London ০৬:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০১ মার্চ ২০২৫, ১৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইফতার ও সেহরিতে কী খাওয়া উচিত?

অনলাইন ডেস্ক

ইফতার ও সেহরিতে কী খাব আর কী খাব না এ নিয়ে আমাদের মনে অনেক প্রশ্ন। আপনি কি জানেন রমজানে খাবার তালিকায় ঝামেলা হলে বড় ধরণের অসুখে পড়তে পারেন?

পবিত্র রমজান মাসে আমরা এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজি সবসময়। আজ আপনাদের বলে দেবো রমজানে কখন কী খাবেন, কী খাবেন না।

মুসলিম বিশ্বের অন্যতম বরকতময় সময় হলো পবিত্র মাহে রমজান। প্রতিবছর এ মাসে বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা স্রষ্টার উদ্দেশ্যে সংযম পালন করে থাকেন। প্রতিবছরের মতো এবারও রমজানে সংযম পালন করবেন প্রায় সব বয়সের মুসলমানরা।

এ সময় আমরা বিভিন্ন শারীরিক অসঙ্গতি লক্ষ্য করে থাকি। কখনো তা ইতিবাচক হয় আবার কখনো নেতিবাচক। আমাদের নিত্যদিনের অভ্যাসের আকষ্মিক পরিবর্তনের জন্য এমনটি হয়ে থাকে।

রোজা রাখতে দীর্ঘ সময় অনাহারে থাকার জন্য শারীরিক কিছু পরিবর্তন ঘটে। সে কারণে সারা বছরের তুলনায় রমজানে খাদ্যাভ্যাসে কিছুটা পরিবর্তন আসে।

আমরা কি সেই পরিবর্তন বুঝে করে থাকি? বেশিরভাগ মানুষ না বুঝেই করে থাকি। তাই সবার শারীরিক সুস্থতা কামনায় রমজানে খাদ্য তালিকায় কেমন হবে তাই বলার চেষ্টা করছি।

রমজান মাস। আরবি ক্যালেন্ডারের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। এ মাসে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্য সংযম পালন করে থাকেন যাকে আমরা ‘রোজা’ বলে থাকি। আরবিতে বলা হয়ে থাকে ‘সাওম’ বা ‘সিয়াম’।

সিয়াম পালন করতে আমরা সুব্হে সাদিকের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত অনাহারে থাকি। মাগরিবের পর আমরা সিয়াম ভঙ্গ করে পানাহার করি।

দীর্ঘ সময় অনাহারের পর আমরা কোন হিসেব ছাড়াই খাবার খেয়ে থাকি। আমাদের শরীর নির্দিষ্ট নিয়মে চলে, তাই খাবারের সাথে শরীরের সুস্থ থাকার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়।

আমরা ইফতার এবং ইফতার পরবর্তী সময় কি খাই এবং কি খাওয়া উচিত সে ব্যাপারে কখনো ভাবি না। তাই অনেকেই অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ি। কখনো আমরা তা তাৎক্ষণিক বুঝি আবার হয়তো কখনো বুঝতে অনেক সময়ও লাগে। ততক্ষণে আমাদের শরীরের অনেক ক্ষতি হয়। দীর্ঘ সময় অনাহার এবং স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাস আমাদের শরীরে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

ইফতার
রমজানে শরীরে কী প্রভাব পড়ে?

রোজা শরীরের উপর কী প্রভাব ফেলে?

রোজা আমাদের শরীরের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। রমজানের একমাস রোজা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার। তবে সারাবছর রোজা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। সেক্ষেত্রে মাঝে মাঝে বিরতি নেয়ার পরামর্শ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের।

রোজা আরবি রমজান মাস অনুযায়ী নির্ধারিত। তবে আরবি ক্যালেন্ডার ইংরেজি ও বাংলা ক্যালেন্ডারের সাথে সমন্বয় রেখে চলে না। ২০-৩০ বছর আগে রমজান মাস ছিলো শীতকালে তবে সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে তা গ্রীষ্মকালে লক্ষ্য করা যায়।

শীতের সময় দিন ছোট হওয়ায় আমাদের ৭-৮ ঘণ্টা পানাহার থেকে বিরত থাকতে হতো অথচ গরমের সময় বা গ্রীষ্মকালে ১২-১৪ ঘণ্টা উপোস থাকতে হয়। ইউরোপের অনেক দেশে বিশেষ করে উত্তর গোলার্ধের কোন কোন দেশে ২০ ঘণ্টাও পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়।

সাধারণত আমাদের একবার খাবার খাওয়ার পর তা হজম হতে ৭-৮ ঘণ্টা সময় দরকার হয়। একইভাবে সেহরী খাওয়ার পর ৭-৮ ঘণ্টা পর্যন্ত না খেয়ে থাকলে আমাদের শরীরে বিশেষ প্রভাব পড়ে না। তবে তার চেয়ে বেশি সময় হলে এর প্রভাব বেশ ভালোই লক্ষ্য করা যায়।

সেক্ষেত্রে ভয়ের কোন কারণ নেই এই প্রভাবও আমাদের জন্য ইতিবাচক। তখন আমাদের যকৃত এবং মাংসপেশীতে থাকা গ্লুকোজ ও চর্বি থেকে শক্তি সংগ্রহ করে আমাদের শরীর। শরীরে চর্বি কম থাকলে একটু নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

চর্বি কমবেশি সবার শরীরেই থাকে। চর্বি কমতে শুরু করলে আমাদের ওজন কমতে শুরু করে। পাশাপাশি কোলস্টেরল ও রক্তের শর্করার পরিমাণও কমতে থাকে।

এতে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে অনেকাংশে। এতে শরীর কিছুটা দুর্বল হবে, মাথা ব্যথা বা মাথা ঘুরাতে পারে। কারও ক্ষেত্রে বমি বমি ভাবও লাগতে পারে। তবে এতে ভয়ের কিছু নেই।

রোজার শুরুতে প্রথম কয়েক দিন এরকম প্রভাব পড়তেই পারে। তবে পরে তা ঠিক হয়ে যায়। ৪-৫ দিন হয়ে গেলে বিশেষভাবে প্রভাব পড়তে পারে শরীরের জলীয় অংশে।

সোজা কথায় বললে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। ৮-১০ রোজার পর থেকে শরীর নিয়মিত এমন অভ্যাসের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবে এবং ১৫ রোজার পর থেকে রোজা রাখতে ভালো লাগে।

এটিই সবার ক্ষেত্রে হয়ে থাকে যারা সারা মাস রোজা রাখেন। তবে এর জন্য দরকার প্রয়োজনীয় খাদ্য, পুষ্টি ও ক্যালরি। তাই খাবারের বিষয়ে আমাদের বেশি যত্নবান হওয়া উচিত।

রমজানে খাবার তালিকা কেমন হওয়া উচিত?

বছর ঘুরে রমজান এলেই আমাদের নিত্যদিনের খাবার তালিকায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। যেহেতু আমরা সারাদিন কোন কিছুই খেতে পারি না তাই এসময় ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত ভালো মানের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে থাকি।

আমরা আমাদের ইচ্ছেমতো ভালো মাছ, সবজি, মাংস, ফলমূল খেয়ে থাকি। কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়াই না জেনে, না বুঝেও আমরা অনেক কিছু খাই। ফলে দেখা যায় রোজা রাখতে গিয়ে আমরা প্রথম দিকেই অসুস্থ হয়ে পড়ি।

কম বা বেশি খাওয়ার জন্য শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। রোজা শুরুর কয়েক দিন পর আর আমরা রোজা রাখি না বা রাখতে পারি না। তাই খাবার তালিকা অবশ্যই হতে সুষম এবং স্বাস্থ্যকর হতে হবে। রমজানে স্বাস্থ্য ভালো রেখে রোজা রাখতে তাই সঠিক খাদ্য তালিকার কোন বিকল্প নেই।

অনেক খাবার আছে যা আমাদের গ্রহণ করা উচিত এবং কিছু খাবার অবশ্যই ত্যাগ করা উচিত। আমরা ধারণা করে থাকি কোন খাবারগুলো ভালো এবং কোনগুলো খারাপ কিন্তু কতটুকুইবা জানি। চলুন দেখে নিই রমজানের খাবার তালিকায় কী কী থাকা উচিত এবং কী উচিত নয়।

ইফতার

সারাদিন রোজা শেষে একজন রোজাদার কী খাবনে তা নির্ভর করে সম্পূর্ণই তার ব্যক্তিগত রুচি, চাহিদা, বয়স এবং স্বাস্থ্যের উপর। এ সময় রং বেরংয়ের খাবারের হিড়িক পড়ে যায় ফুটপাতসহ অলিগলি, হোটেল, রেস্তোরায়।

দুপুর থেকেই শুরু হয়ে যায় বিক্রেতাদের এসব খাবার বানানোর ব্যস্ততা। ছোলা, মুড়ি, পেয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, খোলা খেজুর, বুরিন্দা পাওয়া যায় না এমন কোন এলাকা নেই। ইফতারিতে এসব খাবারের পাশাপাশি হালিম, পাকোরা, চিকেন ফ্রাই, মাশরুম, ঘুগনি, রং বেরংয়ের শরবত ও পানীয় বিক্রি হয় সবখানেই। এছাড়া মুখরোচক, বিরিয়ানি, তেহারি, খিচুড়ি তো রয়েছেই।

এসব খাবারই আমরা সচরাচর খেয়ে থাকি। এগুলো কতটা স্বাস্থ্যসম্মত অথবা এগুলো কি স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে তৈরি হচ্ছে? এ বিষয়ে নজর দেয়ার কোন দরকার মনে করি না আমরা।

ইফতারে কি কি খাবেন?

দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার পর ইফতার করার সময় অবশ্যই আপনাকে হালকা খাবার খেতে হবে। এসময় ভারি খাবার খেলে হজমের সমস্যা হবেই। তাই ফল খেতে পারেন।

এতে শরীরের পানির অভাব যেমন দূর করবে একইসাথে পুষ্টি ও ভিটামিনের ঘাটতিও পূরণ হবে। ফাইবারযুক্ত ফল যেমন খেজুর দিয়ে রোজা ভঙ্গ করা যেমন ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে সুন্নাত একইসাথে শরীরে শক্তিও পাবেন। খেজুরে আছে শর্করা, চিনি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, কপার, সিলিকন, ক্লোরিন, ম্যাঙ্গানিজ ও সালফার। প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে থাকে ৬৬ ক্যালরি।

কলা খেতে পারেন, একটি কলায় প্রায় ১০৫ ক্যালরি থাকে যা আপনাকে দুর্বল হতে দেবে না। এছাড়াও পেয়ারা, আপেল এবং তরমুজও রাখতে পারেন ইফতারির তালিকায়।

প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারায় আছে ৬৮ ক্যালরি, ১০০ গ্রাম আপেলে আছে ৪৫ ক্যালরি এবং ১০০ গ্রাম তরমুজে প্রায় ৩০ ক্যালরি রয়েছে। কমলালেবু এবং মাল্টা আমরা প্রায়শই আমরা খেয়ে থাকি। পুষ্টিগুণে দুটো ফল প্রায় একই রকম হলেও সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা রয়েছে মাল্টার। এতে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন যা কোষের ক্ষয়রোধ করে। মাল্টায় থাকা ক্যালসিয়াম যেমন হাড় ও দাঁতকে মজবুত করে এবং হার্টের অনেক সমস্যা দূর করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম। তাই ইফতারিতে এক গ্লাস মাল্টার জুস থাকতেই পারে।

রোজার সময় পানিশূন্যতা দেখা দেয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই সাধারণ পানির পাশাপাশি ডাবের পানিও খেতে পারেন। এতে শুধু পানিশূন্যতার আশঙ্কাই কমবে না, অনেক শারীরিক উপকারও পাওয়া যাবে। পানিশূন্যতা কাটতে খেতে পারেন তরমুজ, শসা, পেয়ারা এবং সব ধরণের রসালো ফল।

ইফতারিতে চাউলের নরম জাও কিংবা দই-চিরাও খেতে পারেন। এতে বদহজমের কোন সম্ভাবনা থাকবে না। প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত অবস্থায় প্রশান্তিও পাবেন। মনে রাখবেন প্রতি ১০০ গ্রাম দইয়ে থাকে প্রায় ২৫৭ ক্যালরি।

যদি হজমের সমস্যা কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকে তবে সাধারণ পানীয় ও শরবতের পাশাপাশি হালকা গরম দুধের সঙ্গে ইসবগুল খেতে পারেন।

ইফতারে ভাজা পোড়া একেবারেই নয়। আমরা যে ছোলা সেদ্ধ করে মসলা দিয়ে ভেজে মুড়ির সাথে খেয়ে থাকি তা কাঁচা অবস্থায় ভিজিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অধিক উপকার।

তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে ইফতারের খাবার তালিকায় যেন প্রোটিন বাদ না পড়ে। যেহেতু রোজায় আমরা দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকি এবং তা দীর্ঘ এক মাস সময় ধরে পালন করি তাই আমাদের এই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট খাবার তালিকাও থাকতে হবে। তালিকাটি অবশ্যই সুষম খাবারের সমন্বয়ে হতে হবে।

ইফতারে যে খাবারগুলো স্বাস্থ্যসম্মত (সম্ভাব্য তালিকা)

  1. খেজুর
  2. মাল্টা/কমলা
  3. তরমুজ
  4. ডাবের পানি
  5. পেয়ারা
  6. পাকা পেপে
  7. দই
  8. কাঁচা ছোলা
  9. চিরা
  10. ইসবগুল
  11. লেবুর শরবত
  12. ফলের জুস
  13. আতব চালের জাও
  14. পুডিং
  15. বিশুদ্ধ পানি

সবশেষে বলতেই হচ্ছে ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। তবে একসাথে বেশি পানি পান না করাই ভালো। একটু পর পর অল্প অল্প করে পানি পান করলে আমাদের শরীরের পরিপাকতন্ত্র খাবারগুলো সুন্দরভাবে হজম করতে পারবে এবং পুষ্টি শোষণ করতে পারবে। কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি এ সময় পান করা উচিত।

ইফতারে কোন ধরণের খাবার খাবেন না?

অবশ্যই ইফতারে কোন ধরণের ভাজা পোড়া এবং বেশি মিষ্টি জাতীয় খাবার না খাওয়ার চেষ্টা করবেন। তেল মসলা এবং ভাজা পোড়া খাবার খালি পেটের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাছাড়া রোজা রাখার ফলে আপনার শরীর থেকে যতটুকু চিনি (সুগার) কমবে মিষ্টিজাতীয় খাবার খেলে তা আবার প্রতিস্থাপিত হবে ফলে বাড়তে পারে ডায়াবেটিসসহ নানা সমস্যা।

তবে মিষ্টি খেতে হলে মিষ্টিজাতীয় ফল খেতে পারেন। তেলে ভাজা খাবার যদি খেতেই হয় তবে খেয়াল রাখতে হবে একই তেলে বারবার যেন কোন কিছু ভাজা না হয় এবং অল্প তেলে যেন ভাজা হয়। ভাজা পোড়া ছাড়াই আমরা খুব ভালো মানের সুস্বাদু ইফতার খেতে পারি যা উপরেই বলা হয়েছে।

মধ্যরাতের খাবার

রোজা রাখার পর ইফতার এবং সেহরির মধ্যবর্তী সময়ের খাবারকেই আমরা মধ্যরাতের খাবার বিবেচনা করে থাকি। মধ্যরাতের খাবারটি একেবারেই বাধ্যতামূলক নয়।

আমরা অনেকেই মধ্যরাতের খাবার খাই না। তবে বেশিরভাগ মানুষই খেয়ে থাকি। তাই মধ্যরাতের খাবারে আমাদের বিশেষ কিছু বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। সহজে হজম হয় না বা গ্যাস এবং এসিড সৃষ্টি করতে পারে এমন খাবার অবশ্যই খাওয়া যাবে না।

এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট করে কখনো বলা সম্ভব নয় কী খেতে হবে। তবে একটি কথা অবশ্যই বলা যায় আপনার শরীরের সাথে মানানসই এমনই খাবারই আপনাকে খেতে হবে। কারণ সেহরির সময় আমরা একটু ভারি খাবার খেয়ে থাকি তাই মধ্যরাতে হালকা খাবার উচিত।

সে খাবারে খেয়াল রাখতে হবে অবশ্যই যেন শাক-সবজি বেশি পরিমাণ থাকে। এসিড বা গ্যাস হলে সেহরির সময় খাবার খেতে সমস্যা হবে। সেহরির সময় খাবারে গন্ডগোল হলে অবশ্যই রোজা রাখতেও অনেক কষ্ট হবে। তাই মধ্যরাতের খাবার হিসেবে খেতে পারেন অল্প পরিমাণ ভাত অথাব রুটি, শাক-সবজি, মাছ, ডিম ইত্যাদি।

সেহরিতে কী খাওয়া উচিত?

আমরা সেহরিতে অনেকেই ভারি খাবার খেয়ে থাকি। আসলে এমনটি আমাদের অভ্যাস হলেও তা মোটেও উচিত নয়। স্বাভাবিকভাবে দুপুরে আমরা যে পরিমাণ খাবার খাই সেহরিতে তার ব্যতিক্রম হওয়া উচিত নয়।

সেহরির সম্ভাব্য খাবার তালিকা

  • ভাত
  • মাছ (ছোট মাছ হলে বেশি ভালো)
  • মাংস (কম চর্বিযুক্ত)
  • দুধ
  • ডাল
  • সবজি
  • ঘি

সেহরিতে যা-ই খাবেন তা যেন কম তেল, ঝাল ও মশলাযুক্ত হয়। শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী যে কোন খাবার আপনার রুচিমতো খেতে পারবেন। তবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে ঘি এবং গরুর মাংস পরিহার করতে পারেন।

সেহরির পর চা বা কফি না খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। পেট পুরে না খেয়ে চার ভাগের তিন ভাগ খাবার খেলে গ্যাস ও এসিডিটির হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন। এতে দ্রুত খাবার হজম হবে এবং অস্বস্থি হবে না।

যেন খুব দ্রুত ক্ষিধে না লাগে এবং আমিষের ঘাটতি না হয় সে কারণে আমিষযুক্ত খাবার সেহরির খাদ্য তালিকায় যোগ করুন। আমিষের ঘাটতি হলে শরীরে গ্লুকোজেরও ঘাটতি হবে ফলে খুব দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়বেন।

পবিত্র মাহে রমজান মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বরকতের মাস। যথা নিয়মে ধর্মীয় অনুশাসন পালন করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচেতনতায় খাদ্য তালিকায় অবশ্যই আমাদের নজর দেয়া উচিত।

অসুস্থ শরীরে ইবাদত করা কঠিন। তাই সবকিছু ঠিক রাখতে এবং সংযম পালনের সময় শারীরিক সুস্থতার জন্য উল্লেখিত খাদ্য তালিকা আপনার অনেক কাজে আসবে।

রমজানে যেভাবে আপনি সুস্থ থাকতে পারেন সে বিষয়টি বিবেচনা করে সাধ্যমতো তথ্য দেয়ার চেষ্টা করেছি। কোন তথ্য ভুল মনে হলে কিংবা আরও কি কি তথ্য যোগ করলে ভালো হতো বলে আপনি মনে করেন দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন।

রমজান নিয়ে বিশেষ কিছু জানার থাকলেও প্রশ্ন করতে পারেন। সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো দ্রুত উত্তর দেয়ার। আপনি নিশ্চয় রোজা রাখেন। আপনার কি কোন শারীরিক সমস্যা হয়। জানালে সে বিষয়ে অবশ্যই নতুন একটি আর্টিকেল লেখার অনুপ্রেরণা পাব।

আপনি সুস্থ থাকুন, সিয়াম পালন করুন, আপনার সংযমের মধ্য দিয়ে স্রষ্টা আপনার সহায় হোন। আমীন।

রমজানে খাবার সম্পর্কে ধর্মীয় বিধিনিষেধ আছে কি?

না, নেই। তবে সবসময়ই হালাল এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কথা আছে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে সুন্নত। তাই নবী কারীম (সা.) এর খাদ্যাভাসকে অনুসরণ করা প্রত্যেক মুসলমানের নৈতিক দায়িত্ব।

ইফতারের খাবার বিষয়ে পুষ্টিবিদরা কি বলেন?

পুষ্টিবিদরা পুষ্টির কথাই বলেন। যেহেতু রমজানে আমরা সারাদিন না খেয়ে রোজা রাখি তাই রোজা ভঙ্গের সময় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। খুব বেশি খেতে হবে এমন নয়, শরীরের পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করে এমন খাবারই খাওয়ার পরামর্শ দেশ পুষ্টিবিদরা।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৮:০৬:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫
Translate »

ইফতার ও সেহরিতে কী খাওয়া উচিত?

আপডেট : ০৮:০৬:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫

ইফতার ও সেহরিতে কী খাব আর কী খাব না এ নিয়ে আমাদের মনে অনেক প্রশ্ন। আপনি কি জানেন রমজানে খাবার তালিকায় ঝামেলা হলে বড় ধরণের অসুখে পড়তে পারেন?

পবিত্র রমজান মাসে আমরা এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজি সবসময়। আজ আপনাদের বলে দেবো রমজানে কখন কী খাবেন, কী খাবেন না।

মুসলিম বিশ্বের অন্যতম বরকতময় সময় হলো পবিত্র মাহে রমজান। প্রতিবছর এ মাসে বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা স্রষ্টার উদ্দেশ্যে সংযম পালন করে থাকেন। প্রতিবছরের মতো এবারও রমজানে সংযম পালন করবেন প্রায় সব বয়সের মুসলমানরা।

এ সময় আমরা বিভিন্ন শারীরিক অসঙ্গতি লক্ষ্য করে থাকি। কখনো তা ইতিবাচক হয় আবার কখনো নেতিবাচক। আমাদের নিত্যদিনের অভ্যাসের আকষ্মিক পরিবর্তনের জন্য এমনটি হয়ে থাকে।

রোজা রাখতে দীর্ঘ সময় অনাহারে থাকার জন্য শারীরিক কিছু পরিবর্তন ঘটে। সে কারণে সারা বছরের তুলনায় রমজানে খাদ্যাভ্যাসে কিছুটা পরিবর্তন আসে।

আমরা কি সেই পরিবর্তন বুঝে করে থাকি? বেশিরভাগ মানুষ না বুঝেই করে থাকি। তাই সবার শারীরিক সুস্থতা কামনায় রমজানে খাদ্য তালিকায় কেমন হবে তাই বলার চেষ্টা করছি।

রমজান মাস। আরবি ক্যালেন্ডারের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। এ মাসে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্য সংযম পালন করে থাকেন যাকে আমরা ‘রোজা’ বলে থাকি। আরবিতে বলা হয়ে থাকে ‘সাওম’ বা ‘সিয়াম’।

সিয়াম পালন করতে আমরা সুব্হে সাদিকের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত অনাহারে থাকি। মাগরিবের পর আমরা সিয়াম ভঙ্গ করে পানাহার করি।

দীর্ঘ সময় অনাহারের পর আমরা কোন হিসেব ছাড়াই খাবার খেয়ে থাকি। আমাদের শরীর নির্দিষ্ট নিয়মে চলে, তাই খাবারের সাথে শরীরের সুস্থ থাকার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়।

আমরা ইফতার এবং ইফতার পরবর্তী সময় কি খাই এবং কি খাওয়া উচিত সে ব্যাপারে কখনো ভাবি না। তাই অনেকেই অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ি। কখনো আমরা তা তাৎক্ষণিক বুঝি আবার হয়তো কখনো বুঝতে অনেক সময়ও লাগে। ততক্ষণে আমাদের শরীরের অনেক ক্ষতি হয়। দীর্ঘ সময় অনাহার এবং স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাস আমাদের শরীরে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

ইফতার
রমজানে শরীরে কী প্রভাব পড়ে?

রোজা শরীরের উপর কী প্রভাব ফেলে?

রোজা আমাদের শরীরের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। রমজানের একমাস রোজা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার। তবে সারাবছর রোজা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। সেক্ষেত্রে মাঝে মাঝে বিরতি নেয়ার পরামর্শ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের।

রোজা আরবি রমজান মাস অনুযায়ী নির্ধারিত। তবে আরবি ক্যালেন্ডার ইংরেজি ও বাংলা ক্যালেন্ডারের সাথে সমন্বয় রেখে চলে না। ২০-৩০ বছর আগে রমজান মাস ছিলো শীতকালে তবে সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে তা গ্রীষ্মকালে লক্ষ্য করা যায়।

শীতের সময় দিন ছোট হওয়ায় আমাদের ৭-৮ ঘণ্টা পানাহার থেকে বিরত থাকতে হতো অথচ গরমের সময় বা গ্রীষ্মকালে ১২-১৪ ঘণ্টা উপোস থাকতে হয়। ইউরোপের অনেক দেশে বিশেষ করে উত্তর গোলার্ধের কোন কোন দেশে ২০ ঘণ্টাও পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়।

সাধারণত আমাদের একবার খাবার খাওয়ার পর তা হজম হতে ৭-৮ ঘণ্টা সময় দরকার হয়। একইভাবে সেহরী খাওয়ার পর ৭-৮ ঘণ্টা পর্যন্ত না খেয়ে থাকলে আমাদের শরীরে বিশেষ প্রভাব পড়ে না। তবে তার চেয়ে বেশি সময় হলে এর প্রভাব বেশ ভালোই লক্ষ্য করা যায়।

সেক্ষেত্রে ভয়ের কোন কারণ নেই এই প্রভাবও আমাদের জন্য ইতিবাচক। তখন আমাদের যকৃত এবং মাংসপেশীতে থাকা গ্লুকোজ ও চর্বি থেকে শক্তি সংগ্রহ করে আমাদের শরীর। শরীরে চর্বি কম থাকলে একটু নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

চর্বি কমবেশি সবার শরীরেই থাকে। চর্বি কমতে শুরু করলে আমাদের ওজন কমতে শুরু করে। পাশাপাশি কোলস্টেরল ও রক্তের শর্করার পরিমাণও কমতে থাকে।

এতে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে অনেকাংশে। এতে শরীর কিছুটা দুর্বল হবে, মাথা ব্যথা বা মাথা ঘুরাতে পারে। কারও ক্ষেত্রে বমি বমি ভাবও লাগতে পারে। তবে এতে ভয়ের কিছু নেই।

রোজার শুরুতে প্রথম কয়েক দিন এরকম প্রভাব পড়তেই পারে। তবে পরে তা ঠিক হয়ে যায়। ৪-৫ দিন হয়ে গেলে বিশেষভাবে প্রভাব পড়তে পারে শরীরের জলীয় অংশে।

সোজা কথায় বললে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। ৮-১০ রোজার পর থেকে শরীর নিয়মিত এমন অভ্যাসের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবে এবং ১৫ রোজার পর থেকে রোজা রাখতে ভালো লাগে।

এটিই সবার ক্ষেত্রে হয়ে থাকে যারা সারা মাস রোজা রাখেন। তবে এর জন্য দরকার প্রয়োজনীয় খাদ্য, পুষ্টি ও ক্যালরি। তাই খাবারের বিষয়ে আমাদের বেশি যত্নবান হওয়া উচিত।

রমজানে খাবার তালিকা কেমন হওয়া উচিত?

বছর ঘুরে রমজান এলেই আমাদের নিত্যদিনের খাবার তালিকায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। যেহেতু আমরা সারাদিন কোন কিছুই খেতে পারি না তাই এসময় ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত ভালো মানের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে থাকি।

আমরা আমাদের ইচ্ছেমতো ভালো মাছ, সবজি, মাংস, ফলমূল খেয়ে থাকি। কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়াই না জেনে, না বুঝেও আমরা অনেক কিছু খাই। ফলে দেখা যায় রোজা রাখতে গিয়ে আমরা প্রথম দিকেই অসুস্থ হয়ে পড়ি।

কম বা বেশি খাওয়ার জন্য শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। রোজা শুরুর কয়েক দিন পর আর আমরা রোজা রাখি না বা রাখতে পারি না। তাই খাবার তালিকা অবশ্যই হতে সুষম এবং স্বাস্থ্যকর হতে হবে। রমজানে স্বাস্থ্য ভালো রেখে রোজা রাখতে তাই সঠিক খাদ্য তালিকার কোন বিকল্প নেই।

অনেক খাবার আছে যা আমাদের গ্রহণ করা উচিত এবং কিছু খাবার অবশ্যই ত্যাগ করা উচিত। আমরা ধারণা করে থাকি কোন খাবারগুলো ভালো এবং কোনগুলো খারাপ কিন্তু কতটুকুইবা জানি। চলুন দেখে নিই রমজানের খাবার তালিকায় কী কী থাকা উচিত এবং কী উচিত নয়।

ইফতার

সারাদিন রোজা শেষে একজন রোজাদার কী খাবনে তা নির্ভর করে সম্পূর্ণই তার ব্যক্তিগত রুচি, চাহিদা, বয়স এবং স্বাস্থ্যের উপর। এ সময় রং বেরংয়ের খাবারের হিড়িক পড়ে যায় ফুটপাতসহ অলিগলি, হোটেল, রেস্তোরায়।

দুপুর থেকেই শুরু হয়ে যায় বিক্রেতাদের এসব খাবার বানানোর ব্যস্ততা। ছোলা, মুড়ি, পেয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, খোলা খেজুর, বুরিন্দা পাওয়া যায় না এমন কোন এলাকা নেই। ইফতারিতে এসব খাবারের পাশাপাশি হালিম, পাকোরা, চিকেন ফ্রাই, মাশরুম, ঘুগনি, রং বেরংয়ের শরবত ও পানীয় বিক্রি হয় সবখানেই। এছাড়া মুখরোচক, বিরিয়ানি, তেহারি, খিচুড়ি তো রয়েছেই।

এসব খাবারই আমরা সচরাচর খেয়ে থাকি। এগুলো কতটা স্বাস্থ্যসম্মত অথবা এগুলো কি স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে তৈরি হচ্ছে? এ বিষয়ে নজর দেয়ার কোন দরকার মনে করি না আমরা।

ইফতারে কি কি খাবেন?

দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার পর ইফতার করার সময় অবশ্যই আপনাকে হালকা খাবার খেতে হবে। এসময় ভারি খাবার খেলে হজমের সমস্যা হবেই। তাই ফল খেতে পারেন।

এতে শরীরের পানির অভাব যেমন দূর করবে একইসাথে পুষ্টি ও ভিটামিনের ঘাটতিও পূরণ হবে। ফাইবারযুক্ত ফল যেমন খেজুর দিয়ে রোজা ভঙ্গ করা যেমন ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে সুন্নাত একইসাথে শরীরে শক্তিও পাবেন। খেজুরে আছে শর্করা, চিনি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, কপার, সিলিকন, ক্লোরিন, ম্যাঙ্গানিজ ও সালফার। প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে থাকে ৬৬ ক্যালরি।

কলা খেতে পারেন, একটি কলায় প্রায় ১০৫ ক্যালরি থাকে যা আপনাকে দুর্বল হতে দেবে না। এছাড়াও পেয়ারা, আপেল এবং তরমুজও রাখতে পারেন ইফতারির তালিকায়।

প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারায় আছে ৬৮ ক্যালরি, ১০০ গ্রাম আপেলে আছে ৪৫ ক্যালরি এবং ১০০ গ্রাম তরমুজে প্রায় ৩০ ক্যালরি রয়েছে। কমলালেবু এবং মাল্টা আমরা প্রায়শই আমরা খেয়ে থাকি। পুষ্টিগুণে দুটো ফল প্রায় একই রকম হলেও সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা রয়েছে মাল্টার। এতে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন যা কোষের ক্ষয়রোধ করে। মাল্টায় থাকা ক্যালসিয়াম যেমন হাড় ও দাঁতকে মজবুত করে এবং হার্টের অনেক সমস্যা দূর করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম। তাই ইফতারিতে এক গ্লাস মাল্টার জুস থাকতেই পারে।

রোজার সময় পানিশূন্যতা দেখা দেয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই সাধারণ পানির পাশাপাশি ডাবের পানিও খেতে পারেন। এতে শুধু পানিশূন্যতার আশঙ্কাই কমবে না, অনেক শারীরিক উপকারও পাওয়া যাবে। পানিশূন্যতা কাটতে খেতে পারেন তরমুজ, শসা, পেয়ারা এবং সব ধরণের রসালো ফল।

ইফতারিতে চাউলের নরম জাও কিংবা দই-চিরাও খেতে পারেন। এতে বদহজমের কোন সম্ভাবনা থাকবে না। প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত অবস্থায় প্রশান্তিও পাবেন। মনে রাখবেন প্রতি ১০০ গ্রাম দইয়ে থাকে প্রায় ২৫৭ ক্যালরি।

যদি হজমের সমস্যা কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকে তবে সাধারণ পানীয় ও শরবতের পাশাপাশি হালকা গরম দুধের সঙ্গে ইসবগুল খেতে পারেন।

ইফতারে ভাজা পোড়া একেবারেই নয়। আমরা যে ছোলা সেদ্ধ করে মসলা দিয়ে ভেজে মুড়ির সাথে খেয়ে থাকি তা কাঁচা অবস্থায় ভিজিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অধিক উপকার।

তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে ইফতারের খাবার তালিকায় যেন প্রোটিন বাদ না পড়ে। যেহেতু রোজায় আমরা দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকি এবং তা দীর্ঘ এক মাস সময় ধরে পালন করি তাই আমাদের এই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট খাবার তালিকাও থাকতে হবে। তালিকাটি অবশ্যই সুষম খাবারের সমন্বয়ে হতে হবে।

ইফতারে যে খাবারগুলো স্বাস্থ্যসম্মত (সম্ভাব্য তালিকা)

  1. খেজুর
  2. মাল্টা/কমলা
  3. তরমুজ
  4. ডাবের পানি
  5. পেয়ারা
  6. পাকা পেপে
  7. দই
  8. কাঁচা ছোলা
  9. চিরা
  10. ইসবগুল
  11. লেবুর শরবত
  12. ফলের জুস
  13. আতব চালের জাও
  14. পুডিং
  15. বিশুদ্ধ পানি

সবশেষে বলতেই হচ্ছে ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। তবে একসাথে বেশি পানি পান না করাই ভালো। একটু পর পর অল্প অল্প করে পানি পান করলে আমাদের শরীরের পরিপাকতন্ত্র খাবারগুলো সুন্দরভাবে হজম করতে পারবে এবং পুষ্টি শোষণ করতে পারবে। কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি এ সময় পান করা উচিত।

ইফতারে কোন ধরণের খাবার খাবেন না?

অবশ্যই ইফতারে কোন ধরণের ভাজা পোড়া এবং বেশি মিষ্টি জাতীয় খাবার না খাওয়ার চেষ্টা করবেন। তেল মসলা এবং ভাজা পোড়া খাবার খালি পেটের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাছাড়া রোজা রাখার ফলে আপনার শরীর থেকে যতটুকু চিনি (সুগার) কমবে মিষ্টিজাতীয় খাবার খেলে তা আবার প্রতিস্থাপিত হবে ফলে বাড়তে পারে ডায়াবেটিসসহ নানা সমস্যা।

তবে মিষ্টি খেতে হলে মিষ্টিজাতীয় ফল খেতে পারেন। তেলে ভাজা খাবার যদি খেতেই হয় তবে খেয়াল রাখতে হবে একই তেলে বারবার যেন কোন কিছু ভাজা না হয় এবং অল্প তেলে যেন ভাজা হয়। ভাজা পোড়া ছাড়াই আমরা খুব ভালো মানের সুস্বাদু ইফতার খেতে পারি যা উপরেই বলা হয়েছে।

মধ্যরাতের খাবার

রোজা রাখার পর ইফতার এবং সেহরির মধ্যবর্তী সময়ের খাবারকেই আমরা মধ্যরাতের খাবার বিবেচনা করে থাকি। মধ্যরাতের খাবারটি একেবারেই বাধ্যতামূলক নয়।

আমরা অনেকেই মধ্যরাতের খাবার খাই না। তবে বেশিরভাগ মানুষই খেয়ে থাকি। তাই মধ্যরাতের খাবারে আমাদের বিশেষ কিছু বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। সহজে হজম হয় না বা গ্যাস এবং এসিড সৃষ্টি করতে পারে এমন খাবার অবশ্যই খাওয়া যাবে না।

এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট করে কখনো বলা সম্ভব নয় কী খেতে হবে। তবে একটি কথা অবশ্যই বলা যায় আপনার শরীরের সাথে মানানসই এমনই খাবারই আপনাকে খেতে হবে। কারণ সেহরির সময় আমরা একটু ভারি খাবার খেয়ে থাকি তাই মধ্যরাতে হালকা খাবার উচিত।

সে খাবারে খেয়াল রাখতে হবে অবশ্যই যেন শাক-সবজি বেশি পরিমাণ থাকে। এসিড বা গ্যাস হলে সেহরির সময় খাবার খেতে সমস্যা হবে। সেহরির সময় খাবারে গন্ডগোল হলে অবশ্যই রোজা রাখতেও অনেক কষ্ট হবে। তাই মধ্যরাতের খাবার হিসেবে খেতে পারেন অল্প পরিমাণ ভাত অথাব রুটি, শাক-সবজি, মাছ, ডিম ইত্যাদি।

সেহরিতে কী খাওয়া উচিত?

আমরা সেহরিতে অনেকেই ভারি খাবার খেয়ে থাকি। আসলে এমনটি আমাদের অভ্যাস হলেও তা মোটেও উচিত নয়। স্বাভাবিকভাবে দুপুরে আমরা যে পরিমাণ খাবার খাই সেহরিতে তার ব্যতিক্রম হওয়া উচিত নয়।

সেহরির সম্ভাব্য খাবার তালিকা

  • ভাত
  • মাছ (ছোট মাছ হলে বেশি ভালো)
  • মাংস (কম চর্বিযুক্ত)
  • দুধ
  • ডাল
  • সবজি
  • ঘি

সেহরিতে যা-ই খাবেন তা যেন কম তেল, ঝাল ও মশলাযুক্ত হয়। শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী যে কোন খাবার আপনার রুচিমতো খেতে পারবেন। তবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে ঘি এবং গরুর মাংস পরিহার করতে পারেন।

সেহরির পর চা বা কফি না খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। পেট পুরে না খেয়ে চার ভাগের তিন ভাগ খাবার খেলে গ্যাস ও এসিডিটির হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন। এতে দ্রুত খাবার হজম হবে এবং অস্বস্থি হবে না।

যেন খুব দ্রুত ক্ষিধে না লাগে এবং আমিষের ঘাটতি না হয় সে কারণে আমিষযুক্ত খাবার সেহরির খাদ্য তালিকায় যোগ করুন। আমিষের ঘাটতি হলে শরীরে গ্লুকোজেরও ঘাটতি হবে ফলে খুব দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়বেন।

পবিত্র মাহে রমজান মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বরকতের মাস। যথা নিয়মে ধর্মীয় অনুশাসন পালন করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচেতনতায় খাদ্য তালিকায় অবশ্যই আমাদের নজর দেয়া উচিত।

অসুস্থ শরীরে ইবাদত করা কঠিন। তাই সবকিছু ঠিক রাখতে এবং সংযম পালনের সময় শারীরিক সুস্থতার জন্য উল্লেখিত খাদ্য তালিকা আপনার অনেক কাজে আসবে।

রমজানে যেভাবে আপনি সুস্থ থাকতে পারেন সে বিষয়টি বিবেচনা করে সাধ্যমতো তথ্য দেয়ার চেষ্টা করেছি। কোন তথ্য ভুল মনে হলে কিংবা আরও কি কি তথ্য যোগ করলে ভালো হতো বলে আপনি মনে করেন দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন।

রমজান নিয়ে বিশেষ কিছু জানার থাকলেও প্রশ্ন করতে পারেন। সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো দ্রুত উত্তর দেয়ার। আপনি নিশ্চয় রোজা রাখেন। আপনার কি কোন শারীরিক সমস্যা হয়। জানালে সে বিষয়ে অবশ্যই নতুন একটি আর্টিকেল লেখার অনুপ্রেরণা পাব।

আপনি সুস্থ থাকুন, সিয়াম পালন করুন, আপনার সংযমের মধ্য দিয়ে স্রষ্টা আপনার সহায় হোন। আমীন।

রমজানে খাবার সম্পর্কে ধর্মীয় বিধিনিষেধ আছে কি?

না, নেই। তবে সবসময়ই হালাল এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কথা আছে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে সুন্নত। তাই নবী কারীম (সা.) এর খাদ্যাভাসকে অনুসরণ করা প্রত্যেক মুসলমানের নৈতিক দায়িত্ব।

ইফতারের খাবার বিষয়ে পুষ্টিবিদরা কি বলেন?

পুষ্টিবিদরা পুষ্টির কথাই বলেন। যেহেতু রমজানে আমরা সারাদিন না খেয়ে রোজা রাখি তাই রোজা ভঙ্গের সময় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। খুব বেশি খেতে হবে এমন নয়, শরীরের পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করে এমন খাবারই খাওয়ার পরামর্শ দেশ পুষ্টিবিদরা।