগঠনের সকল নেতা বৃন্দ নওগাঁর রাণীনগরে সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত চারঘাটে ডোবা থেকে যুবকের লা’শ উদ্ধার কালিয়াকৈরে ভুল রক্ত পুশে সিজারের রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ

‘তোর টাহা দরকার কতি, আরও দিতাম’

‘তোর টাহা দরকার কতি, আরও দিতাম। বাপ না দেয় আমি গরু বেচে দিতাম। তুই আমার কতিক।’ আজ বুধবার বিকেল ৩টার দিকে বিলাপ করতে করতে এসব কথা বলছিলেন নিহত ছাত্র রুবেল হোসেনের (২২) ছোট ভাই ফিরোজ হোসেন (২০)। এসময় তিনি বারবার শোকে মূর্ছা যাচ্ছিলেন। 

ফিরোজ বলেন, ‘কয়েকদিন ধরেই ভাই ফোন করে খালি টাকা চাচ্ছিল। রোববার আমি ৮ হাজার দিছি, আরেক ভাই ৪ হাজার দিছে, হাসান কাকা ৮ হাজার দিছে। ওরা জিম্মি করে ভাইয়ের টাকা চাইত। কয়দিনে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা দিছি। যহন আর টাকা পাইনি। তখন টাকা না পেয়ে মেরে দিছে ভাইডাক।’ তাঁর ভাষ্য, ল্যাপটপ কেনার কথা বলে রুবেল স্বজনদের কাছে কয়েকদিন ধরেই মোবাইলে টাকা চেয়ে আসছিল।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ভাইকে হাত-পা-মুখ বেঁধে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মেরে ছাদ থেকে ফেলে দিছে ওরা (অজ্ঞাত)। বুকে-পিঠে অনেক দাগ। আমি সুষ্ঠু বিচার চাই। আসামিদের ফাঁসি চাই।’

এদিকে সন্তান হারানোর শোকে মাতম মা রিপা খাতুন। কিছুতেই থামছে না তার কাঁন্না। কাঁন্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলছিলেন, ‘ল্যাপটপ আমার বেটার জানরে। আমি সাড়ে ৬ হাজার টাকা দিছিরে। যেম্বা (যেভাবে) আমার বেটার জান বাড়ে নিছেরে। আমি সেম্বায়া জান চাইরে। আমি জানের জায়গা জান চাইরে।’

নিহত রুবেল কুষ্টিয়ার কুমারখালীর শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম ও গৃহিণী রিপা খাতুন দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয়। তাঁ বড় দুই বোন শারমিন (৩২) ও শাপলা (২৬)। তারা বিবাহিত। ছোট ভাই ফিরোজ হোসেন সম্প্রতি পড়াশোনা বন্ধ করে চাষাবাদ শুরু করেছেন। তিনি কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাউয়ার ডিপার্টমেন্টের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুষ্টিয়া কোর্টপাড়ার এলাকার একটি চারতলা ভবনের ছাদ থেকে হাত-পা-মুখ বেঁধে তাকে ছাদ থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। স্থানীয়রা উদ্ধার করে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ১২টার দিকে রুবেলের মৃত্যু হয়। তিনি ওই ভবনের তৃতীয় তলার ছাত্রাবাসে থাকতেন।

বিকেলে সরেজমিন মির্জাপুর গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পেছনে সড়কের ধারে একটি ফাঁকা স্থানে রাখা রয়েছে পলিথিনে মোড়ানো রুবেলের নিথর দেহ। তাকে শেষ বারের মতো একনজর দেখতে স্বজন ও উৎসুক জনতা ভিড় করেছে। তাদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠছে বাতাস। পুরো গ্রাম যেন স্তব্ধ। তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।

এসময় রুবেলের বাল্য বন্ধু ও চাচাতো ভাই রকি আহমেদ বলেন, রুবেল খুব ছেলে ছেলে। এলাকায় কোনো বদনাম নেই। কোনো রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিল না। গত শনি ও রোববার রুবেল তার কাছেও ল্যাপটপের কথা বলে ফোনে পাঁচ হাজার টাকা ধার চেয়েছিল। 

প্রতিবেশী মো. আলিমন হোসেন সিয়াম আক্ষেপ করে বলেন, ঘটনা যাই ঘটুক। তাই বলে কি এভাবে কাউকে মেরে ফেলতে হবে। তিনি জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।

কুষ্টিয়া মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দীপেন্দ্র নাথ সিংহ বলেন, নিহত ক‌লেজছা‌ত্রের বাবা বাদী হ‌য়ে থানায় এজাহার জমা দি‌য়ে‌ছেন। ঘটনার অ‌ধিকতর তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়জনকে থানায় নেওয়া হয়েছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১২:২৩:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০২৪
১০৩
Translate »

‘তোর টাহা দরকার কতি, আরও দিতাম’

আপডেট : ১২:২৩:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০২৪

‘তোর টাহা দরকার কতি, আরও দিতাম। বাপ না দেয় আমি গরু বেচে দিতাম। তুই আমার কতিক।’ আজ বুধবার বিকেল ৩টার দিকে বিলাপ করতে করতে এসব কথা বলছিলেন নিহত ছাত্র রুবেল হোসেনের (২২) ছোট ভাই ফিরোজ হোসেন (২০)। এসময় তিনি বারবার শোকে মূর্ছা যাচ্ছিলেন। 

ফিরোজ বলেন, ‘কয়েকদিন ধরেই ভাই ফোন করে খালি টাকা চাচ্ছিল। রোববার আমি ৮ হাজার দিছি, আরেক ভাই ৪ হাজার দিছে, হাসান কাকা ৮ হাজার দিছে। ওরা জিম্মি করে ভাইয়ের টাকা চাইত। কয়দিনে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা দিছি। যহন আর টাকা পাইনি। তখন টাকা না পেয়ে মেরে দিছে ভাইডাক।’ তাঁর ভাষ্য, ল্যাপটপ কেনার কথা বলে রুবেল স্বজনদের কাছে কয়েকদিন ধরেই মোবাইলে টাকা চেয়ে আসছিল।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ভাইকে হাত-পা-মুখ বেঁধে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মেরে ছাদ থেকে ফেলে দিছে ওরা (অজ্ঞাত)। বুকে-পিঠে অনেক দাগ। আমি সুষ্ঠু বিচার চাই। আসামিদের ফাঁসি চাই।’

এদিকে সন্তান হারানোর শোকে মাতম মা রিপা খাতুন। কিছুতেই থামছে না তার কাঁন্না। কাঁন্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলছিলেন, ‘ল্যাপটপ আমার বেটার জানরে। আমি সাড়ে ৬ হাজার টাকা দিছিরে। যেম্বা (যেভাবে) আমার বেটার জান বাড়ে নিছেরে। আমি সেম্বায়া জান চাইরে। আমি জানের জায়গা জান চাইরে।’

নিহত রুবেল কুষ্টিয়ার কুমারখালীর শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম ও গৃহিণী রিপা খাতুন দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয়। তাঁ বড় দুই বোন শারমিন (৩২) ও শাপলা (২৬)। তারা বিবাহিত। ছোট ভাই ফিরোজ হোসেন সম্প্রতি পড়াশোনা বন্ধ করে চাষাবাদ শুরু করেছেন। তিনি কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাউয়ার ডিপার্টমেন্টের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুষ্টিয়া কোর্টপাড়ার এলাকার একটি চারতলা ভবনের ছাদ থেকে হাত-পা-মুখ বেঁধে তাকে ছাদ থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। স্থানীয়রা উদ্ধার করে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ১২টার দিকে রুবেলের মৃত্যু হয়। তিনি ওই ভবনের তৃতীয় তলার ছাত্রাবাসে থাকতেন।

বিকেলে সরেজমিন মির্জাপুর গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পেছনে সড়কের ধারে একটি ফাঁকা স্থানে রাখা রয়েছে পলিথিনে মোড়ানো রুবেলের নিথর দেহ। তাকে শেষ বারের মতো একনজর দেখতে স্বজন ও উৎসুক জনতা ভিড় করেছে। তাদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠছে বাতাস। পুরো গ্রাম যেন স্তব্ধ। তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।

এসময় রুবেলের বাল্য বন্ধু ও চাচাতো ভাই রকি আহমেদ বলেন, রুবেল খুব ছেলে ছেলে। এলাকায় কোনো বদনাম নেই। কোনো রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিল না। গত শনি ও রোববার রুবেল তার কাছেও ল্যাপটপের কথা বলে ফোনে পাঁচ হাজার টাকা ধার চেয়েছিল। 

প্রতিবেশী মো. আলিমন হোসেন সিয়াম আক্ষেপ করে বলেন, ঘটনা যাই ঘটুক। তাই বলে কি এভাবে কাউকে মেরে ফেলতে হবে। তিনি জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।

কুষ্টিয়া মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দীপেন্দ্র নাথ সিংহ বলেন, নিহত ক‌লেজছা‌ত্রের বাবা বাদী হ‌য়ে থানায় এজাহার জমা দি‌য়ে‌ছেন। ঘটনার অ‌ধিকতর তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়জনকে থানায় নেওয়া হয়েছে।