London ১০:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এনজিওর মামলায় দুই শিশুসহ মা গ্রেফতার, শহরজুড়ে নিন্দা

উপজেলা প্রতিনিধি সাভার (ঢাকা)

মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর। ঘড়ির কাটায় তখন রাত ৩.১৫ মিনিট। থানার ভেতর থেকে ভেসে আসছে শিশুর কান্নার আওয়াজ। কৌতূহল নিয়ে থানার ভেতরে প্রবেশ করতেই কান্নার তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। কাছে গিয়ে দেখা যায়, এক নারী দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে একটি কক্ষে আটক আছেন।

জানতে চাইলে ওই নারী বলেন, আমি জানি না, কেন তারা আমাকে গ্রেফতার করেছে। শুধু শুনেছি আমার স্বামী নাকি কিস্তি দিতে পারেনাই। তাই তারা আমার নামে মামলা দিয়েছে। অথচ আমি কোনো এনজিও থেকে টাকাই তুলিনি। তারা আমার স্বামীকে কিছু না বলে আমাকে ধরে এনেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বছর খানেক আগে ‘দি ঢাকা মার্কেন্টাইল ব্যাংক কোঅপারেটিভ লি.’ নামের একটি এনজিওর পল্লীবিদ্যুৎ শাখা থেকে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা ঋণ নেন ওই নারীর স্বামী মনির হোসেন। ঋণের ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও প্রায় এক লাখ টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হন। পরে এনজিও কর্তৃপক্ষ চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ঋণগ্রহীতা মনির হোসেনের স্ত্রী হানিয়া বেগমকে আসামি করা হয়। পরে পুলিশ তাকে ও আড়াই বছরের ছেলে রায়হান এবং ১৪ মাস বয়সী ছেলে মাশরাফকে থানায় নিয়ে আসে।

গ্রেফতার নারীর স্বামী মনির হোসেন বলেন, ঋণ নিয়েছি আমি। আমাকে গ্রেফতার না করে তারা আমার স্ত্রী সন্তানকে থানায় নিয়ে আসছে। ছোট্ট ব্যবসা করতাম, লোকসানের মুখে পড়ায় কিস্তি দিতে কিছুটা সময় নিচ্ছি।

গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া পুলিশের উপ-পরিদর্শক নজরুল ইসলাম বলেন, হানিয়া বেগমের নামে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় তাকে আটক করা হয়েছে। সঙ্গে তার দুই শিশু সন্তানও রয়েছে, তারা বুকের দুধ খায় তাই রেখে আসতে পারিনি।

বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় বেশ সমালোচনার জন্ম দেয়। খোদ পুলিশেও সৃষ্টি হয়েছে সমালোচনা।

পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক বলেন, ছোট ছোট বাচ্চা দুটিকে নিয়ে আসা ঠিক হয়নি। সারারাত শীতে কষ্ট করেছে, কান্নাকাটি করেছে। হয় তাকে আদালত থেকে জামিন নিতে বলে চলে আসতে হতো, না হয় বাচ্চা দুটিকে কোনো আত্মীয়র কাছে রেখে আসা উচিত ছিল। এখন যে কেউ বাচ্চা দুটিকে দেখলে পুলিশের বিরুদ্ধে খারাপ ধারণা করবে।

স্থানীয় লাল মিয়া বলেন, এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন। সমাজে দাপটের সঙ্গে একাধিক মামলার আসামিরা ঘোরাফেরা করছেন। কেউ হত্যা মামলার আসামি হয়েও রাতে বাসায় ঘুমাচ্ছেন, অথচ সামান্য কয়টা টাকার জন্য দুই দুধের শিশুকে থানায় নিয়ে আসা কতটুকু যৌক্তিক। টাকা দেওয়ার এবিলিটি থাকলে কেউ এনজিও থেকে লোন নেয় না, কিস্তি পরিশোধ করতে তাকে আরও কিছু সময় দেওয়া উচিত ছিল।

বিষয়টি নিয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সুশাসনের জন্য নাগরিকের ঢাকা বিভাগের সমন্বয়কারী জিল্লুর রহমান বলেন, এই শীতে বাচ্চা দুটিকে থানায় রাখা অমানবিক। পুলিশ ইচ্ছা করলে বাচ্চা দুটিকে আরও ভালো সুরক্ষা দিতে পারতো। কারণ ওসির অনেক দায়িত্ব ছিল। ওই নারীতো আর হত্যা কিংবা বড় কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত না।

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, এটা দুঃখজনক, এখনই দেখছি। তবে রাত পার হলেও বাচ্চা দুইটির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি তাকে।

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৪:১৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
১৯
Translate »

এনজিওর মামলায় দুই শিশুসহ মা গ্রেফতার, শহরজুড়ে নিন্দা

আপডেট : ০৪:১৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর। ঘড়ির কাটায় তখন রাত ৩.১৫ মিনিট। থানার ভেতর থেকে ভেসে আসছে শিশুর কান্নার আওয়াজ। কৌতূহল নিয়ে থানার ভেতরে প্রবেশ করতেই কান্নার তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। কাছে গিয়ে দেখা যায়, এক নারী দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে একটি কক্ষে আটক আছেন।

জানতে চাইলে ওই নারী বলেন, আমি জানি না, কেন তারা আমাকে গ্রেফতার করেছে। শুধু শুনেছি আমার স্বামী নাকি কিস্তি দিতে পারেনাই। তাই তারা আমার নামে মামলা দিয়েছে। অথচ আমি কোনো এনজিও থেকে টাকাই তুলিনি। তারা আমার স্বামীকে কিছু না বলে আমাকে ধরে এনেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বছর খানেক আগে ‘দি ঢাকা মার্কেন্টাইল ব্যাংক কোঅপারেটিভ লি.’ নামের একটি এনজিওর পল্লীবিদ্যুৎ শাখা থেকে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা ঋণ নেন ওই নারীর স্বামী মনির হোসেন। ঋণের ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও প্রায় এক লাখ টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হন। পরে এনজিও কর্তৃপক্ষ চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ঋণগ্রহীতা মনির হোসেনের স্ত্রী হানিয়া বেগমকে আসামি করা হয়। পরে পুলিশ তাকে ও আড়াই বছরের ছেলে রায়হান এবং ১৪ মাস বয়সী ছেলে মাশরাফকে থানায় নিয়ে আসে।

গ্রেফতার নারীর স্বামী মনির হোসেন বলেন, ঋণ নিয়েছি আমি। আমাকে গ্রেফতার না করে তারা আমার স্ত্রী সন্তানকে থানায় নিয়ে আসছে। ছোট্ট ব্যবসা করতাম, লোকসানের মুখে পড়ায় কিস্তি দিতে কিছুটা সময় নিচ্ছি।

গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া পুলিশের উপ-পরিদর্শক নজরুল ইসলাম বলেন, হানিয়া বেগমের নামে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় তাকে আটক করা হয়েছে। সঙ্গে তার দুই শিশু সন্তানও রয়েছে, তারা বুকের দুধ খায় তাই রেখে আসতে পারিনি।

বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় বেশ সমালোচনার জন্ম দেয়। খোদ পুলিশেও সৃষ্টি হয়েছে সমালোচনা।

পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক বলেন, ছোট ছোট বাচ্চা দুটিকে নিয়ে আসা ঠিক হয়নি। সারারাত শীতে কষ্ট করেছে, কান্নাকাটি করেছে। হয় তাকে আদালত থেকে জামিন নিতে বলে চলে আসতে হতো, না হয় বাচ্চা দুটিকে কোনো আত্মীয়র কাছে রেখে আসা উচিত ছিল। এখন যে কেউ বাচ্চা দুটিকে দেখলে পুলিশের বিরুদ্ধে খারাপ ধারণা করবে।

স্থানীয় লাল মিয়া বলেন, এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন। সমাজে দাপটের সঙ্গে একাধিক মামলার আসামিরা ঘোরাফেরা করছেন। কেউ হত্যা মামলার আসামি হয়েও রাতে বাসায় ঘুমাচ্ছেন, অথচ সামান্য কয়টা টাকার জন্য দুই দুধের শিশুকে থানায় নিয়ে আসা কতটুকু যৌক্তিক। টাকা দেওয়ার এবিলিটি থাকলে কেউ এনজিও থেকে লোন নেয় না, কিস্তি পরিশোধ করতে তাকে আরও কিছু সময় দেওয়া উচিত ছিল।

বিষয়টি নিয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সুশাসনের জন্য নাগরিকের ঢাকা বিভাগের সমন্বয়কারী জিল্লুর রহমান বলেন, এই শীতে বাচ্চা দুটিকে থানায় রাখা অমানবিক। পুলিশ ইচ্ছা করলে বাচ্চা দুটিকে আরও ভালো সুরক্ষা দিতে পারতো। কারণ ওসির অনেক দায়িত্ব ছিল। ওই নারীতো আর হত্যা কিংবা বড় কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত না।

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, এটা দুঃখজনক, এখনই দেখছি। তবে রাত পার হলেও বাচ্চা দুইটির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি তাকে।