London ০২:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডেঙ্গু টেস্ট নেগেটিভ হলেও কি ডেঙ্গু হতে পারে? কীভাবে বুঝব

ডেঙ্গু নিশ্চিতকরণের জন্য রক্তের সিবিসি পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণছবি: পেক্সেলস

বর্ষা শেষ হয়ে গেলেও চলছে টানা বৃষ্টি। এর সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। বর্ষার শুরুর দিকে না হলেও বর্তমানে এর প্রকোপ গত বছরের মতো তীব্র হচ্ছে ক্রমান্বয়ে। ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসক ডেঙ্গু টেস্টের মাধ্যমে রোগটি নিশ্চিত করেন এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেন। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ভালোভাবেই প্রকাশিত বা প্রাথমিক ইতিহাস ডেঙ্গুর পক্ষে; কিন্তু টেস্ট করার পর দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গু পরীক্ষা নেগেটিভ। এর কারণে অনেক সময় চিকিৎসকও খটকায় পড়ে যান, রোগীরাও দ্বিধায় পড়েন। সে ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?

ডেঙ্গু টেস্ট কী

ডেঙ্গু যখন সন্দেহ হয়, চিকিৎসক সেই সম্পর্কিত কিছু পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। কিছু পরীক্ষা করা হয় ডেঙ্গু নিশ্চিত করার জন্য, আর কিছু পরীক্ষা দেওয়া হয় ডেঙ্গুর জটিলতা শনাক্ত করার জন্য। ডেঙ্গু নিশ্চিতকরণের জন্য রক্তের সিবিসি পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, আর ডেঙ্গু ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণের জন্য দুই রকমের পরীক্ষা সাধারণত করা হয়। একটি হলো NS1 Ag পরীক্ষা, আরেকটি হলো অ্যান্টিবডি পরীক্ষা। দুটো পরীক্ষাই ডেঙ্গু নিশ্চিতকরণের বেশ কার্যকর টেস্ট হিসেবে প্রমাণিত। একজন চিকিৎসক জ্বরের সময়কাল বুঝে কোন পরীক্ষাটি করা উচিত, সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

ডেঙ্গু টেস্ট নেগেটিভ হওয়ার কারণ

ডেঙ্গু টেস্টের মধ্যে প্রচলিত পরীক্ষা NS1 Ag সাধারণত জ্বরের শুরুর দিকে পজিটিভ থাকে। অপর দিকে অ্যান্টিবডি পরীক্ষাটি সাধারণত জ্বরের কয়েক দিন পর পজিটিভ পাওয়া যায়। রোগীরা অনেক সময় জ্বরের সময়কাল নির্ধারণ করতে পারেন না বা মনে রাখেন না, সে কারণে অনেক ক্ষেত্রে সময়কালের জটিলতায় টেস্ট নেগেটিভ আসতে পারে। আবার ডেঙ্গুর বিভিন্ন প্রজাতি বা সেরোটাইপ আছে। কিছু কিছু সেরোটাইপে ডেঙ্গু NS1 Ag টেস্টটি নেগেটিভ আসে। এমনকি যেসব সেরোটাইপকে ডেঙ্গু টেস্ট শনাক্ত করতে পারে, তাদের ক্ষেত্রেও কিছু শতাংশ নেগেটিভ রিপোর্ট আসতে পারে।

করণীয়

চিকিৎসক ও রোগী দুজনকেই মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু পরীক্ষা নেগেটিভও আসতে পারে। ডেঙ্গু টেস্ট নেগেটিভ হলেই সন্দেহের তালিকা থেকে ডেঙ্গু বাদ হয়ে যাবে, সেটা বলা যাবে না। সে ক্ষেত্রে অনেকে ভাবতেই পারেন, তাহলে ডেঙ্গু পরীক্ষা করার দরকার কী? মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গুর যেসব লক্ষণ থাকে, আরও কিছু ইনফেকশন বা রোগে একই রকম লক্ষণ থাকতে পারে, যাদের চিকিৎসাপদ্ধতি ভিন্ন। সেগুলো থেকে ডেঙ্গুকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে হবে। আবার ডেঙ্গু নেগেটিভ পাওয়া গেলে সেসব রোগের ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হতে পারে।
ডেঙ্গু যদি সন্দেহের তালিকায় ওপরে থাকে, বিশেষ করে এখনকার মৌসুমে যখন এর প্রকোপ বাড়তি, সে ক্ষেত্রে ডেঙ্গু টেস্ট নেগেটিভ এলেও ডেঙ্গুর আশঙ্কা ধরে নিয়েই চিকিৎসার পরিকল্পনা করার প্রয়োজন পড়তে পারে। এ ছাড়া রক্তের সিবিসিতে কিছু লক্ষণীয় পরিবর্তন যেমন, প্লাটিলেট কমে যাওয়া বা রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়া, এগুলোও ডেঙ্গু নির্দেশ করে।
সব মিলিয়ে এটা মাথায় রাখতে হবে, একজন চিকিৎসক ডেঙ্গুর লক্ষণ, উপসর্গ, টেস্ট, সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সুতরাং চিকিৎসক যদি সন্দেহ করেন এটি ডেঙ্গু হতে পারে, তবে টেস্ট পজিটিভ হোক বা নেগেটিভ, সে অনুযায়ী রোগের চিকিৎসা নেওয়াটাই প্রত্যাশিত।


ডা. সাইফ হোসেন খান, মেডিসিন কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১১:৪৬:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০২৪
৪২
Translate »

ডেঙ্গু টেস্ট নেগেটিভ হলেও কি ডেঙ্গু হতে পারে? কীভাবে বুঝব

আপডেট : ১১:৪৬:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০২৪

ডেঙ্গু নিশ্চিতকরণের জন্য রক্তের সিবিসি পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণছবি: পেক্সেলস

বর্ষা শেষ হয়ে গেলেও চলছে টানা বৃষ্টি। এর সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। বর্ষার শুরুর দিকে না হলেও বর্তমানে এর প্রকোপ গত বছরের মতো তীব্র হচ্ছে ক্রমান্বয়ে। ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসক ডেঙ্গু টেস্টের মাধ্যমে রোগটি নিশ্চিত করেন এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেন। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ভালোভাবেই প্রকাশিত বা প্রাথমিক ইতিহাস ডেঙ্গুর পক্ষে; কিন্তু টেস্ট করার পর দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গু পরীক্ষা নেগেটিভ। এর কারণে অনেক সময় চিকিৎসকও খটকায় পড়ে যান, রোগীরাও দ্বিধায় পড়েন। সে ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?

ডেঙ্গু টেস্ট কী

ডেঙ্গু যখন সন্দেহ হয়, চিকিৎসক সেই সম্পর্কিত কিছু পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। কিছু পরীক্ষা করা হয় ডেঙ্গু নিশ্চিত করার জন্য, আর কিছু পরীক্ষা দেওয়া হয় ডেঙ্গুর জটিলতা শনাক্ত করার জন্য। ডেঙ্গু নিশ্চিতকরণের জন্য রক্তের সিবিসি পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, আর ডেঙ্গু ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণের জন্য দুই রকমের পরীক্ষা সাধারণত করা হয়। একটি হলো NS1 Ag পরীক্ষা, আরেকটি হলো অ্যান্টিবডি পরীক্ষা। দুটো পরীক্ষাই ডেঙ্গু নিশ্চিতকরণের বেশ কার্যকর টেস্ট হিসেবে প্রমাণিত। একজন চিকিৎসক জ্বরের সময়কাল বুঝে কোন পরীক্ষাটি করা উচিত, সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

ডেঙ্গু টেস্ট নেগেটিভ হওয়ার কারণ

ডেঙ্গু টেস্টের মধ্যে প্রচলিত পরীক্ষা NS1 Ag সাধারণত জ্বরের শুরুর দিকে পজিটিভ থাকে। অপর দিকে অ্যান্টিবডি পরীক্ষাটি সাধারণত জ্বরের কয়েক দিন পর পজিটিভ পাওয়া যায়। রোগীরা অনেক সময় জ্বরের সময়কাল নির্ধারণ করতে পারেন না বা মনে রাখেন না, সে কারণে অনেক ক্ষেত্রে সময়কালের জটিলতায় টেস্ট নেগেটিভ আসতে পারে। আবার ডেঙ্গুর বিভিন্ন প্রজাতি বা সেরোটাইপ আছে। কিছু কিছু সেরোটাইপে ডেঙ্গু NS1 Ag টেস্টটি নেগেটিভ আসে। এমনকি যেসব সেরোটাইপকে ডেঙ্গু টেস্ট শনাক্ত করতে পারে, তাদের ক্ষেত্রেও কিছু শতাংশ নেগেটিভ রিপোর্ট আসতে পারে।

করণীয়

চিকিৎসক ও রোগী দুজনকেই মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু পরীক্ষা নেগেটিভও আসতে পারে। ডেঙ্গু টেস্ট নেগেটিভ হলেই সন্দেহের তালিকা থেকে ডেঙ্গু বাদ হয়ে যাবে, সেটা বলা যাবে না। সে ক্ষেত্রে অনেকে ভাবতেই পারেন, তাহলে ডেঙ্গু পরীক্ষা করার দরকার কী? মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গুর যেসব লক্ষণ থাকে, আরও কিছু ইনফেকশন বা রোগে একই রকম লক্ষণ থাকতে পারে, যাদের চিকিৎসাপদ্ধতি ভিন্ন। সেগুলো থেকে ডেঙ্গুকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে হবে। আবার ডেঙ্গু নেগেটিভ পাওয়া গেলে সেসব রোগের ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হতে পারে।
ডেঙ্গু যদি সন্দেহের তালিকায় ওপরে থাকে, বিশেষ করে এখনকার মৌসুমে যখন এর প্রকোপ বাড়তি, সে ক্ষেত্রে ডেঙ্গু টেস্ট নেগেটিভ এলেও ডেঙ্গুর আশঙ্কা ধরে নিয়েই চিকিৎসার পরিকল্পনা করার প্রয়োজন পড়তে পারে। এ ছাড়া রক্তের সিবিসিতে কিছু লক্ষণীয় পরিবর্তন যেমন, প্লাটিলেট কমে যাওয়া বা রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়া, এগুলোও ডেঙ্গু নির্দেশ করে।
সব মিলিয়ে এটা মাথায় রাখতে হবে, একজন চিকিৎসক ডেঙ্গুর লক্ষণ, উপসর্গ, টেস্ট, সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সুতরাং চিকিৎসক যদি সন্দেহ করেন এটি ডেঙ্গু হতে পারে, তবে টেস্ট পজিটিভ হোক বা নেগেটিভ, সে অনুযায়ী রোগের চিকিৎসা নেওয়াটাই প্রত্যাশিত।


ডা. সাইফ হোসেন খান, মেডিসিন কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি