ফাঁস হওয়া অডিও যাচাই
জুলাইয়ে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি ছিল — বিবিসির প্রতিবেদন

২০২৪ সালের জুলাই মাসে দেশজুড়ে চলমান আন্দোলন দমনে নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া একটি অডিও বিশ্লেষণ করে বিবিসি এই তথ্য প্রকাশ করেছে, যা নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে।
বিবিসির অনুসন্ধানী ইউনিট ‘BBC Eye’ অডিওটি বিশ্লেষণ করে জানায়, ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই গণভবনে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়—“যেখানেই আন্দোলনকারীদের পাবে, সেখানে গুলি করবে।” অডিওর ফরেনসিক পরীক্ষায় কোনো ধরনের সম্পাদনা বা প্রযুক্তিগত হস্তক্ষেপের প্রমাণ মেলেনি।
বিবিসির পক্ষে অডিওটি যাচাই করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্বাধীন ফরেনসিক প্রতিষ্ঠান Earshot। প্রতিষ্ঠানটি নিশ্চিত করেছে, রেকর্ডিংটিতে কোনো বিকৃতি নেই এবং কণ্ঠস্বরটি শেখ হাসিনার সঙ্গে মিলে গেছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (CID)–ও কণ্ঠস্বরটির সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
২০২৪ সালের জুন ও জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার ও দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। আন্দোলন দমনে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি ছোঁড়ে এবং সহিংস দমন অভিযান চালায়। জাতিসংঘের তথ্যমতে, এই সময় প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়, যাদের মধ্যে অধিকাংশই অপ্রাপ্তবয়স্ক বা তরুণ।
সরকারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত অডিওর সত্যতা স্বীকার বা অস্বীকার করে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা দাবি করেছেন, এটি একটি ‘ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারণা’ এবং দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার অপচেষ্টা।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিবৃতি দিয়ে বলেছে, অডিওটি যদি সত্য হয়, তবে সেটি মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় পড়তে পারে। বিষয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চর্চা এবং বিচারের ক্ষেত্রে গুরুতর দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
বিবিসির প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেশের রাজনীতি নতুন মোড় নিতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। ফাঁস হওয়া অডিওটি যদি আদালত ও আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হয়, তবে তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ মোড়বদল ঘটাতে পারে।