London ১১:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
রাজশাহীতে ২ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার বাল্যবিয়ে ঠেকানোর নামে সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, দুইজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ কথিত যুবদল নেতার চাঁদাবাজিতে বাধা ’ দেওয়ায় — সাত যুবক কারাগারে কসবাউপজেলার কুটি বাজারে ভয়াবহ আগুন: ক্ষতিগ্রস্ত দোকান পরিদর্শনে আতাউর রহমান সরকার কসবায় বিএনপির ঈদ পুনর্মিলনীতে মানুষের ঢল — গ্যাস সংযোগ দেয়া ও শিল্পনগরী গড়ার ঘোষণা দিলেন সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী কবির আহম্মদ ভূঁইয়া সিরাজগঞ্জে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীকে গলাকাটা হত্যার অভিযোগ স্বামী উপর দুর্গাপুরে তিন ইউনিয়নে বিএনপির সম্মেলন,দলীয় রাজনীতি আরো গতিশীল করার আহ্বান ঈদের মিলনমেলা থেকে তুলে নিয়ে বিস্ফোরক মামলায় সাত দিনমজুরকে চালান সিরাজগঞ্জ জেলা ট্রাক এবং কাভার্ডভ্যান পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন ত্রি-বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত ভারতীয় পণ্য পাচারকালে পিকআপ ভ্যানসহ আটক ১

কথিত যুবদল নেতার চাঁদাবাজিতে বাধা ’ দেওয়ায় — সাত যুবক কারাগারে

মোঃতারিকুল ইসলাম,ফরিদপুর প্রতিনিধি:

আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় চাঁদাবাজিকে প্রতিহত করতে গিয়ে সেই বাস্তব অভিজ্ঞতা হয়েছে সাতজন কর্মজীবী যুবকের। স্থানীয়দের ভাষ্য, কথিত এক ‘যুবদল নেতা’র দাপট ঠেকাতে গিয়ে পুলিশি প্রতিশোধের শিকার হয়েছেন তারা। অথচ মূল অভিযুক্ত এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

ঘটনার সূত্রপাত ৯ জুন (সোমবার) বিকেলে। আলফাডাঙ্গার কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমি মাঠের পাশেই অবস্থিত রফিকুল ইসলামের মুদি দোকানে আসে শাহেদ নামের এক যুবক। সে নিজেকে ‘যুবদল নেতা’ পরিচয় দেয়, পরিচয় অনুসারে স্থানীয় জুয়েল মোল্লার ছেলে।

রফিকুল ইসলাম জানান, শাহেদ প্রায়ই তার দোকান থেকে বিনামূল্যে সিগারেট নিয়ে যেত। টাকা চাইলে বলত, “পরে দেব।” ওইদিন টাকা চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে দোকানে পিস্তল ঠেকিয়ে বলে, “বিশ হাজার টাকা না দিলে তোর দোকান গুঁড়িয়ে দেবো।” এরপরই চালায় ভাঙচুর, ড্রয়ার ভেঙে লুট করে বেচাকেনার টাকা।

রফিকুল বলেন, “আমি থানায় গিয়ে এসআই মফিজুর রহমান স্যারের কাছে জানাই। হয়তো এটাই আমার সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিল।”

রফিকুলের চিৎকারে কামারগ্রাম স্কুল মাঠে ফুটবল খেলা দেখছিল এমন কয়েকজন যুবক দৌড়ে আসে। তারা শাহেদ ও তার সঙ্গীদের বাধা দিলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। স্থানীয় মুরব্বিরা উপস্থিত হয়ে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন।

পরদিন ১০ জুন দুপুরে, ঈদের সময় বাড়ি বেড়াতে আসা কাওসার খান নামের এক গার্মেন্টস কর্মীকে গ্রাম ছাড়ার পথে শাহেদ ও তার বাহিনী রাস্তা আটকে মারধর করে। দুইটি ঘটনার পৃথক অভিযোগ জমা পড়ে আলফাডাঙ্গা থানায়।

অভিযোগ দায়েরের ২৪ ঘণ্টা পেরোতে না পেরোতেই উল্টো চালান আসে পুলিশি ‘অভিনয়ে’। ১১ জুন ঈদের চতুর্থ দিন রাতে, কামারগ্রাম পশ্চিমপাড়ার বরকতের বাড়ির পাশে ঈদের মিলনমেলা ও নৈশভোজ চলছিলো। আয়োজক ছিলেন গ্রামের চাকরিজীবী ও প্রবাসফেরত যুবকেরা।

স্থানীয়দের ভাষ্য, অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে হঠাৎ পুলিশ এসে সম্রাট, আব্দুল্লাহ কাজীসহ সাতজনকে ডাকে। বলা হয়, কিছু তথ্য জানার জন্য থানায় যেতে হবে, রাতেই ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু রাত যায়, সকাল আসে — যুবকেরা আর বাড়ি ফেরেন না।

পরদিন জানা যায়, তাদের ‘অজ্ঞাতনামা আসামি’ বানিয়ে রাজনৈতিক মামলায় চালান দেওয়া হয়েছে ফরিদপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

গ্রেপ্তারকৃত যুবকদের পরিবার জানায়, “আমাদের সন্তানেরা কেউ রাজনীতি করে না, কেউ নাবিক, কেউ দিনমজুর, কেউ ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করে। ঈদের ছুটিতে গ্রামে এসেছে। এই কয়দিন গ্রামে ছিল, রাজনীতি করল কখন?”

একজন অভিভাবকের প্রশ্ন, “অপরাধীর বিচার চাইতে গেলেই কি আমরা রাজনৈতিক অপরাধী হয়ে যাই?”

আলফাডাঙ্গা উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. শাহিন মোল্লা বলেন, “শাহেদ নামের কাউকে আমরা চিনিনা। ইউনিয়ন পর্যায়ে আমাদের কোনো কমিটি গঠিত হয়নি। কেউ যুবদলের নাম ভাঙিয়ে অনৈতিক কাজ করলে প্রশাসনের উচিত তাকে আইনের হাতে তুলে দেওয়া।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আলফাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহজালাল আলম বলেন, “এই অভিযানে সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) ইমরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবেই গ্রেফতার করা হয়েছে।”

গ্রেপ্তার যুবকদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কি না জানতে চাইলে ওসি বলেন, “আছে, তবে তারা কোনো পদে সেটা জানি না।”

 

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৪:২৬:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫
Translate »

কথিত যুবদল নেতার চাঁদাবাজিতে বাধা ’ দেওয়ায় — সাত যুবক কারাগারে

আপডেট : ০৪:২৬:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫

আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় চাঁদাবাজিকে প্রতিহত করতে গিয়ে সেই বাস্তব অভিজ্ঞতা হয়েছে সাতজন কর্মজীবী যুবকের। স্থানীয়দের ভাষ্য, কথিত এক ‘যুবদল নেতা’র দাপট ঠেকাতে গিয়ে পুলিশি প্রতিশোধের শিকার হয়েছেন তারা। অথচ মূল অভিযুক্ত এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

ঘটনার সূত্রপাত ৯ জুন (সোমবার) বিকেলে। আলফাডাঙ্গার কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমি মাঠের পাশেই অবস্থিত রফিকুল ইসলামের মুদি দোকানে আসে শাহেদ নামের এক যুবক। সে নিজেকে ‘যুবদল নেতা’ পরিচয় দেয়, পরিচয় অনুসারে স্থানীয় জুয়েল মোল্লার ছেলে।

রফিকুল ইসলাম জানান, শাহেদ প্রায়ই তার দোকান থেকে বিনামূল্যে সিগারেট নিয়ে যেত। টাকা চাইলে বলত, “পরে দেব।” ওইদিন টাকা চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে দোকানে পিস্তল ঠেকিয়ে বলে, “বিশ হাজার টাকা না দিলে তোর দোকান গুঁড়িয়ে দেবো।” এরপরই চালায় ভাঙচুর, ড্রয়ার ভেঙে লুট করে বেচাকেনার টাকা।

রফিকুল বলেন, “আমি থানায় গিয়ে এসআই মফিজুর রহমান স্যারের কাছে জানাই। হয়তো এটাই আমার সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিল।”

রফিকুলের চিৎকারে কামারগ্রাম স্কুল মাঠে ফুটবল খেলা দেখছিল এমন কয়েকজন যুবক দৌড়ে আসে। তারা শাহেদ ও তার সঙ্গীদের বাধা দিলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। স্থানীয় মুরব্বিরা উপস্থিত হয়ে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন।

পরদিন ১০ জুন দুপুরে, ঈদের সময় বাড়ি বেড়াতে আসা কাওসার খান নামের এক গার্মেন্টস কর্মীকে গ্রাম ছাড়ার পথে শাহেদ ও তার বাহিনী রাস্তা আটকে মারধর করে। দুইটি ঘটনার পৃথক অভিযোগ জমা পড়ে আলফাডাঙ্গা থানায়।

অভিযোগ দায়েরের ২৪ ঘণ্টা পেরোতে না পেরোতেই উল্টো চালান আসে পুলিশি ‘অভিনয়ে’। ১১ জুন ঈদের চতুর্থ দিন রাতে, কামারগ্রাম পশ্চিমপাড়ার বরকতের বাড়ির পাশে ঈদের মিলনমেলা ও নৈশভোজ চলছিলো। আয়োজক ছিলেন গ্রামের চাকরিজীবী ও প্রবাসফেরত যুবকেরা।

স্থানীয়দের ভাষ্য, অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে হঠাৎ পুলিশ এসে সম্রাট, আব্দুল্লাহ কাজীসহ সাতজনকে ডাকে। বলা হয়, কিছু তথ্য জানার জন্য থানায় যেতে হবে, রাতেই ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু রাত যায়, সকাল আসে — যুবকেরা আর বাড়ি ফেরেন না।

পরদিন জানা যায়, তাদের ‘অজ্ঞাতনামা আসামি’ বানিয়ে রাজনৈতিক মামলায় চালান দেওয়া হয়েছে ফরিদপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

গ্রেপ্তারকৃত যুবকদের পরিবার জানায়, “আমাদের সন্তানেরা কেউ রাজনীতি করে না, কেউ নাবিক, কেউ দিনমজুর, কেউ ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করে। ঈদের ছুটিতে গ্রামে এসেছে। এই কয়দিন গ্রামে ছিল, রাজনীতি করল কখন?”

একজন অভিভাবকের প্রশ্ন, “অপরাধীর বিচার চাইতে গেলেই কি আমরা রাজনৈতিক অপরাধী হয়ে যাই?”

আলফাডাঙ্গা উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. শাহিন মোল্লা বলেন, “শাহেদ নামের কাউকে আমরা চিনিনা। ইউনিয়ন পর্যায়ে আমাদের কোনো কমিটি গঠিত হয়নি। কেউ যুবদলের নাম ভাঙিয়ে অনৈতিক কাজ করলে প্রশাসনের উচিত তাকে আইনের হাতে তুলে দেওয়া।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আলফাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহজালাল আলম বলেন, “এই অভিযানে সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) ইমরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবেই গ্রেফতার করা হয়েছে।”

গ্রেপ্তার যুবকদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কি না জানতে চাইলে ওসি বলেন, “আছে, তবে তারা কোনো পদে সেটা জানি না।”