London ০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসরায়েলের কারাগার: কেউ বেরোচ্ছেন নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে, কেউ ধর্ষণের শিকার বা মানসিক রোগী হয়ে

ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দী মোয়াজাজ ওবাইয়েত পশ্চিম তীরের হেবরন শহরের কাছে হাঁটছেন, ৮ জুলাই ২০২৪ ছবি: রয়টার্স

একসময় সুঠাম দেহের অধিকারী ও শক্তিশালী মানুষ ছিলেন মোয়াজাজ ওবাইয়েত। পরে ইসরায়েলি বাহিনী তাঁকে আটক করে ৯ মাস কারাগারে বন্দী করে রাখে। সদ্য বিদায় নেওয়া বছরের জুলাই মাসে সেখান থেকে মুক্তি পান তিনি। তবে অন্যের সহায়তা ছাড়া ফিলিস্তিনি এ শরীরবিদ হাঁটতে পারতেন না। তিন মাস পর গত অক্টোবরে তাঁকে আবারও ধরে নিয়ে গেছেন ইসরায়েলের সেনারা।

দ্বিতীয়বার আটক হওয়ার আগে পাঁচ সন্তানের বাবা ৩৭ বছর বয়সী মোয়াজাজ শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। পশ্চিম তীরের বেথলেহেম সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালে পরীক্ষায় তীব্র পিটিএসডি রোগ ধরা পড়ে তাঁর। হাসপাতালটি থেকে রয়টার্সের সংগ্রহ করা চিকিৎসকদের নোট অনুযায়ী, ইসরায়েলের প্রত্যন্ত কেতজিয়ত কারাগারে থাকার সঙ্গে এ রোগের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

ভবিষ্যৎ কোনো চুক্তির আওতায় ইসরায়েলের কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি বন্দীরা মুক্তি পেলে তাঁদের অনেককেই শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হবে।

কাদৌরা ফেয়ারস, ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী ফিলিস্তিনিবিষয়ক কমিশনের প্রধান

নোটে বলা হয়, মোয়াজাজ ওবাইয়েত ‘শারীরিক ও মানসিকভাবে সহিংস আচরণ ও নির্যাতনের শিকার।’ তাঁর রোগের নানা রকম উপসর্গের একটি ভীষণ উদ্বেগ।

শুধু মোয়াজাজই নন, তাঁর মতো যেসব ফিলিস্তিনিই ইসরায়েলের কারাগার বা বন্দিশালাগুলোতে কাটিয়েছেন, তাঁদের কেউ পরে আর স্বাভাবিক অবস্থায় বের হননি। কারও দেহে রয়েছে নির্যাতনের ক্ষত। কাউকে বন্দী অবস্থায় ধর্ষণ করা হয়েছে। কেউবা বেরিয়েছেন মানসিক রোগী হয়ে।

দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে লড়াইয়ে লিপ্ত ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলের নারকীয় তাণ্ডবে পুরো গাজা একরকম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। উপত্যকাটিতে নিহত হয়েছেন অর্ধলাখের কাছাকাছি মানুষ। মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্যে সেখানে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীরা।

অব্যাহত আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা হলে জিম্মিমুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েল থেকে ছাড়া পেতে পারেন গাজা যুদ্ধ শুরুর আগে-পরে বন্দী হওয়া হাজারও ফিলিস্তিনি। এমন প্রেক্ষাপটে দেশটির কারাগারগুলোতে এসব বন্দীকে নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকা এবং শারীরিক-মানসিক নিষ্ঠুরতার ক্ষত নিয়ে ফিরে আসার সম্ভাবনার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে।

অব্যাহত এ প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা হলে জিম্মিমুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েল থেকে ছাড়া পেতে পারেন গাজা যুদ্ধ শুরুর আগে-পরে বন্দী হওয়া হাজারও ফিলিস্তিনি। এমন প্রেক্ষাপটে দেশটির কারাগারগুলোতে এসব বন্দীকে নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকা এবং শারীরিক-মানসিক নিষ্ঠুরতার ক্ষত নিয়ে ফিরে আসার সম্ভাবনার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে।

ফিলিস্তিনি বন্দী মোয়াজাজ ওবাইয়েতের সুস্থ অবস্থার এ ছবি পশ্চিম তীরের বেথলেহেম শহরের কাছে একটি শরীরচর্চা কেন্দ্র থেকে তোলা। ছবিটি কবে তোলা জানা যায়নি
ফিলিস্তিনি বন্দী মোয়াজাজ ওবাইয়েতের সুস্থ অবস্থার এ ছবি পশ্চিম তীরের বেথলেহেম শহরের কাছে একটি শরীরচর্চা কেন্দ্র থেকে তোলা। ছবিটি কবে তোলা জানা যায়নি ছবি: রয়টার্সের সংগৃহীত

এ প্রসঙ্গে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী ফিলিস্তিনি ও সাবেক বন্দীবিষয়ক ফিলিস্তিনি কমিশনের প্রধান কাদৌরা ফেয়ারস বলেন, ‘ভবিষ্যৎ কোনো চুক্তির আওতায় ইসরায়েলের কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি বন্দীরা মুক্তি পেলে তাঁদের অনেককেই শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হবে।’ ওবাইয়েতের ঘটনা সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন বলে জানান কাদৌরি।

এ প্রতিবেদন তৈরি করতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলের হাতে আটক হওয়া ফিলিস্তিনিদের মধ্যে চারজনের সঙ্গে কথা বলেছে। চারজনের সবাইকে ‘অবৈধ’ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ তুলে আটক করা হয়। কয়েক মাস কারাগারে আটকে রেখে কোনো রকম অপরাধে দোষী সাব্যস্ত বা আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করা ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হয় তাঁদের।

৭ অক্টোবরের (২০২৩ সাল) পর ইসরায়েলের কারাগারাগুলোতে নির্যাতনের ঘটনার রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটেছে। ফিলিস্তিনি সমাজব্যবস্থায় এর বিপর্যয়কর প্রভাব পড়বে এবং ইতিমধ্যে, তা পড়তেও শুরু করেছে।

তাল স্টেইনার, ইসরায়েলি অধিকার গ্রুপ পাবলিক কমিটি অ্যাগেইনস্ট টর্চার ইন ইসরায়েলের নির্বাহী পরিচালক

এসব ফিলিস্তিনির প্রত্যেকেই বন্দী অবস্থায় মারধরের শিকার হওয়া, খাবার ও ঘুম থেকে বঞ্চনা এবং কঠিন পরিস্থিতিতে দীর্ঘসময় থাকতে বাধ্য হওয়ার কথা জানিয়েছেন। রয়টার্স তাঁদের এ বক্তব্য নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি।

তবে, মুক্তিপ্রাপ্ত এসব বন্দীর বর্ণনার সঙ্গে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী নির্যাতন নিয়ে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার তদন্তে উঠে আসা তথ্যের মিল রয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় গত আগস্টে এমনই একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলি কারাগারগুলোতে বন্দীদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো, যৌন সহিংসতা ও ধর্ষণ এবং তাঁদের ভয়ানক অমানবিক পরিস্থিতিতে রাখার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

বন্দী নির্যাতন ও ধর্ষণ নিয়ে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনকে ‘গভীর উদ্বেগের’ বলে ওই সময় আখ্যায়িত করেছিল হোয়াইট হাউস।

এদিকে ফিলিস্তিনি বন্দীদের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ নিয়ে রয়টার্স জানতে চাইলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, বন্দী নির্যাতনের অভিযোগের কয়েকটি খতিয়ে দেখছে তারা। কিন্তু কারাগারগুলোতে পরিকল্পিতভাবে বন্দী নির্যাতনের অভিযোগ তারা নাকচ করে দিয়েছে।

ইসরায়েলের কারাগারে নির্যাতনের কথা বললেন মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিরা

এ ছাড়া নির্যাতনের পৃথক পৃথক ঘটনার ওপর মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। দেশটির উগ্র-ডান জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গিভিরের কার্যালয় বলেছে, ইসরায়েলি কারাগারগুলোতে ‘সন্ত্রাসীদের’ যথাযথভাবে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী এসব কারাগার পরিচালিত হয়।

তাল স্টেইনার ইসরায়েলি অধিকার গ্রুপ পাবলিক কমিটি অ্যাগেইনস্ট টর্চার ইন ইসরায়েলের (পিসিএটিআই) নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, মুক্তি পাওয়া বন্দীরা নির্যাতনের যেসব বর্ণনা দিয়েছেন, সেসব অভিন্ন প্রকৃতির। তাঁদের এ ক্ষত সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হতে পারে। এসব ঘটনা তাঁদের পরিবারগুলোকেও প্রায় এলোমেলো করে দিচ্ছে।

স্টেইনার আরও বলেন, ‘৭ অক্টোবরের পর ইসরায়েলের কারাগারাগুলোতে নির্যাতনের ঘটনার রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটেছে। ফিলিস্তিনি সমাজব্যবস্থায় এর বিপর্যয়কর প্রভাব পড়বে এবং ইতিমধ্যে, তা পড়তেও শুরু করেছে।’

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৬:২১:২৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫
১২
Translate »

ইসরায়েলের কারাগার: কেউ বেরোচ্ছেন নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে, কেউ ধর্ষণের শিকার বা মানসিক রোগী হয়ে

আপডেট : ০৬:২১:২৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫

একসময় সুঠাম দেহের অধিকারী ও শক্তিশালী মানুষ ছিলেন মোয়াজাজ ওবাইয়েত। পরে ইসরায়েলি বাহিনী তাঁকে আটক করে ৯ মাস কারাগারে বন্দী করে রাখে। সদ্য বিদায় নেওয়া বছরের জুলাই মাসে সেখান থেকে মুক্তি পান তিনি। তবে অন্যের সহায়তা ছাড়া ফিলিস্তিনি এ শরীরবিদ হাঁটতে পারতেন না। তিন মাস পর গত অক্টোবরে তাঁকে আবারও ধরে নিয়ে গেছেন ইসরায়েলের সেনারা।

দ্বিতীয়বার আটক হওয়ার আগে পাঁচ সন্তানের বাবা ৩৭ বছর বয়সী মোয়াজাজ শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। পশ্চিম তীরের বেথলেহেম সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালে পরীক্ষায় তীব্র পিটিএসডি রোগ ধরা পড়ে তাঁর। হাসপাতালটি থেকে রয়টার্সের সংগ্রহ করা চিকিৎসকদের নোট অনুযায়ী, ইসরায়েলের প্রত্যন্ত কেতজিয়ত কারাগারে থাকার সঙ্গে এ রোগের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

ভবিষ্যৎ কোনো চুক্তির আওতায় ইসরায়েলের কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি বন্দীরা মুক্তি পেলে তাঁদের অনেককেই শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হবে।

কাদৌরা ফেয়ারস, ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী ফিলিস্তিনিবিষয়ক কমিশনের প্রধান

নোটে বলা হয়, মোয়াজাজ ওবাইয়েত ‘শারীরিক ও মানসিকভাবে সহিংস আচরণ ও নির্যাতনের শিকার।’ তাঁর রোগের নানা রকম উপসর্গের একটি ভীষণ উদ্বেগ।

শুধু মোয়াজাজই নন, তাঁর মতো যেসব ফিলিস্তিনিই ইসরায়েলের কারাগার বা বন্দিশালাগুলোতে কাটিয়েছেন, তাঁদের কেউ পরে আর স্বাভাবিক অবস্থায় বের হননি। কারও দেহে রয়েছে নির্যাতনের ক্ষত। কাউকে বন্দী অবস্থায় ধর্ষণ করা হয়েছে। কেউবা বেরিয়েছেন মানসিক রোগী হয়ে।

দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে লড়াইয়ে লিপ্ত ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলের নারকীয় তাণ্ডবে পুরো গাজা একরকম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। উপত্যকাটিতে নিহত হয়েছেন অর্ধলাখের কাছাকাছি মানুষ। মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্যে সেখানে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীরা।

অব্যাহত আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা হলে জিম্মিমুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েল থেকে ছাড়া পেতে পারেন গাজা যুদ্ধ শুরুর আগে-পরে বন্দী হওয়া হাজারও ফিলিস্তিনি। এমন প্রেক্ষাপটে দেশটির কারাগারগুলোতে এসব বন্দীকে নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকা এবং শারীরিক-মানসিক নিষ্ঠুরতার ক্ষত নিয়ে ফিরে আসার সম্ভাবনার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে।

অব্যাহত এ প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা হলে জিম্মিমুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েল থেকে ছাড়া পেতে পারেন গাজা যুদ্ধ শুরুর আগে-পরে বন্দী হওয়া হাজারও ফিলিস্তিনি। এমন প্রেক্ষাপটে দেশটির কারাগারগুলোতে এসব বন্দীকে নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকা এবং শারীরিক-মানসিক নিষ্ঠুরতার ক্ষত নিয়ে ফিরে আসার সম্ভাবনার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে।

ফিলিস্তিনি বন্দী মোয়াজাজ ওবাইয়েতের সুস্থ অবস্থার এ ছবি পশ্চিম তীরের বেথলেহেম শহরের কাছে একটি শরীরচর্চা কেন্দ্র থেকে তোলা। ছবিটি কবে তোলা জানা যায়নি
ফিলিস্তিনি বন্দী মোয়াজাজ ওবাইয়েতের সুস্থ অবস্থার এ ছবি পশ্চিম তীরের বেথলেহেম শহরের কাছে একটি শরীরচর্চা কেন্দ্র থেকে তোলা। ছবিটি কবে তোলা জানা যায়নি ছবি: রয়টার্সের সংগৃহীত

এ প্রসঙ্গে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী ফিলিস্তিনি ও সাবেক বন্দীবিষয়ক ফিলিস্তিনি কমিশনের প্রধান কাদৌরা ফেয়ারস বলেন, ‘ভবিষ্যৎ কোনো চুক্তির আওতায় ইসরায়েলের কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি বন্দীরা মুক্তি পেলে তাঁদের অনেককেই শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হবে।’ ওবাইয়েতের ঘটনা সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন বলে জানান কাদৌরি।

এ প্রতিবেদন তৈরি করতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলের হাতে আটক হওয়া ফিলিস্তিনিদের মধ্যে চারজনের সঙ্গে কথা বলেছে। চারজনের সবাইকে ‘অবৈধ’ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ তুলে আটক করা হয়। কয়েক মাস কারাগারে আটকে রেখে কোনো রকম অপরাধে দোষী সাব্যস্ত বা আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করা ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হয় তাঁদের।

৭ অক্টোবরের (২০২৩ সাল) পর ইসরায়েলের কারাগারাগুলোতে নির্যাতনের ঘটনার রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটেছে। ফিলিস্তিনি সমাজব্যবস্থায় এর বিপর্যয়কর প্রভাব পড়বে এবং ইতিমধ্যে, তা পড়তেও শুরু করেছে।

তাল স্টেইনার, ইসরায়েলি অধিকার গ্রুপ পাবলিক কমিটি অ্যাগেইনস্ট টর্চার ইন ইসরায়েলের নির্বাহী পরিচালক

এসব ফিলিস্তিনির প্রত্যেকেই বন্দী অবস্থায় মারধরের শিকার হওয়া, খাবার ও ঘুম থেকে বঞ্চনা এবং কঠিন পরিস্থিতিতে দীর্ঘসময় থাকতে বাধ্য হওয়ার কথা জানিয়েছেন। রয়টার্স তাঁদের এ বক্তব্য নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি।

তবে, মুক্তিপ্রাপ্ত এসব বন্দীর বর্ণনার সঙ্গে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী নির্যাতন নিয়ে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার তদন্তে উঠে আসা তথ্যের মিল রয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় গত আগস্টে এমনই একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলি কারাগারগুলোতে বন্দীদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো, যৌন সহিংসতা ও ধর্ষণ এবং তাঁদের ভয়ানক অমানবিক পরিস্থিতিতে রাখার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

বন্দী নির্যাতন ও ধর্ষণ নিয়ে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনকে ‘গভীর উদ্বেগের’ বলে ওই সময় আখ্যায়িত করেছিল হোয়াইট হাউস।

এদিকে ফিলিস্তিনি বন্দীদের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ নিয়ে রয়টার্স জানতে চাইলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, বন্দী নির্যাতনের অভিযোগের কয়েকটি খতিয়ে দেখছে তারা। কিন্তু কারাগারগুলোতে পরিকল্পিতভাবে বন্দী নির্যাতনের অভিযোগ তারা নাকচ করে দিয়েছে।

ইসরায়েলের কারাগারে নির্যাতনের কথা বললেন মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিরা

এ ছাড়া নির্যাতনের পৃথক পৃথক ঘটনার ওপর মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। দেশটির উগ্র-ডান জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গিভিরের কার্যালয় বলেছে, ইসরায়েলি কারাগারগুলোতে ‘সন্ত্রাসীদের’ যথাযথভাবে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী এসব কারাগার পরিচালিত হয়।

তাল স্টেইনার ইসরায়েলি অধিকার গ্রুপ পাবলিক কমিটি অ্যাগেইনস্ট টর্চার ইন ইসরায়েলের (পিসিএটিআই) নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, মুক্তি পাওয়া বন্দীরা নির্যাতনের যেসব বর্ণনা দিয়েছেন, সেসব অভিন্ন প্রকৃতির। তাঁদের এ ক্ষত সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হতে পারে। এসব ঘটনা তাঁদের পরিবারগুলোকেও প্রায় এলোমেলো করে দিচ্ছে।

স্টেইনার আরও বলেন, ‘৭ অক্টোবরের পর ইসরায়েলের কারাগারাগুলোতে নির্যাতনের ঘটনার রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটেছে। ফিলিস্তিনি সমাজব্যবস্থায় এর বিপর্যয়কর প্রভাব পড়বে এবং ইতিমধ্যে, তা পড়তেও শুরু করেছে।’