London ০১:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গণত্রাণের ১০ কোটি টাকা ব্যাংকে আছে, তার ৮ কোটি যাচ্ছে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বন্যার্তদের জন্য গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচিতে ত্রাণ কার্যক্রমের হিসাবসংক্রান্ত নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। মঙ্গলবার টিএসসিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) বন্যার্তদের জন্য গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচিতে ত্রাণ কার্যক্রমের হিসাবসংক্রান্ত নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গণত্রাণের ৯ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ২১৩ টাকা দুটি ব্যাংক হিসাবে সংরক্ষিত আছে। এর মধ্যে ৮ কোটি টাকা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে জমা দেওয়া হবে। বাকি ১ কোটি ৯১ লাখ টাকা দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যাকবলিত জেলাগুলোর মানুষের জন্য খরচ করা হবে।

মঙ্গলবার রাতে টিএসসি মিলনায়তনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ত্রাণ কার্যক্রমের হিসাবসংক্রান্ত নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশসহ উত্তরবঙ্গে ত্রাণ কার্যক্রম এবং সার্বিক পুনর্বাসনপ্রক্রিয়া নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রমে কোনো ধরনের অস্বচ্ছতা পাওয়া যায়নি বলে জানান চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী ও অডিটর গোলাম ফজলুল কবির।

সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা বলেন, মোট ১১ কোটি ৬৯ লাখ ৮৪ হাজার ৪২০ টাকার তহবিল সংগ্রহ হয়েছিল। এর মধ্যে ৯ কোটি ৮৫ লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ টাকা নগদ এবং বাকি টাকা মোবাইল ব্যাংকিং, প্রাইজ বন্ড, ডলার ও অন্যান্য মাধ্যমে আসে। এর মধ্যে মোট খরচ হয়েছে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৩৩ হাজার ২০৭ টাকা। বর্তমানে ব্যাংকের দুটি অ্যাকাউন্টে ৯ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ২১৩ টাকা রয়েছে।

ফজলুল কবির বলেন, ‘তাঁরা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) জরুরি ভিত্তিতে ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা নিয়েছিলেন। তবে আমরা বলেছি, এগুলো ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে থাকা উচিত নয়। এতে আইনগতভাবে এর মালিকানা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাতে থাকে না। তাঁরা আমাদের কথা শুনেছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জাতীয় বন্যা পুনর্বাসন কেন্দ্রের সদস্য লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমরা এই টাকাটা দুইভাবে খরচ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ৮ কোটি টাকা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গের বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে আমাদের ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সোমবার রাতে আমাদের পাঁচটি টিম সেখানে গেছে। সেখানে জেলা প্রশাসন ও ছাত্র প্রতিনিধিদের মাধ্যমে আমরা আমাদের ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করব। আগামীকাল থেকেই সেটি শুরু হবে।’

তহবিলে টাকা বেড়ে যাওয়ার কারণ

ত্রাণ কার্যক্রম স্থগিত করে গত ৪ সেপ্টেম্বর একটি আর্থিক হিসাব দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেখানে ১১ কোটি ১০ লাখ ১৩ হাজার ৫৬৯ টাকা আয় এবং ১ কোটি ৭৫ লাখ ১২ হাজার ৭৯৪ টাকার হিসাব দেওয়া হয়। সেই হিসাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাছে অবশিষ্ট ছিল ৯ কোটি ৩৫ লাখ ৭৭৫ টাকা। কিন্তু নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, অবশিষ্ট রয়েছে ৯ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ২১৩ টাকা।

অবশিষ্ট টাকার এই অমিলের বিষয়ে জানতে চাইলে সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের আগের হিসাব ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এরপরও আমাদের কাছে বিভিন্নভাবে অর্থ এসেছে, যেগুলো অডিটে যোগ হয়েছে। এ ছাড়া অনেকগুলো চেক এসেছিল, যেগুলো আমরা তখন ক্যাশ করাতে পারিনি। সেগুলো ক্যাশ করার পর এখানে যুক্ত করা হয়েছে। অনেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে চেক দিয়েছেন। কিন্তু তখনো এই নামে আমাদের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল না।’

হাসনাত বলেন, ‘ত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচিতে অনেকে গয়না দিয়েছেন, যেগুলো আমরা বিক্রি করে টাকা পেয়েছি। টিএসসিতে ত্রাণ কার্যক্রমের পর থেকে যাওয়া কার্টুন এবং অন্যান্য সামগ্রী বিক্রির টাকা যোগ হয়েছে। এ ছাড়া এক বস্তার মতো কয়েন ছিল, যেখানে ২ লাখ টাকার বেশি হয়েছে। এগুলো আগে গণনা করা যায়নি। এসব কারণে অবশিষ্ট টাকার পরিমাণ বেড়ে গেছে। একজন ব্যক্তি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে ৩০ লাখ টাকার একটি চেক দিয়েছিলেন, কিন্তু অ্যাকাউন্ট না থাকায় তখন আমরা সেটি তুলতে পারিনি।’

সংবাদ সম্মেলনে আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা চাইলে শুরুতেই একটি অডিট রিপোর্ট করে দিতে পারতাম। কিন্তু তাতে স্বচ্ছতা নিরূপণ করা যেত না। আমরা কার্যক্রম শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই অডিট ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা সময় নিয়ে কাজটি করে আজ প্রতিবেদন দিয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার, আবদুল কাদের, মাহিন সরকার, হাসিব আল ইসলাম প্রমুখ।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৩:১৬:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০২৪
৪৬
Translate »

গণত্রাণের ১০ কোটি টাকা ব্যাংকে আছে, তার ৮ কোটি যাচ্ছে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

আপডেট : ০৩:১৬:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০২৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বন্যার্তদের জন্য গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচিতে ত্রাণ কার্যক্রমের হিসাবসংক্রান্ত নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। মঙ্গলবার টিএসসিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) বন্যার্তদের জন্য গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচিতে ত্রাণ কার্যক্রমের হিসাবসংক্রান্ত নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গণত্রাণের ৯ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ২১৩ টাকা দুটি ব্যাংক হিসাবে সংরক্ষিত আছে। এর মধ্যে ৮ কোটি টাকা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে জমা দেওয়া হবে। বাকি ১ কোটি ৯১ লাখ টাকা দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যাকবলিত জেলাগুলোর মানুষের জন্য খরচ করা হবে।

মঙ্গলবার রাতে টিএসসি মিলনায়তনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ত্রাণ কার্যক্রমের হিসাবসংক্রান্ত নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশসহ উত্তরবঙ্গে ত্রাণ কার্যক্রম এবং সার্বিক পুনর্বাসনপ্রক্রিয়া নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রমে কোনো ধরনের অস্বচ্ছতা পাওয়া যায়নি বলে জানান চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী ও অডিটর গোলাম ফজলুল কবির।

সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা বলেন, মোট ১১ কোটি ৬৯ লাখ ৮৪ হাজার ৪২০ টাকার তহবিল সংগ্রহ হয়েছিল। এর মধ্যে ৯ কোটি ৮৫ লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ টাকা নগদ এবং বাকি টাকা মোবাইল ব্যাংকিং, প্রাইজ বন্ড, ডলার ও অন্যান্য মাধ্যমে আসে। এর মধ্যে মোট খরচ হয়েছে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৩৩ হাজার ২০৭ টাকা। বর্তমানে ব্যাংকের দুটি অ্যাকাউন্টে ৯ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ২১৩ টাকা রয়েছে।

ফজলুল কবির বলেন, ‘তাঁরা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) জরুরি ভিত্তিতে ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা নিয়েছিলেন। তবে আমরা বলেছি, এগুলো ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে থাকা উচিত নয়। এতে আইনগতভাবে এর মালিকানা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাতে থাকে না। তাঁরা আমাদের কথা শুনেছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জাতীয় বন্যা পুনর্বাসন কেন্দ্রের সদস্য লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমরা এই টাকাটা দুইভাবে খরচ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ৮ কোটি টাকা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গের বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে আমাদের ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সোমবার রাতে আমাদের পাঁচটি টিম সেখানে গেছে। সেখানে জেলা প্রশাসন ও ছাত্র প্রতিনিধিদের মাধ্যমে আমরা আমাদের ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করব। আগামীকাল থেকেই সেটি শুরু হবে।’

তহবিলে টাকা বেড়ে যাওয়ার কারণ

ত্রাণ কার্যক্রম স্থগিত করে গত ৪ সেপ্টেম্বর একটি আর্থিক হিসাব দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেখানে ১১ কোটি ১০ লাখ ১৩ হাজার ৫৬৯ টাকা আয় এবং ১ কোটি ৭৫ লাখ ১২ হাজার ৭৯৪ টাকার হিসাব দেওয়া হয়। সেই হিসাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাছে অবশিষ্ট ছিল ৯ কোটি ৩৫ লাখ ৭৭৫ টাকা। কিন্তু নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, অবশিষ্ট রয়েছে ৯ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ২১৩ টাকা।

অবশিষ্ট টাকার এই অমিলের বিষয়ে জানতে চাইলে সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের আগের হিসাব ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এরপরও আমাদের কাছে বিভিন্নভাবে অর্থ এসেছে, যেগুলো অডিটে যোগ হয়েছে। এ ছাড়া অনেকগুলো চেক এসেছিল, যেগুলো আমরা তখন ক্যাশ করাতে পারিনি। সেগুলো ক্যাশ করার পর এখানে যুক্ত করা হয়েছে। অনেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে চেক দিয়েছেন। কিন্তু তখনো এই নামে আমাদের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল না।’

হাসনাত বলেন, ‘ত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচিতে অনেকে গয়না দিয়েছেন, যেগুলো আমরা বিক্রি করে টাকা পেয়েছি। টিএসসিতে ত্রাণ কার্যক্রমের পর থেকে যাওয়া কার্টুন এবং অন্যান্য সামগ্রী বিক্রির টাকা যোগ হয়েছে। এ ছাড়া এক বস্তার মতো কয়েন ছিল, যেখানে ২ লাখ টাকার বেশি হয়েছে। এগুলো আগে গণনা করা যায়নি। এসব কারণে অবশিষ্ট টাকার পরিমাণ বেড়ে গেছে। একজন ব্যক্তি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে ৩০ লাখ টাকার একটি চেক দিয়েছিলেন, কিন্তু অ্যাকাউন্ট না থাকায় তখন আমরা সেটি তুলতে পারিনি।’

সংবাদ সম্মেলনে আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা চাইলে শুরুতেই একটি অডিট রিপোর্ট করে দিতে পারতাম। কিন্তু তাতে স্বচ্ছতা নিরূপণ করা যেত না। আমরা কার্যক্রম শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই অডিট ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা সময় নিয়ে কাজটি করে আজ প্রতিবেদন দিয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার, আবদুল কাদের, মাহিন সরকার, হাসিব আল ইসলাম প্রমুখ।