London ১০:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এক রাতে নিহত ৭৩

গাজার উত্তরে বেত লাহিয়া শহরে এর আগেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ছবিটি জুন মাসেরছবি: রয়টার্স

গাজার উত্তরে বেত লাহিয়া শহরে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৭৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত সরকার এ তথ্য জানিয়েছে।

গাজায় শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হামলায় অনেকে আহত হয়েছেন। অনেকে ধ্বংসাবশেষের নিচে এখনো আটকে আছেন।

ইসরায়েল বলেছে, তারা হতাহতের সংখ্যা খতিয়ে দেখছে। তবে হামাস সরকার হতাহতের যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, তা ‘অতিরঞ্জিত’ বলে মনে করে ইসরায়েল। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর কাছে থাকা তথ্যের সঙ্গে এই পরিসংখ্যান মেলে না বলেও জানিয়েছে দেশটি। গাজায় ইন্দোনেশীয় একটি হাসপাতালে ইসরায়েলি সেনাদের প্রচণ্ড গোলাগুলির খবরের পরেই এই হামলার ঘটনা ঘটল।

গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, বেত লাহিয়াতে যোগাযোগব্যবস্থা ও ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হওয়ায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

হামাস নিয়ন্ত্রিত সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, জনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় এই বোমা হামলার ঘটনা ঘটছে। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থাও হামলায় ৭৩ জন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে। তবে বিবিসি হতাহতের সংখ্যা যাচাই করতে পারেনি।

ফিলিস্তিনের সংবাদ সংস্থা ওয়াফা বলছে, হামলায় আবাসিক একটি এলাকা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। ইসরায়েলের  প্রতিরক্ষা বাহিনী বিবিসিকে বলেছে, তারা হামাসের সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। বেসামরিক লোকদের সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে সব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।  

গত শুক্রবার রাতে ইসরায়েলি বাহিনী ঘনবসতিপূর্ণ জাবালিয়ায় বোমা হামলা চালায়। সেখানে শরণার্থীশিবিরও রয়েছে। হামলায় কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত হন।

এদিকে শনিবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতে কমপক্ষে ১২টি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই হামলার ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। হামলায় সেখানে কমপক্ষে একটি বহুতল ভবন পুরোপুরি ধসে গেছে। লেবাননের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হিজবুল্লাহও ইসরায়েলের উত্তরে রকেট হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

শনিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনে ড্রোন হামলা চালিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তেল আবিব শহরের উত্তরে সিজারিয়া এলাকায় ওই বাসভবনে আঘাত হানে লেবানন থেকে উড়ে আসা একটি ড্রোন।

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতের শুরু গত বছর। ওই বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় নির্বিচার ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। তখন থেকেই হামাসের সমর্থনে ইসরায়েলে হামলা চালাচ্ছিল হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলও পাল্টা জবাব দিচ্ছিল। তবে সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে হামলা জোরদার করে ইসরায়েল।

এএফপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত লেবাননে ইসরায়েলের হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ১ হাজার ৪১৮ জন নিহত হয়েছেন। তবে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা এর অনেক বেশি।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরের বেশি সময়ে ইসরায়েলের হামলায় সেখানে নিহত হয়েছেন অন্তত ৪২ হাজার ৫১৯ জন। আর আহত হয়েছেন অন্তত ৯৯ হাজার ৬৩৭ জন।

গত এক বছরের সংঘাতে গাজায় ১৪ হাজার ১০০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। সংস্থাটির মুখপাত্র জেমস এলডার বলেছেন, অবরুদ্ধ গাজার ১০ লাখ শিশুর জন্য উপত্যকাটি এখন ‘পৃথিবীর বুকে নরকে’ পরিণত হয়েছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০২:৫৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪
২৪
Translate »

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এক রাতে নিহত ৭৩

আপডেট : ০২:৫৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪

গাজার উত্তরে বেত লাহিয়া শহরে এর আগেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ছবিটি জুন মাসেরছবি: রয়টার্স

গাজার উত্তরে বেত লাহিয়া শহরে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৭৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত সরকার এ তথ্য জানিয়েছে।

গাজায় শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হামলায় অনেকে আহত হয়েছেন। অনেকে ধ্বংসাবশেষের নিচে এখনো আটকে আছেন।

ইসরায়েল বলেছে, তারা হতাহতের সংখ্যা খতিয়ে দেখছে। তবে হামাস সরকার হতাহতের যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, তা ‘অতিরঞ্জিত’ বলে মনে করে ইসরায়েল। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর কাছে থাকা তথ্যের সঙ্গে এই পরিসংখ্যান মেলে না বলেও জানিয়েছে দেশটি। গাজায় ইন্দোনেশীয় একটি হাসপাতালে ইসরায়েলি সেনাদের প্রচণ্ড গোলাগুলির খবরের পরেই এই হামলার ঘটনা ঘটল।

গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, বেত লাহিয়াতে যোগাযোগব্যবস্থা ও ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হওয়ায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

হামাস নিয়ন্ত্রিত সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, জনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় এই বোমা হামলার ঘটনা ঘটছে। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থাও হামলায় ৭৩ জন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে। তবে বিবিসি হতাহতের সংখ্যা যাচাই করতে পারেনি।

ফিলিস্তিনের সংবাদ সংস্থা ওয়াফা বলছে, হামলায় আবাসিক একটি এলাকা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। ইসরায়েলের  প্রতিরক্ষা বাহিনী বিবিসিকে বলেছে, তারা হামাসের সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। বেসামরিক লোকদের সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে সব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।  

গত শুক্রবার রাতে ইসরায়েলি বাহিনী ঘনবসতিপূর্ণ জাবালিয়ায় বোমা হামলা চালায়। সেখানে শরণার্থীশিবিরও রয়েছে। হামলায় কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত হন।

এদিকে শনিবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতে কমপক্ষে ১২টি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই হামলার ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। হামলায় সেখানে কমপক্ষে একটি বহুতল ভবন পুরোপুরি ধসে গেছে। লেবাননের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হিজবুল্লাহও ইসরায়েলের উত্তরে রকেট হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

শনিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনে ড্রোন হামলা চালিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তেল আবিব শহরের উত্তরে সিজারিয়া এলাকায় ওই বাসভবনে আঘাত হানে লেবানন থেকে উড়ে আসা একটি ড্রোন।

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতের শুরু গত বছর। ওই বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় নির্বিচার ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। তখন থেকেই হামাসের সমর্থনে ইসরায়েলে হামলা চালাচ্ছিল হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলও পাল্টা জবাব দিচ্ছিল। তবে সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে হামলা জোরদার করে ইসরায়েল।

এএফপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত লেবাননে ইসরায়েলের হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ১ হাজার ৪১৮ জন নিহত হয়েছেন। তবে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা এর অনেক বেশি।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরের বেশি সময়ে ইসরায়েলের হামলায় সেখানে নিহত হয়েছেন অন্তত ৪২ হাজার ৫১৯ জন। আর আহত হয়েছেন অন্তত ৯৯ হাজার ৬৩৭ জন।

গত এক বছরের সংঘাতে গাজায় ১৪ হাজার ১০০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। সংস্থাটির মুখপাত্র জেমস এলডার বলেছেন, অবরুদ্ধ গাজার ১০ লাখ শিশুর জন্য উপত্যকাটি এখন ‘পৃথিবীর বুকে নরকে’ পরিণত হয়েছে।