বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কসবা উপজেলা শাখার আয়োজনে এক গঠনমূলক ও হৃদ্যতাপূর্ণ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে। সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে কসবার একটি সম্মেলনস্থলে অনুষ্ঠিত এ সভায় গণতন্ত্র, জনগণের মৌলিক অধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, মাদকদ্রব্য নির্মূল ও যুব সমাজের ভবিষ্যৎ গড়ার বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) সংসদীয় আসনে জামায়াত ইসলামী মনোনীত সম্ভাব্য প্রার্থী মোঃ আতাউর রহমান সরকার। সভাপতিত্ব করেন কসবা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মোঃ শিবলী নোমানীসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতা ও কর্মীবৃন্দ।
[video width="848" height="478" mp4="https://londonbdtv.co.uk/wp-content/uploads/2025/06/WhatsApp-Video-2025-06-24-at-10.34.10_d15aa58e.mp4"][/video]
এতে অংশ নেন কসবার দুই প্রধান সাংবাদিক সংগঠন— কসবা প্রেসক্লাব এবং কসবা উপজেলা সাংবাদিক ফোরাম-এর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সকল সদস্যবৃন্দ। উল্লেখযোগ্য উপস্থিতিদের মধ্যে ছিলেন কসবা প্রেসক্লাব সভাপতি আবুল খায়ের সপন, উপজেলা সাংবাদিক ফোরাম সভাপতি মোঃ সবুজ খান জয়, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আশরাফ উজ্জ্বল, দপ্তর সম্পাদক মোঃ বিল্লাল সরকার এবং কসবা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি হারুনুর রশীদ ঢালী।
উন্নয়ন ভাবনা ও রাজনৈতিক অবস্থান তুলে ধরেন আতাউর রহমান সরকার। সভায় প্রধান অতিথি আতাউর রহমান সরকার বলেন, “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সবসময় জনগণের অধিকার, ন্যায়বিচার এবং মানবিক মর্যাদার পক্ষে কাজ করেছে এবং ভবিষ্যতেও করে যাবে।” তিনি কসবা-আখাউড়ার বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে বলেন, “এ অঞ্চলে উন্নয়নের বিশাল সুযোগ রয়েছে। রাস্তাঘাট সংস্কার, গ্যাস সংযোগ, আধুনিক চিকিৎসা সেবা, যুবসমাজের কর্মসংস্থান, এবং নারী উন্নয়নে বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।”
তিনি দাবি করেন, “জামায়াত ক্ষমতায় এলে কসবা ও আখাউড়ার মূল সড়কসমূহ দ্রুত সংস্কার করা হবে, গ্যাস সংযোগের দাবি পূরণে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং স্বাস্থ্যখাতে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার অবসান ঘটানো হবে।”
সাংবাদিকদের ভূমিকাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান, আতাউর রহমান সরকার বলেন, “সাংবাদিকরা জাতির দর্পণ। তাঁদের লেখনীর মাধ্যমেই সমাজের অসঙ্গতি, অন্যায় ও দুর্নীতির চিত্র জনগণের সামনে আসে। তাই আপনারা নির্ভীক ও বস্তুনিষ্ঠ থেকে জাতির কল্যাণে কাজ করুন। মতের ভিন্নতা থাকলেও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় থাকলে সমাজে সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব।”
তিনি বলেন, “আমরা চাই না কোনো মত বা পথ অন্য মতকে অবজ্ঞা করুক। আমরা চাই ঐক্য, সহনশীলতা ও পারস্পরিক সহযোগিতা—যা একটি টেকসই সমাজ গঠনের পূর্বশর্ত।”
বিগত সরকারের আমলে জামায়াতে ইসলামী নেতাকর্মীদের ওপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। গুম, খুন, মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আমাদের দাবিকে দমন করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু আমরা ইসলামী আদর্শ ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পথ ছেড়ে কখনো বিচ্যুত হইনি।”
তিনি বলেন, “আগামী সংসদ নির্বাচনে আমাদের অংশগ্রহণ কোনো প্রতিহিংসা নয়—এটি একটি দায়িত্ব, একটি দায়বদ্ধতা। আমরা এই এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ, ন্যায়ভিত্তিক ও কল্যাণকর সমাজ প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য।”
স্থানীয় সমস্যা ও বাস্তবধর্মী সমাধানের কথা বলেন, আতাউর রহমান সরকার সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, “কসবায় হাসপাতালের অবস্থা করুণ। চিকিৎসাসেবা বলতে গেলে মুখ থুবড়ে পড়েছে। আমরা ক্ষমতায় এলে আধুনিক মানের হাসপাতাল ও বিশেষায়িত চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “মাদক সমস্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কসবা-আখাউড়ার কিছু এলাকায় মাদকের চোরাচালান ও সেবন বাড়ছে। এসব চিহ্নিত করে কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি করাও জরুরি। আমরা চাই সবাই মিলে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি।”
প্রধান অতিথি বলেন, “নারীরা সমাজের অর্ধেক শক্তি। জামায়াত ক্ষমতায় এলে নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি তরুণদের জন্য উদ্যোক্তা উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ ও সরকারি-বেসরকারি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।”
সাংবাদিকদের বিভিন্ন মতামত, প্রশ্ন ও পরামর্শ শোনার পর আতাউর রহমান সরকার তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, “আপনারা সমাজের বিবেক। সত্য বলুন, সাহসের সঙ্গে লিখুন— আমরা আপনাদের পাশে আছি।”
অনুষ্ঠান শেষে অতিথি ও সাংবাদিকরা একসাথে নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে আরো কিছু অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়।
এই মতবিনিময় সভা কসবা উপজেলায় রাজনৈতিক শালীনতা, পেশাগত সম্মান ও সামাজিক বন্ধনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রইল। এ ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতের রাজনৈতিক ও গণমাধ্যমিক সহযোগিতা ও সংহতির পথ সুগম করবে বলে সকলে আশা প্রকাশ করেন।