রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীকে অবসরের পরে রাজনীতিতে সক্রিয় করতে চেয়েছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ। কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনের সাবেক এমপি ও রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের বিরোধী একটি অংশও তাঁকে রাজনীতিতে আনতে ছিল তৎপর।
তবে তিনি এলাকার রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন না। রাজনৈতিক কোনো পদে না থাকলেও সামাজিক কিংবা প্রশাসনের অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নিলে সেখানে ব্যাপক লোকসমাগম হতো। এতে মুজিবুল হকের সঙ্গে তাঁর টানাপোড়েন চলছিল। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের পদ থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। চলতি বছরের সংসদ নির্বাচনের পর তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা করা হয়। গত ৫ আগস্ট সরকার পতন পর্যন্ত তিনি এ পদে ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৬৭ বছর বয়স্ক ড. কামাল চৌধুরী অবসর গ্রহণের পর জেলার চৌদ্দগ্রাম আসনের সাবেক এমপি মুজিবুল বিরোধীরা তাঁকে রাজনীতিতে আনতে সক্রিয় হন। এ সময় সাবেক এমপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র মিজানুর রহমান, যুবলীগ নেতা শাহজালাল মজুমদার চেয়ারম্যানসহ দলীয় নেতাকর্মীর একটি অংশের চরম বিরোধ চলছিল। কিন্তু পরে কামাল চৌধুরী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি বাস্তবায়নের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ায় ওই প্রক্রিয়া থমকে যায়। সরকারের দায়িত্ব থাকার সময়ে এলাকায় সামাজিক কিছু অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
এদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন হওয়ায় চলতি বছরের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক এই মুখ্য সচিব নৌকার মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন এমন গুঞ্জনও ছিল সর্বত্র। মুজিবুলবিরোধী একাধিক নেতা কামাল চৌধুরীকে মাঠে নামানোর চেষ্টা করেন। তবে ওই নির্বাচনেও ৭৭ বছর বয়সী মুজিবুল হক পঞ্চম বারের মতো মনোনয়ন পেয়ে বিজয় লাভ করেন।
জাতীয় নির্বাচনের পর কামাল চৌধুরীকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা করা হয়। গত ১৪ মার্চ চৌদ্দগ্রাম প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রিতিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। পরে এলাকায় বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এসব অনুষ্ঠানে মুজিবুল হকবিরোধী নেতাকর্মীরা সমবেত হতেন। তাই এসব অনুষ্ঠানে শোডাউনকে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে সংসদ নির্বাচনে কামাল চৌধুরীর অংশগ্রহণের কৌশল বলে দাবি করতেন। মুজিবুল হকের পর এ আসনে তিনিই নৌকার হাল ধরতে পারেন এমন আলোচনাও ছিল।
স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জানে আলম বলেন, কামাল চৌধুরীর পরিবারের ঐতিহ্য আছে। পরিবারের সবাই ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত। এলাকায় খুব কম আসতেন। এলাকার কোনো লোকের কাজে তদবিরও করতেন না। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রহমত উল্লাহ বাবুল বলেন, কামাল চৌধুরী দলীয় কোনো পদপদবিতে নেই এবং রাজনৈতিক কোনো অনুষ্ঠানেও অংশ নিতেন না।