কথিত যুবদল নেতার চাঁদাবাজিতে বাধা ’ দেওয়ায় — সাত যুবক কারাগারে

আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় চাঁদাবাজিকে প্রতিহত করতে গিয়ে সেই বাস্তব অভিজ্ঞতা হয়েছে সাতজন কর্মজীবী যুবকের। স্থানীয়দের ভাষ্য, কথিত এক ‘যুবদল নেতা’র দাপট ঠেকাতে গিয়ে পুলিশি প্রতিশোধের শিকার হয়েছেন তারা। অথচ মূল অভিযুক্ত এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ঘটনার সূত্রপাত ৯ জুন (সোমবার) বিকেলে। আলফাডাঙ্গার কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমি মাঠের পাশেই অবস্থিত রফিকুল ইসলামের মুদি দোকানে আসে শাহেদ নামের এক যুবক। সে নিজেকে ‘যুবদল নেতা’ পরিচয় দেয়, পরিচয় অনুসারে স্থানীয় জুয়েল মোল্লার ছেলে।
রফিকুল ইসলাম জানান, শাহেদ প্রায়ই তার দোকান থেকে বিনামূল্যে সিগারেট নিয়ে যেত। টাকা চাইলে বলত, “পরে দেব।” ওইদিন টাকা চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে দোকানে পিস্তল ঠেকিয়ে বলে, “বিশ হাজার টাকা না দিলে তোর দোকান গুঁড়িয়ে দেবো।” এরপরই চালায় ভাঙচুর, ড্রয়ার ভেঙে লুট করে বেচাকেনার টাকা।
রফিকুল বলেন, “আমি থানায় গিয়ে এসআই মফিজুর রহমান স্যারের কাছে জানাই। হয়তো এটাই আমার সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিল।”
রফিকুলের চিৎকারে কামারগ্রাম স্কুল মাঠে ফুটবল খেলা দেখছিল এমন কয়েকজন যুবক দৌড়ে আসে। তারা শাহেদ ও তার সঙ্গীদের বাধা দিলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। স্থানীয় মুরব্বিরা উপস্থিত হয়ে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন।
পরদিন ১০ জুন দুপুরে, ঈদের সময় বাড়ি বেড়াতে আসা কাওসার খান নামের এক গার্মেন্টস কর্মীকে গ্রাম ছাড়ার পথে শাহেদ ও তার বাহিনী রাস্তা আটকে মারধর করে। দুইটি ঘটনার পৃথক অভিযোগ জমা পড়ে আলফাডাঙ্গা থানায়।
অভিযোগ দায়েরের ২৪ ঘণ্টা পেরোতে না পেরোতেই উল্টো চালান আসে পুলিশি ‘অভিনয়ে’। ১১ জুন ঈদের চতুর্থ দিন রাতে, কামারগ্রাম পশ্চিমপাড়ার বরকতের বাড়ির পাশে ঈদের মিলনমেলা ও নৈশভোজ চলছিলো। আয়োজক ছিলেন গ্রামের চাকরিজীবী ও প্রবাসফেরত যুবকেরা।
স্থানীয়দের ভাষ্য, অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে হঠাৎ পুলিশ এসে সম্রাট, আব্দুল্লাহ কাজীসহ সাতজনকে ডাকে। বলা হয়, কিছু তথ্য জানার জন্য থানায় যেতে হবে, রাতেই ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু রাত যায়, সকাল আসে — যুবকেরা আর বাড়ি ফেরেন না।
পরদিন জানা যায়, তাদের ‘অজ্ঞাতনামা আসামি’ বানিয়ে রাজনৈতিক মামলায় চালান দেওয়া হয়েছে ফরিদপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
গ্রেপ্তারকৃত যুবকদের পরিবার জানায়, “আমাদের সন্তানেরা কেউ রাজনীতি করে না, কেউ নাবিক, কেউ দিনমজুর, কেউ ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করে। ঈদের ছুটিতে গ্রামে এসেছে। এই কয়দিন গ্রামে ছিল, রাজনীতি করল কখন?”
একজন অভিভাবকের প্রশ্ন, “অপরাধীর বিচার চাইতে গেলেই কি আমরা রাজনৈতিক অপরাধী হয়ে যাই?”
আলফাডাঙ্গা উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. শাহিন মোল্লা বলেন, “শাহেদ নামের কাউকে আমরা চিনিনা। ইউনিয়ন পর্যায়ে আমাদের কোনো কমিটি গঠিত হয়নি। কেউ যুবদলের নাম ভাঙিয়ে অনৈতিক কাজ করলে প্রশাসনের উচিত তাকে আইনের হাতে তুলে দেওয়া।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আলফাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহজালাল আলম বলেন, “এই অভিযানে সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) ইমরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবেই গ্রেফতার করা হয়েছে।”
গ্রেপ্তার যুবকদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কি না জানতে চাইলে ওসি বলেন, “আছে, তবে তারা কোনো পদে সেটা জানি না।”