London ০৩:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কপালে টিপ ও ঘোমটা দিয়ে ছাত্রী হলের রুমে কি করছিলেন সেই যুবক

অনলাইন ডেস্ক

কপালে টিপ এবং মুখ ও শরীর চাদরে মুড়িয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মেয়েদের আবাসিক হলের একটি কক্ষে ঢুকেছিলেন বহিরাগত যুবক আশরাফুল ইসলাম পারভেজ। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের একটি কক্ষ থেকে এক নারী শিক্ষার্থীসহ তাকে আটক করে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।গতকাল শনিবার দিবাগত রাত একটার দিকে হলের তৃতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, আটক আশরাফুল আলম পারভেজের বাড়ি চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে। তিনি বর্তমানে গাজীপুরে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২ ব্যাচের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের এক শিক্ষার্থীর কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে, তিনি হিম উৎসব দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রীদের সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান হিম উৎসবের শেষে অভিযুক্ত ওই নারী শিক্ষার্থীর সহায়তায় হলে প্রবেশ করেন আশরাফুল। তিনি আশরাফুলকে হলের তৃতীয় তলায় তার কক্ষে নিয়ে যান। তবে প্রবেশের সময় হল গেটের গার্ড ও অন্যান্যরা যাতে টের না পায়, সেজন্য আশরাফুল কপালে টিপ ও গায়ের চাদর মুড়িয়ে প্রবেশ করেন।

তবে ওই ছেলে কক্ষে গিয়ে চাঁদর খুলে ফেললে আশেপাশের কক্ষে থাকা ছাত্রীরা তাকে শনাক্ত করেন। এ সময় ছাত্রীরা আশরাফুলকে আটক করে হল প্রভোস্টের কক্ষে নিয়ে আসেন।

পরে হল প্রভোস্ট এসে প্রক্টরিয়াল বডিকে খবর দেন। এক পর্যায়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে আশরাফুলকে সোপর্দ করা হয়। এ সময় হলের ক্ষুব্ধ ছাত্রীরা ওই যুবককে জুতাপেটা করে।

আটকের পর আশরাফুল জানান, ‘আমরা দুজন ভালো দোস্ত। সাত বছরের বন্ধুত্ব। দুজনেই লালন ভক্ত। তাকে আমি বিয়ে দিয়েছি। আমি হিম উৎসবে বেড়াতে এসেছি। হলে আসার সময় আমি কপালে টিপ পরে মুখ ও শরীর চাদরে মুড়িয়ে হলে প্রবেশ করি।’

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা উভয়েই ভালো বন্ধু। হিম উৎসবে সে এসেছিল। রাতে থাকার জায়গা না থাকায় তাকে হলে নিয়ে এসেছি। আমরা কেউ আপত্তিকর অবস্থায় ছিলাম না।’

এদিকে অভিযুক্ত নারী শিক্ষার্থীর স্বামীকে ফোন দেওয়া হলে তিনি পারভেজকে চেনেন না বলে জানান। পরে পারভেজকে ওই নারী শিক্ষার্থী শুধু ফেসবুক বন্ধু বলে উয়ে এসেছেন।

এদিকে এ ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ছাত্রীদের আবাসিক হলের নিরাপত্তা জোরদার করা এবং হলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনায় জড়িতদের যথাযথ আইন ও নিয়মানুযায়ী শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রাত পৌণে ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক ঘুরে নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

এ বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ছাত্রীরা ফোন করে জানান, হলে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে আসি এবং প্রক্টোরিয়াল বডিকে বিষয়টি অবগত করি। পরে প্রক্টোরিয়াল বডি আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে ওই যুবককে হস্তান্তর করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে ওই ছাত্রীর পরিবারের সদস্যদের খবর দেওয়া হয়েছে।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর একেএম রাশিদুল আলম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত আমরা তাকে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। আগামীকাল সকালে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে।’

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১২:৫৮:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫
Translate »

কপালে টিপ ও ঘোমটা দিয়ে ছাত্রী হলের রুমে কি করছিলেন সেই যুবক

আপডেট : ১২:৫৮:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

কপালে টিপ এবং মুখ ও শরীর চাদরে মুড়িয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মেয়েদের আবাসিক হলের একটি কক্ষে ঢুকেছিলেন বহিরাগত যুবক আশরাফুল ইসলাম পারভেজ। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের একটি কক্ষ থেকে এক নারী শিক্ষার্থীসহ তাকে আটক করে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।গতকাল শনিবার দিবাগত রাত একটার দিকে হলের তৃতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, আটক আশরাফুল আলম পারভেজের বাড়ি চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে। তিনি বর্তমানে গাজীপুরে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২ ব্যাচের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের এক শিক্ষার্থীর কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে, তিনি হিম উৎসব দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রীদের সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান হিম উৎসবের শেষে অভিযুক্ত ওই নারী শিক্ষার্থীর সহায়তায় হলে প্রবেশ করেন আশরাফুল। তিনি আশরাফুলকে হলের তৃতীয় তলায় তার কক্ষে নিয়ে যান। তবে প্রবেশের সময় হল গেটের গার্ড ও অন্যান্যরা যাতে টের না পায়, সেজন্য আশরাফুল কপালে টিপ ও গায়ের চাদর মুড়িয়ে প্রবেশ করেন।

তবে ওই ছেলে কক্ষে গিয়ে চাঁদর খুলে ফেললে আশেপাশের কক্ষে থাকা ছাত্রীরা তাকে শনাক্ত করেন। এ সময় ছাত্রীরা আশরাফুলকে আটক করে হল প্রভোস্টের কক্ষে নিয়ে আসেন।

পরে হল প্রভোস্ট এসে প্রক্টরিয়াল বডিকে খবর দেন। এক পর্যায়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে আশরাফুলকে সোপর্দ করা হয়। এ সময় হলের ক্ষুব্ধ ছাত্রীরা ওই যুবককে জুতাপেটা করে।

আটকের পর আশরাফুল জানান, ‘আমরা দুজন ভালো দোস্ত। সাত বছরের বন্ধুত্ব। দুজনেই লালন ভক্ত। তাকে আমি বিয়ে দিয়েছি। আমি হিম উৎসবে বেড়াতে এসেছি। হলে আসার সময় আমি কপালে টিপ পরে মুখ ও শরীর চাদরে মুড়িয়ে হলে প্রবেশ করি।’

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা উভয়েই ভালো বন্ধু। হিম উৎসবে সে এসেছিল। রাতে থাকার জায়গা না থাকায় তাকে হলে নিয়ে এসেছি। আমরা কেউ আপত্তিকর অবস্থায় ছিলাম না।’

এদিকে অভিযুক্ত নারী শিক্ষার্থীর স্বামীকে ফোন দেওয়া হলে তিনি পারভেজকে চেনেন না বলে জানান। পরে পারভেজকে ওই নারী শিক্ষার্থী শুধু ফেসবুক বন্ধু বলে উয়ে এসেছেন।

এদিকে এ ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ছাত্রীদের আবাসিক হলের নিরাপত্তা জোরদার করা এবং হলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনায় জড়িতদের যথাযথ আইন ও নিয়মানুযায়ী শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রাত পৌণে ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক ঘুরে নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

এ বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ছাত্রীরা ফোন করে জানান, হলে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে আসি এবং প্রক্টোরিয়াল বডিকে বিষয়টি অবগত করি। পরে প্রক্টোরিয়াল বডি আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে ওই যুবককে হস্তান্তর করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে ওই ছাত্রীর পরিবারের সদস্যদের খবর দেওয়া হয়েছে।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর একেএম রাশিদুল আলম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত আমরা তাকে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। আগামীকাল সকালে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে।’