London ০১:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:

আবারও আইএমএফের ঋণ পেল পাকিস্তান, এবার ৭০০ কোটি ডলার

আবারও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সহায়তা পেল পাকিস্তান। এবার দেশটির জন্য ৭ বিলিয়ন বা ৭০০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে আইএমএফ।

প্রথম ধাপে পাকিস্তানকে তাৎক্ষণিকভাবে এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার দেওয়া হচ্ছে। বাকি অর্থ আগামী তিন বছরে ধাপে ধাপে দেওয়া হবে। এই ঋণ অনুমোদনের জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আইএমএফের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। খবর বিবিসি।

১৯৫৮ সালে পাকিস্তান প্রথম আইএমএফের ঋণ নেয়। এরপর এবার নিয়ে ২০ বারের বেশি ঋণ নিয়েছে দেশটি। বর্তমানে আইএমএফের পঞ্চম বৃহত্তম ঋণগ্রহীতা পাকিস্তান। সাধারণত কোনো দেশ অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হলে আইএমএফের ঋণসহায়তার দ্বারস্থ হয়। আইএমএফ সেই দেশকে ঋণ দিলে অন্যান্য বৈশ্বিক সংস্থাগুলোও সে দেশ সম্পর্কে আশ্বস্ত হয়। তখন তারাও সেই দেশকে ঋণ দিতে আগ্রহী হয়।

ঋণে অনুমোদনের সঙ্গে আইএমএফ বলেছে, এবার ঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে পাকিস্তানকে সুনীতি প্রণয়নের পাশাপাশি সংস্কার কার্যক্রমে ব্রতী হতে হবে। অর্থনীতিকে স্থিতিশীল ও ঘুরে দাঁড়ানোর মতো সক্ষম করতে হলে এর বিকল্প নেই। এই ঋণ নিতে পাকিস্তান বেশ কিছু অজনপ্রিয় শর্তে রাজি হয়েছে, যেমন ব্যক্তি ও ব্যবসায়িক করদাতাদের কাছ থেকে আহরণ করা করের হার বৃদ্ধি করা।

যদিও পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব জুলাই মাসে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, কর আদায় বৃদ্ধির পথে পাকিস্তানের সবচেয়ে বাধা হলো রাজস্ব বোর্ডের দুর্নীতি। সংস্থাটির সমালোচনা করে মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব বলেন, রাজস্ব বোর্ডের দুর্নীতি ও হয়রানির কারণে মানুষ তাদের কাছে যেতে পারে না। তারা স্পিড মানি দাবি করে; অর্থমন্ত্রী মনে করেন, এটা হতে পারে না।

এদিকে পাকিস্তান অঙ্গীকার করেছে, আইএমএফের কাছে তারা আর ঋণ চাইবে না।

গত বছরও পাকিস্তান আইএমএফের তিন বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা বা বেইল আউট পেয়েছে। তখন পাকিস্তানের অবস্থা ছিল শোচনীয়—ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে খেলাপি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল তাদের; সেই সঙ্গে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমতে কমতে এক মাসের আমদানি ব্যয় পরিশোধের মতো জায়গায় নেমে এসেছিল।

২০২৩ সালে আইএমএফের ঋণ পাওয়ার পর পাকিস্তান সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছ থেকেও ঋণসহায়তা পেয়েছে। তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছিলেন, অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে বেইল আউট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাৎক্ষণিক ও মধ্যমেয়াদি সংকট নিরসনে তা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক দিন ধরেই ভালো নয়। দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার গত আগস্ট মাসে তিন বছরের মধ্যে প্রথম এক অঙ্কের ঘরে নেমে আসে; ২০২৩ সালের একই সময়ে যা ছিল ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ। সেই সঙ্গে প্রবৃদ্ধির গতি খুব কম; বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভও কমতির দিকে।

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয়। তাদের লক্ষ্য, আগামী বছরের জুলাই মাসের মধ্যে ৪ হাজার ৬৬০ কোটি ডলার রাজস্ব সংগ্রহ করা। রাজস্ব আদায় আরও বাড়ানো ছাড়া দেশটির বিশেষ কোনো উপায় নেই। বর্তমানে দেশটির রাজস্ব আয়ের ৫৭ শতাংশ সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়। ২০১৭-২১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের গড় সুদ ব্যয় ছিল রাজস্বের ৩৬ শতাংশ।

ফিচ রেটিংসের সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে শ্রীলঙ্কা সরকারের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে মোট রাজস্বের ৫৪ শতাংশ, বাংলাদেশের ৩২ শতাংশ, ভারতের ২৮ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ১৫ শতাংশ আর থাইল্যান্ডের ৭ শতাংশ।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৫:৪১:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৫২
Translate »

আবারও আইএমএফের ঋণ পেল পাকিস্তান, এবার ৭০০ কোটি ডলার

আপডেট : ০৫:৪১:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আবারও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সহায়তা পেল পাকিস্তান। এবার দেশটির জন্য ৭ বিলিয়ন বা ৭০০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে আইএমএফ।

প্রথম ধাপে পাকিস্তানকে তাৎক্ষণিকভাবে এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার দেওয়া হচ্ছে। বাকি অর্থ আগামী তিন বছরে ধাপে ধাপে দেওয়া হবে। এই ঋণ অনুমোদনের জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আইএমএফের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। খবর বিবিসি।

১৯৫৮ সালে পাকিস্তান প্রথম আইএমএফের ঋণ নেয়। এরপর এবার নিয়ে ২০ বারের বেশি ঋণ নিয়েছে দেশটি। বর্তমানে আইএমএফের পঞ্চম বৃহত্তম ঋণগ্রহীতা পাকিস্তান। সাধারণত কোনো দেশ অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হলে আইএমএফের ঋণসহায়তার দ্বারস্থ হয়। আইএমএফ সেই দেশকে ঋণ দিলে অন্যান্য বৈশ্বিক সংস্থাগুলোও সে দেশ সম্পর্কে আশ্বস্ত হয়। তখন তারাও সেই দেশকে ঋণ দিতে আগ্রহী হয়।

ঋণে অনুমোদনের সঙ্গে আইএমএফ বলেছে, এবার ঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে পাকিস্তানকে সুনীতি প্রণয়নের পাশাপাশি সংস্কার কার্যক্রমে ব্রতী হতে হবে। অর্থনীতিকে স্থিতিশীল ও ঘুরে দাঁড়ানোর মতো সক্ষম করতে হলে এর বিকল্প নেই। এই ঋণ নিতে পাকিস্তান বেশ কিছু অজনপ্রিয় শর্তে রাজি হয়েছে, যেমন ব্যক্তি ও ব্যবসায়িক করদাতাদের কাছ থেকে আহরণ করা করের হার বৃদ্ধি করা।

যদিও পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব জুলাই মাসে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, কর আদায় বৃদ্ধির পথে পাকিস্তানের সবচেয়ে বাধা হলো রাজস্ব বোর্ডের দুর্নীতি। সংস্থাটির সমালোচনা করে মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব বলেন, রাজস্ব বোর্ডের দুর্নীতি ও হয়রানির কারণে মানুষ তাদের কাছে যেতে পারে না। তারা স্পিড মানি দাবি করে; অর্থমন্ত্রী মনে করেন, এটা হতে পারে না।

এদিকে পাকিস্তান অঙ্গীকার করেছে, আইএমএফের কাছে তারা আর ঋণ চাইবে না।

গত বছরও পাকিস্তান আইএমএফের তিন বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা বা বেইল আউট পেয়েছে। তখন পাকিস্তানের অবস্থা ছিল শোচনীয়—ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে খেলাপি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল তাদের; সেই সঙ্গে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমতে কমতে এক মাসের আমদানি ব্যয় পরিশোধের মতো জায়গায় নেমে এসেছিল।

২০২৩ সালে আইএমএফের ঋণ পাওয়ার পর পাকিস্তান সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছ থেকেও ঋণসহায়তা পেয়েছে। তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছিলেন, অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে বেইল আউট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাৎক্ষণিক ও মধ্যমেয়াদি সংকট নিরসনে তা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক দিন ধরেই ভালো নয়। দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার গত আগস্ট মাসে তিন বছরের মধ্যে প্রথম এক অঙ্কের ঘরে নেমে আসে; ২০২৩ সালের একই সময়ে যা ছিল ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ। সেই সঙ্গে প্রবৃদ্ধির গতি খুব কম; বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভও কমতির দিকে।

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয়। তাদের লক্ষ্য, আগামী বছরের জুলাই মাসের মধ্যে ৪ হাজার ৬৬০ কোটি ডলার রাজস্ব সংগ্রহ করা। রাজস্ব আদায় আরও বাড়ানো ছাড়া দেশটির বিশেষ কোনো উপায় নেই। বর্তমানে দেশটির রাজস্ব আয়ের ৫৭ শতাংশ সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়। ২০১৭-২১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের গড় সুদ ব্যয় ছিল রাজস্বের ৩৬ শতাংশ।

ফিচ রেটিংসের সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে শ্রীলঙ্কা সরকারের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে মোট রাজস্বের ৫৪ শতাংশ, বাংলাদেশের ৩২ শতাংশ, ভারতের ২৮ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ১৫ শতাংশ আর থাইল্যান্ডের ৭ শতাংশ।