London ১০:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ মার্চ ২০২৫, ২১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইলিশ ধ্বংসে আওয়ামী লীগের সঙ্গে এখন বিএনপিও যুক্ত হয়েছে

ইলিশ মাছফাইল ছবি

ভোলায় মেঘনার মোহনায় অবৈধ বেহুন্দি জাল দিয়ে এখনো জাটকা ধরে বেড়ান একদল জেলে। নদীতে ওই সব জেলেকে দেখা গেলেও এদের পেছনে আছে এক বিশাল চক্র। এ চক্রের দলনেতা বা পালের গোদা হচ্ছেন সকেট জামাল নামের এক ব্যবসায়ী। এ চক্রে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একদল নেতা জড়িত ছিলেন। এখন স্থানীয় বিএনপি নেতারাও যোগ দিয়েছেন।

সরেজমিনে ভোলার বঙ্গেরচর, দৌলতখানের হাজিরহাট, তজুমদ্দিনের চর রায়হান, চর মোজাম্মেল, বাসনভাঙার চর, মনপুরার কলাতলী, কাজীরচর, চরফ্যাশনের চরপাতিলা, কুকরি–মুকরি, ঢালচর, চর নিজাম, তারুয়া এবং তেঁতুলিয়া নদীর মধ্যে জেগে ওঠা চর মুজিবনগর, শাহাজালালে যাওয়ার সময়ও দেখা যায়, ডুবোচরগুলো দখল করে বেহুন্দির মতো ছোট ফাঁসের জাল পেতে জেলেরা মাছ শিকার করছেন। এর মধ্যে জাটকাই বেশি।

সকেট জামালদের কবলে ইলিশ

জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোলা সদর ও দৌলতখানে মেঘনা নদীর মধ্যে যত ডুবোচর আছে, সব চরের মধ্যে ও আশপাশ দখল করে জামাল উদ্দিন ওরফে সকেট জামালের জেলেরা জাল পেতে মাছ শিকার করছেন। আওয়ামী লীগের সময় এবং বর্তমানেও মেঘনার নিয়ন্ত্রণ এই সকেট জামালের হাতে।

জেলেরা জানান, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সকেট জামালের রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। পেশিশক্তি ও অস্ত্র প্রদর্শন করে সকেট জামালের লোকজন মেঘনায় অবৈধ জাল পেতে ছোট ইলিশ শিকার করছেন।

সকেট জামালের বিরুদ্ধে হত্যাসহ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করে সরাসরি প্রশ্ন করি, ‘সদর ও দৌলতখানে মেঘনা নদীতে জেগে ওঠা ডুবোচর দখল করে আপনার ও আপনার আত্মীয়স্বজনের জেলেরা অবৈধ জাল পেতে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ছোট ইলিশ ও জাটকা ধরছেন। এটা কি আপনি জানেন?’

প্রশ্ন শুনে জামাল উদ্দিন ‘এই কথা কইছে কে’ বলে হো হো করে হেসে ওঠেন। বলেন, ‘একটা কথা বলি। এখন আমনে মদনপুর, কাইচ্চার চাইরপাশে ঘুইরা আইয়েন। কোথাও যদি কোনো জাল পান, তারপরে কইয়েন। দূর থেকে অনেকে অনেক কথা বলে। টোটাল ব্যবসা বন্ধ কইরা দিছি।’

‘তাহলে ভোলার চর, বঙ্গেরচরের খেও পাতা নিয়ে উপজেলা নির্বাচনের পর কয়েক দফা সংঘর্ষ হলো, সেটি কী কারণে?’

সকেট জামাল বলেন, ‘বঙ্গেরচরের খেওডা (জালপাতার জলসীমানা) খাইত রাজাপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজান খাঁ আর কয়েকজন। মিজান খাঁর লগে আমাগো একসময় বিরোধ আছিল। এখন দুই ঠগাপার্টি এক হইছি।’

জেলেরা জানান, ৫ অক্টোবর খরছি জালে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার ইলিশসহ অন্যান্য মাছ পাওয়া গেছে। এসব ইলিশের ৯০ ভাগই জাটকা। এ মাছ বিক্রির টাকা থেকে খরচ বাদ দিয়ে দুই ভাগ হয়। এক ভাগ জেলেদের দিয়ে আরেক ভাগ জমা হয়। এক থেকে দেড় মাস পর জমার টাকা ৬০ ভাগ হয়।

এই ৬০ ভাগের মালিক কিছু প্রভাবশালী জেলে নেতা, আড়তদার ও আওয়ামী লীগ নেতা। এখন সেখানে বিএনপি নেতারা যুক্ত হয়েছেন। স্থানীয় লোকজন জানান, টাকার ভাগাভাগি ও প্রভাব বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষ ইতিমধ্যেই কয়েক দফায় বিরোধে জড়িয়েছে।

দৌলতখান উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মাহফুজ আহমেদ বলেন, ‘জামাল উদ্দিনের (সকেট জামাল) জেলেদের পাতা অবৈধ জাল উৎখাত করতে গেলে তাঁর লোকজন স্পিডবোট নিয়ে আমাদের ধাওয়া করেন। আমাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। তারপরও আমি দমে যাইনি। গুলি ছোড়ার পরদিনই সেই অবৈধ পাই জাল জব্দ করে পুড়িয়ে দিয়েছি।’

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৫:০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪
৪৪
Translate »

ইলিশ ধ্বংসে আওয়ামী লীগের সঙ্গে এখন বিএনপিও যুক্ত হয়েছে

আপডেট : ০৫:০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

ইলিশ মাছফাইল ছবি

ভোলায় মেঘনার মোহনায় অবৈধ বেহুন্দি জাল দিয়ে এখনো জাটকা ধরে বেড়ান একদল জেলে। নদীতে ওই সব জেলেকে দেখা গেলেও এদের পেছনে আছে এক বিশাল চক্র। এ চক্রের দলনেতা বা পালের গোদা হচ্ছেন সকেট জামাল নামের এক ব্যবসায়ী। এ চক্রে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একদল নেতা জড়িত ছিলেন। এখন স্থানীয় বিএনপি নেতারাও যোগ দিয়েছেন।

সরেজমিনে ভোলার বঙ্গেরচর, দৌলতখানের হাজিরহাট, তজুমদ্দিনের চর রায়হান, চর মোজাম্মেল, বাসনভাঙার চর, মনপুরার কলাতলী, কাজীরচর, চরফ্যাশনের চরপাতিলা, কুকরি–মুকরি, ঢালচর, চর নিজাম, তারুয়া এবং তেঁতুলিয়া নদীর মধ্যে জেগে ওঠা চর মুজিবনগর, শাহাজালালে যাওয়ার সময়ও দেখা যায়, ডুবোচরগুলো দখল করে বেহুন্দির মতো ছোট ফাঁসের জাল পেতে জেলেরা মাছ শিকার করছেন। এর মধ্যে জাটকাই বেশি।

সকেট জামালদের কবলে ইলিশ

জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোলা সদর ও দৌলতখানে মেঘনা নদীর মধ্যে যত ডুবোচর আছে, সব চরের মধ্যে ও আশপাশ দখল করে জামাল উদ্দিন ওরফে সকেট জামালের জেলেরা জাল পেতে মাছ শিকার করছেন। আওয়ামী লীগের সময় এবং বর্তমানেও মেঘনার নিয়ন্ত্রণ এই সকেট জামালের হাতে।

জেলেরা জানান, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সকেট জামালের রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। পেশিশক্তি ও অস্ত্র প্রদর্শন করে সকেট জামালের লোকজন মেঘনায় অবৈধ জাল পেতে ছোট ইলিশ শিকার করছেন।

সকেট জামালের বিরুদ্ধে হত্যাসহ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করে সরাসরি প্রশ্ন করি, ‘সদর ও দৌলতখানে মেঘনা নদীতে জেগে ওঠা ডুবোচর দখল করে আপনার ও আপনার আত্মীয়স্বজনের জেলেরা অবৈধ জাল পেতে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ছোট ইলিশ ও জাটকা ধরছেন। এটা কি আপনি জানেন?’

প্রশ্ন শুনে জামাল উদ্দিন ‘এই কথা কইছে কে’ বলে হো হো করে হেসে ওঠেন। বলেন, ‘একটা কথা বলি। এখন আমনে মদনপুর, কাইচ্চার চাইরপাশে ঘুইরা আইয়েন। কোথাও যদি কোনো জাল পান, তারপরে কইয়েন। দূর থেকে অনেকে অনেক কথা বলে। টোটাল ব্যবসা বন্ধ কইরা দিছি।’

‘তাহলে ভোলার চর, বঙ্গেরচরের খেও পাতা নিয়ে উপজেলা নির্বাচনের পর কয়েক দফা সংঘর্ষ হলো, সেটি কী কারণে?’

সকেট জামাল বলেন, ‘বঙ্গেরচরের খেওডা (জালপাতার জলসীমানা) খাইত রাজাপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজান খাঁ আর কয়েকজন। মিজান খাঁর লগে আমাগো একসময় বিরোধ আছিল। এখন দুই ঠগাপার্টি এক হইছি।’

জেলেরা জানান, ৫ অক্টোবর খরছি জালে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার ইলিশসহ অন্যান্য মাছ পাওয়া গেছে। এসব ইলিশের ৯০ ভাগই জাটকা। এ মাছ বিক্রির টাকা থেকে খরচ বাদ দিয়ে দুই ভাগ হয়। এক ভাগ জেলেদের দিয়ে আরেক ভাগ জমা হয়। এক থেকে দেড় মাস পর জমার টাকা ৬০ ভাগ হয়।

এই ৬০ ভাগের মালিক কিছু প্রভাবশালী জেলে নেতা, আড়তদার ও আওয়ামী লীগ নেতা। এখন সেখানে বিএনপি নেতারা যুক্ত হয়েছেন। স্থানীয় লোকজন জানান, টাকার ভাগাভাগি ও প্রভাব বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষ ইতিমধ্যেই কয়েক দফায় বিরোধে জড়িয়েছে।

দৌলতখান উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মাহফুজ আহমেদ বলেন, ‘জামাল উদ্দিনের (সকেট জামাল) জেলেদের পাতা অবৈধ জাল উৎখাত করতে গেলে তাঁর লোকজন স্পিডবোট নিয়ে আমাদের ধাওয়া করেন। আমাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। তারপরও আমি দমে যাইনি। গুলি ছোড়ার পরদিনই সেই অবৈধ পাই জাল জব্দ করে পুড়িয়ে দিয়েছি।’