London ০৯:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
ওয়াকফ আইন নিয়ে উত্তপ্ত ভারত সংখ্যালঘু মুসলিমদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান বাংলাদেশের গাজায় ইসরায়েলের হামলায় একদিনে নিহত ৬৪ ইসরায়েলি হামলায় একই পরিবারের ১০ সদস্য নিহত যুক্তরাষ্ট্রে গণহারে ভারতীয় ছাত্রদের ভিসা বাতিল, আছে বাংলাদেশিরাও আখাউড়া প্রিন্ট ও টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের নতুন কমিটি গঠন: সভাপতি -,মিশু, সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ কৃষকদের পাশে উপজেলা প্রশাসন: ধান কাটা ও লিচু চাষে সহায়তায় সক্রিয় ভূমিকা বার্সেলোনায় না ফেরার কারণ ও ইয়ামালের প্রশংসায় যা বললেন মেসি কসবায় হজ ও উমরাহ প্রশিক্ষণ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত টঙ্গীতে ভাই-বোনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হলে মিয়ানমারে শান্তি আসবে না

চরাঞ্চলে একমাত্র যান ঘোড়ার গাড়ি

অনলাইন ডেস্ক:

গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী আবহমান যান ঘোড়ার গাড়ি হলেও বর্তমানে তা যান্ত্রিক যানের কারণে অনেকটাই কোণঠাসা। এক কথায় ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন আর নেই বললেই চলে। গ্রামেগঞ্জে ঘোড়ার গাড়ি না দেখা গেলেও চর এলাকাগুলোতে এখনো ঘোড়ার গাড়ির আধিক্য বেশি। চর জনপদের যেন প্রধান বাহনই ঘোড়ার গাড়ি।

সরেজমিনে বগুড়ার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও গাইবান্ধার ফুলছড়ির যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় তৈরি হওয়া এসব চর ঘুরে দেখা মিলে ঘোড়ার গাড়ির। জানা যায়, এ চরাঞ্চলের একমাত্র যান ঘোড়ার গাড়ি। চরের বালুর মধ্য এ গাড়িগুলো অনায়াসে চলাচল করতে পারে বিধায় এখনো এ গাড়িগুলোর জনপ্রিয়তা বেশি। সাধারণত এ গাড়িগুলোতে মালামাল পরিবহন করা হয়।

সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের হাসনাপাড়া গ্রামের ৫৫ বছর বয়সী খোকা মিয়া ঘোড়ার গাড়ি চালিয়েই সংসার চালান। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমি ঘোড়ার গাড়ি চালাই। এ ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে আমি চারশ থেকে পাঁচশ টাকা খেপে মালামাল বহন করি। দিনে তিন চারটা খেপ পেলে প্রায় ২ হাজার টাকার মতো আয় হয়। তা দিয়ে আমি ঘোড়ার খাবারসহ নিজের পরিবার চালাই’।

স্থানীয়দের তথ্যমতে, চরের এ গ্রামগুলোতে প্রায় ৫০০ ঘোড়ার গাড়ি চলাচল করে। তবে কয়েক বছর আগেও চরের এ গ্রামগুলোতে গরুর গাড়ি চলতো। এখন গরুর গাড়ি নেই বললেই চলে। সাধারণত ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রাম ও জামালপুরের মাদারগঞ্জ হাটে ১৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায় ঘোড়ার গাড়ি পাওয়া যায়। দাম কম হওয়ায় গরুর গাড়ির পরিবর্তে ঘোড়ার গাড়ির জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। এছাড়াও গরুর গাড়ির তুলনায় ঘোড়ার গাড়ি বেশি মাল টানে। সুস্থ-সবল ঘোড়া দিয়ে একটি গাড়ি প্রায় ১৫ থেকে ২০ মণ পর্যন্ত মালামাল টানতে পারে বলে জানান স্থানীয়রা।

চরাঞ্চলে একমাত্র যান ঘোড়ার গাড়ি

কুড়িগ্রাম জেলার ঘোড়ার গাড়ি তৈরির কারিগর ইব্রাহীম হোসেন বলেন, ‘একটি ঘোড়ার গাড়ি তৈরিতে প্রায় ১৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। তবে মানভেদে এ গাড়িগুলো বানাতে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত লেগে যায়। বালু, কাঁদা, পানিতে সমান তালে এ গাড়িগুলো চলতে পারে বিধায় এ গাড়িগুলোর ব্যপক চাহিদা রয়েছে’।

সোনাতলা উপজেলার তেকানী চুকাই নগর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম জানান, তেকানী চুকাই নগরে প্রায় শতাধীক ঘোড়ার গাড়ি রয়েছে। এ গাড়িগুলো দিয়েই কেউ কেউ জীবিকা নির্বাহ করে। শুকনো মৌসুমে ঘোড়ার গাড়িই একমাত্র ভরসা চরবাসীদের আর বর্ষার সময় ভরসা নৌকা।

সোনাতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘যমুনা ও বাঙালি বিধৌত হওয়ায় সোনাতলা উপজেলার বিশাল একটি অংশ চর। এ চরের মাটি খুবই উর্বর। এতে করে সহজেই এখানে নানান ধরনের ফসল ফলে। বিশেষ করে ধান, মরিচ, পাট, শাক-সবজি ইত্যাদি। অন্য কোনো যানবাহন না থাকায় বর্ষার সময় এগুলো নৌকায় পরিবহন করা হলেও শুষ্ক মৌসুমে ঘোড়ার গাড়ি একমাত্র ভরসা। এ গাড়িগুলো দিয়েই তখন এসব পণ্য স্থানীয় বাজারে বিক্রির জন্য আনা হয়। এছাড়াও সহজেই এ গাড়িগুলোতে তুলনামূলকভাবে কম খরচে কৃষিপণ্য আনা নেওয়া করা যায়’।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১২:৫৬:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
১১
Translate »

চরাঞ্চলে একমাত্র যান ঘোড়ার গাড়ি

আপডেট : ১২:৫৬:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫

গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী আবহমান যান ঘোড়ার গাড়ি হলেও বর্তমানে তা যান্ত্রিক যানের কারণে অনেকটাই কোণঠাসা। এক কথায় ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন আর নেই বললেই চলে। গ্রামেগঞ্জে ঘোড়ার গাড়ি না দেখা গেলেও চর এলাকাগুলোতে এখনো ঘোড়ার গাড়ির আধিক্য বেশি। চর জনপদের যেন প্রধান বাহনই ঘোড়ার গাড়ি।

সরেজমিনে বগুড়ার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও গাইবান্ধার ফুলছড়ির যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় তৈরি হওয়া এসব চর ঘুরে দেখা মিলে ঘোড়ার গাড়ির। জানা যায়, এ চরাঞ্চলের একমাত্র যান ঘোড়ার গাড়ি। চরের বালুর মধ্য এ গাড়িগুলো অনায়াসে চলাচল করতে পারে বিধায় এখনো এ গাড়িগুলোর জনপ্রিয়তা বেশি। সাধারণত এ গাড়িগুলোতে মালামাল পরিবহন করা হয়।

সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের হাসনাপাড়া গ্রামের ৫৫ বছর বয়সী খোকা মিয়া ঘোড়ার গাড়ি চালিয়েই সংসার চালান। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমি ঘোড়ার গাড়ি চালাই। এ ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে আমি চারশ থেকে পাঁচশ টাকা খেপে মালামাল বহন করি। দিনে তিন চারটা খেপ পেলে প্রায় ২ হাজার টাকার মতো আয় হয়। তা দিয়ে আমি ঘোড়ার খাবারসহ নিজের পরিবার চালাই’।

স্থানীয়দের তথ্যমতে, চরের এ গ্রামগুলোতে প্রায় ৫০০ ঘোড়ার গাড়ি চলাচল করে। তবে কয়েক বছর আগেও চরের এ গ্রামগুলোতে গরুর গাড়ি চলতো। এখন গরুর গাড়ি নেই বললেই চলে। সাধারণত ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রাম ও জামালপুরের মাদারগঞ্জ হাটে ১৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায় ঘোড়ার গাড়ি পাওয়া যায়। দাম কম হওয়ায় গরুর গাড়ির পরিবর্তে ঘোড়ার গাড়ির জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। এছাড়াও গরুর গাড়ির তুলনায় ঘোড়ার গাড়ি বেশি মাল টানে। সুস্থ-সবল ঘোড়া দিয়ে একটি গাড়ি প্রায় ১৫ থেকে ২০ মণ পর্যন্ত মালামাল টানতে পারে বলে জানান স্থানীয়রা।

চরাঞ্চলে একমাত্র যান ঘোড়ার গাড়ি

কুড়িগ্রাম জেলার ঘোড়ার গাড়ি তৈরির কারিগর ইব্রাহীম হোসেন বলেন, ‘একটি ঘোড়ার গাড়ি তৈরিতে প্রায় ১৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। তবে মানভেদে এ গাড়িগুলো বানাতে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত লেগে যায়। বালু, কাঁদা, পানিতে সমান তালে এ গাড়িগুলো চলতে পারে বিধায় এ গাড়িগুলোর ব্যপক চাহিদা রয়েছে’।

সোনাতলা উপজেলার তেকানী চুকাই নগর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম জানান, তেকানী চুকাই নগরে প্রায় শতাধীক ঘোড়ার গাড়ি রয়েছে। এ গাড়িগুলো দিয়েই কেউ কেউ জীবিকা নির্বাহ করে। শুকনো মৌসুমে ঘোড়ার গাড়িই একমাত্র ভরসা চরবাসীদের আর বর্ষার সময় ভরসা নৌকা।

সোনাতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘যমুনা ও বাঙালি বিধৌত হওয়ায় সোনাতলা উপজেলার বিশাল একটি অংশ চর। এ চরের মাটি খুবই উর্বর। এতে করে সহজেই এখানে নানান ধরনের ফসল ফলে। বিশেষ করে ধান, মরিচ, পাট, শাক-সবজি ইত্যাদি। অন্য কোনো যানবাহন না থাকায় বর্ষার সময় এগুলো নৌকায় পরিবহন করা হলেও শুষ্ক মৌসুমে ঘোড়ার গাড়ি একমাত্র ভরসা। এ গাড়িগুলো দিয়েই তখন এসব পণ্য স্থানীয় বাজারে বিক্রির জন্য আনা হয়। এছাড়াও সহজেই এ গাড়িগুলোতে তুলনামূলকভাবে কম খরচে কৃষিপণ্য আনা নেওয়া করা যায়’।