London ০৭:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
রাণীনগরে মৌসুমী সমৃদ্ধির দিনভর নানা উন্নয়নমূলক কর্মসূচি কসবায় হেফাজতের নেতৃবৃন্দের সাথে কসবা-আখাউড়া এমপি পদপ্রার্থী প্রভাষক কাজী মঈনুদ্দিনের সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মত বিনিময় সিরাজগঞ্জে পলিথিনে মোড়ানো বস্তুয় অর্ধগলিত নবজাতক শিশুর মরা দেহ উদ্ধার কালিয়াকৈরে দোকানে মালামাল ও নগদ টাকা চুরি কসবায় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এমপি প্রার্থী প্রভাষক কাজী মোঃ মাঈনুদ্দিনের সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে স্কুল শিক্ষিকা ও চাঁদাবাজদের মাধ্যমে পরিকল্পিত অপপ্রচার রাজশাহীতে হিমাগারের ভাড়া কমালো কালিয়াকৈরে উপজেলা ও পৌর বিএনপির ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত সেই কথিত যুবদল নেতা আবার চাঁদাবাজি করতে গিয়ে জনতার হাতে আটক। নীরব পুলিশ! রাজশাহীতে করোনা সনাক্ত

এভারেস্টে পাওয়া শত বছর আগের পায়ের খণ্ডাংশটি কার

এভারেস্টে পায়ের খণ্ডাংশসহ খুঁজে পাওয়া এই জুতাটি ১০০ বছর ধরে নিখোঁজ পর্বতারোহী অ্যান্ড্রু কমিন ‘স্যান্ডি’ আরভিনের বলে ধারণা করা হচ্ছেছবি: এক্স

এভারেস্ট পর্বতমালায় গত মাসে পর্বতারোহীদের একটি দল যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন নেটওয়ার্ক ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের জন্য প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের দৃশ্য ধারণ করছিল। দলের এক সদস্য হঠাৎ জমাট বাঁধা একটি জুতায় হোঁচট খান। হিমবাহের বরফ গলে বেরিয়ে এসেছিল জুতাটি।

ধারণা করা হচ্ছে, এ জুতা অ্যান্ড্রু কমিন ‘স্যান্ডি’ আরভিন নামের একজন ব্রিটিশ পর্বতারোহীর। আজ থেকে শত বছর আগে ১৯২৪ সালের জুনে এভারেস্টের চূড়ায় উঠতে গিয়ে সঙ্গী জর্জ ম্যালোরিসহ হারিয়ে যান তিনি। এর পর থেকে আরভিনের খবরের অপেক্ষায় ছিল তাঁর পরিবার। জুতাটি বোধ হয় তাদের সেই অপেক্ষার অবসান ঘটাল।

জুতাটির সূত্র ধরে পাওয়া যেতে পারে পর্বতারোহণের বৈশ্বিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রহস্যগুলোর একটির সমাধান। ১৯৫৩ সালে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের বুকে প্রথম পা রাখেন এডমন্ড হিলারি ও তেনজিং নরগে। কিন্তু এর ২৯ বছর আগেই আরভিন ও ম্যালোরি এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিলেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরও পাওয়া যেতে পারে জুতাটির সূত্র ধরে।  

জুতাটির সূত্র ধরে পাওয়া যেতে পারে পর্বতারোহণের বৈশ্বিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রহস্যগুলোর একটির সমাধান। ১৯৫৩ সালে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের বুকে প্রথম পা রাখেন এডমন্ড হিলারি ও তেনজিং নরগে। কিন্তু এর ২৯ বছর আগেই আরভিন ও ম্যালোরি এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিলেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরও পাওয়া যেতে পারে জুতাটির সূত্র ধরে।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের প্রামাণ্য চলচ্চিত্রনির্মাতা দলের নেতৃত্বে ছিলেন সুপরিচিত পর্বতারোহী জিমি চিন। তিনি বলেন, জুতাটির ভেতরে একটি পায়ের খণ্ডাংশ ছিল। এ আবিষ্কারে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে জিমি বলেন, ‘এটি ছিল স্মরণীয় ও আবেগঘন মুহূর্ত।’

আরভিনের ভাগনির মেয়ে জুলি সামারসের কাছে বিষয়টি এককথায় অসাধারণ। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমার গা হিম হয়ে গেছে…আমরা তাঁকে (আরভিন) খুঁজে পাওয়ার সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম।’

অনেক মানুষ বছরের পর বছর আরভিনের মরদেহের সন্ধান করেছেন। এর আংশিক কারণ ছিল, সম্ভবত ২২ বছর বয়সী ওই পর্বতারোহীর কাছে থাকা ক্যামেরায় কিছু ভিডিও ছিল। তাতে তাঁর আর ম্যালোরির এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার ছবি থাকতে পারে।  

জুতাটির আবিষ্কার কি আরভিনের দেহ ও ক্যামেরা খুঁজে পাওয়ার প্রথম ধাপ

জুতার ভেতরে থাকা পায়ের খণ্ডাংশ সত্যিকার অর্থে আরভিনের কি না, তা নিশ্চিত হতে এরই মধ্যে তাঁর পরিবার ডিএনএ নমুনা দিয়েছে। তবে চলচ্চিত্রনির্মাতা দলটি অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী, জুতাটি আরভিনেরই। কারণ, জুতার ভেতরে যে মোজা পাওয়া গেছে তাতে সেলাই করে লেখা ছিল ‘এ সি আরভিন’।

পর্বতারোহী অ্যান্ড্রু কমিন ‘স্যান্ডি’ আরভিন (দাঁড়ানো অবস্থায় বাঁ থেকে দ্বিতীয়)

পর্বতারোহী অ্যান্ড্রু কমিন ‘স্যান্ডি’ আরভিন (দাঁড়ানো অবস্থায় বাঁ থেকে দ্বিতীয়)।ছবি: এক্স

চলচ্চিত্রনির্মাতা দলটি গত মাসে এভারেস্টের উত্তর দিক দিয়ে রংবুক হিমবাহ থেকে নেমে আসার সময় জুতাটি খুঁজে পায়। এর আগে ওই পথে তাঁরা একটি অক্সিজেনের বোতল পান। বোতলের গায়ে ১৯৩৩ সাল লেখা। ওই বছরই এভারেস্টে এক অভিযানকালে আরভিনের সঙ্গে থাকা একটি জিনিস পাওয়া গিয়েছিল।

বোতলটি দেখার পর চলচ্চিত্রনির্মাতা দলের মাঝে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। আরভিনের মরদেহ আশপাশেই থাকতে পারে—এমন ধারণা থেকে তাঁরা সাত দিন ধরে সেখানে খোঁজাখুঁজি করেন। একপর্যায়ে দলটির একজন দেখতে পান, গলতে থাকা বরফের ভেতর থেকে একটি জুতা উঁকি দিচ্ছে।

দলটি সৌভাগ্যবশতই জুতাটি খুঁজে পেয়েছে। কারণ, তাদের হিসাব অনুযায়ী, জুতাটি পাওয়ার মাত্র এক সপ্তাহ আগে সেখানকার হিমবাহ গলতে শুরু করেছিল।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পায়ের খণ্ডাংশসহ জুতাটি এভারেস্ট থেকে নিয়ে এসে চীনা পর্বতারোহী কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এভারেস্টের উত্তর দিক দেখভালের দায়িত্বে আছে ওই কর্তৃপক্ষ।

নিখোঁজ হওয়ার শততম বছরে আরভিনের উত্তরসূরিদের কাছে এ আবিষ্কার অনেক আবেগের। আরভিনের ভাগনির মেয়ে জুলি সামারস তাঁর নানির দুঃসাহসী অভিযাত্রী ও অক্সফোর্ড থেকে পড়াশোনা করা তরুণ ভাইয়ের (আরভিন) গল্প শুনে বড় হয়েছেন। তাঁরা আরভিনকে ‘আঙ্কেল স্যান্ডি’ বলেই জানতেন।

জুলি সামারস স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘আমার নানির বিছানার পাশে আরভিনের একটি ছবি ছিল। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছবিটি তিনি সেখানেই রেখে দিয়েছিলেন। নানি বলতেন, ‘‘আরভিনের মতো ভালো মানুষ হয় না।’’’

আরভিন ২২ বছর বয়সে নিখোঁজ হন। ওই সময় তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ পর্বতারোহী। তিনি ও ম্যালোরি বিশ্বের অনেক পর্বতারোহীর কাছেই দীর্ঘদিন ধরে আছেন কৌতূহলের বিষয় হয়ে। আরভিন ও ম্যালোরিকে সবশেষ দেখা গিয়েছিল ১৯২৪ সালের ৮ জুন। সেদিন এভারেস্টের চূড়ায় যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন  তাঁরা।  

১৯৯৯ সালে এক মার্কিন পর্বতারোহী ম্যালোরির মরদেহ খুঁজে পান। সাম্প্রতিক দশকগুলোয় আরভিন ও ম্যালোরির দেহাবশেষ অনুসন্ধানের বিষয়টি বিতর্কের মুখে পড়েছে। তাঁদের মরদেহ সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলেও কথিত আছে। তবে জুলি সামারস সব সময় এসব গল্প ও সন্দেহ উড়িয়ে দিয়েছেন। জিমি চিন যখন তাঁকে কল করে জানান, আরভিনের দেহাবশেষ এখনো এভারেস্টেই আছে, তখন জুলি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন।

কিন্তু কেমন হবে, যদি প্রমাণিত হয় যে আরভিন ও ম্যালোরি এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছাতে পেরেছিলেন? তবে কি পর্বতারোহণের গোটা ইতিহাস বদলে যাবে? কারণ, এমনটি হলে তাঁরাই হবেন এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখা প্রথম মানব।
সামার বলেন, ‘এটি হলে খুবই ভালো হবে, আমরা সবাই অনেক গর্ব করব। আরভিনের সঙ্গে যে ক্যামেরা ছিল বলে বিশ্বাস করা হয়, সেটির কোনো ছবি পেলেই আমরা প্রকৃত ঘটনা জানতে পারব। এখন থেকে ক্যামেরাটির খোঁজ অব্যাহত থাকবে বলেই মনে হচ্ছে।’

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৯:৩০:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪
৪৮
Translate »

এভারেস্টে পাওয়া শত বছর আগের পায়ের খণ্ডাংশটি কার

আপডেট : ০৯:৩০:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪

এভারেস্টে পায়ের খণ্ডাংশসহ খুঁজে পাওয়া এই জুতাটি ১০০ বছর ধরে নিখোঁজ পর্বতারোহী অ্যান্ড্রু কমিন ‘স্যান্ডি’ আরভিনের বলে ধারণা করা হচ্ছেছবি: এক্স

এভারেস্ট পর্বতমালায় গত মাসে পর্বতারোহীদের একটি দল যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন নেটওয়ার্ক ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের জন্য প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের দৃশ্য ধারণ করছিল। দলের এক সদস্য হঠাৎ জমাট বাঁধা একটি জুতায় হোঁচট খান। হিমবাহের বরফ গলে বেরিয়ে এসেছিল জুতাটি।

ধারণা করা হচ্ছে, এ জুতা অ্যান্ড্রু কমিন ‘স্যান্ডি’ আরভিন নামের একজন ব্রিটিশ পর্বতারোহীর। আজ থেকে শত বছর আগে ১৯২৪ সালের জুনে এভারেস্টের চূড়ায় উঠতে গিয়ে সঙ্গী জর্জ ম্যালোরিসহ হারিয়ে যান তিনি। এর পর থেকে আরভিনের খবরের অপেক্ষায় ছিল তাঁর পরিবার। জুতাটি বোধ হয় তাদের সেই অপেক্ষার অবসান ঘটাল।

জুতাটির সূত্র ধরে পাওয়া যেতে পারে পর্বতারোহণের বৈশ্বিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রহস্যগুলোর একটির সমাধান। ১৯৫৩ সালে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের বুকে প্রথম পা রাখেন এডমন্ড হিলারি ও তেনজিং নরগে। কিন্তু এর ২৯ বছর আগেই আরভিন ও ম্যালোরি এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিলেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরও পাওয়া যেতে পারে জুতাটির সূত্র ধরে।  

জুতাটির সূত্র ধরে পাওয়া যেতে পারে পর্বতারোহণের বৈশ্বিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রহস্যগুলোর একটির সমাধান। ১৯৫৩ সালে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের বুকে প্রথম পা রাখেন এডমন্ড হিলারি ও তেনজিং নরগে। কিন্তু এর ২৯ বছর আগেই আরভিন ও ম্যালোরি এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিলেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরও পাওয়া যেতে পারে জুতাটির সূত্র ধরে।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের প্রামাণ্য চলচ্চিত্রনির্মাতা দলের নেতৃত্বে ছিলেন সুপরিচিত পর্বতারোহী জিমি চিন। তিনি বলেন, জুতাটির ভেতরে একটি পায়ের খণ্ডাংশ ছিল। এ আবিষ্কারে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে জিমি বলেন, ‘এটি ছিল স্মরণীয় ও আবেগঘন মুহূর্ত।’

আরভিনের ভাগনির মেয়ে জুলি সামারসের কাছে বিষয়টি এককথায় অসাধারণ। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমার গা হিম হয়ে গেছে…আমরা তাঁকে (আরভিন) খুঁজে পাওয়ার সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম।’

অনেক মানুষ বছরের পর বছর আরভিনের মরদেহের সন্ধান করেছেন। এর আংশিক কারণ ছিল, সম্ভবত ২২ বছর বয়সী ওই পর্বতারোহীর কাছে থাকা ক্যামেরায় কিছু ভিডিও ছিল। তাতে তাঁর আর ম্যালোরির এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার ছবি থাকতে পারে।  

জুতাটির আবিষ্কার কি আরভিনের দেহ ও ক্যামেরা খুঁজে পাওয়ার প্রথম ধাপ

জুতার ভেতরে থাকা পায়ের খণ্ডাংশ সত্যিকার অর্থে আরভিনের কি না, তা নিশ্চিত হতে এরই মধ্যে তাঁর পরিবার ডিএনএ নমুনা দিয়েছে। তবে চলচ্চিত্রনির্মাতা দলটি অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী, জুতাটি আরভিনেরই। কারণ, জুতার ভেতরে যে মোজা পাওয়া গেছে তাতে সেলাই করে লেখা ছিল ‘এ সি আরভিন’।

পর্বতারোহী অ্যান্ড্রু কমিন ‘স্যান্ডি’ আরভিন (দাঁড়ানো অবস্থায় বাঁ থেকে দ্বিতীয়)

পর্বতারোহী অ্যান্ড্রু কমিন ‘স্যান্ডি’ আরভিন (দাঁড়ানো অবস্থায় বাঁ থেকে দ্বিতীয়)।ছবি: এক্স

চলচ্চিত্রনির্মাতা দলটি গত মাসে এভারেস্টের উত্তর দিক দিয়ে রংবুক হিমবাহ থেকে নেমে আসার সময় জুতাটি খুঁজে পায়। এর আগে ওই পথে তাঁরা একটি অক্সিজেনের বোতল পান। বোতলের গায়ে ১৯৩৩ সাল লেখা। ওই বছরই এভারেস্টে এক অভিযানকালে আরভিনের সঙ্গে থাকা একটি জিনিস পাওয়া গিয়েছিল।

বোতলটি দেখার পর চলচ্চিত্রনির্মাতা দলের মাঝে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। আরভিনের মরদেহ আশপাশেই থাকতে পারে—এমন ধারণা থেকে তাঁরা সাত দিন ধরে সেখানে খোঁজাখুঁজি করেন। একপর্যায়ে দলটির একজন দেখতে পান, গলতে থাকা বরফের ভেতর থেকে একটি জুতা উঁকি দিচ্ছে।

দলটি সৌভাগ্যবশতই জুতাটি খুঁজে পেয়েছে। কারণ, তাদের হিসাব অনুযায়ী, জুতাটি পাওয়ার মাত্র এক সপ্তাহ আগে সেখানকার হিমবাহ গলতে শুরু করেছিল।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পায়ের খণ্ডাংশসহ জুতাটি এভারেস্ট থেকে নিয়ে এসে চীনা পর্বতারোহী কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এভারেস্টের উত্তর দিক দেখভালের দায়িত্বে আছে ওই কর্তৃপক্ষ।

নিখোঁজ হওয়ার শততম বছরে আরভিনের উত্তরসূরিদের কাছে এ আবিষ্কার অনেক আবেগের। আরভিনের ভাগনির মেয়ে জুলি সামারস তাঁর নানির দুঃসাহসী অভিযাত্রী ও অক্সফোর্ড থেকে পড়াশোনা করা তরুণ ভাইয়ের (আরভিন) গল্প শুনে বড় হয়েছেন। তাঁরা আরভিনকে ‘আঙ্কেল স্যান্ডি’ বলেই জানতেন।

জুলি সামারস স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘আমার নানির বিছানার পাশে আরভিনের একটি ছবি ছিল। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছবিটি তিনি সেখানেই রেখে দিয়েছিলেন। নানি বলতেন, ‘‘আরভিনের মতো ভালো মানুষ হয় না।’’’

আরভিন ২২ বছর বয়সে নিখোঁজ হন। ওই সময় তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ পর্বতারোহী। তিনি ও ম্যালোরি বিশ্বের অনেক পর্বতারোহীর কাছেই দীর্ঘদিন ধরে আছেন কৌতূহলের বিষয় হয়ে। আরভিন ও ম্যালোরিকে সবশেষ দেখা গিয়েছিল ১৯২৪ সালের ৮ জুন। সেদিন এভারেস্টের চূড়ায় যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন  তাঁরা।  

১৯৯৯ সালে এক মার্কিন পর্বতারোহী ম্যালোরির মরদেহ খুঁজে পান। সাম্প্রতিক দশকগুলোয় আরভিন ও ম্যালোরির দেহাবশেষ অনুসন্ধানের বিষয়টি বিতর্কের মুখে পড়েছে। তাঁদের মরদেহ সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলেও কথিত আছে। তবে জুলি সামারস সব সময় এসব গল্প ও সন্দেহ উড়িয়ে দিয়েছেন। জিমি চিন যখন তাঁকে কল করে জানান, আরভিনের দেহাবশেষ এখনো এভারেস্টেই আছে, তখন জুলি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন।

কিন্তু কেমন হবে, যদি প্রমাণিত হয় যে আরভিন ও ম্যালোরি এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছাতে পেরেছিলেন? তবে কি পর্বতারোহণের গোটা ইতিহাস বদলে যাবে? কারণ, এমনটি হলে তাঁরাই হবেন এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখা প্রথম মানব।
সামার বলেন, ‘এটি হলে খুবই ভালো হবে, আমরা সবাই অনেক গর্ব করব। আরভিনের সঙ্গে যে ক্যামেরা ছিল বলে বিশ্বাস করা হয়, সেটির কোনো ছবি পেলেই আমরা প্রকৃত ঘটনা জানতে পারব। এখন থেকে ক্যামেরাটির খোঁজ অব্যাহত থাকবে বলেই মনে হচ্ছে।’