London ০১:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘন কুয়াশায় পচন ধরছে আলু খেতে, দুশ্চিন্তায় কৃষক

অনলাইন ডেস্ক

দেশের শস্যভান্ডারখ্যাত জেলা নওগাঁয় দিন যতোই যাচ্ছে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। গত কয়েকদিন থেকে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকছে চারপাশ। দিনে ঠিকমতো দেখা মিলছে না সূর্যের। ফলে চরম দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন জেলার আলু এবং বোরো ধান চাষিরা।

জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘন কুয়াশার কারণে পচন ধরেছে আলুতে, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বোরো বীজতলা। বোরো এবং আলু চাষ নিয়ে শঙ্কায় আছেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। জেলায় গত কয়েকদিন যাবত তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে।

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় জেলার বদলগাছি আবহাওয়া ও কৃষি পর্যবেক্ষণাগারের তথ্যমতে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে জেলায় এ বছর ২১ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে আলু এবং ৯ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলায় ৯০ শতাংশ আলু রোপণ করা হয়েছে।

নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামের কৃষক উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে আলু পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দেড় বিঘা জমিতে আলু লাগাইতে এখন পর্যন্ত খরচ প্রায় ১০-১২ হাজার টাকার মতো হয়েছে। আলুতে পচন ধরায় চরম হতাশায় আছি।

জেলার সাপাহার উপজেলার শিরন্টি ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের কৃষক আজগর আলী বলেন, তিন বিঘার মতো জমিতে আলু লাগিয়েছি। গত তিনি-চার দিনের ঘন কুয়াশার কারণে আলুতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আলুর পাতা পচে গাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, স্থানীয় ভাষায় এটাকে আমরা মড়ক রোগ বলি। আলু উঠতে এখনো অনেক দেরি, এভাবে ঘন কুয়াশা হতে থাকলে সব আলু পচে নষ্ট হয়ে যাবে। এমনিতেই আলুতে এবছর খরচ অনেক বেশি। আলুর বীজ আর শ্রমিক বাবদ এখন পর্যন্ত ৫৮-৬০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়ে গেছে। আলুতে পচন ধরায় চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি।

নওগাঁ সদর উপজেলার বরুনকান্দি গ্রামের কৃষক দুলাল হোসেন বলেন, বোরো মৌসুমে ধান লাগানোর জন্য বিছন (ধানের বীজ) ফেলেছি। কয়েকদিনের ঘন কুয়াশার কারণে বিছন লাল হয়ে মরে যাচ্ছে। এরকম ঘন কুয়াশা চলতে থাকলে ধান হয়ত আর লাগানো যাবে না।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগাম আলু এবং আগাম বোরো বীজতলাগুলো ঘন কুয়াশার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বীজতলা এবং আলুর জমিতে কৃষককে আগাম সতর্কীকরণ হিসেবে প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক এবং বোরো বীজতলায় বিকেল বেলা পানি দিয়ে সকাল বেলা পনি বের করে দেওয়া অথবা পলিথিন পেপার দিয়ে বীজতলা ঢেকে দেওয়ার জন্য নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকরা এই পরামর্শগুলো গ্রহণ করলে আশা করি আলু এবং বোরো বীজতলা ঘন কুয়াশায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এই লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৯:৫৫:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
২১
Translate »

ঘন কুয়াশায় পচন ধরছে আলু খেতে, দুশ্চিন্তায় কৃষক

আপডেট : ০৯:৫৫:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

দেশের শস্যভান্ডারখ্যাত জেলা নওগাঁয় দিন যতোই যাচ্ছে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। গত কয়েকদিন থেকে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকছে চারপাশ। দিনে ঠিকমতো দেখা মিলছে না সূর্যের। ফলে চরম দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন জেলার আলু এবং বোরো ধান চাষিরা।

জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘন কুয়াশার কারণে পচন ধরেছে আলুতে, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বোরো বীজতলা। বোরো এবং আলু চাষ নিয়ে শঙ্কায় আছেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। জেলায় গত কয়েকদিন যাবত তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে।

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় জেলার বদলগাছি আবহাওয়া ও কৃষি পর্যবেক্ষণাগারের তথ্যমতে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে জেলায় এ বছর ২১ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে আলু এবং ৯ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলায় ৯০ শতাংশ আলু রোপণ করা হয়েছে।

নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামের কৃষক উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে আলু পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দেড় বিঘা জমিতে আলু লাগাইতে এখন পর্যন্ত খরচ প্রায় ১০-১২ হাজার টাকার মতো হয়েছে। আলুতে পচন ধরায় চরম হতাশায় আছি।

জেলার সাপাহার উপজেলার শিরন্টি ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের কৃষক আজগর আলী বলেন, তিন বিঘার মতো জমিতে আলু লাগিয়েছি। গত তিনি-চার দিনের ঘন কুয়াশার কারণে আলুতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আলুর পাতা পচে গাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, স্থানীয় ভাষায় এটাকে আমরা মড়ক রোগ বলি। আলু উঠতে এখনো অনেক দেরি, এভাবে ঘন কুয়াশা হতে থাকলে সব আলু পচে নষ্ট হয়ে যাবে। এমনিতেই আলুতে এবছর খরচ অনেক বেশি। আলুর বীজ আর শ্রমিক বাবদ এখন পর্যন্ত ৫৮-৬০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়ে গেছে। আলুতে পচন ধরায় চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি।

নওগাঁ সদর উপজেলার বরুনকান্দি গ্রামের কৃষক দুলাল হোসেন বলেন, বোরো মৌসুমে ধান লাগানোর জন্য বিছন (ধানের বীজ) ফেলেছি। কয়েকদিনের ঘন কুয়াশার কারণে বিছন লাল হয়ে মরে যাচ্ছে। এরকম ঘন কুয়াশা চলতে থাকলে ধান হয়ত আর লাগানো যাবে না।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগাম আলু এবং আগাম বোরো বীজতলাগুলো ঘন কুয়াশার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বীজতলা এবং আলুর জমিতে কৃষককে আগাম সতর্কীকরণ হিসেবে প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক এবং বোরো বীজতলায় বিকেল বেলা পানি দিয়ে সকাল বেলা পনি বের করে দেওয়া অথবা পলিথিন পেপার দিয়ে বীজতলা ঢেকে দেওয়ার জন্য নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকরা এই পরামর্শগুলো গ্রহণ করলে আশা করি আলু এবং বোরো বীজতলা ঘন কুয়াশায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এই লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন।