London ০৩:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
মহাসড়ক বন্ধ করে কৃষকদল নেতা খন্দকার নাসিরের সমাবেশ- যান চলাচল বন্ধ; ভোগান্তি চরমে। পাবিপ্রবিতে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালন ও পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত রাজশাহীতে গাছে গাছে মুকুলের সমারোহ, স্বপ্ন দেখছেন আমচাষীরা সিরিয়া থেকে সব সেনা সরিয়ে নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র ভাঙা হলো বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, বুলডোজার ছাড়াই গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে : হাসনাত আব্দুল্লাহ রূপগঞ্জে কিশোর গ্যাংয়ের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ২ ১২২ বস্তা সার পাচারের অভিযোগে বিএনপি-যুবদলের ৫ নেতাকে বহিষ্কার শেখ হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনতেই হবে,তারেক রহমান নেত্রকোণার দুর্গাপুরে সুসং সরকারি মহাবিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের নতুন কমিটি গঠিত

কিশোরীদের আবার বিনা মূল্যে এইচপিভি টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে

জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্তের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম

জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে কিশোরীদের এ বছরও এক ডোজ হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে। ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকা বাদে সাতটি বিভাগে স্কুল ও স্কুলের বাইরে বিনা মূল্যে এ টিকা দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) পরিচালিত এ কার্যক্রম চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত।

গত বছর প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে বিনা মূল্যে এইচপিভি টিকা দেওয়া শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে শুধু ঢাকা বিভাগে এ কার্যক্রম চলেছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (ইপিআই অ্যান্ড সার্ভিল্যান্স) মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন জানান, গত বছরের মতো এ বছরও স্কুলের পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রী এবং স্কুলের বাইরে থাকা ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীরা এ কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হবে।

আগামী বছর থেকে সরকারিভাবে এ টিকা দেওয়া নিয়মিত কার্যক্রমের আওতায় পড়বে। অর্থাৎ স্কুলের ক্ষেত্রে শুধু পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীরা এ টিকা পাবে। আর স্কুলের বাইরে থাকা সুবিধাবঞ্চিত কিশোরী বা স্কুল থেকে ঝরে পড়া কিশোরীদের মধ্যে ১০ বছর বয়সীরা পাবে এ টিকা।

দেশে প্রতিবছর জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত প্রায় ৫ হাজার নারী মারা যান। আর প্রতিবছর লাখে ১১ জন নারী এ ক্যানসারে আক্রান্ত হন। দেশে নারীরা যত ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হচ্ছে জরায়ুমুখ ক্যানসার।

টিকা কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. আনোয়ার হোসেন আকন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ২৪ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচপিভি টিকা কার্যক্রমে মাঠপর্যায়ে সহায়তা করতে ১৬টি মন্ত্রণালয়কে গতকাল বুধবার ডিও লেটার (আধা সরকারি পত্র) পাঠানো হয়েছে। ঢাকা ছাড়া সাতটি বিভাগের ৫১টি জেলায় এ কার্যক্রম চলবে। এই কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতিটি কমিটিতে দুজন করে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।

ইপিআইয়ের তথ্য অনুসারে, গত বছর প্রথম পর্যায়ে ঢাকা বিভাগে ১৫ অক্টোবর থেকে আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ১৫ লাখ ৮ হাজার ১৮৩ জনকে এইচপিভি টিকা দেওয়া হয়। অর্জন হয় ৭৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা। দ্বিতীয় পর্যায়ে ঢাকাকে এ কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এবার বাকি সাত বিভাগে মোট ৬২ লাখ ১২ হাজার ৫৫৯ কিশোরীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। এর মধ্যে স্কুলের বাইরে থাকা ১ লাখ ৮৬ হাজার ৬৭৬ কিশোরীকে টিকা দেওয়া হবে।

টিকা নেওয়ার জন্য https://vaxepi.gov.bd/registration ওয়েবসাইটে গিয়ে ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। তবে যাদের অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ নেই, তাদেরও বিশেষভাবে তালিকাভুক্ত করে টিকা দেওয়া হবে।

এ বছর অন্তত ৯৫ শতাংশ কিশোরীকে এইচপিভি টিকার আওতাভুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। লক্ষ্য পূরণে এবার কওমি মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলো থেকে সহায়তা পাওয়ার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

-মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (ইপিআই অ্যান্ড সার্ভিল্যান্স)

মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন জানান, দেশে প্রতিবছর জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত প্রায় ৫ হাজার নারী মারা যান। আর প্রতিবছর লাখে ১১ জন নারী এ ক্যানসারে আক্রান্ত হন। দেশে নারীরা যত ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হচ্ছে জরায়ুমুখ ক্যানসার। তিনি আরও জানান, এ বছর অন্তত ৯৫ শতাংশ কিশোরীকে টিকার আওতাভুক্ত করার লক্ষ্য রয়েছে। লক্ষ্য পূরণে এবার কওমি মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলো থেকে সহায়তা পাওয়ার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে সরকারিভাবে গাজীপুরে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে ৩০ হাজারের মতো ১০ বছর বয়সী মেয়েশিশুকে এইচপিভি টিকা দেওয়া হয়েছিল। ছয় মাসের মধ্যে দুই ডোজ টিকা দেওয়ার মাধ্যমে পাইলট প্রকল্পটি শেষ হয়ে গেলেও এইচপিভি টিকা কর্মসূচি আর এগিয়ে নেওয়া হয়নি। দীর্ঘদিন পর ২০২১ সালের ১২ মার্চ গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস (গ্যাভি) বাংলাদেশকে এইচপিভি টিকার অনুমোদন দেয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) হালনাগাদ সুপারিশে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে এক ডোজ টিকাই কার্যকর বলে জানানো হয়েছে। এ ক্যানসার প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের ৯০ শতাংশকে টিকা, ৩৫ ও ৪৫ বছর বয়সে অন্তত দুবার স্ক্রিনিং বা পরীক্ষা এবং ৯০ শতাংশকে চিকিৎসার আওতায় আনার লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছে।

আগামী বছর থেকে সরকারিভাবে এ টিকা স্কুলের ক্ষেত্রে শুধু পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীরা পাবে। আর স্কুলের বাইরে থাকা সুবিধাবঞ্চিত কিশোরী বা স্কুল থেকে ঝরে পড়া কিশোরীদের মধ্যে ১০ বছর বয়সীরা পাবে এ টিকা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যানসার গবেষণাবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইএআরসির সবশেষ ২০২০ সালের গ্লোবোক্যান প্রতিবেদন অনুসারে, জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্তের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। দেশে বছরে নতুন করে জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হন ৮ হাজার ২৬৮ জন ও মারা যান ৪ হাজার ৯৭১ জন।

চিকিৎসকদের মতে, অল্প বয়সে বিয়ে, বেশি সন্তান জন্ম দেওয়া, ঘন ঘন গর্ভধারণ, একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ানো স্বামীদের কারণেও জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণের মধ্যে রয়েছে, ঘন সাদা স্রাব, অতিরিক্ত রক্তস্রাব ও অনিয়মিত রক্তস্রাব।

কিশোরীদের টিকা দিলে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধ হতে পারে। তবে সম্পূর্ণ ঝুঁকি এড়াতে ওই কিশোরীদের ৩০ বছরের বেশি বয়স হলে অবশ্যই ভায়া পরীক্ষা করা উচিত। ভায়া পরীক্ষার মাধ্যমে একজন নারীর জরায়ুমুখ ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে কি না, তা ১০ বছর আগে শনাক্ত করা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে দ্রুত চিকিৎসায় জরায়ুমুখ ক্যানসার থেকে সুস্থ হওয়া সম্ভব।

স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যায় বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসকদের সংগঠন অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম বলেন, ‘জরায়ুমুখ ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের ভোগান্তি ভয়াবহ। এইচপিভি টিকা নিরাপদ এবং এ টিকার মাধ্যমে ভবিষ্যতে জরায়ুমুখ ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে বলে প্রমাণিত। তাই ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী বা এর বেশি বয়সী কিশোরীদের এ টিকা দেওয়ার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন।’ বিবাহিত কিশোরীরাও যে এইচপিভি নিতে পারবে, সে সম্পর্কেও সচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৫:১০:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪
২৪
Translate »

কিশোরীদের আবার বিনা মূল্যে এইচপিভি টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে

আপডেট : ০৫:১০:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্তের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম

জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে কিশোরীদের এ বছরও এক ডোজ হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে। ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকা বাদে সাতটি বিভাগে স্কুল ও স্কুলের বাইরে বিনা মূল্যে এ টিকা দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) পরিচালিত এ কার্যক্রম চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত।

গত বছর প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে বিনা মূল্যে এইচপিভি টিকা দেওয়া শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে শুধু ঢাকা বিভাগে এ কার্যক্রম চলেছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (ইপিআই অ্যান্ড সার্ভিল্যান্স) মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন জানান, গত বছরের মতো এ বছরও স্কুলের পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রী এবং স্কুলের বাইরে থাকা ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীরা এ কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হবে।

আগামী বছর থেকে সরকারিভাবে এ টিকা দেওয়া নিয়মিত কার্যক্রমের আওতায় পড়বে। অর্থাৎ স্কুলের ক্ষেত্রে শুধু পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীরা এ টিকা পাবে। আর স্কুলের বাইরে থাকা সুবিধাবঞ্চিত কিশোরী বা স্কুল থেকে ঝরে পড়া কিশোরীদের মধ্যে ১০ বছর বয়সীরা পাবে এ টিকা।

দেশে প্রতিবছর জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত প্রায় ৫ হাজার নারী মারা যান। আর প্রতিবছর লাখে ১১ জন নারী এ ক্যানসারে আক্রান্ত হন। দেশে নারীরা যত ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হচ্ছে জরায়ুমুখ ক্যানসার।

টিকা কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. আনোয়ার হোসেন আকন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ২৪ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচপিভি টিকা কার্যক্রমে মাঠপর্যায়ে সহায়তা করতে ১৬টি মন্ত্রণালয়কে গতকাল বুধবার ডিও লেটার (আধা সরকারি পত্র) পাঠানো হয়েছে। ঢাকা ছাড়া সাতটি বিভাগের ৫১টি জেলায় এ কার্যক্রম চলবে। এই কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতিটি কমিটিতে দুজন করে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।

ইপিআইয়ের তথ্য অনুসারে, গত বছর প্রথম পর্যায়ে ঢাকা বিভাগে ১৫ অক্টোবর থেকে আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ১৫ লাখ ৮ হাজার ১৮৩ জনকে এইচপিভি টিকা দেওয়া হয়। অর্জন হয় ৭৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা। দ্বিতীয় পর্যায়ে ঢাকাকে এ কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এবার বাকি সাত বিভাগে মোট ৬২ লাখ ১২ হাজার ৫৫৯ কিশোরীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। এর মধ্যে স্কুলের বাইরে থাকা ১ লাখ ৮৬ হাজার ৬৭৬ কিশোরীকে টিকা দেওয়া হবে।

টিকা নেওয়ার জন্য https://vaxepi.gov.bd/registration ওয়েবসাইটে গিয়ে ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। তবে যাদের অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ নেই, তাদেরও বিশেষভাবে তালিকাভুক্ত করে টিকা দেওয়া হবে।

এ বছর অন্তত ৯৫ শতাংশ কিশোরীকে এইচপিভি টিকার আওতাভুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। লক্ষ্য পূরণে এবার কওমি মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলো থেকে সহায়তা পাওয়ার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

-মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (ইপিআই অ্যান্ড সার্ভিল্যান্স)

মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন জানান, দেশে প্রতিবছর জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত প্রায় ৫ হাজার নারী মারা যান। আর প্রতিবছর লাখে ১১ জন নারী এ ক্যানসারে আক্রান্ত হন। দেশে নারীরা যত ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হচ্ছে জরায়ুমুখ ক্যানসার। তিনি আরও জানান, এ বছর অন্তত ৯৫ শতাংশ কিশোরীকে টিকার আওতাভুক্ত করার লক্ষ্য রয়েছে। লক্ষ্য পূরণে এবার কওমি মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলো থেকে সহায়তা পাওয়ার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে সরকারিভাবে গাজীপুরে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে ৩০ হাজারের মতো ১০ বছর বয়সী মেয়েশিশুকে এইচপিভি টিকা দেওয়া হয়েছিল। ছয় মাসের মধ্যে দুই ডোজ টিকা দেওয়ার মাধ্যমে পাইলট প্রকল্পটি শেষ হয়ে গেলেও এইচপিভি টিকা কর্মসূচি আর এগিয়ে নেওয়া হয়নি। দীর্ঘদিন পর ২০২১ সালের ১২ মার্চ গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস (গ্যাভি) বাংলাদেশকে এইচপিভি টিকার অনুমোদন দেয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) হালনাগাদ সুপারিশে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে এক ডোজ টিকাই কার্যকর বলে জানানো হয়েছে। এ ক্যানসার প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের ৯০ শতাংশকে টিকা, ৩৫ ও ৪৫ বছর বয়সে অন্তত দুবার স্ক্রিনিং বা পরীক্ষা এবং ৯০ শতাংশকে চিকিৎসার আওতায় আনার লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছে।

আগামী বছর থেকে সরকারিভাবে এ টিকা স্কুলের ক্ষেত্রে শুধু পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীরা পাবে। আর স্কুলের বাইরে থাকা সুবিধাবঞ্চিত কিশোরী বা স্কুল থেকে ঝরে পড়া কিশোরীদের মধ্যে ১০ বছর বয়সীরা পাবে এ টিকা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যানসার গবেষণাবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইএআরসির সবশেষ ২০২০ সালের গ্লোবোক্যান প্রতিবেদন অনুসারে, জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্তের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। দেশে বছরে নতুন করে জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হন ৮ হাজার ২৬৮ জন ও মারা যান ৪ হাজার ৯৭১ জন।

চিকিৎসকদের মতে, অল্প বয়সে বিয়ে, বেশি সন্তান জন্ম দেওয়া, ঘন ঘন গর্ভধারণ, একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ানো স্বামীদের কারণেও জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণের মধ্যে রয়েছে, ঘন সাদা স্রাব, অতিরিক্ত রক্তস্রাব ও অনিয়মিত রক্তস্রাব।

কিশোরীদের টিকা দিলে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধ হতে পারে। তবে সম্পূর্ণ ঝুঁকি এড়াতে ওই কিশোরীদের ৩০ বছরের বেশি বয়স হলে অবশ্যই ভায়া পরীক্ষা করা উচিত। ভায়া পরীক্ষার মাধ্যমে একজন নারীর জরায়ুমুখ ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে কি না, তা ১০ বছর আগে শনাক্ত করা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে দ্রুত চিকিৎসায় জরায়ুমুখ ক্যানসার থেকে সুস্থ হওয়া সম্ভব।

স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যায় বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসকদের সংগঠন অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম বলেন, ‘জরায়ুমুখ ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের ভোগান্তি ভয়াবহ। এইচপিভি টিকা নিরাপদ এবং এ টিকার মাধ্যমে ভবিষ্যতে জরায়ুমুখ ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে বলে প্রমাণিত। তাই ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী বা এর বেশি বয়সী কিশোরীদের এ টিকা দেওয়ার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন।’ বিবাহিত কিশোরীরাও যে এইচপিভি নিতে পারবে, সে সম্পর্কেও সচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।