London ০৬:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘গাজা পরিকল্পনা’ নিয়ে ট্রাম্পের ভিন্ন সুর, স্বাগত জানাল হামাস

অনলাইন ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা থেকে ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনিকে স্থায়ীভাবে বাস্তুচ্যুত করার প্রস্তাব থেকে সরে আসার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম।

গতকাল বুধবার (১২ মার্চ) হোয়াইট হাউসে আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিনের সঙ্গে বৈঠকে এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘কেউ গাজা থেকে কোনো ফিলিস্তিনিকে বিতাড়িত করছে না।‘ এরপরই হামাস মুখপাত্র ট্রাম্পের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দেন। খবর আলজাজিরার।

বিবৃতিতে কাসেম বলেন, ‘যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওই বক্তব্য গাজা উপত্যকার জনগণকে বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনা থেকে সরে আসা হয়ে থাকে, তাহলে এটিকে স্বাগত জানানো হবে।’

হামাস মুখপাত্র কাসেম আরও বলেন, ‘আমরা যুদ্ধবিরতি চুক্তির সমস্ত শর্ত বাস্তবায়নে ইসরায়েলি দখলদারদের বাধ্য করার মাধ্যমে এ অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানাই।’

গত মাসে ট্রাম্প যখন গাজাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দখলে নেওয়ার প্রস্তাব দেন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকাটি থেকে ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে স্থায়ীভাবে বাস্তুচ্যুত করে প্রতিবেশী দেশগুলোতে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন, তখন তিনি মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশগুলোতে আলোড়ন সৃষ্টি করেন।

গাজার পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা করতে গতকাল বুধবার কাতারে আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এরপরই ট্রাম্পের কাছ থেকে পূর্বের অবস্থানের স্পষ্ট বিপরীতমুখী বক্তব্য এসেছে।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতি অনুসারে, কাতার, জর্ডান, মিসর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) মহাসচিব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গাজা পুনর্গঠন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন, যা গত ৪ মার্চ কায়রোতে অনুষ্ঠিত আরব লীগ শীর্ষ সম্মেলনে অনুমোদিত হয়।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘গাজায় পুনর্গঠন প্রচেষ্টার ভিত্তি হিসেবে এই পরিকল্পনার ওপর পরামর্শ ও সমন্বয় অব্যাহত রাখার জন্য তারা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে একমত হয়েছেন।’

গত শনিবার ৫৭ সদস্যের ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) সৌদি আরবে এক জরুরি সভায় আরব লীগের পেশ করা গাজার জন্য একটি পরিকল্পনা আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়েছে।

ট্রাম্পের গাজা দখল করে এর বাসিন্দাদের উপত্যকাছাড়া করার হুমকির জবাবে মিসরীয় পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভবিষ্যৎ প্রশাসনের অধীনে গাজা উপত্যকা পুনর্নির্মাণের প্রস্তাব আসে।

গত মঙ্গলবার কাতারে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে নতুন দফা আলোচনা শুরু হয়েছে এবং এতে মধ্যস্থতার জন্য উইটকফকে দোহায় পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আরব মন্ত্রীরা গাজা এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তারা দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের ভিত্তিতে একটি ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি অর্জনের জন্য প্রকৃত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।’

গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির ৪২ দিনের প্রথম ধাপের মেয়াদ এ মাসের শুরুতে শেষ হয়ে গেছে। গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরবর্তী ধাপগুলোর ব্যাপারে ইসরায়েল এখনও কোনো চুক্তিতে পৌঁছায়নি।

যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকেই ইসরায়েল গাজার ওপর সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করেছে, যা টানা ১২তম দিনে পৌঁছেছে। অঞ্চলটিতে খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ প্রবেশে বাধা প্রদান করছে ইসরায়েলি সেনারা। হামাসকে চাপ দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের ‘মানবিক সাহায্যকে’ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, যার প্রভাব সবার ওপর পড়ছে বলে বর্ণনা করেছেন বিশ্লেষকরা।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০১:৩৯:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫
১৮
Translate »

‘গাজা পরিকল্পনা’ নিয়ে ট্রাম্পের ভিন্ন সুর, স্বাগত জানাল হামাস

আপডেট : ০১:৩৯:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা থেকে ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনিকে স্থায়ীভাবে বাস্তুচ্যুত করার প্রস্তাব থেকে সরে আসার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম।

গতকাল বুধবার (১২ মার্চ) হোয়াইট হাউসে আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিনের সঙ্গে বৈঠকে এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘কেউ গাজা থেকে কোনো ফিলিস্তিনিকে বিতাড়িত করছে না।‘ এরপরই হামাস মুখপাত্র ট্রাম্পের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দেন। খবর আলজাজিরার।

বিবৃতিতে কাসেম বলেন, ‘যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওই বক্তব্য গাজা উপত্যকার জনগণকে বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনা থেকে সরে আসা হয়ে থাকে, তাহলে এটিকে স্বাগত জানানো হবে।’

হামাস মুখপাত্র কাসেম আরও বলেন, ‘আমরা যুদ্ধবিরতি চুক্তির সমস্ত শর্ত বাস্তবায়নে ইসরায়েলি দখলদারদের বাধ্য করার মাধ্যমে এ অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানাই।’

গত মাসে ট্রাম্প যখন গাজাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দখলে নেওয়ার প্রস্তাব দেন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকাটি থেকে ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে স্থায়ীভাবে বাস্তুচ্যুত করে প্রতিবেশী দেশগুলোতে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন, তখন তিনি মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশগুলোতে আলোড়ন সৃষ্টি করেন।

গাজার পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা করতে গতকাল বুধবার কাতারে আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এরপরই ট্রাম্পের কাছ থেকে পূর্বের অবস্থানের স্পষ্ট বিপরীতমুখী বক্তব্য এসেছে।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতি অনুসারে, কাতার, জর্ডান, মিসর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) মহাসচিব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গাজা পুনর্গঠন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন, যা গত ৪ মার্চ কায়রোতে অনুষ্ঠিত আরব লীগ শীর্ষ সম্মেলনে অনুমোদিত হয়।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘গাজায় পুনর্গঠন প্রচেষ্টার ভিত্তি হিসেবে এই পরিকল্পনার ওপর পরামর্শ ও সমন্বয় অব্যাহত রাখার জন্য তারা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে একমত হয়েছেন।’

গত শনিবার ৫৭ সদস্যের ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) সৌদি আরবে এক জরুরি সভায় আরব লীগের পেশ করা গাজার জন্য একটি পরিকল্পনা আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়েছে।

ট্রাম্পের গাজা দখল করে এর বাসিন্দাদের উপত্যকাছাড়া করার হুমকির জবাবে মিসরীয় পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভবিষ্যৎ প্রশাসনের অধীনে গাজা উপত্যকা পুনর্নির্মাণের প্রস্তাব আসে।

গত মঙ্গলবার কাতারে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে নতুন দফা আলোচনা শুরু হয়েছে এবং এতে মধ্যস্থতার জন্য উইটকফকে দোহায় পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আরব মন্ত্রীরা গাজা এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তারা দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের ভিত্তিতে একটি ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি অর্জনের জন্য প্রকৃত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।’

গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির ৪২ দিনের প্রথম ধাপের মেয়াদ এ মাসের শুরুতে শেষ হয়ে গেছে। গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরবর্তী ধাপগুলোর ব্যাপারে ইসরায়েল এখনও কোনো চুক্তিতে পৌঁছায়নি।

যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকেই ইসরায়েল গাজার ওপর সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করেছে, যা টানা ১২তম দিনে পৌঁছেছে। অঞ্চলটিতে খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ প্রবেশে বাধা প্রদান করছে ইসরায়েলি সেনারা। হামাসকে চাপ দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের ‘মানবিক সাহায্যকে’ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, যার প্রভাব সবার ওপর পড়ছে বলে বর্ণনা করেছেন বিশ্লেষকরা।