চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বায়ার্নের অজেয় যাত্রা থামিয়ে দারুণ জয় ইন্টারের

আক্রমণের ঝড় তুলল বায়ার্ন মিউনিখ, কিন্তু কাজের কাজটুকু করল ইন্টার মিলান। লাউতারো মার্তিনেসের গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে তা আগলে রাখলো দারুণভাবে। শেষ দিকে টমাস মুলার সমতার স্বস্তি এনে দিলেন বটে, কিন্তু তাও উবে গেল মুহূর্তেই। বায়ার্নের অজেয় দূর্গ জয় করে ফিরল সিমোনে ইনজাগির দল।
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার-ফাইনালের প্রথম লেগে মঙ্গলবার রাতে আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় বায়ার্নকে ২-১ গোলে হারিয়েছে ইন্টার।
নিজেদের মাঠে ২২ ম্যাচের অজেয় যাত্রা থামল বায়ার্নের। ইউরোপ সেরার আসরে সবশেষ ২০২১ সালের এপ্রিলে পিএসজির বিপক্ষে ঘরের মাঠে হেরেছিল বাভারিয়ানরা। ওই ম্যাচটিও ছিল কোয়ার্টার-ফাইনালের প্রথম লেগে, ৩-২ ব্যবধানে।
এ ম্যাচের শুরুতেও ১৭ জয় ৫ ড্রয়ের অপ্রতিরোধ্য যাত্রা ধরে রাখার ইঙ্গিত দিয়েছিল বায়ার্ন। তাদের আক্রমণের শুরু সপ্তম মিনিটে; মাইকেল ওলিসের শট পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। একটু পর হ্যারি কেইনের দুর্বল হেড জমে যায় গোলকিপারের গ্লাভসে।
২০তম মিনিটে সতীর্থের রক্ষণ চেরা পাস ধরে বক্সে ঢুকে বুলেট গতির কোনাকুণি শট নেন রাফায়েল গেরেইরো। ঝাঁপিয়ে আটকান ইয়ান সোমের। এর একটু আগে ওলিসের শটও ফিরিয়েছিলেন ইন্টার মিলান গোলরক্ষক।
ইন্টারের রক্ষণে চাপ ধরে রেখে প্রথমার্ধে ৭ শটের চারটি লক্ষ্যে রাখে বায়ার্ন।
২৬তম মিনিটে দারুণ সুযোগটি পায় তারা। মাঝমাঠ থেকে উড়ে আসা কয়েক পা ঘুরে যায় ওলিসের কাছে। একাধিক ডিফেন্ডারকে পায়ের কারিকুরিতে বোকা বানিয়ে তিনি পাস দেন বাম দিকে ফাঁকায় থাকা কেইনকে। ইংলিশ স্ট্রাইকারের কোনাকুণি শট ফিরে আসে দুরের পোস্ট কাঁপিয়ে।
প্রতিপক্ষের আক্রমণে পিষ্ট হওয়া ইন্টার ৩৩তম মিনিটে ওঠে পাল্টা আক্রমণে। কিন্তু মার্তিনেস বক্সে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে বল হারিয়ে শটই নিতে পারেননি।
তবে পাঁচ মিনিট পরই পোস্টে রাখা প্রথম শটেই বাজিমাত করেন এই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।
ডান দিক থেকে আলেস্সান্দ্রো বাস্তোনি আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান বক্সে। মার্কাস থুরাম নিজে শট না নিয়ে ব্যাক হিলে খুঁজে নেন তার পিছু ছোটা মার্তিনেসকে, নিখুঁত শটে তিনি খুঁজে নেন জাল; বায়ার্নের ডেরায় এগিয়ে যাওয়ার স্বস্তি নিয়ে বিরতিতে যায় ইন্টার।
দ্বিতীয়ার্ধে আরও আত্মবিশ্বাসী শুরু করে ইন্টার। ৫৬তম মিনিটে মার্তিনেসের শট ফেরান মানুয়েল নয়ারের চোটে পোস্টের দায়িত্ব পাওয়া ইয়োনাস উয়াবিগ। ৬৫তম মিনিটে গেরেইরোর শট অল্পের জন্য ক্রসবারের উপর দিয়ে গেলে হতাশা বাড়ে বায়ার্নের।
শেষ ১৫ মিনিটের জন্য একসাথে তিনটি পরিবর্তন আনেন বায়ার্ন কোচ ভিনসেন্ট কোম্পানি। আক্রমণভাগে বিবর্ণ লেরয় সানেকে তুলে নামান অভিজ্ঞ টমাস মুলারকে, এ মৌসুমেই বাভারিয়ানদের জার্সিতে শেষ হবে যার পথচলা। রক্ষণের শক্তি কমিয়ে গেরেইরার বদলি নামান ফরোয়ার্ড সের্গেই জিনাব্রিকে।
সমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে বায়ার্ন। ৮০তম মিনিটে বক্সের ঠিক উপর থেকে কেইনের শট যায় পোস্টের অনেক বাইরে। একটু পর মুলারের শটও হয় ব্লকড।
অবশেষে ৮৫তম মিনিটে সমতার স্বস্তি ফিরে বায়ার্নের তাবুতে। বাইলাইনের একটু উপর থেকে কোনার্ড লাইমারের বাড়ানো বল আলতো টোকায় জালে জড়িয়ে দেন মুলার। বায়ার্নের হয়ে এই ফরোয়ার্ডের গোল হলো ২৪৮টি।
তিন মিনিট পরই বায়ার্নের উচ্ছ্বাসের ঢেউ রূপ নেয় স্তব্ধতায়। কার্সেলোন অগাস্তুর আড়াআড়ি ক্রসে গোলমুখ থেকে নিখুঁত শটে গোল করেন দাভিদে ফ্রাত্তেস। এই গোল আগলে রেখে সেমি-ফাইনালে এক পা এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইন্টার।
আগামী ১৬ এপ্রিল ফিরতি লেগে ইন্টারের আঙিনা সান সিরোয় মুখোমুখি হবে দুই দল।