স্থায়ীভাবে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা দখলের বিষয়ে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে জার্মানি। মূলত ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ গাজার তথাকথিত নিরাপত্তা অঞ্চলে ইসরায়েলি সেনাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান করার কথা বলার পর এই সতর্কবার্তা দিলো বার্লিন। এমনকি, গাজা ফিলিস্তিনিদের এলাকা বলেও মন্তব্য করেছে ইউরোপের দেশটি।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) তুর্কি বার্তাসংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, বার্লিনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান ওয়াগনার বলেন, গাজা ফিলিস্তিনিদের অঞ্চল ও জার্মান সরকার গাজার স্থায়ী দখল কোনোভাবেই সমর্থন করে না। তাছাড়া ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে সেখান থেকে বিতাড়নের কৌশলকেও স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে।
তিনি আরও বলেন, জার্মান পররাষ্ট্রনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো মধ্যপ্রাচ্যে আলোচনার মাধ্যমে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে পৌঁছানো, যাতে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিরা পৃথক দুটি রাষ্ট্রে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বসবাস করতে পারে।
এর আগে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ ঘোষণা করেন, ‘গাজার নিরাপত্তা অঞ্চলে’ ইসরায়েলি সেনারা অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান করবে, যা হবে শত্রু এবং ইসরায়েলি বসতিগুলোর মাঝে বাফার জোন।
কাটজ বলেন, এই পদক্ষেপগুলো মূলত হামাসের ওপর চাপ বাড়ানোর কৌশলের অংশ, যাতে তারা বন্দিমুক্তির চুক্তি মেনে নিতে বাধ্য হয়। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, যতক্ষণ হামাস ইসরায়েলের শর্ত মানবে না, ততক্ষণ ইসরায়েলি সেনাদের অভিযান চলতেই থাকবে এবং হামাসের কার্যক্রম ও অবকাঠামো ধ্বংস করা হবে।
সম্প্রতি, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তরে বেইত লাহিয়া, বেইত হনুন, ও জাবালিয়ায় এবং দক্ষিণের রাফাহ শহর ও খান ইউনুসের কিছু অংশ থেকে মানুষকে জোরপূর্বক সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। শনিবার (১২ এপ্রিল) দেশটির সেনাবাহিনী ঘোষণা করে, তারা রাফাহ শহর ঘিরে ফেলেছে ও শহরটিকে খান ইউনুস থেকে বিচ্ছিন্ন করতে ‘মোরাগ করিডোর’ তৈরি করেছে।
গত ১৮ মার্চ ইসরায়েল আবারও গাজায় হামলা শুরু করে, যার ফলে জানুয়ারির ১৯ তারিখে হওয়া যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের চুক্তি ভেঙে পড়ে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের দমন-পীড়নে গাজায় এখন পর্যন্ত ৫১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
এদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয়ের তথ্য অনুযায়ী- ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক লাখ ১৬ হাজার ৩৪৩ জন। যদিও গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, মোট নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০। কারণ যারা ধ্বসংস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে তাদেরও নিহত হিসেবে ধরা হয়েছে।