কোরামস ফিল্ডস মুখরিত ছিল সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও উৎসবমুখর পরিবেশে
ক্যামডেনে অনুষ্ঠিত হলো ৩৩তম ‘ক্যামডেন মেলা’

রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫ — ঐতিহাসিক কোরামস ফিল্ডস-এ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল লন্ডনের অন্যতম বৃহৎ বার্ষিক উৎসব ৩৩তম ক্যামডেন মেলা। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রায় সাত হাজার দর্শনার্থী এই বর্ণাঢ্য মেলায় অংশ নেন। দিনব্যাপী এ উৎসব হয়ে উঠেছিল এক সাংস্কৃতিক মিলনমেলা, যেখানে সম্প্রীতি, বৈচিত্র্য ও আনন্দ একত্রে মিলেমিশে যায়।
মেলার মূল আয়োজক ছিল ক্যামডেন মেলা কমিটি। কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন সভাপতি কাউন্সিলর নাসিম আলী ওবিই, সহ-সভাপতি মারিয়াম হাসান, এবং সদস্য সুহেল ইসলাম (বাংলার সুর), সোফিনা রাজ্জাক (কিংস ক্রস ব্রান্সউইক), ও সৈয়দ রফিকুল ইসলাম সুহেল। মেলায় অংশ নেয় ব্রিটিশ মিউজিয়াম, ব্রিটিশ লাইব্রেরি এবং ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউট-এর প্রতিনিধিরাও।
উৎসবে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্যামডেন বরো-র মেয়র কাউন্সিলর এডি হ্যানসন, হারিঙ্গে বরো-র মেয়র কাউন্সিলর আহমেদ মাহবুব, এবং হাউনসলোর ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলর মুজিবুর রহমান জুনু। আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
স্থানীয় সংসদ সদস্যরাও মেলায় অংশগ্রহণ করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার এমপি, যিনি ক্যামডেন এলাকা থেকে নির্বাচিত এমপি, ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তিনি কমিটির সভাপতি নাসিম আলী ওবিই-কে শুভেচ্ছা জানিয়ে ক্যামডেন মেলা কমিটিকে সফল আয়োজনের জন্য অভিনন্দন জানান।
মেলার প্রধান মঞ্চে ছিল নানা দেশের ৪৫টি সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনা। এতে ছিল চীনা ঐতিহ্যবাহী নৃত্য, ইকুয়েডরের লোকনৃত্য, তাল তরঙ্গ-এর ছন্দবদ্ধ পরিবেশনা, বাংলা গান নিয়ে রিজেন্টস পার্ক সিঙ্গারস-এর উপস্থাপনা এবং অ্যাবসোলিউট বলিউড-এর চমকপ্রদ পারফর্মেন্স।
মেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, যেখানে রিকশায় চড়ে অতিথি, শিল্পী এবং শতাধিক দর্শনার্থী অংশ নেন। এই শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেয় অ্যাবসোলিউট বলিউড গ্রুপ।
বিকেলে মঞ্চ মাতিয়ে তোলেন বাংলাদেশি জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বনি তালুকদার। তার সঙ্গে পারফর্ম করেন ওয়াহিদ, রানা, শতাব্দী ও রোজি সরকার। পুরো অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন সাজেদা কামাল শেফালি।
মেলায় প্রায় ৯০টি স্টল বসে, যেখানে বিক্রি হয় দেশি-বিদেশি খাবার, পোশাক, গয়না, খেলনা এবং বিভিন্ন তথ্যসেবা। এক স্টল হোল্ডার বলেন, “আমরা একদিনেই প্রায় চার হাজার পাউন্ডের বিক্রি করেছি — এটা আমাদের বছরের সবচেয়ে লাভজনক দিন!”
সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, সম্প্রীতি ও সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে সমৃদ্ধ এই মেলা এখন শুধু একটি উৎসব নয়, বরং লন্ডনের বহুসাংস্কৃতিক পরিচয়ের এক গর্বিত প্রতীক।