London ০৪:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
কয়রায় বিভিন্ন কর্মসুচির মধ্যেদিয়ে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। সমাজসেবায় অসামান্য অবদানের জন্য দুবাইতে এশিয়া আরব এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন প্রখ্যাত সমাজকর্মী মোশাররফ হোসেন চলন্তবাসে ডাকাতি-শ্লীলতাহানী: তিনদিন পর থানায় মামলা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে জামায়াতের গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টা একুশ মানে মাথানত না করার দৃঢ় প্রত্যয় শিশুদের নতুন দেশ গড়ার প্রত্যয়ে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে -নাসিম ফেরদৌস চৌধুরী নদীতে ভেসে উঠল নিখোঁজ ব্যবসায়ীর হাত-পা বাঁধা মরদেহ ভাষা আন্দোলনে সংবাদপত্র ও সম্পাদকের ভূমিকা শরীর ও মনকে রমজানের জন্য প্রস্তুত করুন এই উপায়ে হারের পর যা বললেন শান্ত

কর্মকর্তাদের অজান্তেই হয়ে যাচ্ছে এনআইডি সংশোধন!

অনলাইন ডেস্ক

নির্বাচন কমিশনের তিন আঞ্চলিক কর্মকর্তার (আরইও) ইউজার অ্যাকাউন্ট (এনআইডি সংশোধনের জন্য যে অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়) থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের আবেদন অনুমোদন হলেও জানতে পারেনি নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তা। এই তিন কর্মকর্তা শুধুমাত্র কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েই দায় সেরেছেন। এসব এনআইডি সংশোধন মোটা অংকের অর্থের বিনিময় হয়েছে বলেই জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

ইসির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, একজন কর্মকর্তার আইডি থেকে এনআইডি সংশোধনের আবেদন অনুমোদন করতে হলে প্রথমে তাকে ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে আইডিতে লগইন করার জন্য সাবমিট করতে হয়। এরপর ছয় সংখ্যার একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) চাইবে সার্ভার। যা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মোবাইল নাম্বারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসএমএস’র মাধ্যমে চলে যায়। সার্ভারে সঠিকভাবে ওটিপির নাম্বার সাবমিট করার পর আইডিতে লগইন করতে হয়। এক্ষেত্রে যদি কোনো প্রতারক চক্রের হাতে ইউজার নেম ও পাসওর্য়াড চলেও যায় তবুও তারা আইডিতে লগইন করতে পারবে না, কারণ তাদের কাছে ওটিপি যাবে না। এছাড়া আমাদের সার্ভার একটি প্রাইভেট নেটওর্য়াক দ্বারা পরিচালিত হয়। এ নেটওর্য়াকের বাইরে অন্য নেটওর্য়াক ব্যবহার করে এনআইডির সার্ভারে কেউ ঢুকতে পারবে না।

সেক্ষেত্রে তিনজন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার আইডি থেকে এনআইডি সংশোধনের আবেদন অনুমোদন দেওয়া হলো কিভাবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন— ‘ওটিপি যখন তাদের কাছে গেছে ওই সময়ই তো তারা বিষয়টি জানতে পেরেছে। এছাড়া এটাও হতে পারে, ওই নির্বাচন কার্যালয়ের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী এই কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বা কর্মকর্তা নিজে থেকে বিশ্বাস করে, কারো সঙ্গে ওটিপি শেয়ার করে থাকতে পারেন। যার ফলে এমন ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। পরবর্তীতে যখন তারা দেখছেন যে যেসব এনআইডি সংশোধন করা হয়েছে তার বেশিরভাগই আইন-বিধি না মেনে অনুমোদন করা হয়েছে। এজন্য তারা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিজে থেকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি কমিশনে জানিয়েছে এবং সংশোধনের বিষয়টি তারা জানে না বা তারা অনুমোদন করেনি বলে উল্লেখ করেছেন।’

ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনের তিন প্রশাসনিক অঞ্চল কুমিল্লা, ফরিদপুর ও সিলেটে মোট ৪৮টি এনআইডি সংশোধন হয়। যা ওই সময়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা অনুমোদন করেনি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর মধ্যে ফরিদপুরে ওই সময়ের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দুলাল তালুকদারের আইডি থেকে ৮টি, কুমিল্লায় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেনের আইডি থেকে ৬টি, সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো.আব্দুল হালিম খানের আইডি থেকে সবচেয়ে বেশি ৩৪টি এনআইডি সংশোধনের আবেদন অনুমোদন হয়, যা তারা নিজেরা করেনি বলে লিখিত দিয়েছেন।

আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দুলাল তালুকদারে লিখিত বক্তব্য থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাজবাড়ির বালিয়াডাঙ্গা উপজেলায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে উপস্থিত ছিলেন, তবে সেদিন আইডিতে কোনো লগইন করেননি। পরবর্তী সময়ে ২৮ ডিসেম্বর অফিসে কাজ করতে গিয়ে দেখেন আগেরদিন রাত ৯.৩৭ মিনিটে ৯৬৫৯০০ নম্বর ওটিপি আসে, যা দিয়ে ৫টি (২৩***০৩, ৭৩**৪৫, ৫৫**৬৮, ১০**৮৪, ৯৫**৩০) জাতীয় পরিচয়পত্র এবং সেদিন দিবাগত রাত ১২টার পরে একই ওটিপি দিয়ে অর্থাৎ ২৮-১২-২০২৩ তারিখ আরো ৩টি (৩৭**১১, ১৪***৯৫, ৭৩***৪৩) জাতীয় পরিচয়পত্রসহ মোট ৮টি জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করা হয়েছে।

এনআইডির আইটি শাখার সহকারী প্রোগ্রামার আমিনুল ইসলাম ২০২৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রশিক্ষণ উপলক্ষে ফরিদপুর গেলে তার সঙ্গে বিগত দুইদিনে ওটিপি আসা এবং সংশোধনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার পরে তিনি উল্লিখিত ৮টি জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন হয়েছে মর্মে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরগুলো প্রদান করেন। পরবর্তীতে এনআইডি নম্বর উল্লেখ করে মহাপরিচালক বরাবর পত্র প্রেরণ করেন।

দুলাল তালুকদার লিখিত বক্তব্যে সংশোধনের প্রক্রিয়া তুলে ধরে জানান, প্রতিটি আবেদন প্রথমে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর তার আইডি দিয়ে হার্ডকপির সঙ্গে অনলাইনে দাখিলকৃত সকল কাগজপত্র যাচাইয়ের পরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রিন্ট করে স্বাক্ষর দিয়ে উপস্থাপন করেন। তিনি পুনরায় যাচাইয়ান্তে হার্ড কপিতে সিদ্ধান্ত লিখে পরবর্তীতে উক্ত সিদ্ধান্তসমূহ টাইপ করে প্রত্যেক সংশোধনকারীকে ম্যাসেজ অপশনের মাধ্যমে জানিয়ে দেন এবং এভাবে সেবা প্রার্থীরা সেবা পেয়ে থাকেন। এছাড়াও তিনি যে মোবাইল ফোনে ওটিপি আসে সে মোবাইলটির ফিঙ্গার প্রিন্ট বা পাসওয়ার্ড ব্যতীত ওপেন করা যায় না। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য নির্ধারিত ল্যাপটপ অফিসের বাইরে নেন না এবং অপারেটরের স্বাক্ষর ব্যতীত কোন জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদন নিষ্পত্তি করেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক ফরিদপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও বর্তমানে কুমিল্লা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দুলাল তালুকদার বিডি২৪লাইভকে জানান, বিষয়টি আমি আমার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ঘটনার সময় আমরা এখানে ছিলাম, আপনারা তদন্ত করে সত্যিটা যাচাই করে দেখেন।

অন্যদিকে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেনের লিখিত বক্তব্যে জানা যায় যে, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর তার সিএমএস অ্যাকাউন্টে হতে ৬টি এনআইডি সংশোধন হয়েছে। যেদিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ স্পেশালাইজড প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালনের জন্য লক্ষ্মীপুর জেলায় অবস্থান করেন তিনি। ঐ সময় প্রথমবার দুপুর ১২টা ২২ মিনিটে তার মোবাইলে ওটিপি আসে এবং তিনি এনআইডি অনুবিভাগের সহকারী প্রোগ্রামার এর কাছে জানতে চান যে তিনি লগইন করার চেষ্টা করেনি কিন্তু কেন ওটিপি আসলো? দ্বিতীয়বার ৫.২০ মিনিটে ওটিপি আসে। তিনি সভা শেষ করে ৮.৪৫ মিনিটে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা দেন, এইসময়ে অন্য কোথাও থেকে সিএমএসে লগইন করার চেষ্টা করেননি। পরবর্তীতে পহেলা জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে অফিসে এসে অ্যাকাউন্ট লগইন করে জানতে পারেন ৬টি এনআইডি তার অ্যাকাউন্ট হতে অনুমোদন হয়েছে, যা তিনি নিজে করেননি।

এ বিষয়ে জানতে সাবেক কুমিলা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো.ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো.আব্দুল হালিম খানের লিখিত বক্তব্য থেকে জানা যায়, সিএমএসে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন কার্যক্রমে ব্যবহৃত ইউজার আইডি হতে প্রতারকচক্র সংশোধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে জানতে পেরে তিনি এনআইডি উইং এর সিস্টেম ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে তাৎক্ষণিক ইউজার আইডিটি বন্ধ করতে অনুরোধ করেন। সে প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বরে তারিখে এটি বন্ধ করা হয়েছে। তিনি একই বছরের ২১ ডিসেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর সময়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪ উপলক্ষ্যে ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের স্পেশালাইজড প্রশিক্ষক হিসেবে সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলায় ভ্রমণরত ছিলেন বিধায় সম্পন্নকৃত সংশোধনসমূহ তার কর্তৃক নিষ্পন্ন না হওয়ায় উপরিউক্ত সময়ের সকল সংশোধনসমূহ রোল ব্যাক করার জন্য অনুরোধ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও বর্তমান ইসির এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালকের (পরিচালনা) দায়িত্বে থাকা মো. আব্দুল হালিম খান বিডি২৪ লাইভকে জানান, এটা নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নাই।

আপনি কি দায় এড়াতে পারেন কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা কমিশন ও যারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে তারা ভালো বলতে পারবেন। এ নিয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা বলাটা ঠিক হবে না।

চক্রের কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি তদন্ত কর্মকর্তারা

জানা যায়, তিন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার আইডি থেকে যে ৪৮ জন নাগরিকের এনআইডি সংশোধন হয়েছে তাদের সকলকে শুনানিতে ডাকা হলেও কেউ উপস্থিত হয়নি। তবে ১৩ জনের পরিবারের সদস্য উপস্থিত হয় এবং সকলে একই ধরনের বক্তব্য দিয়ে জানান, আবেদনকারীগণ প্রবাসে অবস্থান করছেন। তারা প্রবাসে থেকেই জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন দাখিল করেছেন। এক্ষেত্রে আবেদনকারীগণ তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য কোন ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করেছেন কিনা সে বিষয়ে তারা কিছু জানেন না। এছাড়া তিনজন ভোটারের সঙ্গে হোয়াটঅ্যাপে যোগাযোগ করলে তারাও একই ধরনের বক্তব্য দেন। যার ফলে উপস্থিত ভোটারের আত্মীয়দের সকলের বক্তব্য একই ধরনের হওয়ার কারণে এটি যে চক্রের কাজ তা পরিষ্কার হলেও এর সঙ্গে জড়িত কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি তদন্ত কর্মকর্তারা।

সংশোধনে বিনিময় হয়েছে মোটা অংকের টাকা

বিডি২৪লাইভকে একজন ইসি কর্মকর্তা জানান, সংশোধিত এনআইডিধারী প্রত্যেকই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আছে। প্রবাসে বিশেষ সুবিধার জন্য একটি চক্রের সাথে মিলিতভাবে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এনআইডি সংশোধন করে নিয়েছে। সাক্ষাৎকার উপস্থিত ভোটারের আত্মীয়দের সকলের বক্তব্য একই ধরনের হওয়ার কারণে এটি যে চক্রের কাজ তা পরিষ্কার।

ইসি সূত্র জানায়, তিন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার আইডি থেকে যে ৪৮ জন নাগরিকের এনআইডি সংশোধন হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন ভোটারের ভাই ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে জানান, সিলেটের জিন্দাবাজারে অবস্থিত হামজার ট্রাভেলস এর স্বত্বাধিকারী মো. মশিবুর রহমান এর মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে সংশোধন করেন।

একই অপরাধে একজনের শাস্তি, দুজনকে বহাল তবিয়তে

তিন কর্মকর্তা একই ধরনের অপরাধ করলেও একজনকে শাস্তি দিয়ে বাকি দুই কর্মকর্তাকে রেখেছে বহাল তবিয়তে। জানা যায়, ওই সময়ের ফরিদপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দুলাল তালুকদার বর্তমানে কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার দায়িত্বে এবং ওই সময়ের সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হালিম খান ইসির এনআইডি অনুবিভাগে পরিচালকের (পরিচালনা) দায়িত্বে থাকলেও একই অপরাধের কারণে শাস্তি দিয়ে ওই সময়ের কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেনকে রাখা হয়েছে দপ্তরবিহীন (ওএসডি) এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালক হিসেবে।

দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকর্তা আব্দুল হালিমের কারণে পুড়ে যায় ইসির দুইটি জিপ

এনআইডির পরিচালক (পরিচালনা) মো. আব্দুল হালিমের আইডি থেকে সবচেয়ে বেশি এনআইডি অবৈধভাবে সংশোধন করা হয়। গুরুতর এমন অভিযোগের পরেও তাকে সিলেট থেকে এনআইডির মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, এই কর্মকর্তা গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ফাঁকা পেয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা দুইটি জিপ গাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এরপর অফিসেও ব্যাপক ভাংচুর চালায়।

তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে একমত নয় এনআইডি ডিজি

নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে এনআইডি সংশোধন হলো কিন্তু কর্মকর্তারা জানে না এর দায় কি কর্মকর্তারা এড়াতে পারে কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, আপনি যে বিষয়টি বললেন এটা আমি দেখেছি এবং তদন্ত প্রতিবেদনটিও দেখেছি। একইসঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদনে যেভাবে বিষয়গুলো এসেছে সেগুলোর সঙ্গে আমি একমত নই। ব্যক্তিগতভাবে এটা দেখভাল করে আমার যেটা মনে হয়েছে, একটি ল্যাপটপ আমাকে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে, এটা যতক্ষণ আমি ব্যবহার করবো এর দায়-দায়িত্ব আমার। এটা নিয়ে আমার ছেলে বা অন্য কেউ অথবা আমার অফিসের কেউ এমন কোনো কাজ করে যেটা যেকোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তাহলে ওই দায়-দায়িত্ব আমার উপরই আসবে।

অন্যের উপর দায় চাপিয়ে নিজের দায় এড়ানো যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন আমি যদি বলি, আইডিটা অন্য কাউকে দিয়েছিলাম, তারা সেটা ব্যবহার করেছে! আমি কিছু জানি না….। এটা কখনোই হতে পারে না। এভাবে দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ একজন সরকারি কর্মকর্তার আছে বলে আমি মনে করি না।

তদন্ত হওয়ার পরের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তদন্ত হয়েছে, প্রতিবেদনও তৈরি হয়েছে। তবে এরপরের ঘটনাগুলো কিন্তু কেউ জানে না। আমরা কি করছি, সেটা আমরা জানি। আমি শুধু এতটুকু বলতে চাই, যার দায়-দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে। যেকোনো কর্মকর্তা হোক, আমি নিজে হই, যেকোনো পর্যায়ের কর্মকর্তারা তার দায়িত্ব তাকেই বুঝিয়ে দিতে হবে। দায়িত্ব অস্বীকার করার কোনো সুযোগ পাবে না।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৬:২৮:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
Translate »

কর্মকর্তাদের অজান্তেই হয়ে যাচ্ছে এনআইডি সংশোধন!

আপডেট : ০৬:২৮:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নির্বাচন কমিশনের তিন আঞ্চলিক কর্মকর্তার (আরইও) ইউজার অ্যাকাউন্ট (এনআইডি সংশোধনের জন্য যে অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়) থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের আবেদন অনুমোদন হলেও জানতে পারেনি নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তা। এই তিন কর্মকর্তা শুধুমাত্র কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েই দায় সেরেছেন। এসব এনআইডি সংশোধন মোটা অংকের অর্থের বিনিময় হয়েছে বলেই জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

ইসির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, একজন কর্মকর্তার আইডি থেকে এনআইডি সংশোধনের আবেদন অনুমোদন করতে হলে প্রথমে তাকে ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে আইডিতে লগইন করার জন্য সাবমিট করতে হয়। এরপর ছয় সংখ্যার একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) চাইবে সার্ভার। যা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মোবাইল নাম্বারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসএমএস’র মাধ্যমে চলে যায়। সার্ভারে সঠিকভাবে ওটিপির নাম্বার সাবমিট করার পর আইডিতে লগইন করতে হয়। এক্ষেত্রে যদি কোনো প্রতারক চক্রের হাতে ইউজার নেম ও পাসওর্য়াড চলেও যায় তবুও তারা আইডিতে লগইন করতে পারবে না, কারণ তাদের কাছে ওটিপি যাবে না। এছাড়া আমাদের সার্ভার একটি প্রাইভেট নেটওর্য়াক দ্বারা পরিচালিত হয়। এ নেটওর্য়াকের বাইরে অন্য নেটওর্য়াক ব্যবহার করে এনআইডির সার্ভারে কেউ ঢুকতে পারবে না।

সেক্ষেত্রে তিনজন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার আইডি থেকে এনআইডি সংশোধনের আবেদন অনুমোদন দেওয়া হলো কিভাবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন— ‘ওটিপি যখন তাদের কাছে গেছে ওই সময়ই তো তারা বিষয়টি জানতে পেরেছে। এছাড়া এটাও হতে পারে, ওই নির্বাচন কার্যালয়ের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী এই কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বা কর্মকর্তা নিজে থেকে বিশ্বাস করে, কারো সঙ্গে ওটিপি শেয়ার করে থাকতে পারেন। যার ফলে এমন ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। পরবর্তীতে যখন তারা দেখছেন যে যেসব এনআইডি সংশোধন করা হয়েছে তার বেশিরভাগই আইন-বিধি না মেনে অনুমোদন করা হয়েছে। এজন্য তারা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিজে থেকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি কমিশনে জানিয়েছে এবং সংশোধনের বিষয়টি তারা জানে না বা তারা অনুমোদন করেনি বলে উল্লেখ করেছেন।’

ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনের তিন প্রশাসনিক অঞ্চল কুমিল্লা, ফরিদপুর ও সিলেটে মোট ৪৮টি এনআইডি সংশোধন হয়। যা ওই সময়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা অনুমোদন করেনি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর মধ্যে ফরিদপুরে ওই সময়ের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দুলাল তালুকদারের আইডি থেকে ৮টি, কুমিল্লায় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেনের আইডি থেকে ৬টি, সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো.আব্দুল হালিম খানের আইডি থেকে সবচেয়ে বেশি ৩৪টি এনআইডি সংশোধনের আবেদন অনুমোদন হয়, যা তারা নিজেরা করেনি বলে লিখিত দিয়েছেন।

আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দুলাল তালুকদারে লিখিত বক্তব্য থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাজবাড়ির বালিয়াডাঙ্গা উপজেলায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে উপস্থিত ছিলেন, তবে সেদিন আইডিতে কোনো লগইন করেননি। পরবর্তী সময়ে ২৮ ডিসেম্বর অফিসে কাজ করতে গিয়ে দেখেন আগেরদিন রাত ৯.৩৭ মিনিটে ৯৬৫৯০০ নম্বর ওটিপি আসে, যা দিয়ে ৫টি (২৩***০৩, ৭৩**৪৫, ৫৫**৬৮, ১০**৮৪, ৯৫**৩০) জাতীয় পরিচয়পত্র এবং সেদিন দিবাগত রাত ১২টার পরে একই ওটিপি দিয়ে অর্থাৎ ২৮-১২-২০২৩ তারিখ আরো ৩টি (৩৭**১১, ১৪***৯৫, ৭৩***৪৩) জাতীয় পরিচয়পত্রসহ মোট ৮টি জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করা হয়েছে।

এনআইডির আইটি শাখার সহকারী প্রোগ্রামার আমিনুল ইসলাম ২০২৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রশিক্ষণ উপলক্ষে ফরিদপুর গেলে তার সঙ্গে বিগত দুইদিনে ওটিপি আসা এবং সংশোধনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার পরে তিনি উল্লিখিত ৮টি জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন হয়েছে মর্মে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরগুলো প্রদান করেন। পরবর্তীতে এনআইডি নম্বর উল্লেখ করে মহাপরিচালক বরাবর পত্র প্রেরণ করেন।

দুলাল তালুকদার লিখিত বক্তব্যে সংশোধনের প্রক্রিয়া তুলে ধরে জানান, প্রতিটি আবেদন প্রথমে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর তার আইডি দিয়ে হার্ডকপির সঙ্গে অনলাইনে দাখিলকৃত সকল কাগজপত্র যাচাইয়ের পরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রিন্ট করে স্বাক্ষর দিয়ে উপস্থাপন করেন। তিনি পুনরায় যাচাইয়ান্তে হার্ড কপিতে সিদ্ধান্ত লিখে পরবর্তীতে উক্ত সিদ্ধান্তসমূহ টাইপ করে প্রত্যেক সংশোধনকারীকে ম্যাসেজ অপশনের মাধ্যমে জানিয়ে দেন এবং এভাবে সেবা প্রার্থীরা সেবা পেয়ে থাকেন। এছাড়াও তিনি যে মোবাইল ফোনে ওটিপি আসে সে মোবাইলটির ফিঙ্গার প্রিন্ট বা পাসওয়ার্ড ব্যতীত ওপেন করা যায় না। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য নির্ধারিত ল্যাপটপ অফিসের বাইরে নেন না এবং অপারেটরের স্বাক্ষর ব্যতীত কোন জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদন নিষ্পত্তি করেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক ফরিদপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও বর্তমানে কুমিল্লা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দুলাল তালুকদার বিডি২৪লাইভকে জানান, বিষয়টি আমি আমার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ঘটনার সময় আমরা এখানে ছিলাম, আপনারা তদন্ত করে সত্যিটা যাচাই করে দেখেন।

অন্যদিকে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেনের লিখিত বক্তব্যে জানা যায় যে, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর তার সিএমএস অ্যাকাউন্টে হতে ৬টি এনআইডি সংশোধন হয়েছে। যেদিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ স্পেশালাইজড প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালনের জন্য লক্ষ্মীপুর জেলায় অবস্থান করেন তিনি। ঐ সময় প্রথমবার দুপুর ১২টা ২২ মিনিটে তার মোবাইলে ওটিপি আসে এবং তিনি এনআইডি অনুবিভাগের সহকারী প্রোগ্রামার এর কাছে জানতে চান যে তিনি লগইন করার চেষ্টা করেনি কিন্তু কেন ওটিপি আসলো? দ্বিতীয়বার ৫.২০ মিনিটে ওটিপি আসে। তিনি সভা শেষ করে ৮.৪৫ মিনিটে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা দেন, এইসময়ে অন্য কোথাও থেকে সিএমএসে লগইন করার চেষ্টা করেননি। পরবর্তীতে পহেলা জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে অফিসে এসে অ্যাকাউন্ট লগইন করে জানতে পারেন ৬টি এনআইডি তার অ্যাকাউন্ট হতে অনুমোদন হয়েছে, যা তিনি নিজে করেননি।

এ বিষয়ে জানতে সাবেক কুমিলা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো.ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো.আব্দুল হালিম খানের লিখিত বক্তব্য থেকে জানা যায়, সিএমএসে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন কার্যক্রমে ব্যবহৃত ইউজার আইডি হতে প্রতারকচক্র সংশোধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে জানতে পেরে তিনি এনআইডি উইং এর সিস্টেম ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে তাৎক্ষণিক ইউজার আইডিটি বন্ধ করতে অনুরোধ করেন। সে প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বরে তারিখে এটি বন্ধ করা হয়েছে। তিনি একই বছরের ২১ ডিসেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর সময়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪ উপলক্ষ্যে ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের স্পেশালাইজড প্রশিক্ষক হিসেবে সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলায় ভ্রমণরত ছিলেন বিধায় সম্পন্নকৃত সংশোধনসমূহ তার কর্তৃক নিষ্পন্ন না হওয়ায় উপরিউক্ত সময়ের সকল সংশোধনসমূহ রোল ব্যাক করার জন্য অনুরোধ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও বর্তমান ইসির এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালকের (পরিচালনা) দায়িত্বে থাকা মো. আব্দুল হালিম খান বিডি২৪ লাইভকে জানান, এটা নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নাই।

আপনি কি দায় এড়াতে পারেন কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা কমিশন ও যারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে তারা ভালো বলতে পারবেন। এ নিয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা বলাটা ঠিক হবে না।

চক্রের কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি তদন্ত কর্মকর্তারা

জানা যায়, তিন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার আইডি থেকে যে ৪৮ জন নাগরিকের এনআইডি সংশোধন হয়েছে তাদের সকলকে শুনানিতে ডাকা হলেও কেউ উপস্থিত হয়নি। তবে ১৩ জনের পরিবারের সদস্য উপস্থিত হয় এবং সকলে একই ধরনের বক্তব্য দিয়ে জানান, আবেদনকারীগণ প্রবাসে অবস্থান করছেন। তারা প্রবাসে থেকেই জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন দাখিল করেছেন। এক্ষেত্রে আবেদনকারীগণ তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য কোন ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করেছেন কিনা সে বিষয়ে তারা কিছু জানেন না। এছাড়া তিনজন ভোটারের সঙ্গে হোয়াটঅ্যাপে যোগাযোগ করলে তারাও একই ধরনের বক্তব্য দেন। যার ফলে উপস্থিত ভোটারের আত্মীয়দের সকলের বক্তব্য একই ধরনের হওয়ার কারণে এটি যে চক্রের কাজ তা পরিষ্কার হলেও এর সঙ্গে জড়িত কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি তদন্ত কর্মকর্তারা।

সংশোধনে বিনিময় হয়েছে মোটা অংকের টাকা

বিডি২৪লাইভকে একজন ইসি কর্মকর্তা জানান, সংশোধিত এনআইডিধারী প্রত্যেকই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আছে। প্রবাসে বিশেষ সুবিধার জন্য একটি চক্রের সাথে মিলিতভাবে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এনআইডি সংশোধন করে নিয়েছে। সাক্ষাৎকার উপস্থিত ভোটারের আত্মীয়দের সকলের বক্তব্য একই ধরনের হওয়ার কারণে এটি যে চক্রের কাজ তা পরিষ্কার।

ইসি সূত্র জানায়, তিন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার আইডি থেকে যে ৪৮ জন নাগরিকের এনআইডি সংশোধন হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন ভোটারের ভাই ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে জানান, সিলেটের জিন্দাবাজারে অবস্থিত হামজার ট্রাভেলস এর স্বত্বাধিকারী মো. মশিবুর রহমান এর মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে সংশোধন করেন।

একই অপরাধে একজনের শাস্তি, দুজনকে বহাল তবিয়তে

তিন কর্মকর্তা একই ধরনের অপরাধ করলেও একজনকে শাস্তি দিয়ে বাকি দুই কর্মকর্তাকে রেখেছে বহাল তবিয়তে। জানা যায়, ওই সময়ের ফরিদপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দুলাল তালুকদার বর্তমানে কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার দায়িত্বে এবং ওই সময়ের সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হালিম খান ইসির এনআইডি অনুবিভাগে পরিচালকের (পরিচালনা) দায়িত্বে থাকলেও একই অপরাধের কারণে শাস্তি দিয়ে ওই সময়ের কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেনকে রাখা হয়েছে দপ্তরবিহীন (ওএসডি) এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালক হিসেবে।

দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকর্তা আব্দুল হালিমের কারণে পুড়ে যায় ইসির দুইটি জিপ

এনআইডির পরিচালক (পরিচালনা) মো. আব্দুল হালিমের আইডি থেকে সবচেয়ে বেশি এনআইডি অবৈধভাবে সংশোধন করা হয়। গুরুতর এমন অভিযোগের পরেও তাকে সিলেট থেকে এনআইডির মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, এই কর্মকর্তা গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ফাঁকা পেয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা দুইটি জিপ গাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এরপর অফিসেও ব্যাপক ভাংচুর চালায়।

তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে একমত নয় এনআইডি ডিজি

নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে এনআইডি সংশোধন হলো কিন্তু কর্মকর্তারা জানে না এর দায় কি কর্মকর্তারা এড়াতে পারে কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, আপনি যে বিষয়টি বললেন এটা আমি দেখেছি এবং তদন্ত প্রতিবেদনটিও দেখেছি। একইসঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদনে যেভাবে বিষয়গুলো এসেছে সেগুলোর সঙ্গে আমি একমত নই। ব্যক্তিগতভাবে এটা দেখভাল করে আমার যেটা মনে হয়েছে, একটি ল্যাপটপ আমাকে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে, এটা যতক্ষণ আমি ব্যবহার করবো এর দায়-দায়িত্ব আমার। এটা নিয়ে আমার ছেলে বা অন্য কেউ অথবা আমার অফিসের কেউ এমন কোনো কাজ করে যেটা যেকোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তাহলে ওই দায়-দায়িত্ব আমার উপরই আসবে।

অন্যের উপর দায় চাপিয়ে নিজের দায় এড়ানো যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন আমি যদি বলি, আইডিটা অন্য কাউকে দিয়েছিলাম, তারা সেটা ব্যবহার করেছে! আমি কিছু জানি না….। এটা কখনোই হতে পারে না। এভাবে দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ একজন সরকারি কর্মকর্তার আছে বলে আমি মনে করি না।

তদন্ত হওয়ার পরের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তদন্ত হয়েছে, প্রতিবেদনও তৈরি হয়েছে। তবে এরপরের ঘটনাগুলো কিন্তু কেউ জানে না। আমরা কি করছি, সেটা আমরা জানি। আমি শুধু এতটুকু বলতে চাই, যার দায়-দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে। যেকোনো কর্মকর্তা হোক, আমি নিজে হই, যেকোনো পর্যায়ের কর্মকর্তারা তার দায়িত্ব তাকেই বুঝিয়ে দিতে হবে। দায়িত্ব অস্বীকার করার কোনো সুযোগ পাবে না।