London ১১:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
চারঘাটে ডোবা থেকে যুবকের লা’শ উদ্ধার কালিয়াকৈরে ভুল রক্ত পুশে সিজারের রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ কালিয়াকৈর উপজেলা সূত্রাপুর এলাকায় চলন্ত অ্যাম্বুলেন্সে আগুনে পুড়ে ছাই কালিয়াকৈর ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারনে চরম ভোগান্তিতে দৈনন্দিন জনজীবন কালিয়া হরিপুরে নারীদের ফ্যামিলি কার্ড কার্যক্রমে তৃণমূল নারীদের জাগরণে ইব্রাহিম মোল্লা রাণীনগরে মৌসুমীর উদ্যোগে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত বিএনপির নতুন সদস্য সংহের ফরম বিতরন ও নবায়ন কমসুচি ধানখেত থেকে নারীর লাশ উদ্ধার সিরাজগঞ্জে চুরির মহামারি: সাংবাদিকের মোটরসাইকেল চুরি, নাগরিকদের মধ্যে চরম উদ্বেগ কালিয়াকৈরে হাজী বাড়ী ফুটবল প্রিমিয়ার লীগের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত

ঐতিহ্যের ধারক নেত্রকোণার শতবর্ষী ‘বালিশ মিষ্টি’ পেল জিআই স্বীকৃতি

মামুন রণবীর, নেত্রকোনা

বালিশের মতো দেখতে হওয়ায় মিষ্টির নাম ‘বালিশ মিষ্টি’। খুব মুখরোচক এই মিষ্টি, তাই এটি মানুষের আগ্রহের শীর্ষে থাকে। যেকোন উৎসবে এই মিষ্টির চাহিদা থাকে ব্যাপক। উপরে ক্ষীরের প্রলেপ মিষ্টিকে বাড়তি আকর্ষণ দেয়। এই মিষ্টি গয়ানাথের বালিশ নামেও পরিচিত।

নেত্রকোণার ঐতিহ্যের ধারক শতবর্ষী ‘বালিশ মিষ্টি’ অতি সম্প্রতি দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর (ডিপিডিটি) বালিশ মিষ্টিকে দেশের ৫৮তম জিআই পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান।

নেত্রকোণা জেলা সদরের বারহাট্টা রোডের গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভান্ডার বালিশ মিষ্টি প্রস্তুতকারক। ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে স্থানীয় মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারক গয়ানাথ ঘোষ প্রথম এই মিষ্টি তৈরি করেন। ছোট বালিশের মতো লম্বাটে ও তুলতুলে আকারের জন্য এর নাম দেন বালিশ মিষ্টি। এরপর থেকেই এটি দিনে দিনে বেশ জনপ্রিয় হতে থাকে।

স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় অল্পদিনেই সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে বালিশের নাম। যেকোন বিয়ে,জন্মদিন,ঈদ, পূজা,বড়দিন বা নববর্ষে নেত্রকোণা সহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার মানুষ বালিশ মিষ্টি আগ্রহের সাথে কিনে নিয়ে যান। তখন দোকানে বেশ ভিড় লেগে যায়।

পর্যটন অঞ্চল হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেত্রকোণায় ঘুরতে আসা ভ্রমণপিয়াসী মানুষ বালিশ মিষ্টির স্বাদ নিতে হাজির হন গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভান্ডারে।

কারিগররা জানান, বালিশ মিষ্টি তৈরি হয় গাভির খাঁটি দুধ-ছানা, চিনি ও ময়দা দিয়ে। প্রথমে দুধের ছানার সঙ্গে সামান্য ময়দা মিশিয়ে মন্ড তৈরি করা হয়। এরপর বানানো হয় বিভিন্ন সাইজের বালিশ। পরে তা ভাজা হয় চিনির গরম রসে। এর পর ঠান্ডা করেও চিনির রসে ডুবিয়ে রাখা হয় অনেকক্ষণ। এক সময় তা রসে টইটম্বুর হয়ে যায়। বিক্রির সময় বালিশের ওপর দেয়া হয় ক্ষীরের প্রলেপ বা দুধের মালাই। তখন বালিশ হয়ে যায় ক্রেতার আকর্ষণের মিষ্টি।

নেত্রকোণা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুই বছর আগে ডিপিডিটিতে বালিশ মিষ্টির জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করা হয়। পণ্যের ইতিহাস, উৎপাদন প্রক্রিয়া ও বিশেষ বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি মেলে।

জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়ে গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের বর্তমান কর্ণধার বাবুল চন্দ্র মোদক বলেন, বালিশ মিষ্টি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা খুব আনন্দিত ও গর্বিত। একশো বছরেরও বেশি সময় আগে যে মিষ্টির সূচনা হয়েছিল তা আজ দেশের গৌরবের প্রতীকে পরিণত হলো। আমরা মিষ্টির গুণাগুণ অক্ষুন্ন রেখে এই ঐতিহ্য ধরে রাখবো।

নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, আমরা নেত্রকোণার বালিশ মিষ্টিকে জিআই পণ্য ঘোষণার জন্য সকল প্রসিডিওর মেইনটেইন করে পত্র লিখেছি। আমরা জানতে পেরেছি এটির অনুমোদন হয়ে গেছে। অফিশিয়াল চিঠি পেলেই আমরা এই জিআই পণ্যের যে সার্টিফিকেট তা গ্রহণ করার জন্য যাবো এবং এই আনন্দ উদযাপন করবো। ইতোপূর্বে আমরা জেলার বিজয়পুরের সাদামাটি জিআই পণ্যের সার্টিফিকেট গ্রহণ করেছি। জেলায় এমন আরো কোন পণ্য থেকে থাকলে সেগুলো অনুসন্ধান করে সেগুলো যেন জিআই পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় সে প্রচেষ্টা আমাদের থাকবে।

উল্লেখ্য,২০২১ সালে নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুরের সাদামাটি জিআই স্বীকৃতি পেয়েছিল। এবার বালিশ মিষ্টি জিআই স্বীকৃতি অর্জন করায় এটি জেলার জন্য আরেকটি সুনাম নিয়ে এলো।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০১:৪৯:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
১৯
Translate »

ঐতিহ্যের ধারক নেত্রকোণার শতবর্ষী ‘বালিশ মিষ্টি’ পেল জিআই স্বীকৃতি

আপডেট : ০১:৪৯:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বালিশের মতো দেখতে হওয়ায় মিষ্টির নাম ‘বালিশ মিষ্টি’। খুব মুখরোচক এই মিষ্টি, তাই এটি মানুষের আগ্রহের শীর্ষে থাকে। যেকোন উৎসবে এই মিষ্টির চাহিদা থাকে ব্যাপক। উপরে ক্ষীরের প্রলেপ মিষ্টিকে বাড়তি আকর্ষণ দেয়। এই মিষ্টি গয়ানাথের বালিশ নামেও পরিচিত।

নেত্রকোণার ঐতিহ্যের ধারক শতবর্ষী ‘বালিশ মিষ্টি’ অতি সম্প্রতি দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর (ডিপিডিটি) বালিশ মিষ্টিকে দেশের ৫৮তম জিআই পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান।

নেত্রকোণা জেলা সদরের বারহাট্টা রোডের গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভান্ডার বালিশ মিষ্টি প্রস্তুতকারক। ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে স্থানীয় মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারক গয়ানাথ ঘোষ প্রথম এই মিষ্টি তৈরি করেন। ছোট বালিশের মতো লম্বাটে ও তুলতুলে আকারের জন্য এর নাম দেন বালিশ মিষ্টি। এরপর থেকেই এটি দিনে দিনে বেশ জনপ্রিয় হতে থাকে।

স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় অল্পদিনেই সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে বালিশের নাম। যেকোন বিয়ে,জন্মদিন,ঈদ, পূজা,বড়দিন বা নববর্ষে নেত্রকোণা সহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার মানুষ বালিশ মিষ্টি আগ্রহের সাথে কিনে নিয়ে যান। তখন দোকানে বেশ ভিড় লেগে যায়।

পর্যটন অঞ্চল হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেত্রকোণায় ঘুরতে আসা ভ্রমণপিয়াসী মানুষ বালিশ মিষ্টির স্বাদ নিতে হাজির হন গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভান্ডারে।

কারিগররা জানান, বালিশ মিষ্টি তৈরি হয় গাভির খাঁটি দুধ-ছানা, চিনি ও ময়দা দিয়ে। প্রথমে দুধের ছানার সঙ্গে সামান্য ময়দা মিশিয়ে মন্ড তৈরি করা হয়। এরপর বানানো হয় বিভিন্ন সাইজের বালিশ। পরে তা ভাজা হয় চিনির গরম রসে। এর পর ঠান্ডা করেও চিনির রসে ডুবিয়ে রাখা হয় অনেকক্ষণ। এক সময় তা রসে টইটম্বুর হয়ে যায়। বিক্রির সময় বালিশের ওপর দেয়া হয় ক্ষীরের প্রলেপ বা দুধের মালাই। তখন বালিশ হয়ে যায় ক্রেতার আকর্ষণের মিষ্টি।

নেত্রকোণা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুই বছর আগে ডিপিডিটিতে বালিশ মিষ্টির জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করা হয়। পণ্যের ইতিহাস, উৎপাদন প্রক্রিয়া ও বিশেষ বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি মেলে।

জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়ে গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের বর্তমান কর্ণধার বাবুল চন্দ্র মোদক বলেন, বালিশ মিষ্টি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা খুব আনন্দিত ও গর্বিত। একশো বছরেরও বেশি সময় আগে যে মিষ্টির সূচনা হয়েছিল তা আজ দেশের গৌরবের প্রতীকে পরিণত হলো। আমরা মিষ্টির গুণাগুণ অক্ষুন্ন রেখে এই ঐতিহ্য ধরে রাখবো।

নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, আমরা নেত্রকোণার বালিশ মিষ্টিকে জিআই পণ্য ঘোষণার জন্য সকল প্রসিডিওর মেইনটেইন করে পত্র লিখেছি। আমরা জানতে পেরেছি এটির অনুমোদন হয়ে গেছে। অফিশিয়াল চিঠি পেলেই আমরা এই জিআই পণ্যের যে সার্টিফিকেট তা গ্রহণ করার জন্য যাবো এবং এই আনন্দ উদযাপন করবো। ইতোপূর্বে আমরা জেলার বিজয়পুরের সাদামাটি জিআই পণ্যের সার্টিফিকেট গ্রহণ করেছি। জেলায় এমন আরো কোন পণ্য থেকে থাকলে সেগুলো অনুসন্ধান করে সেগুলো যেন জিআই পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় সে প্রচেষ্টা আমাদের থাকবে।

উল্লেখ্য,২০২১ সালে নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুরের সাদামাটি জিআই স্বীকৃতি পেয়েছিল। এবার বালিশ মিষ্টি জিআই স্বীকৃতি অর্জন করায় এটি জেলার জন্য আরেকটি সুনাম নিয়ে এলো।