London ১২:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকা ঘিরে বৃত্তাকারে নৌভ্রমণ

পায়ে হেঁটে, যানবাহনে চড়ে, এমনকি হেলিকপ্টারে করেও অনেকে ঢাকা শহর দেখে থাকবেন। কিন্তু নদীপথে ঢাকাটা আসলে কেমন? একসময় নদীকে ঘিরেই তো পত্তন হয়েছিল এই নগরীর। নৌপথে বৃত্তাকার সেই পথ ঘুরে এসেছেন নিয়াজ মোর্শেদ ও তাঁর সঙ্গীরা। তাঁরা বলছেন, সরকারি ও পরিকল্পিতভাবে পুরো এই নৌপথটি চালু করলে মানুষ এর সুফল পাবে।

১২ ঘণ্টায় ১০৭ কিমি

কত বড় নৌপথ, সময় লাগে কেমন: ১০৭ কিলোমিটারের বেশি এই নৌপথ ট্রলারে ঘুরে আসতে সময় লাগে প্রায় ১২ ঘণ্টা।

যাত্রাপথ: টঙ্গী থেকে যাত্রা শুরু করে সদরঘাট হয়ে ডেমরা ব্রিজ, সেখান থেকে ৩০০ ফিটের নীলা মার্কেট, তারপর আবার টঙ্গী এসে যাত্রা শেষ।

কয়টি নদ-নদী: ঢাকাকে ঘিরে থাকা চার নদ-নদী শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগ, বুড়িগঙ্গা ছাড়াও ধলেশ্বরী ও টঙ্গী খালের কিছু অংশ পড়বে যাত্রাপথে।

কেমন নৌযান নেবেন: ৩০ থেকে ৪০ জন বহন করতে পারে, এমন মাঝারি আকৃতির ট্রলার।

ভাড়া কেমন: নয়জনের একটি দল সম্প্রতি এই নৌপথ ঘুরে এসেছে। তাদের ট্রলারভাড়া লেগেছে ১৪ হাজার টাকা।

খাবারদাবার: দলটি নিজেরাই খাবারদাবার কিনে নৌকায় উঠেছিল। রান্নাবাটির জোগাড়যন্ত্র নিজেরাই করেছিল। খিচুড়ি নিজেরাই রান্না করেছিল।

ঘোরার ভালো সময়: জুন থেকে অক্টোবর যে কদিন নদীতে নতুন পানি থাকে। বাকি সময় নাব্যতা–সংকট থাকে। দূষণের কারণে নদী থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়।

  প্রস্তুতি ও সতর্কতা

নৌকা কোথায় পাবেন: সম্প্রতি এই নৌপথ ঘুরে আসা দলটির একজন নিয়াজ মোর্শেদ। তাঁর মতে, রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় ইছাপুরায় (নীলা মার্কেটে কাছে) এ ধরনের ট্রলার পাওয়া যায়। সেখানকার মাঝিদের সঙ্গে আলাপ করে যাত্রা ঠিক করে নেওয়া যেতে পারে।

প্রস্তুতি: নৌপথটা ভালো করে স্টাডি করা চাই। পরিকল্পনাটা আসল। মাঝিকে নৌপথটা ঠিকঠাক বোঝাতে হবে। কারণ, বৃত্তাকার পুরো নৌপথটা সবার কাছে পরিচিত নয়। কেউ হয়তো নৌপথের একটা অংশে যাতায়াত করেন। তিনি শুধু ওই অংশটুকুই চেনেন।

সতর্কতা: মালবাহী নৌযান বড় ভয়ের কারণ। এগুলো প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটায়। সাঁতার জানলেও সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট রাখা নিরাপদ। বৃষ্টির দিনে নৌযান ও নৌ পুলিশের টহল কম থাকে। এই সুযোগে কোথাও কোথাও ডাকাতের ভয় থাকতে পারে।

  নৌপথের চার ভাগ

টঙ্গী থেকে সদরঘাট: নদীর দুই পাশের ব্যস্ত নাগরিক জীবনের চিত্র চোখে পড়বে।

সদরঘাট থেকে ডেমরা ব্রিজ: নদীর এই অংশে প্রচুর কলকারখানার দেখা পাওয়া যাবে।

ডেমরা ব্রিজ থেকে নীলা মার্কেট: এ অংশ সবচেয়ে সুন্দর। নৈসর্গিক দৃশ্যের দেখা মিলবে। এক পাশে ঢাকা, অন্য পাশে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ। নদীপথে এই অংশটুকু প্রায় ৪০ কিলোমিটার। এই স্থানে সবুজ সবচেয়ে বেশি। প্রচুর পাখপাখালি দেখা যাবে।

৩০০ ফিট থেকে টঙ্গী: এ অংশে নদী ও খাল মিশে একাকার। তাই এখানে নদী বেশি চওড়া। এখানে তেরমুখ ব্রিজ জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা।

ঢাকার চারপাশের ১৮ সেতু

ঢাকায় ঢুকতে হলে কোনো না কোনো পয়েন্টে সড়কসেতু কিংবা রেলসেতু ক্রস করেই ঢুকতে হবে। ১০৭ কিলোমিটারের এই নৌযাত্রায় ১৮টি সেতুর নিচ দিয়ে গেছেন নিয়াজ মোর্শেদ ও তাঁর সঙ্গীরা।

১.কামারপাড়া ব্রিজ

২. প্রত্যাশা ব্রিজ

৩. আশুলিয়া ব্রিজ

৪. বিরুলিয়া ব্রিজ

৫. আমিনবাজার ব্রিজ (গাবতলী)

৬. বছিলা ব্রিজ

৭. বাবুবাজার ব্রিজ (সদরঘাট)

৮. পোস্তগোলা ব্রিজ + পদ্মা সেতু রেল ব্রিজ

৯. মুক্তারপুর ব্রিজ

১০. মদনপুর ব্রিজ

১১. কাঁচপুর ব্রিজ

১২. ডেমরা ব্রিজ

১৩. চনপাড়া ব্রিজ

১৪. বেরাইদ ব্রিজ

১৫. ইছাপুরা ব্রিজ

১৬. বালু ব্রিজ

১৭. তেরমুখ ব্রিজ

১৮. টঙ্গী রেল ব্রিজ (টঙ্গী ব্রিজ)

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৩:৫০:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪
২৬
Translate »

ঢাকা ঘিরে বৃত্তাকারে নৌভ্রমণ

আপডেট : ০৩:৫০:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

পায়ে হেঁটে, যানবাহনে চড়ে, এমনকি হেলিকপ্টারে করেও অনেকে ঢাকা শহর দেখে থাকবেন। কিন্তু নদীপথে ঢাকাটা আসলে কেমন? একসময় নদীকে ঘিরেই তো পত্তন হয়েছিল এই নগরীর। নৌপথে বৃত্তাকার সেই পথ ঘুরে এসেছেন নিয়াজ মোর্শেদ ও তাঁর সঙ্গীরা। তাঁরা বলছেন, সরকারি ও পরিকল্পিতভাবে পুরো এই নৌপথটি চালু করলে মানুষ এর সুফল পাবে।

১২ ঘণ্টায় ১০৭ কিমি

কত বড় নৌপথ, সময় লাগে কেমন: ১০৭ কিলোমিটারের বেশি এই নৌপথ ট্রলারে ঘুরে আসতে সময় লাগে প্রায় ১২ ঘণ্টা।

যাত্রাপথ: টঙ্গী থেকে যাত্রা শুরু করে সদরঘাট হয়ে ডেমরা ব্রিজ, সেখান থেকে ৩০০ ফিটের নীলা মার্কেট, তারপর আবার টঙ্গী এসে যাত্রা শেষ।

কয়টি নদ-নদী: ঢাকাকে ঘিরে থাকা চার নদ-নদী শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগ, বুড়িগঙ্গা ছাড়াও ধলেশ্বরী ও টঙ্গী খালের কিছু অংশ পড়বে যাত্রাপথে।

কেমন নৌযান নেবেন: ৩০ থেকে ৪০ জন বহন করতে পারে, এমন মাঝারি আকৃতির ট্রলার।

ভাড়া কেমন: নয়জনের একটি দল সম্প্রতি এই নৌপথ ঘুরে এসেছে। তাদের ট্রলারভাড়া লেগেছে ১৪ হাজার টাকা।

খাবারদাবার: দলটি নিজেরাই খাবারদাবার কিনে নৌকায় উঠেছিল। রান্নাবাটির জোগাড়যন্ত্র নিজেরাই করেছিল। খিচুড়ি নিজেরাই রান্না করেছিল।

ঘোরার ভালো সময়: জুন থেকে অক্টোবর যে কদিন নদীতে নতুন পানি থাকে। বাকি সময় নাব্যতা–সংকট থাকে। দূষণের কারণে নদী থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়।

  প্রস্তুতি ও সতর্কতা

নৌকা কোথায় পাবেন: সম্প্রতি এই নৌপথ ঘুরে আসা দলটির একজন নিয়াজ মোর্শেদ। তাঁর মতে, রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় ইছাপুরায় (নীলা মার্কেটে কাছে) এ ধরনের ট্রলার পাওয়া যায়। সেখানকার মাঝিদের সঙ্গে আলাপ করে যাত্রা ঠিক করে নেওয়া যেতে পারে।

প্রস্তুতি: নৌপথটা ভালো করে স্টাডি করা চাই। পরিকল্পনাটা আসল। মাঝিকে নৌপথটা ঠিকঠাক বোঝাতে হবে। কারণ, বৃত্তাকার পুরো নৌপথটা সবার কাছে পরিচিত নয়। কেউ হয়তো নৌপথের একটা অংশে যাতায়াত করেন। তিনি শুধু ওই অংশটুকুই চেনেন।

সতর্কতা: মালবাহী নৌযান বড় ভয়ের কারণ। এগুলো প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটায়। সাঁতার জানলেও সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট রাখা নিরাপদ। বৃষ্টির দিনে নৌযান ও নৌ পুলিশের টহল কম থাকে। এই সুযোগে কোথাও কোথাও ডাকাতের ভয় থাকতে পারে।

  নৌপথের চার ভাগ

টঙ্গী থেকে সদরঘাট: নদীর দুই পাশের ব্যস্ত নাগরিক জীবনের চিত্র চোখে পড়বে।

সদরঘাট থেকে ডেমরা ব্রিজ: নদীর এই অংশে প্রচুর কলকারখানার দেখা পাওয়া যাবে।

ডেমরা ব্রিজ থেকে নীলা মার্কেট: এ অংশ সবচেয়ে সুন্দর। নৈসর্গিক দৃশ্যের দেখা মিলবে। এক পাশে ঢাকা, অন্য পাশে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ। নদীপথে এই অংশটুকু প্রায় ৪০ কিলোমিটার। এই স্থানে সবুজ সবচেয়ে বেশি। প্রচুর পাখপাখালি দেখা যাবে।

৩০০ ফিট থেকে টঙ্গী: এ অংশে নদী ও খাল মিশে একাকার। তাই এখানে নদী বেশি চওড়া। এখানে তেরমুখ ব্রিজ জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা।

ঢাকার চারপাশের ১৮ সেতু

ঢাকায় ঢুকতে হলে কোনো না কোনো পয়েন্টে সড়কসেতু কিংবা রেলসেতু ক্রস করেই ঢুকতে হবে। ১০৭ কিলোমিটারের এই নৌযাত্রায় ১৮টি সেতুর নিচ দিয়ে গেছেন নিয়াজ মোর্শেদ ও তাঁর সঙ্গীরা।

১.কামারপাড়া ব্রিজ

২. প্রত্যাশা ব্রিজ

৩. আশুলিয়া ব্রিজ

৪. বিরুলিয়া ব্রিজ

৫. আমিনবাজার ব্রিজ (গাবতলী)

৬. বছিলা ব্রিজ

৭. বাবুবাজার ব্রিজ (সদরঘাট)

৮. পোস্তগোলা ব্রিজ + পদ্মা সেতু রেল ব্রিজ

৯. মুক্তারপুর ব্রিজ

১০. মদনপুর ব্রিজ

১১. কাঁচপুর ব্রিজ

১২. ডেমরা ব্রিজ

১৩. চনপাড়া ব্রিজ

১৪. বেরাইদ ব্রিজ

১৫. ইছাপুরা ব্রিজ

১৬. বালু ব্রিজ

১৭. তেরমুখ ব্রিজ

১৮. টঙ্গী রেল ব্রিজ (টঙ্গী ব্রিজ)