London ১১:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউক্রেন যুদ্ধ: ট্রাম্প-পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় কে হবেন ইউরোপের প্রতিনিধি?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আসন্ন শান্তি আলোচনায় ইউরোপের প্রতিনিধিত্ব কে করবেন, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। ইউক্রেন এরই মধ্যে ইউরোপকে একজন একক প্রতিনিধি ঠিক করার আহ্বান জানিয়েছে। যদিও নির্দিষ্ট কারও নাম প্রস্তাব করা হয়নি। তবে ইউরোপের ভেতরে এ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।

ইউরোপের সম্ভাব্য প্রতিনিধি কারা?

অ্যান্টোনিও কোস্তা: ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোস্তার একটি স্বাভাবিক অবস্থান থাকলেও তিনি যুক্তরাজ্যকে যথাযথভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন না। পাশাপাশি, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সন্দেহের চোখে দেখেন, যা তার জন্য বড় বাধা হতে পারে।

ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ: ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ইউরোপের প্রতিনিধিত্বের জন্য শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। ফ্রান্স ইউরোপের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। এছাড়া, ম্যাক্রোঁর ট্রাম্পের সঙ্গে পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং তিনি ইউরোপের জন্য ‘কৌশলগত স্বাধীনতা’ নিশ্চিত করতে চান। তবে রাশিয়ার সঙ্গে সংলাপ চালানোর বিষয়ে অতীতের অবস্থান নিয়ে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো তার প্রতি সন্দিহান।

ডোনাল্ড টাস্ক: পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী টাস্ক ইউরোপের একটি শক্ত অবস্থানের প্রতিনিধি হতে পারেন। পোল্যান্ড ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে প্রতিরক্ষা ব্যয়ে শীর্ষে রয়েছে এবং দেশটি রাশিয়ার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। তবে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো তার অতিরিক্ত রাশিয়াবিরোধী অবস্থানের কারণে কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছে।

পেত্র পাভেল: চেক প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট পাভেল সামরিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নেতা। তবে তুলনামূলকভাবে ছোট দেশের প্রতিনিধি হওয়ায় আন্তর্জাতিক আলোচনায় তার গুরুত্ব কতটা থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

অন্য দেশগুলোর নেতারা নন কেন?

স্পেন ইউক্রেন থেকে অনেক দূরে এবং এর প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এই ইস্যুতে সবচেয়ে সোচ্চার সমর্থকদের মধ্যে নেই। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার মনে করেন, যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ‘সেতু’ হতে পারে। কিন্তু ব্রেক্সিট দেশটিকে ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ইতালীয় প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের একজন আদর্শিক মিত্র। কিন্তু তিনি এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি কীভাবে একইসঙ্গে ইউক্রেনপন্থি এবং ট্রাম্পপন্থি উভয়ই হবেন। আবার, কোনো ছোট দেশের নেতাকে পাঠানো হলে ট্রাম্প নিঃসন্দেহে সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত ইউরোপীয় প্রতিনিধিকে অবমূল্যায়ন করেই কার্যক্রম শুরু করবেন।

ম্যাক্রোঁই কি চূড়ান্ত প্রতিনিধি?

ইউরোপীয় কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ম্যাক্রোঁ ইউরোপের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত প্রার্থী হতে পারেন। তিনি এরই মধ্যে বিভিন্ন ইউরোপীয় নেতার সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

তবে ইউরোপের স্বার্থ রক্ষা করতে ম্যাক্রোঁর সঙ্গে আরও একজন কূটনৈতিক সহকারী থাকতে পারেন। যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাইয়া কালাসকে (এস্তোনিয়ার কূটনীতিক) আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে, যাতে ইউরোপের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের দেশগুলোর উদ্বেগ যথাযথভাবে উপস্থাপিত হয়।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউরোপের একটি ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠস্বর প্রয়োজন, যা ট্রাম্প ও পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। ইউক্রেনও চায় ইউরোপ একটি সুস্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করুক। এখন প্রশ্ন হলো, ইউরোপ কি এই ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারবে, নাকি বিভক্তি থেকেই যাবে?

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১১:১৩:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
Translate »

ইউক্রেন যুদ্ধ: ট্রাম্প-পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় কে হবেন ইউরোপের প্রতিনিধি?

আপডেট : ১১:১৩:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আসন্ন শান্তি আলোচনায় ইউরোপের প্রতিনিধিত্ব কে করবেন, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। ইউক্রেন এরই মধ্যে ইউরোপকে একজন একক প্রতিনিধি ঠিক করার আহ্বান জানিয়েছে। যদিও নির্দিষ্ট কারও নাম প্রস্তাব করা হয়নি। তবে ইউরোপের ভেতরে এ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।

ইউরোপের সম্ভাব্য প্রতিনিধি কারা?

অ্যান্টোনিও কোস্তা: ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোস্তার একটি স্বাভাবিক অবস্থান থাকলেও তিনি যুক্তরাজ্যকে যথাযথভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন না। পাশাপাশি, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সন্দেহের চোখে দেখেন, যা তার জন্য বড় বাধা হতে পারে।

ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ: ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ইউরোপের প্রতিনিধিত্বের জন্য শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। ফ্রান্স ইউরোপের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। এছাড়া, ম্যাক্রোঁর ট্রাম্পের সঙ্গে পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং তিনি ইউরোপের জন্য ‘কৌশলগত স্বাধীনতা’ নিশ্চিত করতে চান। তবে রাশিয়ার সঙ্গে সংলাপ চালানোর বিষয়ে অতীতের অবস্থান নিয়ে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো তার প্রতি সন্দিহান।

ডোনাল্ড টাস্ক: পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী টাস্ক ইউরোপের একটি শক্ত অবস্থানের প্রতিনিধি হতে পারেন। পোল্যান্ড ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে প্রতিরক্ষা ব্যয়ে শীর্ষে রয়েছে এবং দেশটি রাশিয়ার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। তবে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো তার অতিরিক্ত রাশিয়াবিরোধী অবস্থানের কারণে কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছে।

পেত্র পাভেল: চেক প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট পাভেল সামরিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নেতা। তবে তুলনামূলকভাবে ছোট দেশের প্রতিনিধি হওয়ায় আন্তর্জাতিক আলোচনায় তার গুরুত্ব কতটা থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

অন্য দেশগুলোর নেতারা নন কেন?

স্পেন ইউক্রেন থেকে অনেক দূরে এবং এর প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এই ইস্যুতে সবচেয়ে সোচ্চার সমর্থকদের মধ্যে নেই। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার মনে করেন, যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ‘সেতু’ হতে পারে। কিন্তু ব্রেক্সিট দেশটিকে ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ইতালীয় প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের একজন আদর্শিক মিত্র। কিন্তু তিনি এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি কীভাবে একইসঙ্গে ইউক্রেনপন্থি এবং ট্রাম্পপন্থি উভয়ই হবেন। আবার, কোনো ছোট দেশের নেতাকে পাঠানো হলে ট্রাম্প নিঃসন্দেহে সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত ইউরোপীয় প্রতিনিধিকে অবমূল্যায়ন করেই কার্যক্রম শুরু করবেন।

ম্যাক্রোঁই কি চূড়ান্ত প্রতিনিধি?

ইউরোপীয় কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ম্যাক্রোঁ ইউরোপের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত প্রার্থী হতে পারেন। তিনি এরই মধ্যে বিভিন্ন ইউরোপীয় নেতার সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

তবে ইউরোপের স্বার্থ রক্ষা করতে ম্যাক্রোঁর সঙ্গে আরও একজন কূটনৈতিক সহকারী থাকতে পারেন। যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাইয়া কালাসকে (এস্তোনিয়ার কূটনীতিক) আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে, যাতে ইউরোপের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের দেশগুলোর উদ্বেগ যথাযথভাবে উপস্থাপিত হয়।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউরোপের একটি ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠস্বর প্রয়োজন, যা ট্রাম্প ও পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। ইউক্রেনও চায় ইউরোপ একটি সুস্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করুক। এখন প্রশ্ন হলো, ইউরোপ কি এই ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারবে, নাকি বিভক্তি থেকেই যাবে?