London ০৮:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় নিম্নমানের বীজে মাথায় হাত শতাধিক ভুট্টাচাষির

অনলাইন ডেস্ক:

চুয়াডাঙ্গা সদরে শতাধিক ভুট্টাচাষি ‘নাবা জিরো ৫৫’ জাতের বীজ রোপণ করে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। উপজেলার পদ্মবিলা ও তিতুদহ ইউনিয়নের সুবদিয়া, কোটবাড়ি, পিরোজখালী ও নিমতলা গ্রামের এসব কৃষক ‘নাবা ক্রপ কেয়ার লিমিটেড’ কোম্পানি থেকে এ বীজ সংগ্রহ করেন।

কৃষকদের অভিযোগ, গাছে শিষ না আসায় তারা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জমি চাষ, সার, সেচ ও শ্রম খরচসহ প্রতি বিঘায় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা ব্যয় করেও আশানুরূপ ভুট্টা ঘরে তুলতে পারেননি অনেকে।

সুবদিয়া গ্রামের কৃষক মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, তিন বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছিলাম। গাছ হয়েছে ভালোই, কিন্তু শিষ আসেনি। প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ করেছি। ফলন তো দূরের কথা, পশুখাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করার মতো কিছু পাইনি।

একই গ্রামের মো. আব্দার রহমান বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে বপন করেছিলাম, ক্ষেতের সব গাছ এখন ফাঁকা দাঁড়িয়ে আছে। এটা আমাদের মতো সীমিত সামর্থ্যের কৃষকদের জন্য বড় ধাক্কা।

চুয়াডাঙ্গায় নিম্নমানের বীজে মাথায় হাত শতাধিক ভুট্টাচাষির

কোটবাড়ি গ্রামের কৃষক মো. তুহিন আলী জানান, বীজ কোম্পানির প্রতিনিধিরা বলেছিলেন, এটা উন্নত জাত, ফলন ভালো হবে। কৃষি অফিস থেকেও প্রদর্শনী প্লট হিসেবে বীজ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা প্রতারিত হয়েছি। এই বীজে কোনো ফলন আসেনি।

একই গ্রামের কৃষক মো. ফজলুল হক বলেন, বীজ বপনের সময় আমাদের বলা হয়েছিল যে, এই জাতের ভুট্টায় দ্রুত শিষ ধরে ও ভালো ফলন দেয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে শিষ তো আসেইনি, বরং জমিরও ক্ষতি হয়েছে।

পিরোজখালী ও নিমতলা গ্রামের কৃষকেরা জানিয়েছেন, তারা নিজেদের জমানো টাকা ও ধারদেনা করে বীজ, সার ও শ্রমের খরচ চালিয়েছেন। কিন্তু শিষ না আসায় এখন তাদের ঋণ শোধ করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে রয়েছেন মো. আশরাফুল ইসলাম, মো. রাশিদুল ইসলাম, মো. লিটু আলী, মো. ওয়াহেদ আলী, মো. মিজানুর রহমান, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. রাজু, মো. সোহেল রানা, মো. হাফিজুর রহমান, মো. মনিরুল ইসলাম, মো. আশিকুর রহমান ও মো. শাহিনসহ আরও অনেকে।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘নাবা জিরো ৫৫’ নামের ভুট্টা বীজটি নিম্নমানের এবং তা থেকে শিষ আসেনি। ফলে কৃষকদের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিক বিপর্যয়েও পড়তে হয়েছে।

চাষিদের পক্ষে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন সুবদিয়া গ্রামের মো. সরক হোসেন ও কোটবাড়ি গ্রামের মো. মোহাম্মদ আলী। তারা দাবি করেছেন, এসব ভেজাল বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

চুয়াডাঙ্গায় নিম্নমানের বীজে মাথায় হাত শতাধিক ভুট্টাচাষির

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। সরেজমিনে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে কৃষকরা বলছেন, শুধু মৌসুমি ক্ষতি নয়, এ ধরনের ঘটনায় কৃষি ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারাচ্ছেন তারা। ভবিষ্যতে কৃষকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বীজ অনুমোদন ও বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ায় কঠোর নজরদারির দাবি তাদের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভুট্টা উৎপাদনে দেশের শীর্ষ তিন জেলার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা একটি। এ বছর জেলায় ৪৭ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। গত বছরের থেকে এ বছর ৫০০ হেক্টর বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। যা থেকে ৫ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জেলার মোট চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ৯৪ হাজার ২২২ হেক্টর

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৪:০১:৫১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫
১১
Translate »

চুয়াডাঙ্গায় নিম্নমানের বীজে মাথায় হাত শতাধিক ভুট্টাচাষির

আপডেট : ০৪:০১:৫১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫

চুয়াডাঙ্গা সদরে শতাধিক ভুট্টাচাষি ‘নাবা জিরো ৫৫’ জাতের বীজ রোপণ করে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। উপজেলার পদ্মবিলা ও তিতুদহ ইউনিয়নের সুবদিয়া, কোটবাড়ি, পিরোজখালী ও নিমতলা গ্রামের এসব কৃষক ‘নাবা ক্রপ কেয়ার লিমিটেড’ কোম্পানি থেকে এ বীজ সংগ্রহ করেন।

কৃষকদের অভিযোগ, গাছে শিষ না আসায় তারা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জমি চাষ, সার, সেচ ও শ্রম খরচসহ প্রতি বিঘায় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা ব্যয় করেও আশানুরূপ ভুট্টা ঘরে তুলতে পারেননি অনেকে।

সুবদিয়া গ্রামের কৃষক মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, তিন বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছিলাম। গাছ হয়েছে ভালোই, কিন্তু শিষ আসেনি। প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ করেছি। ফলন তো দূরের কথা, পশুখাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করার মতো কিছু পাইনি।

একই গ্রামের মো. আব্দার রহমান বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে বপন করেছিলাম, ক্ষেতের সব গাছ এখন ফাঁকা দাঁড়িয়ে আছে। এটা আমাদের মতো সীমিত সামর্থ্যের কৃষকদের জন্য বড় ধাক্কা।

চুয়াডাঙ্গায় নিম্নমানের বীজে মাথায় হাত শতাধিক ভুট্টাচাষির

কোটবাড়ি গ্রামের কৃষক মো. তুহিন আলী জানান, বীজ কোম্পানির প্রতিনিধিরা বলেছিলেন, এটা উন্নত জাত, ফলন ভালো হবে। কৃষি অফিস থেকেও প্রদর্শনী প্লট হিসেবে বীজ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা প্রতারিত হয়েছি। এই বীজে কোনো ফলন আসেনি।

একই গ্রামের কৃষক মো. ফজলুল হক বলেন, বীজ বপনের সময় আমাদের বলা হয়েছিল যে, এই জাতের ভুট্টায় দ্রুত শিষ ধরে ও ভালো ফলন দেয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে শিষ তো আসেইনি, বরং জমিরও ক্ষতি হয়েছে।

পিরোজখালী ও নিমতলা গ্রামের কৃষকেরা জানিয়েছেন, তারা নিজেদের জমানো টাকা ও ধারদেনা করে বীজ, সার ও শ্রমের খরচ চালিয়েছেন। কিন্তু শিষ না আসায় এখন তাদের ঋণ শোধ করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে রয়েছেন মো. আশরাফুল ইসলাম, মো. রাশিদুল ইসলাম, মো. লিটু আলী, মো. ওয়াহেদ আলী, মো. মিজানুর রহমান, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. রাজু, মো. সোহেল রানা, মো. হাফিজুর রহমান, মো. মনিরুল ইসলাম, মো. আশিকুর রহমান ও মো. শাহিনসহ আরও অনেকে।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘নাবা জিরো ৫৫’ নামের ভুট্টা বীজটি নিম্নমানের এবং তা থেকে শিষ আসেনি। ফলে কৃষকদের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিক বিপর্যয়েও পড়তে হয়েছে।

চাষিদের পক্ষে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন সুবদিয়া গ্রামের মো. সরক হোসেন ও কোটবাড়ি গ্রামের মো. মোহাম্মদ আলী। তারা দাবি করেছেন, এসব ভেজাল বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

চুয়াডাঙ্গায় নিম্নমানের বীজে মাথায় হাত শতাধিক ভুট্টাচাষির

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। সরেজমিনে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে কৃষকরা বলছেন, শুধু মৌসুমি ক্ষতি নয়, এ ধরনের ঘটনায় কৃষি ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারাচ্ছেন তারা। ভবিষ্যতে কৃষকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বীজ অনুমোদন ও বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ায় কঠোর নজরদারির দাবি তাদের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভুট্টা উৎপাদনে দেশের শীর্ষ তিন জেলার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা একটি। এ বছর জেলায় ৪৭ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। গত বছরের থেকে এ বছর ৫০০ হেক্টর বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। যা থেকে ৫ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জেলার মোট চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ৯৪ হাজার ২২২ হেক্টর