প্রিন্ট এর তারিখঃ জানুয়ারী ২৯, ২০২৫, ১২:০৫ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জানুয়ারী ২৬, ২০২৫, ৩:৩৯ পি.এম
জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করা প্রশংসনীয়
ইসলামে ইলমের গুরুত্ব অপরিসীম। আরবি ‘ইলম’ শব্দ দ্বারা জ্ঞান, অনুধাবন ও উপলব্ধি করাকে বোঝানো হয়। বাংলা ভাষায় কখনো কখনো ‘ইলম’ শব্দ দ্বারা বোঝানো হয় জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা বা বিদ্যা।মুসলমানের প্রতি প্রথম বার্তাই হলো, ‘পড়ো তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।
’ এ থেকে ইলমে দ্বিনের গুরুত্ব স্পষ্টভাব প্রতীয়মান হয়। তা ছাড়া ইসলাম থেকে ইলমকে পৃথক করা অসম্ভব। ইসলামের প্রতিটি শাখায় ইলম বিরাজমান। ইলম ছাড়া যথার্থভাবে ইসলাম পালন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
তাই দৈনন্দিন জীবনে স্বাভাবিকভাবে একজন মানুষের পক্ষে ইবাদত-বন্দেগিসহ (নামাজ-রোজা) ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করলে তা সুন্দর ও শুদ্ধভাবে আদায় করা যায়, তা জানা প্রত্যেক মানুষের ওপর ফরজে আইন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইলম অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ফরজ।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২৪)আর সঠিকভাবে ইলমে দ্বিন শিক্ষার দুটি পদ্ধতি রয়েছে—১. লেখাপড়া করে ইলমে দ্বিন শিক্ষা করা।
২. বিজ্ঞ আলেমদের শরণাপন্ন হয়ে তাঁদের প্রশ্ন করে কাঙ্ক্ষিত বিষয়ের সঠিক জ্ঞানার্জন করা।
অর্থাৎ ঈমান-আকিদা, ইবাদত-বন্দেগি, লেনদেন, আয়-উপার্জনসহ দ্বিনের যাবতীয় যেকোনো বিষয় বিজ্ঞ আলেমের কাছে প্রশ্ন করে জেনে নেওয়া। শিক্ষার এই পদ্ধতি কোরআন-সুন্নাহর আলোকে প্রমাণিত।পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে নবী!) আমি তোমার আগে কেবল পুরুষ মানুষকে রাসুল করে পাঠিয়েছিলাম, যাদের প্রতি ওহি নাজিল করতাম। সুতরাং (কাফেরদের বলো) তোমরা নিজেরা যদি না জানো, তাহলে উপদেশ সম্পর্কে জ্ঞাতদের জিজ্ঞেস করো।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৭)এ আয়াত দ্বারা বোঝা গেল, কোনো বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকলে ওই বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানবান হক্কানি আলেমদের তা জিজ্ঞাসা করতে হবে, আর এই জিজ্ঞাসার মাধ্যমে আমাদের অজ্ঞতা নামক রোগ দূর হয়ে যাবে।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জিজ্ঞাসা করাই হলো মূর্খতার (রোগের) চিকিৎসা।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৩৬)অর্থাৎ যেকোনো রোগের যেমন রোগভেদে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র আছে, যা সেবন বা ব্যবহার করলে ওই রোগ দূর হয়ে যায়, ঠিক তেমনি মানবজাতির অজ্ঞতা নামক রোগ বিজ্ঞ আলেম-ওলামাদের কাছে জিজ্ঞাসা করার মাধ্যমে দূর হয়ে যায়। আর দ্বিনি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার দ্বারা যেমন দিনপ্রত্যাশী ব্যক্তির ফায়দা হয়, উপরন্তু তাকেসহ আরো চার শ্রেণিকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়—১. প্রশ্নকারী, ২. উত্তর প্রদানকারী, ৩. আশপাশ থেকে উত্তর শ্রবণকারী এবং ৪. প্রশ্নোত্তরের মজলিস ব্যবস্থাপনাকারী। তবে হ্যাঁ, প্রশ্ন অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ ও প্রয়োজনীয় হতে হবে; অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়ের প্রশ্ন করা পরিহার করতে হবে। তাইতো হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে সুন্দর প্রশ্ন করা বিদ্যার অর্ধেক।’ (শুয়াবুল ঈমান, হাদিস : ৬৫৬৮)এ ছাড়া জ্ঞানপ্রত্যাশী ব্যক্তির প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে তাকে ওই কাজের প্রতি প্রদর্শন করা নেক কাজের নামান্তর। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সৎকাজের পথপ্রদর্শক সৎকাজকারীর মতো।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬৭০)
Copyright © 2025 Londonbdtv.co.uk. All rights reserved.